'আট-আনা-সংজ্ঞরপ-প্রহ্থমালার পঞ্জমণ গ্রন্থ বারি তি ন্বিন্যাতু-ন্বিগনন্ষ শাাাটী্াট কী বাজ ৫7 [ দ্বিভীম্ সংস্করণ]. প রব ক 5 রি রি ষ্ তত . ্ ্« / ্ ১. ফচ ও ্ সি 1 ১: ১: ১ ১৩, টব ক 7 ৮ ১ রি 125 /৮) এপি & পপ টং ঞ ১৫৫৪01।8€ পি পাচা গলপ শ্রীকেশব চন্দ্র গুপ্ত *৩২৪ মিঃ এন্‌ মেন 2০ বোধ হয়, চেষ্টা করিলে পুলিস-বিভাগে টি কার্ষ্য পাইতাম । তিন বৎসর পুলিসে দারোগাগিরি করিয়া কিন্ত পুলিস-বিভাগের উপর তেমন একট! মমতা৷ জন্মায় নাই। সুতরাং সামান্য কারণে কর্মুছাত হইয়া! সে কর্ধা পুনঃপ্রাপ্তির জন্য বিশেষ ওৎনুক্য জন্মায় নাই। | সময় কাহারও জন্য অপেক্ষা করে না_এ একটা মামুলি কথা। সময় অপেক্ষা করিলেও করিতে পারে, কিন্তু মানবদেহের জঠর নামক অঙ্গবিশেষটি সৃষ্টির প্রাকৃকাল হইতে অগ্তাবধি ধৈর্য্য নামক সদ্গুণের আধার বলিয়া কখনও প্রশংসিত হয় নাই। পোড়া পেটের জন্য একটা কি করিতে হইবে--এ প্রশ্নটা! দিন দিন গুরুতর আকার প্লারণ করিয়া আমার মানসপটে বিভীষিকার সৃষ্টি করিতেছিল। কেরাণী'গিরি সংগ্রহ করা। ন্মস্তা ব্বমা-বাণিজ্য করিতে গেলে মূলধনের প্রয়ো কালী পেশায় ইউনিভারসিটির চাপরাস নারপ. অসম্ভব সামগ্রী আবশ্তক। ন পশ্চিমে কার্য করিত। সেও. বিবাহ-বি্ীব | ৯ সিপাহী হইয়! -কৰ্বিকাতায় চলিয়া! আসিয়াছিল। উভয়ে বসিয়া পরামর্শ করিতেছিলাম,_কি উপায়ে পরের তোষামোদ না করিয়া জীবিক! নির্বাহ কর! যাইতে পারে। নরেশ বলিল-__ বাস্তবিক ভাই দেখছি “মরণ হ'লে পুনর্জন্ম হয়, কিন্ত চাকরি গেলে আর চাকরি হয় না। আমি বলিলাম--আর তাই, চাকরির পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করছি না বরং না খেয়ে মারা গিয়ে আবার পুনর্জন্মের চেষ্টা কর্ব। উভয়ে- খুব হাসিলাম। কসাইয়ের দৌকান, মড়ার খাটের ব্যবসা, বিলাতী মতে ধোবীখানা, মুরগীর চাষ, পরিতাক্ত টিনের কানেমস্তারা ও নিলামী মাল খরিদ বিক্রয় প্রভৃতি নানা প্রকার ব্যবসার বিষয় আলোচনা করিলাম, কিন্ত প্রত্যেকটাতেই একটা না একটা আপত্তি বিরাট আকার ধারণ করিয়া বমিল। নরেশ বলিল--আমি তো! বদ্যি। শেষে না হয় কোথাও পাড়াগায়ে গিয়ে নাড়ীটেপার ব্যবসা ধর্ক! আজকাল তো বগ্ির ঘরের মূর্ধ ছেলেরাই কবিরাজ হয়। আমি বলিলাম_-আর আমি একট! শিবমুন্তি স্থাপন ক'রে পৃজারি সেজে বসি, বামুনের ছেলের পক্ষে বৃত্তিটা মন্দ হবে না। এই শিবমূর্তি কলেজ ট্রাটের ধারে হইলে অধিক উপার্জন হইবে, না আূ্টালতের ধারে হইলে বেশী লাভের সন্তাবনি সে কথা লইয়া বাদানুবাদ চলিল। শেষে ঠিক হইল ধর্মের নামে প্রি করা অবিধের এবং পেটের দায়ে চিকিৎসক জাজিয়া রাও মহাপাগ। _খলিল-_না, ও সব কথা ঠিকনা। তুমি.তিন রছয ৩ ৃ বিবাহ-বিপ্লুব গুলিসে “কাজ ক'রে যে অভিজ্ঞতা লাভ করেছ তার সদ্যবহার করা উচিত। আমিও সওদাগরী আফিসে কাজ ক'রে কতকটা কাজ শিখেছি; সে শিক্ষারও সদ্বাবহার করা আবশ্তক। নরেশের কথায় আমার মনে একটা নৃতন চিন্তার উদয় হইল। বাস্তবিক আমার পুলিসের অভিজ্ঞতাটা কি কোনও প্রকারে অর্থকরী বৃত্তিতে পরিণত হইতে পারে না? আমাদের দেশে পুলিসের হস্তে যেরূপ বহুবিধ কাধ্যভার ন্যস্ত, তাহাতে তাহাদের দ্বার কোনও জটিল মামলার তদন্ত হওয়া অসম্ভব । বিলাতে বে-দরকারী ডিটেক্টিভের বাবা! বেশ সাধারণের হিতকর অথচ অর্থকরী । এ দেশে সে ব্যবসায় কেন ীঁফলতা লাভ করিবে নাঃ নরেশের সহিত অনেক বাদান্থবাদের পর সিদ্ধান্ত হইল যে, আমরা উভয়ে একটা বে-সরকারী গোয়েন্দার ব্যবসা খুলিব! আমার বাল্যসহচর নরেশচন্্রকে অংশীদার করিয়! লইবার বিশেষ এ্রকটা উদ্দেন্টা ছিল। ভাবিলাম যদি আমি স্বয়ং ডিটেকৃটিভ সাজিয়া বসি, তাহা! হইলে সকলেই আমাকে চিনিয়া ফেলিবে। বদি চোর জুয়্াচোর জালিয়াৎ প্রভৃতি আমাকে দেখিবামাত্র সাবধান তুই! যায়, তাহা হইলে পদে পদে আমাদের কর্মে বিফলমনোরথ ইন্জি্ছইবে। সরকারী পুলিস এই কারণেই অনেক সময় চতুর অপরাধীর সন্ধান করিতে পারে না । পুলিস যেমন অপরাধীদিগের পর গোয়েন্দাগিরি করে, সন্দেহচিত্ত অপরাধিগণও তেমনি তাহা- দিগের চিরশক্র পুলিসের গতিবিধি লক্ষ্য করিয়া আপনাদের আত্মরক্ষার বিধান করে। 'বিবাই-বিপ্লৰ ৪ আমি বলিলাম_-নরেশ, তুমি ডিটেকৃটিভ সাজিয়া শিখন্তী হ'য়ে বস্বে, আমি তোমার আড়াল থেকে বাণক্ষেপ ক'রে কাজ ফতে করব। নরেশ বলিল--আপত্তি নেই। আমি ডাক্তার- খানার জানালার ধারের মোট সাজান বোতল হয়ে বন্ব এখন। “গুভন্ত শীঘ্ম্ণ ভাবিয়া সাতদিনের মধ্যে কর্ণওয়ালিস স্ট্রাটে, একটি আফিদ খুলিয়া সাইন বোর্ড মারিলাম-_ 011, উ, 0,561. 4/9710272 7)/0//2)6, সি ভ্িতীম্ত্র পলিজ্ছেচে্‌ আত্ম-এশংসা ভেক না হইলে ভিক্ষা মিলে না। একটা কোনও প্রকাৰ স্বাধীন বৃত্তি অবলম্বন করিতে গেলে কতকট! বাহিক আড়ম্বর অত্যাবস্তক ; তাহ! না হইলে, প্রথম প্রথম পসার জমান কঠিন। আুতরাং নেহাৎ সেই মামুলি একটা আমকাঠের স্ক্তপোষ, দুইটি মলিন জীর্ণদেহ তাকিয়া মঙ্গল করিয়া সরস না খুলিয়৷ একটু আধুনিক ধরণে টেবিল চেয়ার দিয়া গৃহ সজ্জিত করিয়া আফিম খুলিয়াছিলাম। সমস্ত আস্বাৰ সরঞ্জমগুলা পরিষ্ণার পরিচ্ছন্ন রাখিবারও ন্ুবন্দোবস্ত করিয়াছিলাম। অবস্ট এরূপ ভাবে গৃহসজ্জা করিতে প্রথমতঃ একটু মূলধন. আবস্তক €৫ বিবাহ-বিপ্রব হইয়াছিল, কিন্তু ফলে আমাদিগের কর্মস্থল বেশ প্রতিষ্ঠালাভ করিয়াছিল। আমরা যে বাটাতে আফিস খুলিয়াছিলাম, তাহার প্রধান দরজা ছিল কর্ণওয়ালিস স্াটের উপরে । সেই দরজাটিতে প্রবেশ করিলেই মক্ধেল আমাদিগের আফিল ঘরে আসিতে পারিত। এ বাটার পশ্চাতে গলির. পথে একটি ক্ষুদ্র প্রবেশদ্বার ছিল। আমরা দ্বিতলের গৃশগুলিতে সেই পথে যাতায়াত করিতাম। নরেশ স্বয়ং ডিটেক্টিভ সাজিয়া বাহিরে আফিসঘরে আমাদিগের সাহায্যপ্রার্থী লোকের সহিত সাক্ষাৎ করিত এবং আমরা তাহার অন্তরালে থাকিয়া ভিতরের গুহ ইইতে কার্ধ্যাদি সম্পন্ন করিতাম। আমাদের প্রধান মন্ত্রণাগৃহ ছিল দ্বিতলের ঘরে; আমরা ছুইজন এবং আমাদিগের একটি সহকারী ডিটেকটিভ রাখালচন্দ্র বাতীত কেহ সে কক্ষে প্রবেশলাভ করিতে পারিত না । রাখালের উপর পূর্ণ বিশ্বাস থাকিলে “্ষটুকর্ণৈঃ ভিষ্ঠাতে মন্ত্র, এই নীতি অন্দরণ করিয়া তাহাকে আমাদিগের সকল যুক্তি- মন্ত্রণার মধ্যে প্রবেশ করিবার সম্পূর্ণ অধিকার প্রদান করিতাম না।. আমাদিগকে কন্মে নিযুক্ত করিবার জন্য কোনও ব্ক্তি অল প্রথমে তাহাকে নরেশের সহিত সাক্ষাৎ করিতে হইত। নরেশের. বিশ্বাস জন্মাইতে পারিলে তবে প্রয়োজনমত আমি নরেশের মেই অফিস-গৃহে তাহার নিকট .পরিচিত হইভাম। এই রুদ্ধদ্বার গৃহে খন একজন মন্ধেল নরেশের সহিত মন্ত্রণা করিত, তখন অপর ভ্রকলকে বারান্দায় ছুইখানি বেঞ্চের উপর অপেক্ষা করিতে হইত। আমাদিগের এইরূপ নিয়ম প্রবর্তিত বিবাহ-বিপ্লীৰ | ৬ করিবার বিশেষ একটি কারণ ছিল। আমাদিগের দেশে উকিল বাবুর! প্রায়ই পাচ সাতটি মোকনদ্দমার ভিন্ন ভিন্ন লোক একক্র লইয়া একস্থানে বসিয়া পরামর্শ করেন। অনেক সময় বিপক্ষ পক্ষ কি পরামর্শ করিতেছে তাহ! জানিবার জন্য চতুর প্রতিযোগী মক্কেল সাজাইয়া নিজ পক্ষের লৌককে বিপক্ষের উকিলের নিকট পাঠাইয়! দেয় এবং তাহাদ্দিগের মোকদদমা সম্বন্ধে বিপক্ষ দুল কিরূপ যুক্তিমন্ত্রণা করিতেছে তাহ! কৌশলক্রমে অবগত হইয়া আপনা- দিগের কর্তবা পথ স্থির করিয়া লয়। এইজন্যই আমাদিগের অফিসের নিয়ম-অনুসারে এক কালে এক জনের অধিক মক্কেল মন্ত্রণাগৃহ্ে প্রধেশলাভ করিতে পারিত না। সমস্ত দিবসের কর্তব্য সাঁরিয়! এক দিন সন্ধ্যার সয় আমরা ছুই জনে অফিসগৃহে বসিয়া গল্প করিতেছিল্লাম ; বাহিরে মুষলধারে বৃষ্টি পড়িতেছিল; আমরা উভয়ে চা পান করিতেছিলাম | আষাঢ়ের জলধারার অত্যাচারে সদা-জনমানবপরিপুর্ণ, নিতযকোলাহলময় কলিকাতার রাজপথগুলি এক প্রকার জনহীন হইয়াছিল; কর্ণওয়াঁলিস স্ট্রীট জলময় ); কেবল মধ্যে মধ্যে এক এক খান! গাড়ী শব্দ করিতে করিতে আৰ মন্থরগতিতে সেই জলরাশি ভেদ করিয়া গমনাগমন করি স্থিত চায়ের পাত্রটি টেবিলের উপর রাখিয়া নরেশ সেন সী, সতীশ, তুমি ভাই. বেশ ব্যবসা খুলেছ। এই সামান্য ছয় ঘাসের মধ্যে আমাদের নামটা বেশ জাহির হয়েছে, এমন কি ট্রামগাড়ীত্তে পর্য্স্ত আমাদের কার্যকলাপ লোকের প্রস্থঙ্গের বিষয়ীতৃত হয়েছে । আমি: কৌতুহলাক্রাস্ত হইয়া জিজ্ঞাসা করিলাম_-কি রকম? ৭ | বিবাহ-বিপ্লীব “সেদিন আমি সন্ধার পূর্বে শ্তামবাজারের ট্রামে অফিসের দিকে আদিতেছিলাম। ট্রামথানি কর্মস্থল হইতে গৃহপ্রত্যাগমন-প্রয়াসী ধাত্রীতে পূর্ণ। একজন ভদ্রলোকের কিছু টাকা চুরি গিয়াছিল, তিনি প্ি্জির দুঃখের কথা অপর একজন সহঘাত্রীকে বলিবামাত্র তিনি বলিলেন, আপনি কেন আপনার কেস্টি ডিটেকৃটিভ এন, মেনের হস্তে অর্পণ করুন না” ।* নরেশের কথা শুনিয়া আমি একটু হাসিলাম। বলা বাহুল্য, একটু গর্বিত হইলাম। নরেশ আবার বলিতে লাগিল,_“অমনি আমাদের কথা ট্ামের লোকেদের মধ্যে প্রসঙ্গ হইয়! উঠিল ।-__ বলিলে তুমি বিশ্বাস করিবে না, যে সকল কেসের কথ! আমরা কখন শুনিই নাই সেই সকল অপরাধ তদন্ত করিবার যশ আমী- ধিগের ভাগ্যে পড়িল। আমি হাদিয়া তাহাকে বুঝাইলাম যে, ৰাজারে নাম হওয়া পেশাদার লোকের পক্ষে বাস্তবিকই হিতকর। আর ট্রামের গল্প এ প্রকারই হইয়া থাকে । গল্প করিয়া অপরকে পরাজিত করিবার বাদনাটা আমাদিগের জাতীয় বৃত্তি বলিলে সত্যের অপলাপ করা হয় না। স্থতরাং আমাদিগের কৃতিত্ব- লাকে ছ.একট গল্ের সষ্টি করিয়া অপরকে বলিবে ইতি আর বিচিত্রতা কি? তবে নিন্দা বাঁ অপহশ না৷ রটাইয়া লোকে যে আমাদিগের ফার্ম সম্বন্ধে স্থখাাতি করিতে আরস্ত করিয়াছে, ইহা! বড়ই সুখের বিষয়। আমাদিগের ভবিষ্যৎ উন্নতির ইহাই একটি সোপান ।” | নয়েশ বলিল,-সেই পার্শেল চুরির কেস্টি তোমার স্মরণ বিবাহ্‌-বিপ্লব . ৮ আছে ত? অবশ্ঠ তুমি যেরূপ বুদ্ধিমত্তা ও দক্ষতার সহিত সে তস্তটি সম্পন্ন করিয়াছিলে তাহা প্রশংসনীয় । কিন্তু সে কেস্টায় তোমার দক্ষতার কথ! যদি ট্রামের আরোহীর নিকট গুনিতে ত তোমারও হাসি আদিত।* বাহিরে প্রাবুটের নীরদমালা নিদাঘ-সৃষ্যতাঁপক্রি্ ধরণীর উপর সমভাবে বারিসিঞ্চন করিতেছিল। পথিপার্াস্থিত দুই একটি গ্যাস-দীপ অতি স্তরানভাবে কর্তবাপালন করিতেছিল। পাইপের ভিতর জল প্রবেশ করায় কতকগুলা একেবারে নিবিয়! গিয়াছিল। এরূপ দুর্যোগের দিনে কাজ-কর্ম্ের কোনও আশা ভরসা ছিল না; সুতরাং আমার অংশীদারের নিকট প্রশংদা শ্রবণ করিয়া আত্মাভিমান বাড়াইতেছিলাম। মুখে আলবোলার নল দিয়া টেবিলের উপর পা তুলিয়া দিয়! নরেশের গল্প গুনিতে লাগিলাম। তাহার মুখে পার্শেল চুরির কেসের উল্লেখ শুনিয়া একবার সে ব্যাপারের ঘটনাগুল1 মনে মনে স্মরণ করিয়! লইলাম। তাহাদিগের চিরস্তন প্রথা-অন্নুমারে ভাগল- পুরের ভোতারাম বুধমল নাঁমক ফারম একটি কাঠের বাক্সের, মধ্যে নগদ সাত সহজ টাকা পৃরিয়া রেলযোগে কলিবুর্াণ চালান দিয়াছিল। ব্যয় সংক্ষেপ করিবার জন্ঠ মাড়োমীর ব্যবসাদার প সকল মূল্যবান পার্শেলের রেলের রঙিন ছুই পয়সার সাধাদ্ণ ডাকে কলিফাতার গদিতে পাঠাইয়া থাকে । ভোতারাম ুঙবুদ্ধিচাঁলিত হইয়া এ ক্ষেত্রেও উত্তরূপ প্রণালী অবলগ্বন করিয়াছিল; কলিকাতার একটি প্রসিদ্ধ জুয়াচোর-পুলব পোষ্ট ৯ বিবাহ-বিপ্লিক পিয়নের সাহচধ্যে সেই রসিদ “হস্তগত করেন। তাঁহার সম্ধাবহার করিয়া তিনি ভোতারাম বুধমল-প্রেরিত সেই বাঝ্সটি হাওড়ার রেলওয়ে ষ্েসন হইতে খালাস করিয়া লইয়া আত্মসাৎ করেন। আমি দশাদনের মধ্যে চোর ও পাঁচ সইত্র টাকা ধরিয়া দিয়- ছিলাম। এই গল্পটি বাজারে কিরূপ আকার ধারণ করিয়া প্রচলিত হইতেছিল তাহা জানিবার জন্য প্রকটু আগ্রহান্বিস্ক হইয়া নরেশকে জিজ্ঞাস করিলাম,_-“এ গল্পটা ট্রামে কি* রকম ভাবে চলছিল?” | নরেশ বলিল--্রামে শুনিলাম ছুই সহজ গিনি পূর্ণ একটি বাক্স বড়বাজারের একদল প্রসিদ্ধ জুয়াচোর জাল রেল রসিদ দেখাইয়া খালাস করিয়া লইয়া যায়। এ রুহস্তের কেহ কিছু মীমাংস! করিতে পারে না, শেষে কেস্টা আমার হস্তে সমর্সিত হয়। আমি কেবল পায়ের দাগ ধরিয়া-মনে থাকে যেন ঘটনার একমাস পরে- চোরের আড্ডায় পৌছি। দেই দস্থাদল তখন প্রেমারা থেলায় উন্মত্ত, আর ভোতারাম বুধমলের সেই ধনপূর্ণ অপহৃত বাক্সটা গৃহে পড়িয়াছিল। আমি শার্দিল-বিক্রমে রোষ- 'য়িত নেত্রে ছুই হস্তে ছুইটি রিভল্তার ধারণ করিয়া বেগে সই গৃহমধ্যে প্রবেশ করিলাম”-_-নরেশের কথা শুনিয়া আমি হাসিয়া উঠিলাম। শ্মিতমুখে নরেশ বলিল--“আর হাসিও না, 'আমি ত লক্ষণের মত মেঘনাদের যক্তরগৃহে প্রবেশ করিলাম । দন্থ্যগুলা ছোরা ছুরি লাঠি সোটা বাহির করিল। আমি পূর্ব হইতেই প্রস্তুত হইয়া গিয়াছিলাম। আমার আক্তার অপেক্ষায় বিবাহ-বিপ্লীব ১৪ সশস্ত্র সরকারী পুলিস বাইরে অপেক্ষা করিতেছিল। আমি উপায়ান্তর ন৷ দেখিয়া আগার সাঞ্চেতিক বীশরী ধ্বনি করিলাম, তখন সদলবলে সরকারী পুলিস গৃহ মধ্যে প্রবেশ করিল। উভয়পক্ষে একটা বেশ গুরুতর রকমের মারপিট হইল, শেষে দুবৃত্তেরা ধৃত হইয়! শাস্তি ভোগ করিল।৮ আমরা উভয়ে খুব হাসিঞঠম। আঘি বলিলাম--“কি জান সাধারণ লোকের দোষ নাই । এক শ্রেণীর দেশী ও বিলাতী ডিটেক্টিভ্‌ উপন্তাদ আছে যাহাতে লাঠী সোটা গুলি গোল! মারপিট প্রভৃতি যত কিছু অসম্ভব আজগুবি ব্যাপার সন্নিবেশিত থাকে । এ সকল লেখকই পাঠকদের মন্তিষ্ক বিকৃত করিয়া দেয়। আমার বিশ্বাস, সেই সকল লেখক মামল1! তদস্ত-সংক্রান্ত কোন কথাই বোঝেন না এবং সাধারণ পাঠকবর্গ একটু স্থির হইয়া বিচার করিয়া দেখে না ষে, বাস্তব জগতে সে শ্রেণীর কার্ষ্য কয়টা সংঘটিত হইয়া থাকে। সুতরাং ট্রাম-গাড়ির যাত্রীদিগের মধ্যে মনোরঞ্জক ছুই একটি আজগুবি গল্প জন্মিবে তাহা আশ্চর্য্য নহে।” নরেশ বলিল২_. প্বাস্তবিক তোমার তদন্তের প্রথা বড় চমৎকার । কার্যকারণের সম্বন্ধ ব্যবচ্ছেদ করিয়া প্রতি পদে হিনাব করিয়া! চলিলে ঝি সত্বরে এবং প্রকৃত সাফল্যের সহিত সত্যে পৌছন ঘায়। কিন্তু--” ঠিক সেই সময় আমাদিগের ভৃত্য আসিয়া সংবাদ দিল যে,.. শুকটি ভদ্রলোক সত্বরই আমাদিগের সহিত সাক্ষাৎ প্রার্থন! করেন। অমিরা পূর্ষেই অশ্বপদ-বিক্ষিপ্ত জলের শব্দ পাইয়াছিলাম; ১১ , বিবাহ-বিপ্রষ কিন্ত এরূপ দুর্যোধইগর দিনে সেই গাড়িখানি যে আমাদিগেরই কার্যাস্থলে যাত্রী লইয়া আসিবে, সে সন্দেহ আমাদিগের মনে মুহূর্তের জন্য উপস্থিত হয় নাই | আমাদিগের আদেশমত ভূত বাহিরে ভদ্রলোকটিকে ডাকিতে. গেলে নরেশ বলিল--“আর্‌ কেন? পে্কবুত্তি অবলম্বন কর, কক্ষান্তরে যাও।” আঙি রলিলাম,_-“এমন দিনে যে বাক্তি "সাক্ষাৎ করিতে আনিতে পারে তাহার প্রয়োজন যে নিতান্ত গুরুতর, সে বিষয়ে মতভেদ নাই। এরূপ লৌককে প্রথম হইতে নিীকচিন্তে বিশ্বাস করিতে পার! যায়। আমি স্বয়ং ইহার সহিত সাক্ষাৎ করিতে পারি” ভতীম্্ পজিচ্ছেদ বিচার-্শত্তি আমার কথা শেষ হইবামাত্র ভদ্রলোকটি গৃহে প্রবেশ করিলেন। তাহার বয়স আন্দাজ পয়তাল্লিশ বৎসর হইবে, রং বেশ সুশ্রী এবং আকুতি দেখিলে বেশ সবলকায় ও র্িযাছিফু বলিয়া বোধ হয়। মুখ দেখিয়াই বুঝিতে পারিলাম, লোকটি বছুদর্শী এবং জগতের রঙ্গমঞ্চে নিজের অৃষ্ট-স্ন্ধে নানাগ্রকার পরিবর্তন অবলোকন করিয়াছে । মিঃ সেন গভীরভাবে টুকট টানিতে টানিতে জিজ্ঞাসা করিল--আপনি কি চান? অতি কাতর অথচ বাগ্রভা্নে ভদ্রলৌকটি বলিলেন_-মশায়ের নাম কি | বিবাহ-বিগ্লব . ১২ -মিঃ সেন? বড় বিপদে পড়েই আপনার সাধখয ভিক্ষা কর্তে এসেছি । নরেশ বলিল--অবশ্ঠ সহজেই তাহা অনুমান করা যায়, তা না হলে আর এত দুর্যোগে মশায় আমার গৃহে পদার্পণ করবেন কেন? আমি তাহাদের প্রতি সম্পূর্ণ অমনোযোগী এইরূপ বাহিক ভাব দেখাইয়া একখানা সংবাদপত্র পাঠ করিতেছিলাম । কিন্ত তাহাতেও সন্তুষ্ট না হইয়া ভদ্রলৌকটি আমার প্রতি অতি কোমল কটাক্ষপাত করিয়া নরেশচন্ত্রকে বলিলেন,_-“আমার ব্যাপারটা খুব গোঁপনীয়, যদি কেহ ঘুণাক্ষরে জান্তে পারে, তা হইলে বিশেষ ক্ষতি হবে 1” আগন্ধকের উদ্দেগ্ত বুঝিতে পারিয়া নরেশচন্দ্র একটু হাসিয়া বলিল--“আপনি এর কাছে কোন কথা গোপন কর্বেন না, উনি আমার একজন অত্যন্ত বিশ্বস্ত কম্মনচারী। সম্ভবতঃ আপনার কাজ উনিই কর্বেন। আপনার বিশেষ উদ্দিপ্র হবার কারণ নেই।” ভদ্রুলোকটি সাগ্রহে বলিলেন-_“আচ্ছ! উনি যদি আপনার বিশ্বস্ত কর্মচারী হন তা হইলে গুর নিকট আমি কোনও কথ! গোপন কর্ব না । কিন্তু আমার কাজটি অতান্ত গুরুতর। তার ফলাফলের উপর আমার সমস্ত মানসন্ত্রম নির্ভর কর্ছে। আ্ির কাজটি আপনি স্বয়ং হাতে না নিলে কোনও ফল হবে না।” নরেশ একটু হাসিয়া বলিল__পসেজন্য আপনি ব্যন্ত হচ্ছেন কেন? আমরা অবস্থা বুঝে বাবস্থা কর্ব।” ভদ্রলোকটি পূর্বরব€ উৎস্থৃক ভাবে কহিল্নে-“আমি আপনার প্রশংসা শুনে আপনার কাছে এসেছি । আমি অর্থের মায়া করি না) াপনি যত অর্থ চাঁন ১৩ বিবাহ-বিপ্লব আমি দিতে প্রতিশ্রুত হচ্চি, কিন্ত আমার কাজটি আপনার নিজের দ্বারা হওয়! চাই।” নরেশ তাহাকে আশ্বাস দিয়! বুঝাইয়৷ দিল যে, আমাদিগের কর্তবা-সন্বন্ধে তাহাকে কোনও রূপ চিন্তিত হইতে হইবে না, যাহার দ্বারা সে কার্যাটুকু সম্পাদিত হইলে তাহার অধিক ইষ্ট হইবে, আমরা তাহারই আয়োজন করিব। বুঝিলাম, ভদ্রলোকটি এ কথায় তেমন আশ্বস্ত হইলেন না। তিনি যে আমাকে একটা অপদার্থ বুঝিয়া আমার সাহায্য লইতে অস্বীকৃত হইলেন, তাহাতে আমি বিশেষ দুঃখিত হইলাম না। কিন্তু যাহাতে আমার উপর তাহার একটু বিশ্বাস জন্মে তাহার চেষ্টা করিলাম। প্রথমে তাহার সহিত আলাপ করিবার নিমিত্ত তাহাকে জিজ্ঞাসা করিলাম-_মহাশয়ের নাম? “ভ্রীনুরেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়” আমি বলিলাম--মহাশয়ের জন্মস্থান বীকুড়া, নয়? .তিনি বলিলেন-স্থ্যা। আমি।-- বাঁকুড়ায় আজকান খুব অন্পই থাক হয়। সুরেন্দ্র ।-হ্্যা, দেশ এত রকম ছেড়েছি। আমি ।-_মহাশয়কে দেখছি খুব রোদে ঘুরতে হয়। অবশ্ত ইংরাজী পোষাক ব্যবহার করেন, আর স্ুর বেলায় রোদে ঘোরবার সময় নীল চসমা চোখে দেন। বঙ্গ নূর্যাকিরণ থেকে চোখকে শীতল রাখবার এট! বেশ উপায়। এবার সুরেন্দ্র বাঞ্ধু একটু বিন্মিত হইলেন। তাহার “জের গুরুতর বিষয়টি ক্ষণেকের জন্ত বিশস্বৃত হইয়া আমাকে /কাভূহলাক্রান্তভাবে জিজ্ঞানা করিলেন,_-মহাশয়ের নাম? আমাকে আপনি দেখিলেন কোথায়? আমি ত মহাশয়কে চিনি বির্লাহ-বিপ্লব ১৪ বলিয়া-ল্ররণ হইতেছে না। আমি যেন তাহার কথাম্ব ভ্রক্ষেপ করিলাম না, এইবূপ ভাব প্রকাশ করিয়া পূর্ববৎৎ বলিতে লাগিলাম,_ মহাশয় সিগারেট পান করেন, পৃথিবীর অনেক দেখিয়াছেন। নরেশ হাসিয়া বলিল,_-দেখিলেন স্ুরেন্ত্রবাধু ! আমার কর্মচারীর কৃতিত্ব-সম্বন্ধে আপনি সন্দেহ করিতেছিলেন, কিন্তু ইনি আপনাকে একধার দেখিবামাত্র আপনার সম্বন্ধে এতগুলি কথা বলিয়া দিলেন। স্ুরেন্্র বাবু বলিলেন-__-মহাশয় কি প্রকৃতই আমাকে জানেন না? আমি হাসিয়। বলিলাম--আমি আপনার সম্বন্ধে যে ছু" একটি কথা বলিয়াছি তাহার মধ্যে বিশেষ দক্ষতার পরিচায়ক কোনও কথাই নাই। আপনাকে একটু বিশেষ ভাবে ছুই এক মুহূর্ত লক্ষ্য করিলে সকল লোকেই প্ররূপ কথা৷ বলিতে পারে। অব্য মানুষের প্রকৃতি অধ্যয়ন করা আমাদের পেশ! বলিয়া আমর! যেরূপ ভাবে মনুষ্]ের স্বভাব ও প্রকৃতি পর্যবেক্ষণ করি, সেরূপ সাধারণ লোকে করে না। আর এইরূপে মানুষ অধায়ন করিলে তাহাদের সম্বন্ধে এইরূপ ছুই চারিটি কথা সকলেই বলিতে পারে। বিশ্মিত হুরেন্্রনাথ জিজ্ঞাসা করিলেন_আমার অরীরীন সম্বন্ধে ঠিক ধারণাটা আপনি কি প্রকারে করিলেন ৮৯ামি বলিলাম-_বিশাল বাঙ্গালা দেশের সকল অধিবাসীই বাঙ্গালা কথা: কহিয়! থাকে তাহা সত্য, কিন্ত প্রত্যেক জেলার উচ্চারণের, একট] বিশেষত্ব আছে। কতকগুলা বিশেষ শব্বব্যবহারেও একটি প্রাদেশিকতা। লক্ষিত হয়। আমি বাল্যাবধি প্রত্যেক ১৫ বিবাহ-বিপ্লুব জেলার অধিবাসীর উচ্চারণের বিভিন্নতা অধ্যয়ন করিতাম। সেই বিষ্তার বলে আজ জোর করিয়া মহাশয়কে বলিলাম যে, মহাশয়ের জন্মস্থান বীকুড়া জেলায়। সুরেক্রবাবু আমার কৈফিয়তের পর বিষয়টা অত্যন্ত সাধারণ ভাবিয়া সেই শোকক্রি্ মুখে একটু হাসিয়া লইলেন। তাহার পর একবার আপদমস্তক আমাকে নিরীক্ষণ করিয়া লইলেন। নরেশ বলিল,__“অবশ্তঠ আপনার উচ্চারণে বাঁকুড়া জেলার টানট। অতি অল্প। সাধারণ লৌকের লক্ষ্য না করিবারই কথা? আর আপনার কথাবার্তীয় বাকুড়া অঞ্চলে চলিত শব্দের এত অভাব বলিয়াই আমার কর্মচারী সতীশ বাবু বলিয়াছেন যে, মহাশয়ের বু দিন হইতে জন্স্থান পরিত্যাগ কর! হইয়াছে ।” নরেশচন্দ্রের এইরূপ বিজ্ঞ কথায় আমি তাহার উপর অতাস্ত অস্ত হইলাম। সে যেআমার প্রণালীতে কার্য্য কারণের সম্বন্ধ ব্যবচ্ছেদ করিয়া সকল বিষয় বিচার করিতে আবরস্ত করিয়াছিল, তাহ! অতীব স্থখের বলিয়া বোধ হইল । এ বিষয়ে নরেশের উন্নত্তির উপর আমাঁদের কারবারের ভবিষ্যৎ উন্নতি বিশেষরূপে নির্ভঞত করিতেছে তাহ! বলা বাহুল্য । স্মৃষ্নদ্রবাবুকে . বুঝাইবাঁর জন্য বলিলাঁম,_-“আপনি যে রৌদ্র ঘুর্িয়া বেড়ান তাহার প্রমাণ আপনার গায়ের চামড়া । আপনার ছ্ীত বা মুখের রং অপেক্ষা আপনার দেহের অন্য অবয়বের বর্ণ উজ্্ল। ইহা ইহাতেই বুঝা যাইতেছে যে, আপনার হাত ও মুখের যেরূপ বর্ণ আপনার শরীরের সাধারণ বর্ণ সেরূপ বিবাহস্বপ্রীব ১৬ নহে । আপনার দেহের যে সকল স্থল আবৃত থাকে, সে সকল স্থলে আপনার স্বাভাবিক বর্ণ দেখিতে পাওয়া / যাইতেছে । স্থতরাং আপনার মুখ বা হাতের রং বিকৃত করিবার প্রধান কারণ রৌদ্রের তাপ। এই ছুই স্থল আবৃত থাকে না বলিয়া সুর্ধ্য কিরণ এই ছুই স্থল দগ্ধ করিতে পারে। আবার আপনার মুখে অপরাপর স্থল অপেক্ষা আপনার কপালের উপরের « অংশটি উজ্জ্বল বর্ণের। অর্থাৎ সাধারণতঃ লোকে হাট পরিলে যে অংশটি টুপিতে আবদ্ধ থাকে আপনার সেই অংশের বর্ণ হূর্য্যপন্ক নহে। ইহা হইতেই বুঝিতে পারা যায় যে, আপনি স্থাট ব্যবহার করেন। মহাশয় যখন পাগল নন, তখন হাটের সহিত নিশ্চয়ই পেণ্টলেন ব্যবহার করেন। তাই বলিয়াছিলাম, অহাশয় ইংরাজী পোষাক পরিয়! রৌদ্রে ঘুরিয়৷ বেড়ান” আগন্তক আমাদিগের বিচারশক্তি দেখিয়া মনে মনে আমাদিগকে প্রশংসা করিতেছিলেন বুঝিতে পারিলাম। তিনি বলিলেন,--“আচ্ছা মশায়, এখনত বোধ হ'চ্চে এ সিদ্ধান্তগুলার 'বেশ ভিত্তি আছে? কিন্ত নীল চশমা চোখে দিই, এ কথাটা (কেমন করে বললেন ?” আনি উত্তর করিলাম--"এ কথাট্টাও জ্যোতিষ .বিভর্ৃক্ষলে 'বলি নাই। এ সিদ্ধান্তেরও এ প্রকারের বেশ সরল তিত্তি আছে। ম্মাপনার নাকের উপর দাগ দেখিয়া ধরিতে পারা যায়, যে, '্আপনি চশমা ব্যবহার করেন। লোকের চোখের পীড়া নাধারণতঃ দুই প্রকারের হয়। অনেকে নিকটের পদার্থ দেখিতে পান্না, ১৭ বিবাহ-বিপ্পব আর অনেকে দুরস্থ জিনিষ দেখিতে পায় না। মহাশয় চেয়ারে বসিবার পূর্ববে আমাদের ঘরে এ দূরের দেওয়ালের ছবিখানির তলায় কি লেখা আছে তাহা অন্যমনস্কভাবে পড়িয়া লইলেন । তাহাতে আপনার দৃষ্টিহীনতার কিছু পরিচয় পাইলাম না। একবার অন্টমনস্কভাবে “বেঙ্গলি, কাগজখানা তুলিয়৷ তারিখটা দেখিয়া লইলেন, তাহাতেও কোনও প্রকার দ্রকুঞ্চন করিলেন না। পূর্বে বলিয়াছি, আপনি রৌদড্রে ঘুরেন, সুতরাং আপনার ' পক্ষে নীল চশম! ব্যবহার করাই স্বাভাবিক 1” আমার কথা শুনিয়া নরেশ ও স্ুরেন্ত্রবাবু একটু হাঁসিলেন। আমার উপর সুরেক্র বাবুর একটু বিশ্বাস জন্মিল বলিয়া বোধ হইল। নরেশ বলিল,_৭আপনি পিগারেট পান করেন এ কথাটা প্রত্যেক স্কুলের ছেলেই বলিতে পারিবে । কারণ আপনার বুদ্ধানষ্ঠ ও তর্জনীতে বেশ দাগ রহিয়াছে । আর মহাশয় পৃথিবীর অনেক দেখিয়াছেন, এ কথা বলিবার বিদ্যাট! আপনাকে শিখাইয়। নিজেদের গ্মন্ন মারি, এটা বোধ হয় আপনার অতিপ্রেত নয় ।” স্থরেন্্র বাবু আমাদের কথাবার্তায় একটু হাসিয়াই আবার পুর্বরুৎ গম্ভীর হইলেন। : তাহার হৃদয়ের অত্তস্তল হইতে সেই অগ্জাসি শোকের কারণটা মাথ! তুলিয়া আবার তীহাক্ষে পূর্বববৎ আকুল করিল। তিনি কাতরকঠে বলিলেন,--“অবশ্ঠ মহাশয়দের বা অত্যন্ত পারদ্রিতা আছে তাহা বুঝিয়াছি। আপনার! তু সামাকে এই গভ ভীর বিপদ হইতে রক্ষা করুন। আপনারা আমাকে রক্ষা করিতে না পারিলে দরিদ্র ব্রাঙ্গণের সর্বনাশ.হইবে। বিবাহ-বিপ্লুব ূ ১৮ ছতুথ পলিক্ছেদ্‌ বালিকা-হরণ আমি তাহাকে যথাশক্তি সাত্বনা দিয়া তাহার মামলাটি সংক্ষেপে বিবৃত করিতে অন্গরোধ করিলাম। ইংরাজীতে প্রবাদ আছে যে, হৃদয় ভারাক্রান্ত হইলে মুখে বাক্য্ৃত্তি হয় না। কথাটা সত্য; কিন্তু ভারাক্রান্ত হৃদয়ের উৎস একবার মুখ হইতে নিঃম্যত হইতে আরন্ত করিলে তাহা বেগবতী নদীর মত সমস্ত ভাসাইয়া লইয়া যায়। আমাদিগের নৃতন মকেলটির শৌককাহিনীও সেইরূপ দুইঘণ্টা কাল ধরিয়া আমাদিগকে উৎপীড়িত করিল। নিপ্রয়োজন শাখা-পল্লপবাদি ছাঁটিয়া ফেলিলে তাহার আথ্যায়িকাটা এইরূপ দীড়ায়-_ কলিকাতার সন্নিকটবর্তী যশোহর সহরে স্থুরেন্্র বাবু ডিছ্ক্ট বোর্ডের ওতারসিয়ারের কাধ্য করিতেন । সহরের বাহিরে একটি কষুত্র বাক্গালায় তিনি সপরিবারে বাস করিতেন । তাহার পরিবারের মধ্যে তাহার স্ত্রী, একটি কন্তা ও একটিমাত্র পুত্র ব্যতীত অপর কেহ ছিল না। তীহার কন্তাটির বয়স আন্দাজ ত্রয়োদশ বঃসর এবং তাহার একমাত্র পুত্রটি দশম-বর্ধীয়। পূর্বে পশ্চ্ঘভীর়িতে নানাগ্থলে কর্ম করিয়! তিনি দেড় বসরাবধি এই কার্য নিযুক্ত হুইয়াছিলেন। ন্ুরে্্বাবুর কন্যার নাম মুরলা। শুনিলাম, কন্তাটি দেখিতে বড়ই সুগ্রী। কুলীন সুরেন্্রনাথের এই 'কযিত- কাঞ্চনবরগা তনয়ার রূপে আকৃষ্ট হইয়া শাহপুরের অমিধাঃ ১৯ বিবাহ-বিপ্লব ণীতলপ্রসাদদ ঘোষাল তাহাকে খুত্রবধূ করিতে মনস্থ করেন। এরূপ সম্বন্ধ সৌভাগ্য জ্ঞান করিয়া বিজ্ঞ স্থরেন্্রনাথ পূর্ববাবধি এ প্রস্তাবে সম্মত ছিলেন, কিন্তু তাহার স্ত্রী ও আত্মীয়ের ঘোষালের গৃহে কন্া! সম্প্রদান করিতে একান্ত অনিচ্ছুক হন। "শীতলপ্রসাদও এই সর্ধস্থুলক্ষণ-বিশিষ্ট) কন্তাটিকে নিজ পুত্রবধূ করিবার জন্ত বিশেষ ব্গ্র হন। শেষে অর্থের লোভে স্থুরেন্রনাথের আত্মীয়ের ঘোষাল-গৃহে মুরলার বিবাহ দিতে সম্মত হইয়াছিলেন। যে দিন চিন্তাক্রি্ট হৃদয়ে আমাদিগের সাহায্য প্রার্থী হইয়া স্ুরেন্দ্রনাথ আমাদের আফিসে আসিয়া আমাঁদিগের সহিত পরিচিত হইলেন, ঠিক সেই দিন হইতে একমাস পরে মুরলার বিবাহের দিন স্থির হইয়াছিল। নববধূর উপযুক্ত অলঙ্কারাঁদি নিন্মীণ জন্ত তিনি চারি 'সহশ্র মুদ্রা অগ্রিম গ্রহণ করিয়াছিলেন। বিবাহের জন্য সকল আয়োজনই হইতেছিল, কিন্তু গত কল্য প্রভাতে সুরেন্্রনাথ দেখিলেন যে, তাহার কন্তাটি অপহৃত হইয়াছে । তাহার বিশ্বাস (কোনও দুষ্ট লোক তাহাকে নিগৃহীত করিবার জন্ত তাহার 'কন্ঠাটিকে লইয়! পলায়ন করিয়াছে । . ক্লুরেন্্র বাবুর গল্প শুনিয়া বুঝিলান যে, স্গেহমর্ী কৃন্তার শোক, শীর্তলঈজ্মাদের অর্থের শোক এবং সামাজিক অবমাননার ভয় প্রতি নানা ভাব একত্র হইয়া তাহাকে বিপন্ন করিয়াছে। স্তাঙার আবেগপূর্ণ কাতর কাহিনী শ্রবণ করিয়া আমাদেরও হৃদয় আর্্ব হইল। নরেশ তাহাকে জিজ্ঞাসা করিল,_-আচ্ছা এ বিষয়টি আপনি কি পুলিসের হস্তে সমর্পণ করেন নাই ? ূ বিবাহ-বিপ্লীব ২৬ স্ুরেন্ত্র বাবু বলিলেন, পুলিসে এ সংবাদ প্রদান করিলে, আমাকে একবারে পথে বসিতে হইবে। পুলিসে এ সংবাদ দিলে দেশশুদ্ধ সকলেই এ কথা জানিতে পারিবে। আমার আত্মীয়ন্বজন বন্ধুবান্ধব এবং আমার ভাবী বৈবাহিক শীতলগ্রাসাদ বাবু এ খবর জানিতে পারিলে আমার পক্ষে কিরূপ অশুভ হইবে, তাহা ত সহজে অনুমান করিতে পারিতেছেন । আমি বলিলাম,--ই1, শীতলপ্রসাদ জানিতে পারিলে ব্যাপারটা বড় গুরুতর হইয়া উঠিবে। ভবিষ্যতে যদি বাস্তবিকই কন্তাটার উদ্ধার হয়, তাহা হইলে শীতলপ্রসাদ বাবুর পুত্রের সহিত তাহার বিবাহ হওয়া একেবারে অসম্ভব হইবে । আর আমাদের দেশের কু লোকে এরূপ একটা কুৎসা করিবার বিষয় পাইলে জুরেকন্্র বাবুর পক্ষে ত দেশে বাস কর! দায় হইয়া উঠিবে। আমার কথায় তাহার হৃদয়ের ভাবের প্রতিধ্বনি পাইয়া, নুরেন্্র বাবু বলিলেন-_-সতীশ বাবু, আপনি ঠিক কথ! বলিয়াছেন । "আই কারণেই আমি আমার কন্তার অপৃষ্ঠ হওয়ার কথা এ পর্য্যন্ত | কাহাকেও বলি নাই। আমার ইচ্ছা গোপনে কন্তা অনুসন্ধান করিয়া যে. কোনও প্রকারেই হউক, এই মাসের ভিতর তাঁড়াকে, উদ্ধার করিব। আর নির্দিষ্ট দিনে তাহাকে ঘোষাটুরের হস্তে -দিয়া সকল দিক্‌ বজায় রাখিব। আপাততঃ মুরলাঁর অনৃশ্ত হইবার কথা, এমন কি শীতলপ্রসাদ বাবুকেও বলিব না। _সুরেন্্রনাথের বিবরণ শুনিয়া মনে বড় আতঙ্ক হইল। এই নূতন বৃত্তি অবন্যন করিয়া পর্য্যস্ত অনেক রহস্তময় কাহিনী শুনিয়াছি। ২১ বিধাহ-বিপ্লীব “অনেক প্রকারের দায়িস্ব বি লই আহার নিদ্রা, পরিত্যাগ পূর্বক পরিশ্রম করিক্বাছি: কিন্তু এরূপ জটিল গভীর" রহস্তময় অথচ এত বড় য়িতবপূর্ণ ব্যাপারে কখনও হস্তক্ষেপ করি নাই। এ রহস্ত উদ্ঘাটন। করিতে পারিলে চিরদিচনর কন্ঠ একটা ভদ্র ব্রাহ্মণ পরিবারের যথেষ্ট ইষ্ট সাধিত হইবে । 'কিন্তু বদি এই ্রামান্য ত্রিশ দিনের মধ্যে এ বরহস্তের মীমাংসা করিতে না পারি, যদি সুরেন্দ্র বাবুর কার্ধ্যটি হস্তে লইয়া শেষে একমাস পরে তাহার নিকট ক্ষমা চাহিয়া বলিতে হয় যে, তাহার কোনও উপকার করিতে পারিলাম না, তাহা হইলে আর ক্ষোভের পরিসীমা থাকিবে না। প্রথমে শুনিরাই ত ব্যাপারটা বড় গুরুতর নমস্তা পূর্ণ বলিয়া বোধ হইল। এমন কোন একটা ভিত্তি পাইলাম না, যাহার উপর আমাদিগের থিওরি স্থাপন করি । অপরাধী ধৃত হইতে ফতই বিলম্ব হইবে বিপদ ততই বুদ্ধি পাইবে । আর একমাসের মধ্যে অপঙ্গৃত কন্তার সন্ধান করিতে না পাবিলে বিপদের চরম সীমায় উপনীত হইতে হইবে । এই একমাসের পরেও কন্তাকে "জিয়া বাহির করিতে পারিলে সাফলোর অর্ধেক আনন্দ বিফল রঃ ৮ সাত পীচ ভাবিয় ছুই বন্ধুতে আড়ালে গিয়া পরামর্শ করিয়া স্থরেন্ত্র বাঁধুকে বলিলাম,__মহাশয় আপনার কেস্‌ যেক্প জটিল তাহাতে এত অল্প সময়ের মধ্যে কৃতকাধ্য হওয়া বড়ই কঠিন। আমাদিগের কথা শুনিয়া তিনি প্রায় কাদিয়া ফেলিলেন। নিরাশার ধর্্মস্পর্শী করুণস্বরে তিনি বলিলেন_-আপনারা আমাকে দাহাষ্য করিতে পরাজ্মুখ হইলে আমার একেবারে সর্বনাশ হইবে। বিবাহ-বিপ্লুৰ ২২ এ কেস্টা আপনাদিগের হাতে লইতেই হইবে। যদি আমার' ভাগাদোষে আপনারা অকৃতকার্য হন, তাহা হইলেও আদি আপনাদিগের নিকট খণপাশে আবদ্ধ থাকিব। তাহার এইরূপ কাতর অন্ুরোধেও আমরা একটু ইতস্ততঃ করিলাম । শেষে নরেশ বলিল,--একবার কাজটা হাতে লইর! দেখিতে ক্ষতি কি? তবে ভদ্রলোককে বলিয়া দেওয়া যাউকর্ যে, আমাদিগের উপর তিনি যেন সম্পূর্ণ নির্ভর না করেন। আমরাও এ বিষয়ে তান্ত করিব। আর তিনি ইচ্ছা করিলে এ কার্ধ্যের জন্য সরকারী বা বে-সরকারী অপর গোয়েন্দাকেও নিযুক্ত, করিতে পারেন । | এ প্রস্তাব শ্রবণ করিয়া সুঝেন্্র বাবু কতক আশ্বন্ত হইলেন । তিনি বলিলেন, এ বিষয়ে তিনি আমাদিগের ব্যতীত অপর কাহারও সাহাধা লইতে পারিবেন না । আপাততঃ আমাদিগের বায়নির্বাহ জন্য তিনি দুইশত মুদ্রা প্রদান করিলেন; এবং কার্যে সাফল্য লাভ করিতে পারিলে তিনি এক সহত্র মুদ্রা উপহার দিবেন বলিয়া প্রতিশ্রত হইলেন। একশত টাকার ছুইখানি নোট আমার টেবিলের উপরানাঙ্চি। ব্রাঙ্গগণ আমার ছুইটী হাত ধরিলেন। তিনি বলিলেন-্ঘমাপনার& ভদ্রলোক, আমার অবস্থাটি বেশ উপলব্ধি করিতে পারিয়াছেন ;, এ বিষয় আমি পুলিশের হস্তে দিতে পারিব না বা অপর কাহারও নিকট প্রকাশ করিতে পারিব না। তাহা না টা আপনাদিগকে এত অনুপোঁধ করিতাম না। ২ | বিবাহ-বিপ্লব অগত্যা আমরা কন্তাচুরির মামল| হস্তে লইতে স্ীরূত হইলাম। | প্রায় রাত্রি ১২টার সময় সুরেন্দ্র বাবু আমাদিগের গৃহ হইতে চলিয়া গেলেন। আমি নরেশকে বলিলাম,_আজকের সভা ভঙ্গ করিয়! চল, খাওয়া দাওয়া কর! যাক। আমাদিগের আফিসের উপরেই আমাদিগের বাসা । তখন বুষ্টি বন্ধ হইয়াছিল, কিন্তু রাজপথ জনমানবহীন। ভূত্যকে ডাকিয়া আফিম বন্ধ করিতে অনুমতি করিয়া চেয়ার ছাড়িয়। উঠিয়াছি, এমন সময় দরজায় কে আঘাত কবিল। ভৃত্য বাহিরে গিয়া সংবাদ আনিল, একজন মাড়োয়ারী ভদ্রলৌক সাক্ষাৎ করিতে.চাহেন। রী আমি বিরক্ত হইয়া বলিলাম,_-এর চেয়ে ত পুলিশের কর্ম ছিল ভাল। এই বুষ্টি-বাদলের দিন রাত্রি ১১টার সময় আবার মক্কেল আসে কেন? নরেশ বলিল,--ওহে মক্কেল লক্ষ্মী । বস, বস, কি বলে শুনে যাও। কে বলতে পারে যে আবার হাজার টাকা পাওয়া যাবে না? - ক্ীমি বলিলাম-_না। সকল লোককে আমি পরিচয় দিতে চাহি না। তুমি স্বয়ং প্রথমে শুনে পরে আমাকে বোলো। বিবাহ-বিপ্লীৰ ২৪ প্পহওস্ন পল্লিচ্ছেচ ছঠতন নম্ম নৃতন মক্কেলদের দেখা দিলাম না৷ বটে, কিন্তু তাহাদিগকে দেখিতে ছাড়িলাম না। .কুলবধূ যেমন নিজে গবাক্গান্তরালে থাকিয়া আগন্তককে বেশ উত্তমরূপে দেখিয়া লয়, আমিও তেমনি দরজার ছিদ্র দিয়! মকেলঘ্বয়কে নিরীক্ষণ করিতেছিলাম। একজন মারবাড়ী, অপরটি বাঞঙ্জালী। উভয়েই মৃত্তিমান_-এক ভন্ম আর ছার। উভয়ের অক্গপ্রত্যঙ্গগুলা যোগ করিয়া, সমভাবে ভাগ করিয়া লইলে ছুষ্টি বেশ সুপুরুষ নির্মিত করিতে পারা যাইত । বিধাতা সেরূপ কার্য্য কেন করেন নাই তাহা অন্তরধ্যামী মধুহথদন জানেন। বাঙ্গালীটি উচ্চে প্রায় ছয় ফুট। মারবাড়ীটি নাগর জুতা লইয়া পাঁচ ফুটেরও ছুই এক ইঞ্চি কম হইবে। মারবাড়ীটি খুব শ্বেতবর্ণ-ধবলকাঁয়, আর বাঙ্গালীটি কৃষ্ণবর্ণের । বাঙ্গালীর নাদিকা খুব লম্বা, মারবাড়ীর নাসিকা সেই পরিমাণে ক্ষুদ্র । উভয়েরই চল্লিশ বৎসর উত্তীর্ণ হইয়াছিল। নরেশচন্ত্র বেশ গান্তীর্য্যের সহিত তাহাদিগকে বসিতে বলিয়া মারবাড়ীটির নাম জিজ্ঞাসা করিল। আগন্তক বাঙ্গালায় বর্গিল-- “আমার নাম আমের মল। আমি দয়েহাটার মেঘরাজ রি মল ফারমের অংশীদার” নরেশ বাঙ্গালীটির দিকে চাহিল। সে বলিল--“আমার নাম ্রীস্ুবোধচন্ত্র ঘোষ । আমি এদের কর্মচারী ।» ২৫ - বিবাহ-বিপ্লব কানা ছেলের নাম পদ্মলোচন জানিয়া হাসি আদিল। সুবোধের নিজের তো! কথাই নাই, তাহার তিন পুরুষের মধ্যে কেহ সুবোধ ছিল কি না তাহা বলা কঠিন। এপ ছুর্বোধ কুটিল লোক আমি অতি অল্পই দেখিয়াছি । সুবোধ ইচ্ছা করিলে নরহত্যা এমন কি পিতৃ-হত্যা করিয়া পরক্ষণেই চটাই দাস বাবাজীর আখরায় গিয়া হরিনামে* মাতোয়ারা হইয়া “তা ধিয়া তা ধিয়া” করিয়া নাচিতে পারে, বা গড়ের মাঠে গিয়! ধীরভাবে ক্রিকেট খেলিতে পারে । তাহার মুখের ভাবের কিছু বিকৃতি হইবে না। তাহার পোষাক-পরিচ্ছদ দেখিয়া আদৌ বোধ হইল না যে, সে স্ুমের মলের কর্মচারী । নরেশ বলিল,--আপনাদের এত রাত্রে কি প্রয়োজন? অবপ্ত খুব জরুরি কাজ না থাকলে-__ তাহার কথায় বাধা দিয়া সুবোধ বলিল-_ আজ্ঞে হ্যা আমাদের বড় বিপদ। আমরা প্রায় ত্রিশ হাজার টাকার দায়ে পড়েছি । আমি খুব সাগ্রহে তাহাদের কথা গুনিলাম। নরেশও একটু কৌতুহলাক্রান্ত হইল। সুবোধ বলিল-_মেঘরাজ সুমের মলের রোকড়ের কারবার, বিবেচনা করুন হুপ্তি কেনা বেচা, টাঁকারঙ্ছলেন দেন, একরকম বিবেচনা করুন ব্যাস্কিং কারবার । . নরেশচন্দ্র স্থির হইয়া “বিবেচনা” করিল। নুবোধ বলিল,-- "আমাদের লাহোরের গদির মনিব বিবেচনা করুন হুঙ্কার মল। তিনি টেলিগ্রাফ করেছেন যে বিবেচনা করুন. নরেশ বলিল,__-কই দেখি, তিনি কি টেলিগ্রাফ করেছেন। বিবাহ-বিপ্লিব ২৬ সুবোধ তাহার পকেটগুলি একে একে তল্লাস করিল, টেলি- গ্রাফ পাইল না। শেষে সুমের মলকে তাহার পকেট দেখিতে বলিল। স্ুমের মল তাহার মেরজায়ের পকেট, কাপড়ের ট্যাক, এমন কি কাচার প্রান্ত অবধি দেখিল, টেলিগ্রাফ পাওয়া গেল ন1। কাগজ খু'জিবার সময় স্ুমের মল তাহার রক্তহথীন সাদা মুখখানা নানারপে বিকৃত করিল, ঘম ঘম ছারপোকার দংশনে মানুষ যেমন ছটফটু করে, সেই রকম ছটফট্‌ করিল, কিন্তু সুবোধচন্দ্রের মেই এক রকম মুখভাঁব। সুবোধ বলিল,_যাকৃ। কাগজখানা বিবেচনা করুন বাড়িতে ফেলে এসেছি। সংবাদের মদ্দ৷ কথাটা হচ্চে এই যে পরশ রাত্রে আমাদের লাহোরের গদি থেকে প্রায় ত্রিশ হাজার টাকা চুরি গেছে। টাকার শোকে মের মল শিরে করাঘাত করিল। ন্ুবোধের সেই এক ভাব। স্ুমের মল বলিল,--বাবু, উদ্ধার করুন। আপনাদের নাম শুনে এসেছি, উদ্ধার করুন। দেখিলাম নরেশ একটু সঙ্কটাপন্ন হইল। আমিও একটু চিন্তিত হইলাঁম। অবশ্ত সে সময় আমাদের হস্তে সেরূপ কোনও জরুরি তদন্ত ছিল না। যদি ইহারা কিছু পূর্বে আসিত তাহা হইলে নিশ্চয়ই লাহোর যাত্রা করিতাম। কিন্তু গুরেন্্ বাবুর গুরুতর কার্যাটির ভার লইয়া আমর! স্ুমের মলের চুরির তদন্ত করিতে কিছুতেই প্রবৃত্ত হইতে পারি না। নয়েশও স্থির হইয়া এই সকল কথাগুল! ভাবিয়া! লইল। নুমের ষল আগ্রহে তাহার মুখের দিকে তাকাইয়৷ ছিল। ২৭ বিবাহ-বিপ্লব তাহাকে স্থির থাকিতে দেখিয়া সুবোধ বলিল, -বিবেচন! করুন কালকের রাত্রের মেলে ছাঁড়লে, বিবেচনা করুন-- নরেশ বলিল,বিবেচনা সবই করছি, এখন আমার পক্ষে কলিকাতা ছাড়া অসম্ভব। যদি দুঘণ্টা আগে আঁস্তেন-- স্থমের মল বলিল--ন1 মহাশয়, এ কাজ আপনাকে নিশ্চয়ই কর্তে হ'বে। যদি অপর কাজ নিয়ে থাকেন তো ছেড়ে দিন। আমার টাকা উদ্ধার করতে পারলে নিশ্চয়ই পাচ হাজার টাক। বকৃশিস্‌ দিব। নরেশ বলিল,-_তা'ত বুঝলুম, কিন্তু একটু পূর্বে স্থবোধ বাধা দিয়া বলিল--এঁ লোকটি বেরিয়ে গেল, বিবেচন! করুন, তার কোনও মামলা বুঝি আপনি নিয়েছেন? তা তার টাকা বিবেচনা করুন ফেরত দিন। নরেশ একটু ইতস্ততঃ করিয়া বলিল-_না, হ্যা, গুর কিছু মামলা নেই । স্থমের মল সুবোধের দিকে চাহিল। ন্থুবৌধ বলিল, ন! উনি বেরোবার সময় আমাদের বলছিলেন ষে ওর একটা গুরুতর মামলা আছে। | সনরেশ বলিল-হ্যা গুর জন্তাই যেতে পারবো না। স্থমের মল স্থবোধের মুখের দিকে চাহিল, শিরে করাঘাত করিল, হাতজোড় করিয়! বলিল--মশায় আমার কেন্টি নিন। স্ুবোধও হাতজোড় করিল।: তাহার লম্বা নাষিকার জন্ত তাহাকে চিত্রের গরুড় পক্ষীর মত দেখিতে হইল। নরেশ ২ বিবাহ- বিপ্লব ২৮ সম্মত হুইল না। তাহারা আবার পরদিন সন্ধার সময় আসিবে বলিয়৷ গেল । তাহারা চলিয়া গেলে আমি নরেশের প্রতি একটু অসন্তোষ প্রকাশ করিলাম। অসন্তষ্ট হইয়াছিলাম, তাহার বিচক্ষণতার অভাবে । সুবোধ -লোকটার উপর কেমন একটা সন্দেহ হইতেছিল। আমার বোধ হইল, সে জানিতে আসিয়াছিল যে আমরা সুরেন্দ্র বাবুর কন্ঠাচুরির মামলার ভার লইয়াছি কি না! আমার মনে হইতেছিল যে, মে আপাততঃ নরেশকে কলিকাতার বাহিরে পাঠাইয়া বালিকা চুরি মামলা বন্ধ রাখিতে চাছে। আমার কথা শুনিয়া নরেশ হাদসিল। সে বলিল,--তুঁমি একটু বেশী সাবধান। সর্বমত্ান্তং গহিতং | উভয়ে তর্ক করিলাম। কিছু স্থির হইল না। নরেশ হাসিয়া বলিল--এস পাশ! চালি। যদি হাত খোলার দান পড়ে, বুঝবো তোমার জিত,_সুবোধ মেয়ে-চুরি ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট । হাসিয়! পাশ! চালিলাম | দান পড়িল--ছণতিন নয় । অ্রষ্ঠ পল্ষিচ্ছেল্্‌ মন্দেহ পরদিন প্রভাতে বশোহর যাইবার সময় ট্রেশে সুবোধকে দেখিয়া আমার হৃদয়ে সন্দেহট! বদ্ধমূল হইল। মনে হইল, 'পাশার দানটা কেবল দৈবাৎ পড়ে নাই। আমি তাহার গাড়ীতে ২৯ | বিবাহ-বিপ্রাব গিয়া বসিলাম। তাহার সহিত কথ! কহিতে চেষ্টা] করিলাম । কিন্তু সুবোধচন্ত্র লম্বা কথোপকথনে প্রবৃত্ত হইল না। সাহেবেরা তিন মাস এক জাহাজে ভ্রমণ করিয়া পরস্পরের নাম অবধি জিজ্ঞাসা করে না। কিন্তু আমাদের মধো ট্রেণে আলাপ করিবার ম্পৃহাটা যেন একটু অতিরিক্ত । লোকে ট্রেণে আধ-ঘণ্টা একত্র থাকিলেই পরস্পরের সহিত সথাস্কাপনে প্রবৃত্ত হয়। আমি সনাতন প্রথা অনুসারে একটি সিগারেট ধরাইয়া স্থবোধকে বলিলাম__ ইচ্ছা! করুন। সুবোধ একটু হাসিয়া বলিল-_ আমি চুকুট থাই ন1। আমি বাঁললাম,_-তা” বেশ করেন। নেশাটা যত কম করা! বায় ততই ভাল। স্থবোধ কাগজ পড়িতেছিল। বলিল,_স্থ' ! আমি একটু স্থির থাকিয়! বলিলাম,_-কাগজগুল1 একঘেয়ে কি লেখে? সুবোধ পূর্ব হাসিয়া! কাগজথানি আমার হস্তে দিল। আমি এবার বিপদে পড়িলাম। কাগজখানি পড়িবার ভান করিয়া মুখের সম্মুথে ধরিতে হইল। আমি তাহাকে দেখিস্কুর অবসর হারাইলাম। সুবোধ আমাকে আপাদ-মস্তক নিরীক্ষণ করিল। আমি কাগজথান৷ তাহাকে প্রত্যর্পণ করিয়া । বলিলাম,-_না কিছু নেই। ন্ুবোঁধ আবার কাগজখানি লইয়া পড়িতে লাগিল। আমি তাহাকে নানা রকম তর্কের মধো টানিতে চেষ্টা বিবাহ-বিপ্রব ' ৩৪ করিলাম । বারাসত ষ্টেশনে একটি দশম বর্ষীয়া বালিকার সিন্দুর-রঞ্জিত সিঁথি দেখিয়া বাল্যবিবাহ সম্বন্ধে বক্তৃতা আরস্ত করিলাম, গোবরডাঙ্গায় স্ফীতোদর নরনারী দেখিয়! ম্যালেরিয়ার বে-আদবী. সম্বন্ধে তীব্র মন্তব্য উদগার করিলাম, এমন কি বিপবা-বিবাহের কথারও ইঙ্গিত করিলাম, কিন্তু ফল একই হইল। যশোহরে উভয়েই নামিলাম । সে গাড়োয়ানকে বলিল, _কিন্ু কেইয়ের গদি। আমি ষ্টেশনে একটু অপেক্ষা করিয়া নুরেন্্র বাবুর বাসার দিকে চলিলাম। ভনগুক্ন সল্িচ্ছেদি অরক্ঞাঘনে যশোহর হইতে চাঁচড়া যাইবার পথে নির্জন স্থলে একথাঁনি সুদৃশ্য বাঙ্গালায় সুরেন্দ্র বাবু বাম করিতেন। বাঙ্গালার সম্মুথে প্রায় এক বিঘা! খালি জমির চারিপ্রান্তে দৌপাটি ও কেন! ফুলের গাছ, বাঙ্গালার চারিদিকে বড় বড় আম গাছ। কুটারটির পশ্চাতে একটু সরু রাস্তার ধারে একটি ডোবা । ঞ্ডাবার পশ্চাতে বেশ নিবিড় . বৃক্ষতশ্রেণী | পরে শুনিয়াছিলাম, সেটা অবনী বাবু নামক একটি যুবক জমিদারের প্রমোদোগ্ান । উদ্ভানের ভিতর একটি সুবৃহৎ পুক্ধরিণী আছে। | - - স্থরেন্্র বাবু কন্তাটির ফটোচিত্র দেখিলাম । মুরল! খুব ৩১ 3 বিবাহ-বিপ্লুব নুন্দরী। তাহার চিত্র দেখিলে যুবতী বলিয়া! ভ্রম হয়। সুরেন্দ্র বাবু বলিয়াছিলেন, মুরলার বয়স তের বৎসর মাত্র। বাঙ্গালার মধ্যে হল ঘরটি বেশ সুসজ্জিত। তাহার এক দিকে দুইথানি ছোট ছোট কক্ষ। একথানিতে সুরেন্দ্র বাবু বসিয়া কাজ করিতেন, অপরখানি তাহার শয়নগৃহ। হল-ঘরের অপর দিকের কক্ষ দুইটি অন্দর-মহলের মধ্যে। তাহার পর প্রাচীর পরিবৃত একট! প্রাঙ্গণে রন্ধন-গৃহ প্রভৃতি ছিল। বাঙ্গালার সম্মুখে খালি জমির এক প্রান্তে একটি খোড়ো ঘরে স্ুরেন্্রবাবুর বাশের টম্টম্‌ ও টাট্ট, ঘোড়া থাকিত। প্রতিদিন প্রভাতে উঠিয়৷ মুরলা অবনী বাবুর উদ্যান হইতে ফুল তুলিয়া আনিত। যে দিন মুরলা অদৃষ্ত হয়, সে দিন প্রভাতে উঠিয়া সুরেন্দ্র বাবু দেখিয়াছিলেন যে, হল-ঘরের বারান্দার দিকের দ্বার উন্ুস্ত। বারান্দায় কতকগুলা আরাম-কেদাঁরা থাকিত। একখানি আরাদ-কেদারার উপর তাহার ফুল তুলিবার সাঁজিটি পাওয়া গিয়াছিল। ইহা! ব্যতীত মুরলার অপর কোনও চিহ্ন ছিল না। সংসারে সুরেন্দ্র বাবুর স্ত্রী, মুরলা ও একটিমাত্র দশম বর্ষীয় পুক্র | স্থ্ুত্রটির নাম রমেন্ত্র। রমেন্দ্রও অবনী বাবুর উদ্যানে ভ্রমণ করিত। অবনী বাবু তাহাকে ভ্রাতার মত ভালবাসিতেন। আমি বলিলাম--অবনী বাবুর বয়ম কত? স্ুরেন্্র বাবু বলিলেন--অবনী বাবু কুড়ি বাইশ বছরের হইবেন। বি, এ পাশ করা খুব ভাল ছেলে। | ববিবাহ-বিপ্লীব ৩২ শুনিলাম, অবনী অবিবাহিত। খুব ঘোড়ার সথ। মাঝে মাঝে স্ুরেন্ত্র বাবুর বাটার পশ্চাত্তের ডোবায় বসিয়া মাছ খরেন। | আমি একটু বিস্মিত হইলাম। অবনীর নিজের অত বড় পুক্করিণী থাকিতে তিনি যে কেন পরের ডোবায় বসিয়া মাছ ধরেন তাহ! বুঝিয়া! উঠিতে পারিলাম না। একটা জঘন্ত সন্দেহ একটু একটু মাথা তুলিয়! মনের ভাবগুলাকে অপবিত্র করিতেছিল। আমি জিজ্ঞাসা করিলাম,_-অবনী বাবু কোথায়? সুরেন্্র বাবু বলিতে পারিলেন না__রমেন্ত্র বলিল-__তিনি বেনারসে গেছেন। | “কবে?” “তা বল্‌তে পারিনি । পাঁচ ছ দিন হ'বে।* হিসাব করিয়! বুঝিলাম__মুরলা অদৃত্ত হইবার ছই একদিন পূর্বেই অবনী বেনারসে গিয়াছেন। _ আমি বলিলাম-_অবনীর ইয়ার-বন্ধু সব কি রকম? এবার সুরেন্্র বাবু একটু বিরক্ত হইলেন। বিরক্ত হুইবার কথা। তিনি বলিলেন-_মশাই আমার মেয়ে”_-ছোট মেয়ে ভদ্রলোকের মেয়ে। আর অবনী শিক্ষিত লোক। অতন্তি মধুর প্রক্কৃতি। তার প্রাণে খ- ৯৮ আমি জিব কাটিয়া বলিলাম,_ন! তা না। | . তাহার পর মুরলার জিনিষপত্র অনুসন্ধান করিলাম । ভাঙ্গা টিনের বাক্নে কতকগুল! বিজ্ঞাপনের ছবি, পুঁথির মালা ও একটা ৩৩ ' * বিবাহ-বিপ্রব ভাঙ্গা কলমের সঙ্গে তিন থানা পত্র পাইলাম। স্ুরেন্ত্র বাবুর অসাক্ষাতে পত্রগুলা পকেটস্থ করিলাম। স্ুরেন্্র বাবু টেবিলের উপর একখানা বড় বিচিত্র রকমের লেখা কাগজ পাইলাম। প্লেখানিও নিঃশবে পকেটে পুরিলাম। স্ুরেন্ত্রবাবুর নিকট বিদায় লইয়া একাকী অবনী বাবুর বাঁটীতে গেলাম। তাহার ফটক, পথের অপর দিকে । পে দিকে জনপ্রাণীর বসবাস নাই। অবনীবাবুর একটি বৃদ্ধ কর্মচারীর নিকট হইতে নানা কৌশলে অবধনীর হস্তাক্ষর সংগ্রহ করিতে চেষ্টা করিলাম; কিন্তু কুতকার্ধ্য হইলাম না। লোকট! জমিদারী সেরেস্তার পুরাতন কর্মচারী; তাহার নিকটে অবনীর কাণীর ঠিকানাও পাওয়া গেল না। অগ্ন্ম পিজি পত্রাবলী নরেশ বলিল--“একি হরফ বাবা! নিশ্চয় বরমিজ হবে 1” আমি বলিলাম-_?ধোদা জানেন। কাগজ থানা সুরেন্্র বাবুর টেবিলের উপর একখানা বইয়ের মধ্যে ছিল, নিয়ে এসেছি ।” নরেঙা বলিল--?সুরেঙ্ বাবুকে বলনি ফেন ?” সুরেন্ত্র বাবুর পূর্বরজীবন-সপ্ধন্ধে আমার একটু সন্দেহ হইরা- ছিল এ পত্রথানা পড়িয়া সে সন্দেহ একটু দৃঢ় হইয়াছিল। তাই স্তাহাকে পত্রদস্বন্ধে কিছু বলি নাই। পত্রের কোন্‌ দিক্‌ ফোজ।, তাহা নির্ণয় করিতে আমাদের পাঁচ মিনিট সময় গেল। বিবাহ-বিপ্লীব ৩৪ শেষে একটা বোধগম্য অক্ষর দেখিয়া উল্টা সোজা ঠিক করিলাম। পত্রখানা এইরূপ । নরেশ বলিল--“এ পত্র নয়। বোধ হয় মুরলা, কি রমেন্তর ছবি একেছে।” আমি ঘাড় নাড়িলাম। সে বলিল,_-“আচ্ছ! বাঙ্গাল! চিঠিগুল1 পড় ।” আমি প্রথম পত্রথান৷ পড়িতে লাগিলাম। “রাগ করিয়াছ? জ্ভিমান করিয়াছ? তাই সাক্ষাৎ পাই না। সাক্ষাৎ পাই না চোখে। মনের ভিতর হইতে সরিয়া যাইবে, মানস-নেত্রের অগোচরে লুকাইবে সে সাধ্য তোমার নাই। তুমি আমার উপর রাগ কর, আমাকে ত্বণ! কর, আমার জীবন- পথের ত্রিসীমায় আসিও না। আমি কিন্ত তোমাকে দেখিতে পাইব, তোমার ও মানস-বিমোহন রূপের জ্যোতিজ্ে মজিয়! থাকিব, অহরহঃ তোমার কুরঙ্গনয়ন আমার প্রাণে আনন্দের লহ" ছুটাইবে। সে সুখের বিরোধী হও, তখন তোমার স্মৃতি, মুছিয়া, ফেলিবার চেষ্টা করিব। তাহাতে যদি কীদিয়! মরিচ্ভে' হয় তো! কাদিয়া মরিব--কার্ণ সে বাঁপন! তোমার । তোমার বাসনার ৩৫ বিবাহ-বিপ্লীৰ বিরুদ্ধে কার্য্য করি এমন সাধ্য আমার নাই। তোমাকে ধ্যান করিয়া সুখ পাই সে স্থখে বঞ্চিত করিতে চাঁও, তোমার ধ্যান করিব না। সেই দিন হইতে আমার প্রকৃত দুঃখ আরস্ত হইবে। সেই দিন হইতে বুঝিব নরক-যন্ত্রণা কি ভীষণ! সেই দিন হইতে বুঝিব আগুনে ঝলসিয়া মরা কি কষ্ট! এখন বল চোখের আড়াল হইয়া তুমি আমায় ঠিক শাস্তি দিতে পার নাই। দেখিবার সুখ অপেক্ষা এ ক্ষেত্রে ভাবিবার সখ অধিক । জাগরণে তোমার স্থগঠিত দেহ লতার স্পনন দেখা অপেক্ষণ, স্বপনে তোমার মত সুবর্ণলতিকার দর্শন পাওয়া অধিক প্রীতিকর। তোমার কণ্ঠের বীণার বঙ্কার শ্রবণ করা৷ অপেক্ষা প্রাণের মধো তোমার সুুললিত গীতিরব উপলব্ধি কর! অনেক বেশী আনন্দ- দ্ায়ক। তবে কেন চিঠি লিখি? কেন জান? জানিতে চাহি তুমি আমার হ্ৃদয় হইতে তোমার স্তৃতিটুকু মুছিয়া ফেলিতে বল কি না। প্রভাতে উঠিয়! গাছের কোটরে দেখিব। তোমার এই একটা কথার জন্য উৎকণ্ঠিত থাকিব। শুহাসিনী বঞ্চিত করিও না। একটা কথা লিখে! মাত্র একটা কথা” পত্রে কোনও তারিখ ছিল না। কাহারও নাম ছিল না। কাহম্ হস্তাক্ষরে লিখিত তাহাও জানিতাম না। নরেশ কিন্তু সিদ্ধান্ত করিয়া লইয়াছিল যে পত্রথানা অবনী মুরলাকে লিখিয়া- ছিল . দে পত্রের আবেগ-পূর্ণ ভাষা শুনিয়া ম্মিতমুখে বলিল__ “ও: !গ্ছৌড়া একেবারে জেটিয়ে গেছে। তাই হিন্দুর ছেলের অল্প বয়সে বিবাহ দেওয়ার নিয়ম জারি হ'য়েছে।” বিবাহ-বিপ্লাৰ | টি আমি বলিলাম,--“তুমি কি ক'রে জান্লে যে কোন্‌ ছোঁড়া লিখেছে । কার চিঠি তুমি আমি কি জানি ৯* নরেশ হাসিয়া বলিল--তুমি আমি গাধা নই ঝলেই জানি। মুরলার বাপ যা করে করুক, আমি আজই তাকে বল্ব ষে অবনীমোহন বন্দ্যোপাধ্যায়, বি, এ, জমীদার মহাশয় একটা উপন্যাসের নারক সাজিয়া তাহার সুন্দরী শিশু সরলা বালিকাটিকে উধাও ক'রে নিয়ে গেছে। হাজার টাক! পকেটে ক'রে মেড়ো! মন্কেলের পাচু হাজারের চেষ্টায় লাহোর রওনা হ'ব। আমি তাহাকে তিরস্কার করিলাম। যদিই অবনীর দ্বারা এ ব্যাপার ঘটিয়া৷ থাকে, মুরলাকে তো উদ্ধার করা কর্তবা। নরেশ বলিল--“বেশ, সে কথা ভিন্ন। আচ্ছা আর একথান। পত্র পড়।” আমি পড়িলাম-_ “পত্র পাইয়াছ বুঝিলাম, কিন্তু উত্তর দাও না কেন? তোমাকে চোখে না দেখিয়া ধাণন করিলে থাকি ভাল; একথা! লিখিয়াছিলাম বলিয়া? ঘোর মিথ্যা কথা, পাগলের প্রলাপ-' বচন। তোমায় না দেখিগ্না থাকি ভাল? শুনিয়া নিজেরই হাসি পায়। সাকার দেবীর পৃজ! ছাড়িয়া নিরাকার দেবীর নীরব মানমিক উপাসনায় আনন্দে থাকি? ভগ্ামির কথা । শাগল হইয়াছি, ডুবিয়াছি--ডুবিবার সময় তুচ্ছ তৃণগুল যাহা সম্মুখে পাইতেছি প্রাণপণে ধরিতেছি। ধ্যান ধ্যানই ভাল; কিন্ত ধ্যানের কি ক্ষমতা আছে? আদল ছাড়িয়া ছাক়্া ধঙ্ছিগন কি প্রাণে শাস্তি আসে? চাদের আলো! ছাড়িয়া! চিত্রের শশীর দিকে ৩৭ | বিবাহ-বিপ্লৃব আজীবন তাকাইলে কি প্রাণোন্মাদক ত্রপ্ধ রশ্মির পরিচয় পাঁওয়। যায়? সুলোচনে, কথা কহিব না, তোমার চোখের সামনে পড়িব না, তোমাকে এ মুখ দেখাইব না, কিন্তু তুমি একবার দেখা দিও। একটা! সামান্য ভিক্ষা দিতে কেন কুষ্ঠিত হইতেছ, একটা দগ্ধ প্রাণকে শীতল করিতে কেন বিমুখ হও? আমি এখনই তোমাকে বিবাহ করিবার প্রস্তাব পাঠাইতে পারি, কিনুঙ্সৈরপ বিবাহ তো দেশে সর্কত্র হইতেছে । তাহারই ফলে তো গৃহে গুহে অশান্তি, ঘরে ধরে অনুখ। একবার বল আমায় দ্বণা কর না, একবার বল আমায় গ্লীতির চোখে দেখিতে পারিবে, তাহা হইলে তোমায় আমার করিব, ছু'জনায় জীবনের মত বাসা বাধিব, দুই দেহে এক প্রাণে আদর্শের দিকে ছুটিব। তোমার উত্তরের প্রতীক্ষায় রহিলাম ; কিন্তু মনে রাখিও এ প্রতীক্ষা__ভীষণ প্রতীক্ষা |” নরেশ বলিল, “ছে'ক্রা বুঝেছে ভাল । দেশে ঘরে ঘরে অশান্তি আছে-আর তা”র কারণটা হচ্চে স্বাধীন প্রণয়ের অভাব। বেশ কথা ।” আমি হাসিয়। বলিলাম,“এই থেকেই বোধ হচ্চে যে অবনীর দ্বারা এ কার্য হয়নি। লোকটার একটুক্খনীতিজ্ঞান আছে, পেটে বিগ্যে আছে, প্রাণে কবিতা ঘাছে।” নরেশ ব্যঙ্গ করিয়৷ বলিল,_-“আর প্রাণের ভেতর আগুন আছে, হাতে পয়সা আছে, অধীনে লোক আছে। এ ক্ষেত্রে অবনীর.সঙ্গে সুরেন্্র বাবুর কণ্ঠাচুরির ব্যাপারটা যোগ করিতে বড় বেশী কল্পনার দরকার হয় না।” বিবাহ-বিপ্রীব . | ৩৮ আমি সে কথার ঠিক প্রত্যুত্তর দিতে পাঁরিলাম না। তৃতীয় পত্রখানি পড়িতে আরস্ত করিলাম । “এখন বুঝিলাম কেন সাক্ষাৎ পাই নাই। সব শুনিয়াছি, সব বুঝিয়াছি। গর্ব করিতাম যে, মানুষ নিজের নুথ-ছুঃখের বিধাতা । এখন বুঝিলাম একজন কঠোর নির্মম বিধা্ আমার্ীর ভাগ্যের উপর আধিপত্য করেন। ভাগোর উপর আধিপত্য করেন করুন, কিন্তু আমার মনের স্বামী আমি। তু দু'দিন পরে অপরের হইবে তাহা জানি। পরস্ত্রীকে গোপনে ধ্যান করা মহাপাপ, সে কথা হিন্দুর ছেলে আশৈশব বুঝিতেছি। কিন্তু তাহ! সত্বেও তোমাকে ভালবাপিব, পরক্ত্রীর ধ্যান করিব, যত দিন বাচিয়া থাকিব মনের মধ্যে তোমাকে রত্ব-সিংহাসনে বসাইয়া ষোড়শোপচারে তোমায় পূজা দিব। তাহার পর নরক ভোগ করিতে হয় করিব-_ন্বর্গভোগ তো প্রথমে করিয়া লই। “এ পাপের হস্ত হইতে এখন তুমি আমায় বাচাইতে পার। তোমার একটা কথায়, একটা ইঙ্গিতে ভগবানের স্থষ্ট জীব চিরদিনের জন্য বীচিয়! যায়। একবার বল, তুমি আমাকে শ্রীতির চক্ষে দেখিতে পারিবে, তখন দেখিবে আমি তোমাকে ধন্দপত্বীত্বে গ্রহণ করিতে পারি কি না। একটা কথা একটা ইঙ্গিত। তুমিও বিধাতার মত পাষাণ হইও না ।” নরেশ বলিল,_-একট! ইঙ্গিতের ফলে বাছ! ধন তাকে. উধাও ক'রে নিয়ে গেছে। তবে একট! ভাল যে, ছোড়। মেয়েটাকে বিয়ে কর্বে। : ৩৯ বিবাহ-বিপ্লিব আমি কিন্তৃঠিক বুঝিলাম না যে, পত্রগুলা অবনীর লিখিত এবং পত্রের সুন্দরী মুরলা। শনবন্ন পল্লিচ্ছেছ প্রেমিক অবনী অবনীর কাশীর ঠিকান! ভাগাক্রমে পাইয়াছিলাম বলিতে হইবে। কয়দিন তাহার বাটির আশে পাশে ঘুরিয়া ছিলাম । এক দিন দেখিলাম, সেই ফটকের পার্খে মহাসমারোহে ভালুক নাচ হইতেছে। দুইটি ভল্লুক লইয়া নাচওয়ালার! নান! প্রকার তামাসা দেখাইতেছিল। ভন্লুক-বধূ অভিমান করিয়! বসিয়াছিল, তাহার স্বামী যুক্তহস্তে ভগবানকে ডাকিতেছিল। অবনী বাবুর কন্মচারিবুন্দ এ দৃশ্তে মোছিত হুইয়! গিয়াছিল। ভালুকওয়ালারা সেই অবসরে পয়ন! চাহিতে আরম্ভ করিল। অনেকগুলি পয়স! পড়িল; কিন্তু তাহার! সন্তুষ্ট হইল না। অবনী বাবুর একটি যুবক কর্মচারীর নিকট গিয়া একজন ক্রীড়া-প্রদর্শক বলিল,__কর্তা বাবু, আপনার এতো! বড় বাড়ী। বুড়াকে একটা কোট দিতে হোবে। সকলে হাসিল। কর্মচারী বলিল--বাবা, আমার বাবারও বাড়ি না। ধাঁর বাঁড়ী তাঁকে কাশীর গণেশ মহল্লায় পাবে এখন। কম্মাচারীর বসিকতায় সকলে হাসিল। আমি তল্লুকওয়ালাকে দ্রইটি পয়স! দিয়! আনন্দিতমনে কলিকাতায় ফিরিলাম। ৪*. কাশীতে গিয়া অবনী বাবুর সাক্ষাৎ পাইয়াছিলাম। পরিচয় করি নাই। দূর হইতে কয়েক দিন তাহাকে লক্ষ্য করিলাম। তাহাকে যতই লক্ষ্য করিতে লাগিলাম, ততই কিন্তু নরেশের সিদ্ধান্তের অপারত্ব উপলব্ধি করিলাম। অবনীর বিলাস-বদ্ধিত নপ্লর দেহ, মুখে উচ্চ ভাব প্রকটিত; তবে তাহার চক্ষে তেমন স্ব্যোতিঃ ছিল না। তাহার চক্ষে একটা অবাক্ত বেদনার ভাক স্পষ্ট ফুটিয়া উঠিতেছিল। এরূপ লোকের পক্ষে একট! গৃহস্থের কন্ঠাপহরণ করা যেন কেমন একটু অসম্ভব বলিয়া বোধ হইতে লাগিল। বেশ ভাল রকম পরীক্ষা করিয়া দেখিলাম, তাহার, মুখে অন্তাপের লেশমাত্র ছিল না । তাহার হস্তাঁক্ষর সংগ্রহ করিতে না পারিলেও স্পষ্ট বিয়া, ছিলাম যে, পত্রগুলা! তাহার লেখা । অবনী ষে প্রেমিক সে বিষয়ে সন্দেহ ছিল না। তাহাকে দেখিয়া! আমার দয়া হইতে ছিল। একটা ধনী বংশের কৃতবিদ্য যুবকের পক্ষে ভদ্রলোকের সরল! কুমারী কন্তাকে ওরপ পত্র দেওয়া যে ্যায়বিগহিত কার্য, ইহার সেটুকু নীতিজ্ঞান ছিল না, ইহা ভাবিয়া বড়. ক্ষুপ্জ হইলাম ।. ইংরাজি নভেল, বিলাতী আদর্শ এদেশের ক্ষেত্রঘিশেষে পড়িয়া কিরূপ কুফল প্রসব করিতেছিল তাহা ভাবিয়া বাস্তবিকই ম্ুদাহ হইল। বুঝিলান, ইংব্রাজি শিক্ষার সঙ্গে সঙ্গে বাঙ্গালী যতদিন না যুবকদের হিন্দু করিতে পারিবে ততদিন দেশের অবস্থা মোটেই শুধরাইবে না। আমাদের সহিত যুবক রাখালচন্ত্র বন্দ্যোপাধ্যায় কার্য করিত । ৪১ বিবাহ-বিপ্লক রাখালকে আমরা যে সকল কর্মে নিযুক্ত করিতাম রাখাল সেই সকল কাধ্য সুচারুরূপে সম্পন্ন করিত। অবনীর সহিত, বন্ধুভাবে মিশিবার জন্য রাখালকে বারাণদীধামে আনিয়াছিলাম। বারাণনীর একটা জনাকীর্ণ ঘাটের প্রস্তর-সোপানের উপর ফ্রাড়াইয়া আমরা জনত| দ্েখিতেছিলাম। ঘাটের একটা উচ্চ চাতালের উপর কোট পেন্ট,লেন পঞ্জিয়া মাথায় হিন্দস্থানী পাকড়ী বাধিয়! অবনী ভিড়ের প্রতি চাহিয়াছিল। তাহার পার্খে তাহার এক বন্ধু পা ফাক করিয়া! কোমরে হাত দিয়া ঈাড়াইয়াছিল। কিরূপ কথাবার্তী কহিলে অবনীর সহিত সথা স্থাপন করিতে | পারা যায়, রাখালকে দে সম্বন্ধে উপদেশ দিয়া অবনীর নিকট । পাঠাইয়া দিলাম। দেখিলাম, রাখালের সহিত অবনী কথোপ- ৷ কথনে নিযুক্ত হইল। প্রায় অর্দ্ঘণ্ট। ঘাটের উপর কথাবার্তা ৷ কহিয়া রাখাল, অবনী ও তাহার বন্ধুর. সহিত সহরের দিকে চলিল। আমি বাসায় ফিরিলাম। | রাখাল ফিরিলে তাহার নিকট হইতে সকল কথা শুনিলাম। অবনীর বন্ধুটি কলিকাতা হইতে আসিয়াছে । অবনী আপনাকে কলিকাতার লোক বলিয়৷ পরিচয় দিয়াছে । কিন্তু প্রকৃত নাম বলিয়াছে। সন্ধ্যার সময় রাখালকে বাসায় যাইতে অনুরোধ করিয়াছে। | আরও তিন চারি দিন কাশীধামে রহিলাম। বিশেষ কিছু বাদ পাইলাম না। রাখালকে তাহার প্রহরীস্বরূপ রাখিয়! কলিকাতাভিমুখে প্রত্যাবর্তন করিলাম। বিবাহ-বিপ্লীক ৪২ মোগলসরাই ষ্টেসনে কলিকাতার গাড়িতে উঠিতে গিয়া ট্রেণে সুমের মলের সাক্ষাৎ পাইলাম। সে কাণীর গাড়ী হইতে নামিয়াছিল কি ন! স্থির করিতে পারিলাম না । দেস্পেক্ন পল্িচ্ছেচ্ পরিহাস মুলার বিবাহের মাত্র দশদিন অবশি্ই ছিল। মাত্র দশ দিন। প্রায় তাহার দ্বিগুণ কাল এই জটিল প্রশ্ন লইয়া বিধিমতে আলোচনা করিয়াছি, কত দিকে ছুটিয়াছি, কত বাদানুবাদ করিয়াছি, কিন্তু তাহার একটা মীমাংসা করিয়া উঠিতে পারি নাই। প্রতিদিন কর্তব্য সাধন করিয়া! দিনাস্তে যখন নিজ কক্ষে বসিয়। ধূমপান করিতাম, তখন মুরলার কথা মনে হইলেই নিজের প্রতি শ্রদ্ধা হারাইতাম। ভাবিতাম, আমরা নিতান্ত অপদার্থ, আমাদের সামান্য শক্তি লইয়! নুরেন্ত্র বাবুর নিকট গুরুভার গ্রহণ করা অত্যন্ত অবৈধ হুইয়াছে। নরেশ আমার মত এত ভাবিত না। ম্বভাবতঃই সে আমোদপ্রিয়, একটু লঘৃচিত্ত। তরে কৃতে যদি ন সিধযতি কোহত্রঃ দৌষ£--সে এই নীতি অনুসরণ করিত। সুরেন্দ্র বাবুর সহিত আমার আন্তরিক -সহান্ৃভৃতি ছিল) কিন্ত সত্য কথা বলিতে কি, তীহাকে আমি আদৌ বিশ্বাদ করিতে পারিভাম না । আমার সর্বদাই মনে হইত, পনি. যেন আমাদের ৪৩ বিবাহ-বিপ্লিব নিকট হইতে কি একটা গুরুতর ব্যাপার গোপন করিতেছেন। সেই অপাঠা লিপিথান! পাইয়! তার উপর আমার সন্দেহটা বেশ বদ্ধমূল হইয়াছিল। সন্দেহ অপর কিছুই নয়। সন্দেহ হইয়া- ছিল, তাহাঁর পৃর্বজীবন-সস্বন্ধে তিনি মাত্র দেড় বংসর যশোহরে আনিয়াছিলেন, কিন্তু এই দেড় বৎসরের মধ্যে তাহার সহিত কাহারও পরিচয় হয় নাই । তাহার কন্তার বিবাহের সম্বন্ধ হইতেই এক রকম বেশ বুঝিতে পারিয়াছিলাম যে, তিনি অর্থলোলুপ । তাহার পুর্ধজীবনের কথা জিজ্ঞাসা করিলে তিনি হাসিতেন। যশোহরে আসিবার পূর্বে তিনি কোন্‌ দেশে থাঁকিতেন, সে কথা জিজ্ঞাসা করিলে তিনি বলিতেন পশ্চিমের নানা স্থানে ঘুরিয়া তিনি যশোহরে আসিয়াছিলেন। তাহার পূর্ব জীবনের সহিত তাহার কন্তা-হরণের যে একটা সংশ্রব ছিল, দে কথাটা আমার মর্মে মর্ষে ধ্বনিত হইতেছিল। আর সে বিচিত্র পত্রথানা--সেখানা কি তাহা (না জানিলে আমাদের তদন্তের সাফল্য হইবে না, সে কথাটা ও কে (ধেন প্রাণের মধ্যে ঢক্কানিনাদে ঘোষিত করিতেছিল। আজ সাহসে ভর করিয়া তাহার হস্তে সেই পত্রখানা দিলাম। 'কি মন্ত্বলে যেন সুরেন্দ্র বাবুর মুখের একটা ভাবাস্তর ঘটিল। [আমি তীন্ভুকে বলিলাম, মশায় এ চিঠিথানা পড়,ন দেখি। সুরেন্দ্র বাবু একটু প্ররৃতিস্থ হইয়া বলিলেন_-এ চিঠি আপনি পেলেন কোথা থেকে? | আমি বলিলাম,--মাফ করবেন। একটু বেয়াদবী ক+রে আপনার বাস! থেকে চিঠিখানা চুরি ক'রে এনেছি । বিবাহ-বিপ্লুব 88 স্তরের বাবু ক্ষণকাল নিস্তব্ধ থাকিয়া বলিলেন,_-এ চিঠির সঙ্গে . আপনার তদন্তের কোনও সম্পর্ক নেই। আমি বলিলাঁম--মশীয় সে কথা জানলেন কি করে? | স্থরেন্ত্র বাবু একটু দুঢ়স্বরে বলিলেন-_আমি চিঠির মর্ম অবগত বলেই বল্ছি। যে কার্ধ্য আপনাদের হাতে দিয়েছি তার তদন্ত না ক'রে বাজে-_ আমি অপস্তোষ প্রকাশ করিয়া বলিলাম--মশায় তা” যদি মনে হয় ত আপনার মামলা আমাদের হাত থেকে তুলে নিন। কথাগোপন করলে আমরা কেমন ক'রে আপনার কাজ করব? সুরেন্দ্র বাবু অপ্রস্তত হইলেন । ক্ষম! রি করিয়া কাতর- কষঞ্ঠে তিনি বলিলেন-_-আমি দিব্যি করে বল্তে পারি সতীশবাবু, যেও পত্রের সঙ্গে আমার কন্ঠা-ঢুরির কোনও সম্বন্ধ নেই । আমি তাহাকে বুঝাইয়া বলিলাম যে, একটা তদন্ত সম্থন্ধে কোন্‌ সংবাদটা আবশ্তক কোন্টা অনাবগ্তক সে কথা তাহার বিচার করিবার ক্ষমতা থাকিলে তিনি আমাদের নিকট আদিতেন না। তিনি এ বিষয়টাকে নিরর্থক বলিয়া মনে করিতে পারেন; কিন্তু আমি তাহা হইতে কোনও সুবিধা পাইতে পারি।” আমার নিকট এ কথাটা তাহার প্রকাশ করা কর্তৃব্য। এ সুরেন্্রবাবু বলিলেন,_-সতীশবাবু, বিষয়টা আমার ব্যক্তিগত. কোনও গোপনীয় ব্যাপার আছে। এর সঙ্গে এব্যাপারের কোনও ধরব নেই। ৪৫ বিবাহ-বিপ্লুৰ আমি ।--আচ্ছা' মুরলাকে হারাবার ক'দিন পূর্বে আপনি এ পত্র পেয়েছেন? | স্ুরেন্ত্রবাবু আমার হস্ত হইতে পত্রথানা লইয়া বলিলেন,-_ প্রায় দশ দিন পর্বে । আমি |__পত্রে কি লেখা আছে? সথরেন্্র।__মাফ করবেন। আমরা যে কয় জন এই হরফ জানি প্রত্যেকেই প্রতিজ্ঞাবদ্ধ । এ লেখার রহস্ত প্রকাশ করতে পারব না। আমি পত্রখানা এপিঠ ওপিঠ উপ্টাইয়া বলিলাম,- আচ্ছা, ইহার ভাবার্থ বলতে দোষ আছে? ূ তিনি বলিলেন,_-আপনি একটা ভুল কর্ছেন। চিঠিখানা এমন বিশেষ কিছু না। কোনও লোকের সঙ্গে নাক্ষাৎ কর্বার জন্যে এতে আমার নিমন্ত্রণ আছে । আমি ।--বন্ধুর? সুরেন্দ্র ।-_স্ট্যা, বন্ধু বটে, তবে আপাততঃ মনোমালিন্ত হয়েছে । আমি।-_সাক্ষাৎ হয়েছিল কি? আমার জেরায় বিরক্ত হইপ্পা সুরেন্দ্রবাবু বলিলেন,__ইহার সহিত কন্দাচুরির কোনও সম্পর্ক নাই। এ পত্র-প্রেরকের সহিত আমার বন্ধুত্ব লোপ পাইলেও, আমার কন্যা আমার যেমন প্রিযপাত্রী, তাহারও তেমনি স্নেহের। গত্রপ্রেরকের সহিত আমার সাক্ষাৎ হইয়াছিল। তিনি এ ব্যাপারের কিছুই জানেন না। তিনি এ সংবাদে আমারই মত বিপন্ন বিবাহ-বিগ্ীব, | | ৪৬ অবস্ত এ কথার উপর আর জেরা চলে না। একটু অপ্রস্তত হইলাম। তবু নিজের মনের সন্দেহ মিটাইবার জন্ বলিলাম,_- দ্বিতীয় লাইনে যে একট! ৭ রয়েছে সেটা কি আমাদের সাধারণ সাত? স্বুরেন্্র বাবু একটু হাসিয়া রানার _পুর্বেই ত বলেছি ও বিষয়ে ক্ষমা কর্তে হ'বে। এখন কাজের কথা ইক । আমি; তো স্থির করেছি শীতলপ্রসাদ বাবুকে সকল কথা খুলে বল্ব। তার কাছে ক্ষম! প্রার্থনা করব। তার টাকা ফেরত দিয়ে সপরিবারে চিরদিনের জন্যে পশ্চিমে চলে যাব । কথাটা! আমার হৃদয়ে বাঁজিল। নিজে যে একটা অপদার্থ জীব তাহা! এক প্রকার স্থির সিদ্ধান্ত করিলাম । আপনাকে ধিক্কার দিলাম। এ ব্যাপারে যে ভদ্রলোকের ছুর্গতির চুড়ান্ত হইবে, শেষে লোকলজ্জার ভয়ে তাহাকে দেশ ত্যাগ করিয়া চলিয়া, যাইতে হইবে, ইহা ভাবিয়া হৃদয় সহানুভূতিতে ভরিয়া গেল। আমি তাহাকে সাস্বনা দিয়া বলিলাম, গ্ুরেন্্র বাবু, এখনও তো আপনার দশ দিন সময় আছে, আমাকে আর সাত দিন সময় দিন। | তাহার পর যা” অভিরুচি হয় কর্বেন। তাহাকে এ কথা বলিবার বিশেষ কারণ ছিল।, নরেশের ফ্রব বিশ্বাস হইয়াছিল যে, শিক্ষিত অবনীমোহনই মুরলাকে. হরণ করিয়া লইয়া গিয়াছে। এ বিষয়ে তাহার সহিত একমত ন! “হইলেও আমি প্রত্যহ রাখালের রিপোর্ট পড়িতাম। সে দিন দিন অবনীর বিশ্বাসভাঙ্ন হইতেছিল।. রাখাল শেষ গঞ্রে 8৭ বিবাহ-বিপ্লীৰ লিখিয়াছিল যে শীঘ্বই একটা নূতন সংবাদ দিবে। নূতন সংবাদটা কি তাহা অবশ্ঠ বুঝিতে পারি না | নৃত্য হা নিশ্চয়ই একটা গুভ সংবাদ হইবে এইক্পূ. শ্হা ক রিয়া তাঁছু বলিলাম,_নিরাশ হবেন না। , এরথনও দুআ আছে। টপ ই তাহার কিন্তুএ কথায় হস হইল না। নিজের. ভরি রষ্যৎ কল্পনা করিয়া ভদ্র লোক কাঁদিয়া 'ফেলিলেন। তিমি, সর্ীলেন, সতীশ বাবু, আপনিব্য়সে মামার চেয়ে অনেক জা যখন সাধারণ জ্ঞানে বুঝ্‌তে পরা যর যে, আমারঞ্জফলোর কোনও উপায় নেই, তখন কেবল জোর ক'রে স্যর আগার সঞ্চার করা, সেই আশায় প্রাণধারণ করা যে কি কঠিন ব্যাপার তাহা ভগবানই জানেন। নিরাশায় বুক বেঁধে বৃথা আশা! জলাঞ্জলি দিয়ে, নৃতন জীবন যাপন করায় এক রকম স্থথ আছে।, আমি আজই এ কার্যের শেষ কর্ব। আমি তাহাকে নিরম্ত করিতে যথেষ্ট চেষ্টা করিলাম, কিন্ত দেখিলাম তিনি একেবারে ধৈর্য হারাইয়াছেন। শেষে ভদ্রলোক বলিলেন, আমি কলকাতা থেকে কতক- লা জিনিষ কিনে আজই যশোরে ফির্ব। আপনার বন্ধুর সঙ্গেও ৪ সাক্ষাৎ কর্বার বাসন! ছিল। তিনিও আমার জন্যে যথেষ্ট পরিশ্রম করেছেন । তাহাকে অধৈর্ধ্য হইতে নিষেধ করিলাম। নরেশের সহিত সাক্ষাৎ করিতে বলিলাম। তিনি বলিলেন,__-আচ্ছা আমি বাজার ক'রে আবার আপনাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ কর্ব। বিবাহ-বিপ্লব ৪৮ & সুরেন্্রবাবু চলিয়া যাইব! মাত্র পাঁচ মিনিট পরেই মিঃ এন্‌ সেন প্রাইভেট ডিটেক্টাভ সশরীরে চুরুট টানিতে টানিতে আসিয়া উপস্থিত হইলেন। আমার শু মুখ দেখিয়া বলিলেন,-কি হ্থে বাত্রিচর পক্ষীবিশেষের মত মুখখান! ভার করে রেখেছ কেন? আমি বলিলাম, তোমার ঞভাবনা কি বল? তুমি ডিস্‌- পেননারি জানালার লাল. জল ভা সাজানো শিশি। বন্কিতো 'আর তোমায় সইতে হয় না। আমার অবস্থায় পড়লে বুৰ্তে। নরেশ হাসিয়া বলিল,__কেন, আলমারির আদত ওষুধের বিষগ্রতার কারণ কি? আমি বলিলাম_কারণ কি? নুয়েন্্বাবুকে দেশছাড়া কর্লাম। নরেশচন্দ্রকে সুরেন্ত্রবাবু-সংক্রান্ত সকল বিষয় বলিলাম। সমস্ত কথা শুনিয়া মিঃ সেন বলিলেন,_যখন আমার ফার্মে তার কেস পড়েছে, তখন কিছুই মন্দ হবে না| দেখনা, আমি ছুই কথায় তী'কে জল করে দে'ব। আমি বলিলাম,--তাঁ'র পর? মরেশ গভীরভাবে বলিল--তার পর, সবুরে মেওয়া ফল্বে। তুমি স্থির হয়ে দেখ না। আমি বলিলাম,_ না, না, একটা কেলেঙ্কারী ক+র না, বাজারে জুয়াচোর ঝলে বদনাম হয়ে যাবে। | নরেশ হাসিয়া বলিল,- নাম, বদনাম কা'র? মহাশয়কে কট! লোক চেনে? | ৪৯ _. *ৰিবাহ-বিপ্লব .. আমি দুঃখের সময়ও হাসিয়া ফেলিলাম। এমন সময় বিষপ্নবদনে কন্া-শোকাতুর সুরেন্দ্র বাবু আসিয়া উপস্থিত হইলেন। তাহাকে দেখিয়া নরেশ সপ্রতিভভাবে বলিল,_“কি স্থ্রেন্ত্র বাবু? এ সব কি কথা শুনতে পাচ্চি? আপনি না কি দেশত্যাগী হ,চ্চেন ?”, | স্ুরেন্্রবাবু বপিলেন,_-্যা। কালই রওন! হ'ব মনে ক'রেছি। নরেশ সিগারেট টানিয়া বলিল,_-বটে? স্থরেন্ত্র বাবু বলিলেন--নিশ্যরই যাব। তবে একট! শেষ ভিক্ষা ক'রব। নরেশ নির্বিকারভাবে বলিল--যথা ? তাহার লঘুতা! আমার পক্ষে বিরক্তিকর হইতেছিল। কিন্তু কি করি ফার্মের সম্মান অক্ষু্ণ রাখিবার জন্ঘ আপনার অংশীদারকে মক্কেলের সন্মুথে কিছু বলিতেও পারিলাম না। স্ুবেন্ত্রবাবু বলিলেন আমি বিদেশে গিয়েই আমার ঠিকানা আপনাদের জানাব। আপনারা অন্নগ্রহ ক'রে সে সংবাদট। কা'কেও দেবেন না। আর বল! বানছুলা, আমার কণ্তা সম্বন্ধে 'অনুদন্ধান করতে ভূলবেন না। তার সংবাদ কিছু পেলেই আমাকে টেলিগ্রাফ কর্বেন। নরেশ বলিল,_-আর আপনার কন্তার সংবাদ যদি তা'র পূর্বেই পাই। একটা মন্দভেদী নিরাশার স্বরে সুরেন্ত্রবাবু বলিলেন,--এমন ভাগ্য কি আর আমার হ'বে'মশায়? 8 বিধাহ-বিপ্লব ৫ নরেশ বলিল,_আপনার ভাগ্য ফিরেছে । আপনার কন্তা: শীপ্রই পাবেন। : নরেশের ক্রিয়াকলাপ আমার নিকটে একটু নিঠুর বলিয়া বোধ হইতে লাগিল। আমি ধীরে ধীরে উঠিয়া কক্ষান্তরে চলিয়! গেলাম । | এক্কাদস্ণ পলিল্্ে চ্‌ লোক্তাগা ব্যাপারট! ক্রমশ:ই প্রহেলিকা-নমাচ্ছন্ন হইতেছিল। রাখালের পত্রে অবনীর যে বর্ণনা পাইতাম, তাহাতে তাহার উপর আদৌ সন্দেহ হইত না। রাখাল লিখিত, অবনীর কথাবার্তা হইতে যতদুর বুঝিতে পারা যাইত তাহাতে তাহাকে বেশ চরিত্রবান্‌ পুরুষ. বলিয়। মনে হইত। সে এতদিন তাহার সহিত মিশিয়! তাহাকে যশোহর সম্বন্ধে কোনও কথা কহাইতে পারে নাই। সে তাহার ভৃত্যদিগকে উৎকোচ প্রদান করিয়। কোনও রহস্তের আভাস পায় | নাই। তাহার বাটাতে মুরল! থাকিত না, মে বিষয়ে রাখালের কোনও সন্দেহ ছিল না। অবনীর এত খশ্বর্য, এত নীতিজ্ঞান, এত সমাজহিতকর প্রবৃত্তি--অবনী কিন্ত হাসিত না, সহজে জনসমাজে মিশিত না, সর্বদাই চিন্তাশীল থাকিত। তাহার প্রাণের মধ্যে যে সুখের লেশ ছিল না! তাহা রাখাল বেশ বুঝিয়া- ৫১ | * বিবাহ-বিপ্রব ছিল। নূতন দেশে ভ্রমণ করিতে গেলে লোকে সাধারণতঃ একটু রঙ্গরল ভালবাসে, পাচ জন ভদ্রলোকের সহিত পরিচয় করিতে বাগ্র হয়। অবনী একেলা থাকিতে ভালবাসিত। মিশিত,-_ কেবল তাহার অন্তরঙ্গ কলিকাতার বন্ধুটার সহিত । রাখাল সে বদ্ধুটীর কোনও সংবাদ সংগ্রহ করিতে পারে নাই। তাহার বাটীতে প্রবেশ করিবারও অবসর পায় নাই। সে বাটাতে স্ত্রীলোক থাকিত তাহা রাখাল বুবিয়াছিল। কিন্তু কোনও মতে সে জানিতে পারে নাই তথায় মুরল! ছিল কি না। সমস্ত ঘটনা আলোচনা করিলে এক একবার 'অবনীর প্রতি সন্দেহ হইত। নে সন্দেহ অপনোদনের কোনও উপায় ছিল না। তাহার ভগ্ডামির সুখোসটার জন্য তাহার চরিত্র আরও জটিল হইয়া উঠিয়াছিল। তাহার পক্ষে মুরলাকে লুকাইয়! রাখা যে একেবারে অপস্তুব, সে কথা কখনও নিঃনন্দেহে বলা বাইতে পারিত না। | অপর পক্ষ হইতে দেখিতে গেলে সন্দেহ হইত, তাহার পিতার বন্ধুব উপর। মর্মান্তিক কলহের ফলেও কোনও ব্যক্তির পক্ষে স্থলিকাকে হরণ করিয়া লইয়া যাওয়া অপস্তব নহে! এ ধারণার সাক্ষ্য সেই পত্রখানা। যে সকল ব্যক্তির মধ্যে এপ অসাধারণ রকমের বর্ণমালা প্রচলিত, তাহাদের পরস্পরের সন্বন্ধ ও একটু অনাধারণ রকমের । সেই অস্বাভাবিক শক্রুতার ফলে কন্ঠ-চুরি সম্ভবপর ব্যাপার । | বিবাহ-বিশলী ৫২ এইরূপ বিচার করিয়াই পূর্ব হইতে আমার মনোমধ্যে ছুইটি প্রশ্ন উঠিয়াছিল,-- প্রথমতঃ যে বালিকা মুরলার প্রণয় ভিক্ষ! করিয়া ওরূপ মন্দরম্পর্শী পত্র লিখিয়াছিল, সে প্রেমিক যুবকটি কে? দ্বিতীয়তঃ এই সন্কেতলিপিজ্ঞ ব্যক্তিগণই বা কাহারা? বল৷ বানুলা, দ্বিতীয় প্রশ্নের উত্তর পাইবার কোনও উপায় : ছিল না। প্রথম প্রশ্ন-সন্বন্ধে মনে দৃঢ় ধারণা হইয়াছিল যে, অবনীমোহনই সেই প্রেমিক যুবক। কিন্তু সে বিষয়ে কোনও প্রমাণ পাই নাই। তাহার হস্তাক্ষর পাইতে এই তিন সপ্তাহ সথেষ্ট চেষ্টা করিয়াছিলাম। কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে এ সামান্ত কার্ধাটায় কৃতকার্ধ্য হই নাই। প্রথম হইতেই এই বালিকাহরণ ব্যাপারটার উপর কেমন শনির দৃষ্টি পড়িয়াছিল। একটু অবসর লইবার জন্য আমার এক অন্তরঙ্গ পুরাতন বন্ধু দেবেন্ত্রনাথের বাটাতে বসিয়া গল্প করিতেছিলাম। ডাক হরকরা আপিয়া৷ একখানি পত্র দিয়া গেল। তাহার উপরের হস্তাক্ষর দেখিয়া আমার হৃদয় সজোরে স্পন্দিত হইতে লাগিল। চিঠিখানির ঠিকান। ইংরাজিতে লেখা, কিন্তু উপরের নামটা বাঙ্গালায় লিখিত। | আমি পত্রথানা হাতে লইয়৷ বারংবার পড়িলাম,-7*শ্রীযুক্ত হেমেন্দ্রনাথ মিত্র, বি, এ, সুষ্দ্থরেধু 1” | দেবেন্্র বলিল,--কিহে ও পত্রথানা অত বারংবার পড়ছ কেন? কিছু টিকটিকিগিপ্ি কর্বে নাকি ? ৰ আমি সপ্রতিভ হইয়া বলিলাম,-না। এ নূতন ধরণের ৫৩. » বিবাহ-বিপ্লব ঠিকানা লেখা দেখে একটু আশ্চর্য্য হচ্চি। ফ্যাসানটা লক্মীর মত চঞ্চল। এটা হাল ফ্যাসান বোধ হয়। দেবেন্দ্র বলিল, হ্যা, ও ছোকর! বেশ ফ্যাসানেবল। আমার ভায়ার খুব অন্তরঙ্গ বন্ধু। আমি বলিলাম--এতে! বেনারসের ছাপ দেখুছি। দেবেন্্র বলিল-- হ্যা, অবনী বড লোকের ছেলে। মাথার উপর অভিভাবক নেই। খুব পশ্চিমে ঘুর্ছে। অবনীর নামে আমার শরীর শিহরিয়া উঠিল। তাহা হইলে যাহা অনুমান করিয়াছিলাম তাহা তো সত্য। নরেশের বুদ্ধির প্রথরতা আছে। সেই প্রেম-পত্রগুলার হস্তাক্ষরের সহিত এ হস্তাক্ষরের কোনও পার্থকা ছিল না। এ অবনী যে সেই অবনী তাহা স্থিরীকরণের জন্ত তাহাকে আরও গোটাকতক প্রশ্ন করিলাম। দ্রেখিলাম, পত্রপ্রেরক যশোহর জেলারই অবনী। বল! বাস্থলা, তাহার হস্তাক্ষরটা দেখিবার জন্ত বড়ই প্রলোভন হইল। প্রকাশ্তভাবে হস্তাক্ষরটা সংগ্রহ করিতে গেলে অবনী সতর্ক হইয়া যাইতে পারে। হেমন্ত তাহার অন্তরঙ্গ বন্ধু। কে জানে £সও এ রহস্তের ভিতর আছে কি না? দে অবনীকে সতর্ক করিয়া দিবে। এ এক নূতন সমস্তার ভিতর পড়িলাম। ঠিক এই সময় হেমস্ত আসির! নমস্কার করিল। আমি বলিলাম,-কি হে, আজ সকালে [৪ 15০601৩এ যাও নি? | বিবাহ-বিপ্লীৰ 1৫8 হ্মস্ত বলিল,-_আন্ে না । আজ শরীরটা ভাল নেই। তাহার দাদা তাহাকে অবনীর পত্রখাঁনা দিল! হেমন্ত লেফাফাটা ছিঁড়িয়া পত্রথান| একবার বাহির করিল, তাহার পর বোধ হয় তাহার বৃহদায়তন দেখিয়া লেফাফায় পুরিরা পকেটে রাখিল। আমি আগ্রহসহকারে দেখিয়া লইলাম যে, পত্রের ভিতরকার অক্ষরগুলা সেই এক হস্তের। শুধু তাহাই নভে, পত্রের স্বাক্ষরের স্থলে “অবনী” ও তাহার কয়েক ছত্র উপরে *মুরলার” এই কথা দুইটা আমার নয়নপথে পড়িল । মনে মনে সন্কল্প করিলাম, যদি এ পত্রখানা চুরি করিতে না পারি তাহা! হইলে আমি গরু। উপস্থিত সামান্য একটু হাতের লেখার নমুন৷ পাইবার জন্ত এক উপায় অবলম্বন করিলাম । দেবেন্দ্রকে বলিলাম,_ভাই তোমার নম্তটী বড় ভাল। একটু বাড়ী নিয়ে যাব। দেবেন্দ্র বলিল, তাত্র আর কথা কি। আমি হেমন্তের দ্রিকে চাহিয়া বলিলাম,-ভারা একটু কাগজ দ্বাও ন1। রর আজ সৌভাগোর দিন। হেমন্ত সটান সেই পত্রখানা বাহির করিয়া আমার হস্তে শূন্ত লেফাফাটা দ্রিল। আমি সন্দেহ দূর করিবার জন্য বণিলাম,_না, না, ও বন্ধুর চিঠির লেফাঁফাট! কেন? হেমন্ত বলিল,--ন1, ওতে আর দরকার কি ৯ আমি তাহাতে নন্য পুরিতে পুরিতে মনে করিলাম তোমার ৫৫ বিবাহ-বিপ্লীব দরকার না থাকিতে পারে। কিন্তু একটা ভদ্রলোকের মান সম্ত্রম রক্ষা করিতে ইহা! বড়ই দরকারী | এই ত গেল সৌভাগ্য নগ্থর এক। প্রত্যাবর্ভন করিবার সময় ট্রামে বসিয়া ব্যাপারটা পূর্বাপর ভাবিতেছিলাম। আর চার পাঁচ দিন পরেই বিবাহের দ্িন। ইতিমধ্যে নরেশ কি একটা বৃথা আশা দিয়া! কোনও প্রকারে * সুরেন্ত্র বাবুকে দেশত্যাগ করিবার সঙ্কল্প পরিত্যাগ করাইয়াছিল। এই চারিদিনের মধ্যে আমাদের পক্ষে সফলকাম হওয়া যে কিরূপ অসম্ভব ব্যাপার, তাহা সহজেই অন্তমান করিতেছিলাম। আমার মনে হইতে- ছিল যে, চারিদিন পরে বিবাহ-বিভ্রাট ঘটিবে। তখন কেবল স্থরেন্্র বাবুকেই লোকলজ্জার ভয়ে দেশত্যাগী হইতে হইবে তাহা নহে, তাহার সহিত বোধ হয় অপমানিত হইয়া আমাদেরও অফিন বন্ধ করিয়া দুইজনকে অপর ব্যবসায় অবলম্বন করিতে হইবে । ট্রামে আমার পার্থ্েযে ভদ্রলোকটা বপিয়াছিলেন, তিনি হারিদন রোডের মোড়ে নামিয়া গেলেন। তিনি ট্রামের নির্গমনের পথের দিকে বসিয়া ছিলেন। আমি তাহার পরিত্যক্ত স্থানের দ্রিকে সরিয়া গিয় দেখিলাম, তিনি একখানি পত্র ফেলিয়া গিয়াছেন। পত্রের উপর ঠিকানা লেখা, প্বাবু অবিনাশ চক্র মিত্র, ২৮ নং হ্ারিসন রোড”। ট্রাম হইতে মুখ বাড়াইয়া দেখিলাম লোকটি চলিয়! গিয়াছে । ভাবিলাম যদি প্রয়োজনীয় পত্র হয় তো উক্ত ঠিকানায় দিব। অন্তমনস্কতাবে পত্রথানা লেফাফার ১০ সকগ বিবাহ-বিপ্লব . ৫৬ ভিতর হইতে টানিয়া বাহির করিলাম। ভিতরের লেখা দেখিয়া আমি উন্মত্বের মত লাঁফাইয়া উঠিলাম। ভাঁবিলাম কি সৌভাগা ! সেই গুপ্ত সমিতির অন্ততঃ অপর একজন লোকের ঠিকানা পাইয়াছি। যদি স্থুরেন্ত্র বাবু না বলেন, তাহা হইলে এই লোকগুলার অনুসরণ করিয়া সমিতির রহস্ত পাইব। সমিতির রহস্তের সহিত কন্তাচুরির ধহস্ত জড়িত, তাহা! আমার প্রাণের ভিতর অনুভব কৰিতেছিলাম। .. আবার একবার পত্রখানা দেখিলাম। ঠিক সেই সুরেজ বাবুর টেবিলের পত্রের মত সাঙ্কেতিক অক্ষরে লিখিত। তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরিয়াই দেখিলাম, মিঃ মেন টেবিলের উপর কতকগুলা কাঁগজপত্র ছড়াইয়া বামহস্তে মস্তক রক্ষা করিয়া দক্ষিণ হস্তে একটা “11821715175 21855” লইয়! সনুখস্থ কাগজগুলার লেখা পরীক্ষা করিতেছে। আঁমি বলিলাম,_কি হে, অত মনোযোগী হ'য়েকি দেখ্ছ? নরেশ চমকিয়া বলিল,_-কে তুমি! একটা বড় মস্ত সত্য আবিষ্ার করেছি, মুরলার সেই প্রেমপত্রগুলা অবনশীর দ্বারা লিখিত। আমি বলিলাম,--কি রকম? ণ সে বলিল, সুরেন্দ্র বাবুর মারফত অবনীর হাতের লেখা গ্রহ করেছি । এই দেখন। পত্রের হাতের লেখা তার হাতের লেখার লঙ্গে অবিকল মিলে যাচ্ছে। আমি দেখিলাম, বাস্তবিকই ছুই হাতের ল্খো এক। আমি ৫৭ বিবাহ-বিগ্লুব পকেট হইতে ধীরে ধীরে হেমন্তের লেফাফ! খানি বাহির করিয়া তাহার পার্থ রাখিলাম ; তিনটি লেখা মিলিল। নরেশ সাগ্রহে বলিল,__এটাঁও যে দেখূচি অবনীর হস্তাক্ষর, কোথা পেলে? আমি হাসিয়া বলিলাম, দুঃথখও যেমন একেল! আসে না, সৌভাগ্যও তেমনি দল বেঁধে আসে" আবার দেখ! আমি টেবিলের উপর সেই বিচিত্র অক্ষরে লিখিত লিপিখান' রাখিলাম। নরেশ আনন্দে চৌকী ছাড়িয় উঠিয়া ঈাড়াইল। আমি বলিলাম,অত আনন্দে কাজ নাই। আমি স্নান করতে যাই। তুমি এই পত্রথানার অবিকল নকল কর দেখি। ল্রাদপ্প পছ্িহ্হ্ছেছ্‌ চিা9ির মালিক সবে মাত্র সন্ধ্যা হইয়াছে, কলিকাতার রাজপথের উভয় পার্বাস্ত দীপমালা সর্বগ্রাসী অন্ধকারের আক্রমণ প্রতিরোধ করিবুর জন্য যথাসাধ্য প্রয়্ান করিতেছিল। দিবাবসানে কোলাহলের উপশম না হইর! বরং তাহা বুদ্ধি পাইতেছিল। . কর্মক্ষেত্র হইতে লোকে গৃহে প্রত্যাবর্তন করিতেছিল। কতক- খুলা ফেরিওয়ালা চটিজুতা বিক্রয় করিতেছিল, একজন কতক- গুলা পুরাতন পুস্তক বিছাইয়া সুলভ বিষ্তার প্রসার রুরিতে- বিবাহ-বিপ্লীব ৫৮ ছিল। আমি চোঁখে একটা চপমা দিয়া ২৮ নং হ্ারিপন রোডের দরজার নিকট আপিয়া একটি ভৃত্যকে জিজ্ঞাসা করিলাম "অবিনাশ বাবু কোথা ?” বাড়ীর গতিক দেখিয়া বুঝিলাঁম, সে বাপাঁবাটা। কোনও পরিবারের তথায় বসবা নাই। | ভৃত্যট নানা প্রকার জেরা করিল; শেষে আমাকে অপেক্ষা করিতে বলিয়! বাবুকে সংবাদ দিতে গেল। আমি ইত্যবসরে বাটাটি পুঙ্থানুপুত্ঘরূপে পরীক্ষা করিয়া লইলাম। বাটাটি ছোট কিন্তু বেশ পরিষ্কার। একটি দশ হাত পরিমিত চারচৌকা উঠানের চারিদিকে ঘর--ব্রিতল অবধি উঠিয়া গিয়াছে । কেবল দ্বিতল ও ত্রিতল ঘরের কোলে বারান্দা আছে। ভৃত্য আমিয়া আমাকে দ্বিতলের একটা কক্ষে ডাকিয়া লইয়া গেল। কক্ষটি ছোট হইলেও বেশ সঙ্জিত। অনুষ্ঠানের ত্রুটি ছিল না। জানালায় পর্দা দেওয়, ঘরের মেজে সতরঞ্চ বিস্তৃত। অদ্ধদভাগে সতরঞ্চের উপর চাদর পাতিয়া একটা বিছানা করা হইয়াছে ঘরের এক কোণে একট! হারিকেন ল্যাম্প। সেই অপ্কুট আলোকে বসিয়া গৃহস্বামী আমার আগমন প্রতীক্ষা করিতেছিলেন। আমি সকালে ট্রাম গাড়িতে তাহাকে ভাল করিয়া লক্ষা করি নাই। তিনিই প্রাতঃকালের আরোহী কিনা ঠিক করিতে পারিলাম না। আমাকে বমিতে বলিয়া! তিনি আমার প্রয়োজন জিজ্ঞাসা করিলেন। ৫৯ বিবাহ-বিপ্লব আমি বলিলাম,-মহাশয়ের নাম কি অবিনাশচন্দ্র মিত্র ? তিনি বলিলেন, আজ্ঞে হ্যাা। আমি বলিলাম_-মহাশয় কি সকালে কর্ণওয়ালিসের উ্রামে মানিতেছিলেন ? আমার দিকে একটু দেখিয়া নি বলিলেন,_হ্যা। কেন বলুন দেখি? আমি হাসিয়া, বলিলাম,_-অপর কিছুই নয়। আপনি এই ্রখানা ট্রামে ফেলে এসেছিলেন। সাগ্রহে অবিনাশবাবু আমার হাত হইবে পত্রথানা লইয়া দেখিতে লাগিলেন। আমি ইত্যবসরে বেশ করিয়া তাহার শাকৃতিট! লক্ষ্য করিয়া লইলাম। অবিনাশের বয়স আন্দাজ চল্লিশ বৎসর হইবে। মুখে একটা ধূর্ততার ভাব, শরীর বেশ হৃষপুষ্ট। আমার দিকে ফিরিয়া ধন্যবাদ প্রদান করিয়া অবিনাশ বলিল,_-মহাঁশয় কি পত্রথানা পড়েছেন? আমি কৃত্রিম কোপ প্রকাশ করিয়া বলিলাম,কি ! শামাকে এত নীচ ভাবলেন? যে ভদ্রলোক একখান! চিঠি কুড়িয়ে পেয়ে সেটা মালিকের কাছে নিজে নিয়ে আসে সে এতটা! নীচ নয় অবিনাশ অপ্রস্তত হইয়া বলিল, মাফ করবেন। আপনি স্থুল বুঝেছেন। আমি আপনাকে অপমান করবার জন্তে বলি নি” এ পত্রথান৷ এরূপ ভাষায় লেখা যে আপনি পড়তে পারবেন ন1। তাই পরিহাপ করে ও কথা বল্লাম । বিবাহ-বিপ্লুব. ৬৬ আমি আশ্চর্য্য হইয়াছি এইরূপ ভান করিয়া বলিলাম,_কি - রকম? হাসিতে হাসিতে অবিনাশচন্ত্র লেফাফা হী পত্রখানা বাহির করিয়া আমার হস্তে দ্িল। আমি তো সেই পত্রখান! দেখিয়া ভ্রকুঞ্চিত করিয়া, অবাক হইয়া এ পিট ও পিট উপ্টাইয়৷ দেখিতে লাগিলাম। আমার বিশ্ময়াতিশযা দেখিয়া অবিনাশ মনের সাধে হাসিতে লাগিল । আমি পূর্ব ভান করিয়া বলিলাম, _ মহাশয় বুঝি বন্মার ছিলেন? বর্মার লেখাগুলা বিচিত্র । ; অবিনাশ হোঃ হোঃ করিয়া হাসিয়া উঠিল। আমার মত একটা অজ্ঞ লোককে লইয়া বহস্ত করিয়া একটু বিমল আনন্দ উপভোগ করিবার জন্য অবিনাশ বলিল,_-মশায় ঠিক বল্তে পারলেন না। লেখাগুলা বর্মার নয়, চীনের । নে আমি বলিলাম, মহাশয় পরিহাস কর্বেন না । চীনের অক্ষর তো উপর থেকে নীচের দিকে লিখ্তে হয়। অবিনাশ বলিল,-না, মশায় পূর্বেই ঠিক বলেছেন, লেখাগুলা ৰ বরমিজ। আমি হাসিয়া বলিলাম,--তবে মশায় মাফ র্বেন। আপনার কথায় সন্দেহ করলাম। এ লেখা বর্মিজ নয়। কেহ বিন্রপ করে আপনাকে এই হিজিবিজি চিত্রগুলা পাঠিয়েছে । * এ কথাতে ও প্রফুল্ল অবিনাশচন্দ্রের হাদি আসিল। দে ধীরে ৬১ . বিবাহ-বিপ্লৰ ধীরে আপনার পকেটের ভিতর হইতে একখানি পত্র বাহির করিয়া আমার হস্তে দিয়া বলিল,_-পরিহাস বল্ছেন, এই দেখুন। এও কি পরিহাম? আমি পত্রগুল] পরীক্ষা করিবার, ভান করিয়া লেফাফার উপরিস্থিত ছাপগুলা দেখিয়া লইলাম। যে খানায় আধুনিক তারিখ ছিল, সে থানিতে যশোহরের ছাপ ছিল। লেখা সম্বন্ধে একটি বিশেষত্ব লক্ষ্য করিলাম । যেখানে অঙ্ক লিখিত হইয়াছে, সেইথানেই বাঙ্গালার অঙ্ক ব্যবহৃত হইয়াছে । সুতরাং তাহাদের সাঙ্কেতিক অক্ষর সম্বন্ধে একট] বিষয় সিদ্ধান্ত করিলাম। সিদ্ধান্তট! অপর কিছুই নহে--তাহাদের সাঙ্কেতিক ভাষায় রাশিসম্বন্ধীর সঙ্কেত নাই। তাহার প্রতি সৌজন্য প্রকাশ করিয়া বিদায় লইতেছি, এমন * সময় সেই ঘরে আমার পূর্বপরিচিত মেঘরাজ সুমের মলের গদীর অংশীদার আসিয়া উপস্থিত হইল। তাহাকে দেখিয়া আমার পূর্বের সকল কথা মনে পড়িল। সে আমাদিগের আফিসে দুইবার আসিয়াছিল। সুবোধের যশোহর-যাত্রা প্রভৃতি কথাগুলাও * আমার সিদ্ধান্তগুলার সহিত. মিশিয়া আমার তদারক ফলটাকে একটা ঝিম গণ্ডগোলের মধ্যে ফেলিল। মেঘরাজ আমাকে দেখে নাই বলিয়া চিনিতে পারিল না। আমি ধীরে ধীরে বাহিরে আসিয়া! তাহার জন্ত অপেক্ষা করিতে লালিলাম। প্রায়অর্ধঘণ্ট। কাল অপেক্ষা করিবার পর মেঘরাজ বাহিরে আদিল। আদি গোপনে তাহার পশ্চাতে চলিতে লাগিলাম। বিবাহ-বিপ্লব, ৬২ শেষে সেই বড়বাজারের পূর্ববর্ণিত বাটাতে মেঘরাজ প্রবেশ করিল। আমি ভগ্রমনোরথ হইয়া ধীরে ধীরে নিজের বাসায় ফিরিলাম। ত্রস্মোদস্ণে পলিচ্ছেদ অবনীক পত্র নিজের ঘরে বসিয়া! কাগজপত্র ছড়াইয়া মাথায় হাত দিয়া ভাবিতেছিলাম। হঠাৎ নরেশ আসিয়া বলিল,-_-“পত্রথান1 পড় দেখি।” আমি চমকিত হইয়া উঠিয়া একটু হাসিয়া পড়িতে লাঁগিলাম-- “ভাই হেমন্ত ! “তোমার পত্র পাইয়াছি। ইচ্ছা করিয়াই তোমার স্েহপূর্ণপত্র খানির উত্তর দিতে বিলম্ব করিলাম । জানি তোমার মত অন্তরঙ্গ বন্ধুকে পত্র লিখিতে গেলে নিজের কথা না৷ লিখিয়া থাকিতে পারি ' না। তাই কাগজ কলম লইয়! তোমাকে পত্র লিখিতে বসিতে মোটেই ইচ্ছা করে না । আমার নিজের কথা লিখিয়া তোমাকে বিরক্ত করিতে আদৌ ভাল লাগে না । কেন তাহা শুনিবে? আমার অধঃপতনের মাত্রাটা উপলব্ধি করিতে পারিলে আমার প্রতি সহান্ুতৃতিতে তোমার উচ্চ হৃদয়ট! ভরিয়৷ উঠিবে তাহা! আমি বেশ ৬৩ , বিবাহ-বিপ্লব জানি। আমি সর্বদা কিরূপ মানসিক সংগ্রামে লিগু থাকি সে কথা শুনিলে হয়তো তোমার চক্ষে জল আমিবে। অপরিচিত ব্যক্তির নিকট সেগুলা হাসির কারণ বলিয়৷ পরিগণিত হইতে পারে। কিন্তু আমার জীবনের ঘটনাগুলা তুমি তো! আর সে চক্ষে দেখিতে পারিবে না । তোমার নিকট আত্মজীবনী বিবৃত করিয়া পত্র লিখিলে তোমাকে শোকগ্রস্ত করা আনিবার্ধ্য। সুতরাং এত দিন তোমার পত্রের উত্তর দিই নাই। ভাল করি নাই কি ?”-- আমি এই অবধি পাঠ করিয়া একটু থামিলে নরেশ বলিল,_ এতো দীর্ঘ ভূমিকা হল, কিন্তু এর মধ্যেও তার অপরাধের সাক্ষ্য পাওয়া যাচ্চে। আমি ঠিক তাহার সহিত একমত হইতে পারিলাম না। একটু বাদান্বাদের পর পুনরায় পড়িতে আরম্ত করিলাম_ | “এক একবার ভাবি কি উচ্চ আদর্শ সম্মুখে "রাখিয়া চরিত্র গঠন করিতে গিরা কি করিলাম । মাঝে মাঝে কলেজের সেই দিনগুলা ম্মরণ করি--যখন আমরা মহা! আগ্রহে সমাজ-সংস্কারের উপায়ন উদ্ভাবন করিতে সচেষ্ট হইতাম, যখন ছিন্দু সমাজের অধঃ- পতনেরু কথা লইয়া তুমুল আন্দোলন করিতাম এবং ভীষণ বাক্যুদ্ধের পর সর্ধবাদিসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত করিতাম যে বাল্য- বিবাহ ও রমণীনিগ্রহ, জাতিভেদ ও কুদংস্কার প্রভৃতি রাক্ষদগ্ডলা সমাজের বক্ষে বসিয়া রক্তশোষণ করিতেছে । মনে পড়ে, তুমি একদিন বলিয়াছিলে থে, হিন্দুবিধবাঁদের দীর্ঘনিংস্বাসে এই জাতি ছক বিবাহ-বিপ্লুব ৬৪ শত বৎসর ধরিয়া এরূপ লাঞ্চিত হইতেছে। তখন আমরা ,. ভাবিতাঁম যে, ভবিষ্যতে সমাজের দুঃখ মোচন করিয়া বীরত্ব দেখাইব, সৎসাহস দেখাইব, এই অধঃপতিত আধ্যসমীজের দুঃখ- গুলাকে দূরীভূত করিব। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এখন কি করিতেছি একবার ভাব দেখি। ছিঃ ছিঃ পূর্বে কি জানিতাম যে, আত্ম-স্ুখণ চেষ্টায় দে সব উচ্চ সন্কপ্প জলাঞ্জলি দিয়া নিরাশার ভগ্ন স্ত.পেবাদা বাধিয়া দীনভাবে কালাতিপাত করিব ?”_- নরেশ বাধা দিয়া বলিল,দাড়াও দাড়াও নিরাশার কথা! কি একটা বল্লে? তাহলে তো! আর আমাদের ধারণাটা ঠিক হয় না। আমি পত্রথানা একটু দেখিয়া বলিলাম,_-না, সে পরের লাইনে নিরাশার কারণটা বিবৃত করেছে। নরেশ বলিল,_কি রকম? আমি পড়িলাম,_-”্যথন হৃদয়ের উচ্চাশা গুলাকে পূর্ণ করিতে পারিলাম না, ধন আধুনিক অবস্থাটাকে নিরার্সীর অবস্থা না বলিব কেন?” নরেশ বলিল, হ্া]া। আচ্ছা পড়ে যাও। আমি পড়িলামশ 2 “ দেখ, কেমন মনের আবেগে নিজের কথাই, আরন্ত করিয়াছি। এত স্বার্থপর হইয়াছি যে, একবার উপলব্ধি করিতে পারিতেছি না, আমার বেদনার কথাগুলা শুনিলে তোমার হৃদয়ে. . কোনওরপ তৃপ্চি হইবে না, বরং বেদনার উদ্রেক হইবে। ভাই, 'তোমাকে নিজের কথা বলিব না, কাশীর বর্ণনা দিব। এস্থানটি$ ৬৫ " বিবাহ-বিপ্লব আদর্শ-বিচ্যুত--গতীর নিরাঁশার জলন্ত দৃষ্টান্ত । আমার পূর্ব পত্রে যে বর্ণনা দিয়াছি তাহাতে বোধ হয় সে কথা লিখিয়াছি। আজ-_” আমি পত্রপাঠ বন্ধ করিয়া বলিলাম,--এবার কাশীর বর্ণনা । শুনবে? নরেশ বলিল,--বাঃ শুন্ব না? তুমি সমস্ত চিঠিখানাই পড়ে যাও । আমি আবার আরম্ভ করিলাম,--"সকল দেশের হিন্দু অধিবালীর প্রতিনিধি এই প্রাচীন পবিত্র তীর্থে দেখিতে পাওয়। যায়। মুক্তকচ্ছ রৃষ্ণকায় দ্রীবিড়ী হইতে আরম্ভ করিয়া খর্বাকৃতি বলিষ্ঠ পর্ববতবাসী নেপালী পর্যন্ত সমস্ত জাতিই এই মহাতীর্থের রাজপথে ঘাটে মাঠে মন্দিরে ঘুরিয়া বেড়ায় । বাঁরাণসীর আসল অধিবাসী হিনুস্থানী পাণ্ডারা। ইহাদের মধ্যে অধিকাংশ ধাঁণাকের পেশা ব্যায়াম অভ্যাস করা এবং দূর প্রদেশ হইতে অসহায় ব্যক্তি আসিয়া পড়িলে যথাসম্ভব তাহাদের অর্থ নিজ ধন সম্পত্তির অন্তভূতি করিবার চেষ্টা করী। সিদ্ধি ইহাদিগের অতিশয় প্রিয় বস্ত। তীর্থযাত্রী ব্যতীত অনেক বাঙ্গালী নরনারী এ স্থলে বসবাস 'করিতেঞ্মারস্ত করিয়াছে। কাশীর একটা অংশকে এই জন্গ বাঙ্গালীটোলা বলে । এই সকল ক্কাশীবাসী বাঙ্গালীদিগের মধ্যে : "অনেকেই . পেন্সন্-প্রাপ্ত বাক্তি। এখানে পরিবারে বাস করিবার উদ্দেপ্ঠ, বানপগ্রস্থ আশ্রম অবলগ্ধন করা এবং মৃত্যুর পর শিব প্লাপ্ত হওয়া। ই'হাদের মধ্যে সাধুচরিত্র লোকের অভাব বিবাহ- বিপ্লব রর ৬৬ নাই। কিনতু কতকগুলিকে দেখিয়া মনে হয় যে, এরূপ অবস্থায় মৃত্যুর জন্ত অপেক্ষা করিয়া থাকিয়াও তাহারা যৌবনের সেই সংগ্রামপ্রিযর়তা রেশারেশি দলাদলি প্রভৃতি বৃত্তিগুলিকে বর্জন করিতে পারেন নাই। পরের কথা লইয়া আন্দোলন করা এ শ্রেণীর লোকের একটা মহ! আনন্দ । তবে শারীরিক উত্তেজনা ও বলের অভাবে, ইহারা যৌবনের উদ্যমে এই কার্ষ্যগুল! করিয়া উঠিতে পারে না । “এখানকার অনেক বাঙ্গালী অধিবাসীর এক একটা ইতিহাস আছে। আবার কতকগুলি স্ত্রীলাক-সন্বন্ধেও নানা কুকথা শুনিতে পাওয়া! যায়। ভাবগতিক দেখিয়াও তাহাদের সন্ত্ান্ততা- সম্বন্ধে একটা খুব প্রগাট শ্রদ্ধা হয় না। সেদিন বাজারে ভ্রমণ করিতে করিতে দেখিলাম, একটি অতীতযৌবনা অথচ বিলাসপ্্রিয়! বিধবা মত্ত ক্রয় করিতেছেশী একটু বিশ্মিত হইয়া! আমার একজন নুতন বন্ধুকে জিজ্ঞাসা করিলাম,_ইনি বিধবা হইয় ব্বয়ং মত্ত ক্রয় করিতেছেন কেন? আমার নবপরিচিত বন্ধুটি হাসিয়া বলিলেন-_“বিড়ালের্‌ জন্টগ। আমি কথাটা বুঝিতে পারলাম না। ' তাহাতে রাখালবাবু, আমার পূর্বোক্ত বন্ধুটি, বলিলেন, শ্রেণীর বিধবারা মংস্তাহারী। তবে লোন্-লজ্জার ভয়ে বাড়ীতে এক একটা বিড়াল পুষিয়া রাখে। : নরেশ বলিল,»-বেশ--বা1 বেশ রাখাল। তাহলে তোমার লাগয়েদ রাখালচন্দ্র কাজ করছেন মন্দ নয়। কিন্তু এখনও কাজের কথাতো। কিছু বাঠর করতে পার্ছে না। ৮ ৬৭ | বিবাঁহ-বিপ্লিৎ আমি বলিলাঁম,_আরও একটু মিগুক। আমি তাকে বলে দিয়েছি যে,,.দে অবনীর সঙ্গে মিশে বন্ধুত্ব কর্বে। ক্রমে ক্রমে তার বিশ্বাসী হয়ে তবে তো কাজের কথা বা”র কর্বে। আর অবনীও কিছু কাঁচা ছেলে নয় যে একজন অপরিচিতের কাছে আপনার গুপ্ত কথা ব্যক্ত করবে । দেখুছি স্বয়ং আমাকে কাশী যাত্রা করতে হ'বে। |] আচ্ছ! তা” হবে, এখন পড়, পত্রের শেষটা পড়। আমি আবার পড়িতে লাগিলাম।--“পোড়া দেশের লোক এ নকল নৈতিক অবনতি দেখিয়া নানা প্রকার সিদ্ধান্ত করিতেছে, এ গুল! সমাজের কলঙ্ক তাহা স্বীকার করিতেছে; কিন্তু তাহাদের সম্মুথে একবার বিধবা-বিবাহের প্রস্তাব কর দেখি। অমনি দেখিবে যে, সনাতন হিন্দুধর্মের মর্যযাদা-রক্ষার জন্য মহামহা অথণ্ড শাস্ত্রীয় প্রমাণ দ্বারা তাহারা তোমায় বুঝাইয়া দিবে যে, পত্যান্তর গ্রহণ শুধু বিধবার পক্ষে মহাপাপ, তাহা নহে । ইহা সমস্ত সমাজকে গভীর পীপপস্কে নিমজ্জিত করিয়া দেয়। এ সমাজকে আবার মান্য করিতে হয়” | নি নরেশ বাধা দিয়া বলিল,_-তাই সমাজের মন্তকে পদাঘাত ক'রে গুণায়ণীকে নিয়ে পলায়ন করা বুদ্ধিমান যুবকের মহাঁধর্্ম |. নরেশ যেরূপ মুখভঙ্গি করিয়! কথাগুল! ধীরে ধীরে উচ্চারণ 'করিল, তাহাতে ন! হাপিয়া থাকিতে পারিলাম না । ত্াহ্থার শ্েষপূর্ণ মন্তবোর কোনও প্রত্যুত্তর না দিয়াই আবার পড়িতে লাগিলা। বিবাছ-বিপ্লব ৬৮ “এইরূপ জ্ঞানশূন্ত সমাজের মাথামুণগডহীন নিয়মের . বশে আমাদের থাকিতে হয়। “ভয় হয় পাছে আবার নিজের প্রসঙ্গের মধ্যে পড়ি । মুরলার প্রসঙ্গ নিজের প্রসঙ্গ নহে। তবু মুরলার কথ! একটির অধিক বলিব না । ২৭শে শ্রাবণ মুরলার বিবাহ।” মিঃ দেন আবার বাধা দিয়া বলিল,__“আজ ২৬শে শ্রাবণ ।» আমি তাহা জানিতাম। একবার প্রাণটা শিহরিয়া উঠিল। আমি আবার পড়িতে লাগিলাম,--তাহার বিবাহের সন্নিকটবর্তী এই কয়টা দিন বালিকা কি ন্ুখে কি এক অপরিচিত পুলকমর ভাবের বশবর্তী হইয়া! রহিষ্নাছে,_তাহা তো তুমি নিজেই উপলব্ধি করিতে পার। | দপত্রথাঁন! বড় বৃহৎ রী । যেমন থাক একখণ্ড পত্র দিও। আমার আন্তরিক ভালবাসা জেনো । পন্গেহের অবনী !* পত্র পাঠ শেষ হইলে আমরা উভয়েই কিছুক্ষণ মৌনাবলম্বন করিলাম। নরেশ একটু সচিস্তভাবে বলিল--সবই ফীঁকা। বিশেষ তো কিছু বুঝতে পারা গেল না। যাব, রাখালকে কি রকম পত্র দিয়েছ বল দেখি। ্ে আমি বলিলাম-_এতক্ষণ সে আমার প্জ পেয়েছে। এই ছুইদিন কোনও ক্রমেই সে অবনীর সঙ্গ ছাড়া হবে না। কা্গ যথন বিবাহ তখন নিশ্চই বালিকাকে কাল কাশী নিয়ে যাবে, কিংবা! অবনী তার কাছে আস্বে। কোনও প্রকারের সংবাদ ৬৯ বিবাহ-বিপ্লব পেলেই সে আমাদের টেলিগ্রাফ করবে। পুলিশের ভয় দেখিয়ে হক, যেমন করে হক বিবাহ বন্ধ রাখবে, আর পারে তো বালিকাটাকে জোর ক'রে দখল করবে । তা হলেই আমর! সময় থাকতে তাকে হস্তগত ক'রে শীতলপ্রপাদের পুত্রের সঙ্গে বিবাহ দিব। নরেশ হাসিয়া বলিল,_আর স্ুরেন্র বাবুর কাছ থেকে বথ্সিন্‌ নিয়ে প্রতিভার পরিচয় দিব'। | এবার আমি বাস্তবিক ক্ুদ্ধ হইলাম। এ বুদ্ধি তাহার। - তাহার পর আমাদের এই প্রকার অগ্রতিভ করিয়৷ রাস্তায় বসাইয়! শেষে বিদ্রুপ করিতে লাগিল_-তাহার এ আচরণটা আমার নিকট অসহা বলিয়া বোধ হইল। কোনও একটা ওজর করিয়া বিবাহের দিনট! পিছাইয়া লইতে আমি পূর্ব্ব হইতেই সুরেন্দ্র বাবুকে পরামর্শ দিতেছিলাম। কিন্তু আমার বুদ্ধিমান অংশীদার আমাকে তাহা করিতে দেন নাই। স্রেন্্র বাবু কলিকাতায় একটি বাসা ভাড়। লইয়া রীতিমত বিবাহের বন্দোবস্ত করিতেছিলেন। বরপক্ষ তাহার আড়ম্বর দেখিয়া কোনও সন্দেহ করে নাই । যাহার জন্য এত আয়ো- জন, যাহার বিবাহের জন্ত এই কল বন্দোবস্ত হইতেছিল, প্রকৃত পক্ষে সে জীবিত আছে কি না তাহাও কেহস্থির করিয়া বলিতে পারিতেছিলাম না । অথচ গন্তীরভাবে স্বপ্নরাজ্যের বালিকার শুভ উদ্বাহের জন্ত পৃথিবীতে নানা প্রকার ব্যবস্থা হইতেছিল। এতবড় পাগলামি, এ হেন অসম্ভব ব্যাপার আমি জীবনে কথনও প্রত্যক্ষ করি নাই।-. আজ ব্ীতলপ্রলাদের কলিকাতায় আমিবার দিন ছিল। যদি কোনও গ্রকারে তাহার মনে ঘুণাক্ষরে একটা লন্দেহ বিবাহ-বিপ্লব | ৭৩ উপস্থিত হয়, যদি সে একবার রহস্ত বুঝিতে পারে, তাহা! হইলে কিরূপ ভীষণ একটা কলঙ্কের কথা হইবে, কি একটা! তুমুল কা বাধিবে তাহা ভাবিয়া আমি শিহরিয়া উঠিলাম। শুধু তাহাই নহে। ইহা হইতে প্রতারণার ফৌজদারী মামলা উপস্থিত হইতে পারে। আর কে জানে যে, এই আন্দোলনে আমাদের অনৃষ্টে কি ঘটিবে। ভবিষ্যতে এ বাবপায় দ্বারা যে অর্থেপার্জন করা৷ অসম্ভব হইবে শুধু তাহাই নহে। হয় ত তাহার প্রতারণায় সাহায্য করা অপরাধে নরেশচন্দ্রকেও সুরেন্ত্র বাবুর সহিত একক্র আসামী হইতে হইবে । আমি স্পষ্ট করিয়া এ সকল কথা প্রথমে নরেশকে পরে স্থরেন্্র বাবুকেও বুঝাইয়! বলিয়াছিলাম। কিন্তু এ কয়দিন কোনও প্রকারেই তাহারা আমার উপদ্েশিমত কার্ধ্য করিল না। স্রেনত্রনাথকে নরেশ কি একটা বুথা আশায় নাচাইতেছিল তাহা বেশ বুঝিতে পারিলাম। কিন্তু সেটা কিসের আশা তাহা ঠিক বুঝিলাম না। যখন এতটা গণ্ডগোলের অরষ্টা হইয়া সে উদ্দাসভাবে আমাকে বিদ্রপ করিল এবং শেষে নির্লজ্জভাবে জিজ্ঞাসা করিল যে, আজ রাখালের নিকট হইতৈ টেলিগ্রাফ মা আসিলে কি হইবে, তখন ক্রোধে আমার সর্বশরীর জলিয়া উঠিল । আমি তাহাকে, যথেচ্ছা গালি দিলাম। সে অল্লানবদনে সেগুলাকে উদ্ররস্থ করিয়া বলিল _*ও সব রাগের কথা ছেড়ে দাও না, ভাই । যা হ,য়ে গেছে. তার উপর তো! আর কারও হাত নেই। আর কপাল ছাড়া পথ কোথায়? এখন বল দেখি কি করা যায় ৭৮ ৭১ বিবাহ-বিপ্লব আমি বলিলাম,_যদি কাল লগ্রের মধ্যে কন্যা না পাই, তাঃ হলে তোমার গৌঁফ কামিয়ে তোমাকে কনে সাজিয়ে বিয়ে দেৰো। এই আমার পরামর্শ] আমার কথা শেষ হইতে না হইতে ধীরে ধীরে স্ুরেন্্রবাবু আসিয়া গৃহে প্রবেশ করিলেন। তাহার বিষাদক্রিষ্ট কষ্টলাঞ্ছিত মুখ দেখিয়া বড় দয়! হইত। স্ুরেন্ত্রবাবু হাসিয়া বলিলেন_-কি মশাই, দুই বখরাদারে মিলে কি বাদান্গবাদ কর্ছেন ? আমি সপ্রতভভাবে বলিলাম না কিছু না। তার পর কি অভিপ্রায়? | স্থরেন্দ্রবাবু বলিলেন,--অভি প্রায় আপাততঃ কাল রাত্রে মহাশয়দের জলপানের নিমন্ত্রণ কর আপনারা আমার বড় বেণী বন্ধু। নেহাৎ যেন ঠিক বিবাহের সময় গিয়ে হাজির হবেন দা। একটু আগে এসে দেখা শুনা করবেন। নরেশ গম্ভীর ভাবে জিজ্ঞাসা কবিল,_লগ্প কখন? স্ুরেন বলিল,»-তা সকাল সকাল। রাত্রি.৯॥* টার সময়। আমি দেখিলাম, উভয়েই ক্ষেপিয়াছে। নির্বাক হ্ইক্ ভাহাদের মুখের দিকে তাকাইয়া রহিলাম। চতুপ্দম্প পল্িচ্ছেদ্‌ বাশালের সংবাদ তখন মাত্র রাত্রি দশট! বাজিয়াছিল। স্থির হইয়া শয্যায় শুইয়া সংবাদপত্র পাঠ করিবার চেষ্টা করিতেছিলাম। বলা বাহুল্য, পাঠে আদৌ মন-সন্গিবেশ করিতে পারিতেছিলাম না। আর কেমন করিয়াই বা পারিব? নিশাবসানে সেই কাল ২৭শে শ্রাবণ, বিবাহের দিন। আর ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই আমার বুদ্ধিমান মহচরের মত্ততা এক গভীর শোকের কারণ হইয়া উঠিবে। প্রতি মুহূর্তে যাহার প্রতীক্ষা করিতেছিলাম তাহ! পাইলাম । রাখালের নিকট হইতে একথানি টেলিগ্রাফ আদিল । ট্রলিগ্রাফখানা হস্তে পড়িবামাত্র সজোরে হৃদ্‌কল্প রি | লাগিল। কি জানি তাহার মধ্যে কি লিখত আছে? কম্পিত- হস্তে ধীরে ধীরে লেফাফাটি ছিড়িয়া পাঠ করিলাম [০0717 01005091 ]181065 85 1061001৩ 10516 ৮/10) 10117) ৪1855 [01 69 0879, [০ 9187০171019 অর্থাৎ কিছুই অপাধারণ নহে। জেমস্‌ পূর্ববৎ রহিয়াছে, আমি ছুইদরিন ধরিয়া অনবরত তাহার সহিত রহিয়াছি, কৌরার কোনও চিহ্ন নাই। সংবাদটা আমার মোটেই ভাল লাগিল না। প্রেরকের নাম দেখিলাম (0০5০) জোদেফ। কাগজখানা উপ্টাইয়া পাণ্টাইয়া দেখিলাম, কিন্তু তাহা সর্ধতোভাবে প্রন্কত বলিয়াই তো বোধ হইল। আমার মানসিক উত্তেজনার অবস্থাটা কাটি গেল, তাহার, স্থলে ২ , বিবাহ-বিল্লষ হৃদয় জুভিয়াঁ এক বিরাট অবসাদ আপিয়! আমাকে একেবারে নির্জীব করিয়া তুলিল। আমি পূর্বাপর বুঝিয়াছিলাম যে, আমাদের শক্রপক্ষ খুব প্রবল ও বুদ্ধিমান। সুতরাং প্রতি পদে আমি সতর্কতা অবলম্বন করিতেছিলাম। টেলিগ্রাফে অবনী, মুরল! বা রাখালের নিজের নাম ব্যবহৃত হইলে কোনও প্রকারে তাহা যদি শক্র পক্ষের হস্তে পন্থায় তাহা হইলে সকল শ্রম পণ্ড হইবে! ইহা ভাবিয়া তাই তাহার নিজের নামের পরিবর্তে ০5০0, মুরলার পরিবর্তে [1018 এবং অবনীর পরিবর্তে ]1970)99 শব ব্যবহার করিতে রাঁখালকে উপদেশ দিয়াছিলাম। _ নিরাশার প্রথম মোহটা কাটিয়া! যাইবার পর বিচার করিতে আরম্ত করিলাম । ভাবিলাম, প্রথমেই বিচার করিয়া দেখা উচিত ষে, টেলিগ্রাফখান! প্রকৃত রাখালের দ্বার1 প্রেরিত হইয়াছে কি না। তাহা যে প্রকৃত সে সম্বন্ধে প্রথমে কোনও সন্দেহ হইল না!। প্রথমতঃ আমরা যে বিষয়ের তদন্ত হস্তে লইয়াছি বা রাখাল যে আমাদের লোক তাহ! অবনীর জানিবার কোনও সম্ভাবন। ছিল “না। দ্বিতীয়তং জেমস্‌ ফোর প্রভৃতি সাঙ্কেতিক কথাগুলা শত্র- পক্ষের নিকট অবিদিত। সুতরাং তাহারা আমাদিগকে প্রতারিত করিবার জন যে এ জাল টেলিগ্রাফখানি পাঠাইয়াছে, এরূপ সিদ্ধান্তে অভ্রান্তভাবে পছছিতে পারিলাম ন!। তাহার পরে ধারণার বিরুদ্ধে যে সকল যুক্তি-তর্ক ছিল তাহা লইয়া, যখন মনের মধ্যে আন্দোলন করিতে আরস্ত করি- বিবাহ-বিপ্লীব ৃ ০ দ্ লাম, তখন ভয়ে বিহ্বল হুইয়| পড়িলাম। : দেখিলাম, রাখালের নামের মদ্লিখিত একখান! পত্র হস্তগত করিতে পারিলেই তো শত্রুপক্ষের নিকট আমাদের সমস্ত গুপ্ত কথা প্রকাশিত - হইয়া পড়িবার সম্ভাবনা । ২৫শে শ্রাবণ অবনীর পত্রথানা আমার হস্তগত হয়। সেই পত্র হইতে জানিতে পাতি যে, ২৭শে শ্রাবণ মুরলার বিবাহ হইবে। '্যাহারই সহিত হউক অবনী-প্রদত্ত সংবাদ হইতে তাহার বিবাহের তারিখটা সংগ্রহ করিতে, পারিয়াই রাখালকে উপরোক্ত পরামর্শ দিয়া পত্র দিই। কিন্তু জেম্স্। ফৌরা প্রভৃতি কথাগুলা টেলিগ্রাফে ব্যবহার করিবার জন্য সেই প্রত্রে উপদেশ দিয়াছিলাম কি না, তাহা ঠিক স্মরণ করিতে পারিলাম না। যদি সেই পত্রে এ কথাগুল! থাকে আর যর্দি সেই পত্রথান৷ অবনীর হস্তগত হইয়া থাকে তাহা হইলে সে যে আমার মত নির্কোধকে প্রতারিত করিবার জন্ত এরূপ. তারের সংবাদ প্রেরণ করিবে, সে বিষয়ে সন্দেহ ছিল না।, অন্ততঃ আমাদিগের বিরক্তিকর অনুসরণের হস্ত হইতে শাস্তি পাইবার জন্ত তাহার পক্ষে এরপ একট! সংবাদ প্রেরণ করা মোটেই অস্বাভাবিক বলিয়া! মনে হইল না। গ্রকৃতই যদ্দিৎ সংবাদটা রাখালের নিকট হইতে আগিয়া থাকে, তাহা হইলে সুরলার হইল কি? অবনীর পত্র হইতে নির্ধারিতরূপে কোনিও কথ প্রমাণিত না! হইলেও বেশ বুঝ! ফাইতেছিল য়ে, একটা কিছু নীতিৰিগহিত কার্ধ্য করিয়া, একটা উচ্চ আদর্শ হইয়া সে বিরেকের, কযাঘাত- সঙ্থ করিতেছিল। -মুরলাকে অপহরণ করা ণ৫ বিবাহ-বিপ্লব ব্যতীত নীতিবিগহিত কাধ্যটা যে অপর কিছু হইতে পারে তাহা তো আমি কল্পনা করিতে পারিলাম না। শেষে কোনও মিদ্ধান্তেই উপস্থিত হইতে পারিলাম না। শারীরিক ও মানসিক অবসাদটা ঘনীভূত হইয়া আসিতে লাগিল। বিরামদায়িনী নিদ্রাদেবীর শান্তিময় অঙ্কে বিশ্রাম লইলাম | পঁ৪দস্ণে পন্িচ্ছেল্‌ বিবাহের দিম প্রভাতে উঠিয়াই ্মরণ হইল, আজ ২৭শে শ্রাবণ-বিবাহের দিল। বিবাহ-দিবসের সে মেঘমুক্ত প্রভাতের নব অন্ুরাগপূর্ণ সানাইয়ের ভৈরবী ধ্বনিতে প্রাণ মন শীতল হইল না। অরুণোদয়ের সহিত একটা! ভীষণ আতম্ক আসিয়া হুদয়াধিকার করিল । শয্যা ছাড়িতে পারিলাম ন! | শষ্যায় শুইয়াই চিন্তা করিতে লাগিলাম । ভাবিলাম অনেক কথা। নিজের জীবনে নানা অঘটন ঘটিয়াছিল, নানা কারণে কত নিদ্রাহীন নিশি অতিবাহিত করিয়াছিলাম, কত দিন কত উৎকণ্ঠা, কত আবেগ, কত প্রতীক্ষা, কত আশা লইয়া শব্যাত্যাগ করিয়াছিলাম, কিন্ত আজ যে উত্কণ্ঠার যে আতঙ্কে শষা! ছাড়িয়া কর্মক্ষেত্রে নামিতে ইতস্ততঃ ক্রিতেছিলাম মেরূপ উৎকণ্ঠা, আতঙ্ক ইতিপূর্বে আর কখনও জানি নাই। আজ পরের ভাবনা ভাবিয়া পরের অনিষ্ট আশঙ্কায় হৃদয়ে বড় ধিক্কার উপস্থিত হইল. কেন মিছামিছি সামান্ শক বিবাহ-বিপ্লি ্‌ | ৭৬ লইয়া একটা অজ্ঞ,..দায়িত্বশৃ্ত স্বার্থপর যুবককে অংশীদার করিয়া এ ছুরূহ ব্যবসায় অবলম্বন করিয়াছিলাম 1 উদরাম-সংস্থানের জন্য তাহাই ষদ্দি করিলাম তবে আপনাদের শক্তি বুঝিয়া ছোট খাট তদন্ত হুন্তে লইয়া কেন ক্ষান্ত হইলাম না? যে সকল জটিল রহস্তের ছ্বারোদবাটন করা আমাদিগের সাধ্যাতীত, সে সকল কার্য্যে ব্রতী হইয়া ধৃথা ধৃষ্টত! করিলাম কেন? গভীর মন্গীড়ায় অধীর হইয়া তখন মনে করিলাম, কেন সুরেন্দ্র বাবুকে. সময়ে আপনাদিগের অসামর্যের কথা জ্ঞাপন করি নাই! তাহ হইলে ছুইটা ব্রাহ্মণ পরিবারের সুখ পাদপের মূলে কুঠারাঁবাত করিতে হইত না। বড়ই আত্রগ্রানি উপস্থিত হইল। কেন তখন নরেশের আশ্বাস-বাক্যে ভুলিয়া! ভদ্রলোকের একটা সর্বনাশের কারণ হইলাম? একধরি ও উপন্যালেখকগণ আশা সম্বন্ধে যে সকল কথা বলিয়াছেন মে গুলির অর্থ বার্থ অনুভব করিলাম। বান্তবিকই আশা কুহুকিনী, জাশ! অমৃতভাষিণী, বাস্তবিক আশ! দায়িত্বশূন্তা উদ্দাসিনী। আবার সময়ে সেই আশাই আত্মস্তরী মায়াবিনীর মভ আমাদের হৃদয়ের স্থথের তারগুলা স্পর্শ করিয়া আমাদিগকে উৎফুল্ল করে। এতটা বিষাদের মধোও মাঝে মাঝে আশা হইতেছিল যে, এখনও. রাখালের নিকট হইতে শুভ সংবাদ আসিতে গারে। : শা! সছাড়িয়। সে দিন প্রাতঃকালে আর কোথাও বাহির হইলাম নরকে. প্রভাতেই কোথা গিয্াছিল। বেলা! প্রায় রর ৃ . বিবাহ-বিপ্লীব দশটার সময় সে প্রত্যাবর্তন করিল। তাহার দায়িত্ব-শূহ্য বদলে চিন্তার কোনওষরেখাই ছিল না। তাহার প্রতি ত্রক্ষেপ ন করিয়া ধূম পান করিতে লাগিলাম। নরেশ বলিল,--কিছে, এতটা! গাস্তীর্যের অর্থ কি? | আমি উদাস ভাবে বলিলাম,--জীবনে গো্টাকতক ভূল করেছি তার জন্য অন্থতাপ করছি।." “কি কি ভূল?” প্রথম ভুল পুলিস বিভাগে চাকুরি গ্রহণ করা। দ্বিতীয়তঃ চাকুরি যাইবার পর তাহা! আবার পাইবার চেষ্টা না কর! । ভূতীয় ভূল এই ডিটেক্টিভের পেশা গ্রহণ করা এবং চতুর্থতঃ”-_ “আমাকে অংশীদার গ্রহণ করা। বাস্তবিক এটা মস্ত ভূগগ। 'আমার চৌদ্দ পুরুষে কেহ কখনও এ টিকৃটিকির ব্যবসায় অবলম্বন করে নাই ।” | প্ঠিক তাই। পঞ্চম ভুল হচ্চে সুরেন্্র বাবুর জটিল রহস্ত-পূর্ণ তর্দন্তুটা হাতে লওয়া, তার পর ভুল একেবারে অবনীর অনুসরণ . না করা” ঠিক সেই সময়ে আমাদিগের অফিসের দ্বারবান আনিয়া একখানা »টেলিগ্রাম দিয়া গেল। অত্যন্ত উত্তেজিতভাবে তাহ! খুলিয়া দেখিলাম উহাতে লিখিত আছে-_“[.6% 0: ০৪০9৫ 05 187053, 12850131105 5%21011)8-% নরেশ বিস্মিত হইয়া আমার মুখেক দিকে, চাহি: আমিও ততোধিক বিস্মিত হইয়া তাহার মুখের দিকে চাহিলাম। টেলি- বিবাহ-বিপ্লষ ৭৮ স্ামটা কিন্তু স্বধয়ে অনেক নৃতন আশার কৃষ্টি করিল। কি যেন যাছুবলে জড়তা! কাটিয়া গেল। আবার ছুষ্টু ব্থুতে মিলিয় অনেক কীনা করিলাম। কিন্তু অবনীর কলিকাতায় আমিবার প্রক্কত কারণ কি তাহ! নির্ণয় করিতে পারিলাম না। | : শেষে বিরক্ত হইয়া নরেশ বলিল,__বাবা, বুঝি না) আর ও বিষয়ে মাথা ঘামিয়ে কি হবে? যা হবার তাঃ হবেই । . জন্ম, মৃত্যু, বিবাহ এ তিনটে কা”রও বোঝবার ক্ষমতা নেই। এখন এস, স্ানাহার ক'রে একটু দ্বাবা থেলতে বসা ধাক। আমি দেখিলাম, ইহা অপেক্ষা সমীচীন যুক্তি আর থাকিতে পারে না। নিজেদের চেষ্টায় তো! এ মামলাটার বিশেষ কিছু করিয়া রে পারিতেছিলাম না। সুতরাং স্থির হইর! ঘটনান্রোত অবলোকন ভিন্ন আর তো কিছুই করিতে পারিব বলিয়া মনে হইল না ন! ৃঁ ্‌ পা বলিলাম,-স্া, তা 'খেল্ব। তা বলে একেবারে মিশ্চিষ্ট হওয়া কিছু না. তাঁরা বোধ হয় বোস্বাই মেলে আস্বে। নরেশ বলিল-_-আবার কি-একটা মতলব কর্ছ? আমি বলিলাম--না, মতলব কিছু না। তবে বিকেলে একবার। ষ্টেমসটায় যেতে ছবে। অবনী কোন দিকে যায়, কি কুরে, সে সবগুলা ঠিক কঃরে. খবর নিতে হবে। নরেশ হাপিয়া বলিল, সেই বোথ্বাই মেলের ক্নজোতের মধ্যে ৪ উঠ 2 ৃ 9৯ . বিবাহ-বিপ্ুব প্রতিজ্ঞামত আহারাদির পর নরেশের সহিত দাবা খেলিতে আরম্ত করিলাম। সাধারণতঃ এ ক্রীড়ায় তাহার অপেক্ষা আমার পারদধিতা অধিক হইলেও সে দিন তাহার নিকট তিন বাজী হারিলাম। প্রথম ধাজিতেই আমার অসাবধানতা৷ বশতঃ সে একট! বোড়ের দ্বার আমার মন্ত্রীমহাশয়ের প্রাণনাশ করিল। তাহার পর এক দ্রান প্রায় সবলে মাত হইলাম । তৃতীয় দফায় তো একেবারে সে আমায় অশ্বচক্রের 'জোগাড়ে ফেলিয়াছিল। শেষে বহু কষ্টে মানটা বাঁচাইলাম। পাঁচ ঘটিকার সময় হাবড়! ্টেসনে যাইতে প্রস্তত লী নরেশ বলিল,_-বাঃ, তুমি বুঝি স্ুরেন্্র বাবুর বাটার নিমন্ত্রণটা রক্ষা কর্বে না? “আরে যাও । তুমি তার মুরুবিব, তুমি যেও ।” “না, না রাগের কথা নয়। ভদ্রলোক বিপদে পড়বেন । ঈরম সময় একটা কিছু মিথ্যা ফন্দি করে তাঁকে বাঁচাতে হবে।” “আচ্ছা! আমি তো অবনীর সন্ধানে যাই। এখনও আশা আছে, মুরলাকে লগ্নের মধ্যে পাইতে পারি। যদি রাত্রে টার রা আমি না ফিরি, তাহ! হইলে বালিকার কলেরা হইয়াছে 1 তাহা গ্লেগ হইয়াছে এইরূপ একটা কিছু বলিয়া বিবাহটা বন্ধ করিও। স্মার যদ্দি তাহা না পার তবে গৃছে অগ্নিসংযোগ “করিয়া দিও। বরপক্ষীয় লোকেরা - প্রাণের দায়ে পলাইবে। আর. নেহাত অতটা না পার, তাহা হইলে পশ্চাের দরজা টি জরেজজবাধুকে পলাইতে বলিও.।” রে বিবাহ-বিপ্লৰ, ্‌ ৮; ং আমি যতক্ষণ কথা কহিতেছিলাম, আমার উত্তেজিত ভাব | দেখিয়া নরেশ হাসিতেছিল। আমার শেষ ০ শুনিয়। সে. অনুমোদন করিল। আমি বলিলাম,--স্্া, মতলবটা! ভাল বটে কিন্তু তোমারংপক্ষে ততটা ইষ্টকর নছে। সে সময় বড় একটা সুরেন্ত্রবাবুর সম্মুখে থাঁকিও না) কারণ নিরাশার উত্তেজনায় তাহার পক্ষে তোমার গলায় ছুরি বসাইয়া দেওয়া বড় অসম্ভব নহে। বুবিতেই তো! * পার যে, তাহার অগ্য রাত্রের এই নৃতন সর্ধনাশের কারণ তোমার অপরিণত দায়িতবশূন্ত বুদ্ধি। পঠিক বলেছ। আর বরপক্ষের লোকগুলাও ক্ষেপে একটা তুমুল কাও বাধাতে পারে। যা” হ'ক, নারায়ণ যা করেন তাই হ'বে।* শকট হাবড়ার প্ল্যাটফরমে আসিয়! পৌছিল। দীর্ঘকাল আবদ্ধ ক্লান্ত নরনারী আবার স্বাধীনতা 'লাভ করিবার -আশার উত্তেজিত হইয়া সুবিধামত গাড়ীর গবাক্ষ দিয়া খাহিরে দৃষ্টি ৮১ ৰ | বিবাহ-বিপ্লুব নিক্ষেপ করিল। নীল কোর্তা-পরিহিত ফুঁলিগুলী গাড়ীর হাতল ধরিয়! উকি মারিয়া দেখিতে লাগিল, কোন্‌ গাড়ীতে বেশী মোট আছে। বাহিরে ঠিকা গাড়ীর গাঁড়োয়ানগুলা ষ্টেসনের দিকে লোলুপ দৃষ্টিতে তাঁকাইয়৷ অশ্থের লাগাম ঠিক করিয়া লইল। ডাক গাড়ীর বাবু একবার জুত্তন করিয়া কার্য্যের জন্য সতর্ক হইলেন। ইংরাজী হোটেলের কতকগুল! ভৃত্য প্রথম শ্রেণী হইতে বিদেশী সাহেব সংগ্রহ করিয়া নিজ নিজ হোটেলে লইয়া যাইবার জন্ত গ্ল্যাটফরমে অপেক্ষা করিতেছিল। তাহারা! পোষাক- গুলা ঝাড়িয়া ভদ্রলোকের মত আকৃতি করিয়া লইবার চেষ্টা করিল। যাহারা আত্মীয় বন্ধুর অভ্যর্থনার জন্য ষ্টেসনে আসিয়াছিল, তাহারা সাগ্রহে গাড়ীর আরোহিবুন্দকে দেখিতে লাগিল। ষ্টেশন মাষ্টার ছুটিল, টিকিট কালেক্টর ছুটিল, ভিড়ের মধ্যে ছুই একটা পকেটমারা মিশিয়া গেল, আমার মত ছুই একজন ছদ্মবেশী গোয়েন্দা কোন্‌ না সেই গোলমালে যোগদান করিল! আমি. যাহা খু'ঁজিতে ছিলাম তাহ! পাইলাম। একথানি দ্বিতীয় শ্রেণীর গাড়িতে রাখাল ও তাহার সুন্দর-প্রী যুবাপুরুষ অবনীকে দেখিলাম। | তাহাদিগৈর হাবড়া প্রৌছিবার প্রথম উত্তেজনাটা কাটিয়া গেলে আম্মি ঘুরিতে ঘুরিতে যেন অকম্মাৎ ভাহাদের সম্মুখীন হইয়াছি এইরূপ ভান করিলাম। রাখাঁলকে দেখিয়াই বিস্মিত হইয়া বলিলাম,বাঃ, রাখালবাবু যে। হঠাৎ কলিকাতীক় কোথা হ'তে? | তত বিবাহ-বিপ্লুব ৮২ রাখালবাবুও মদ্সদৃশ বিস্ময় দেখাইয়া বলিল--পবাঃ! সতীশবাবু কোথা থেকে? আমার কলিকাতায় আসাটা হঠাৎ হ'ল বটে।” | আমি তাহাকে বুঝাইয়! দিলাম যে, একটি আত্মীয়ের আঁগমন- প্রতীক্ষায় ষ্টেসনে আসিয়াছিলাম। কিন্তু ছুরৃষ্ট বশতঃ সে ট্রেণে তিনি আসেন নাই। তাহার পর তাহাকে অকন্মাৎ কলিকাতায় আসিবার কারণ জিজ্ঞাসা! করিলাম । রাখাল বলিল,_-কারণ কি তা জানি না। এই ভদ্রলোকটি আমার বন্ধু। যশোহর জেলার ইনি একজন বেশ সন্ত্ান্ত জমিদার । আমি অবনী বাবুর দিকে তাকাইয়া একটু মৃছু হান্ত করিলাম। অবনীবাবু বেশ স্ুমার্িত যুবকের মত একটু হান্ত করিয়া আমায় নমস্কার করিলেন। আমিও নমস্কার করিলাম। পরে উভয়ে করমর্দন, 'করিলাম। ইতিমধ্যে পাথাল আমার বির দিল ,_্ৰাবু সতীশচন্ত্র মুখোপাধ্যায় ।” / আমি বলিলাম,--কত দিন আপনাদের এ স্থলে থাকা হ বে অবনী রাখালের দিকে চাহিয়া বলিল,--কিছুই জানি না। হঠাঁৎ এসেছি হঠাৎ যাব। - গল্প করিতে করিতে সকলে বাহিরে আদিলাম। আুরনীকে ঘিজ্ঞাসা করিলাম, -_অবনী বাবু, এখন কোথা যাবেন £ অবনী হাসিয়া! বলিল,_-তাহাও এক প্রকার অনিশ্চিত ছিল। বরঘমানে আসিয়া স্থির করিলাম যে, বছবাঁজারে হেমস্ত বাবু নামক, এক বন্ধুর বাটাতে যাব। ৮৩ " বিবাহ-বিপ্লৰ আমি তো কিছুই বুঝিতে পাঁরিলাম না। তাহাকে বলিলাম,--আচ্ছা, তবে আপনারা যান। আমি চললাম। একটু অমায়িক ভাবে হাসিয়া অবনী বলিল, মহাশয়, আমাদের আসল “মিশন”টা গুন্লেন না? আমাদের যশোরের বাটির ঠিক পার্থ ই একটি ভদ্রলোক বাস করেন। আজ তার কন্যার বিবাহ। তিনি অনুগ্রহ ক'রে আমাকে নিমন্ত্রণ করে- ছিলেন। আমার গোমস্তা সেই পত্রখান! কাশীতে আমার নিকট পাঠিয়ে দেয়। তাই নিমন্ত্রণ রক্ষা কর্বার জন্ত এসেছি। রাখাল বাবুকে পাকড়াও ক'রে আনলাম। আমি বিশ্মিত হইয়া তাহার মুখের দিকে চাহিলাম। তবে কি যুবক একেবারে নির্দোষ? না, তাহ! নয় । বোধ হয় সুরেন্দ্র বাবুর অসমসাহসিক ব্যাপারটা প্রত্যক্ষ করিবার জন্য যুবক নিমন্ত্র রক্ষা করিতে আসিয়াছেন। আর এরূপ আগমনে তাহার উপর হইতে সন্দেহটা অপনোদিত হইবে,_-অবনী তাহাও বুবিয়াছে। উঃ-_তাহা হইলে এই সুঠামবপু প্রশস্ত-ললাট সুত্র যুবকটী কি ভয়ঙ্কর লোক! তাহার হৃদয়ে বেশ উত্তেজনার ভাব রহিয়াছে তাহীও বুঝিতে পারা গেল। আবার সন্দেহ হইল। জগতে অর্থ- বলই শ্রেষ্ঠ রল। রাখাল তো বিশ্বাসঘাতকত! করে নাই? আমি বলিলাম,-_বাঃ, আপনার সৌজন্ত আদর্শ। ভদ্রবোকটি বোধ হয় আপনাদের পরিবারের পুরাতন বন্ধু। রাখাল হাঙ্গিয়া বলিল,-নাঁ, না|: জুরেন্্র, বাবুকে অবনী 'বাবু মাত্র এফ বৎসর জানেন। বিবাহ-বিপ্লীব ৮৪ আমি-__কে জুরেন্দ্র বাবু? রাখাল--ধীহার কন্যার বিবাহ । আমি-_সুরেন্্রনাথ মুখোপাধ্যায়, ওভারপিয়ার ? অবনী (সাগ্রহে )_ হ্যা, আপনি তাকে জানেন নাকি ? আমি-_খুব জানি । আমারও তো! সেখানে নিমন্ত্রণ, এখনি যেতে হবে। অবনী--বাঃ, তবে তো সঙ্গী ট্ গেল। আমি পোষাক বলেই সেখানে যাব। রাখালকে অন্তরালে ডাকিয়া জিজ্ঞাসা করিলাম রি বুঝতে পারলে? রাখাল বলিল,_কিছু না। আমি সঙ্গ ছাড়বো না। ঠিক সুরেন্দ্র বাবুর বাটা গিয়ে হাজির হচ্চি। | রাখালকে একবার. আপাদমস্তক দেখিয়া লইলাম। মনে হইল তাহার উপর আমার সন্দেহট। ভিত্তিহীন। গুদ্ণে পল্লিচ্ছেল্া ্‌ বিবাজ-বাদদল $ | তাহারা, গাড়িতে উঠিল। আমি একখানি সেকেও ক্লাস [গাড়িতে চড়িয়। সুরেন্দ্র বাবুর বাসার দিকে অগ্রসর হইতে লাগিলাম। এমন রহম আমি জীবনে আর কখনও দেখি নাই। 'যাঁহাকে ধরিবার জন্য এই মাসাবধি নানা কল্পনা নানা আড়ম্বর় ৮৫ , বিবাহ-বিপ্লব করিতেছিলাম, এত দিনের অনুসন্ধানের পর, যাহার উপরে সন্দেহটা বেশ ঘনীভৃতুজ হইয়া আসিতেছিল, যাহাকে ধরিতে পারিলে এ জটিল রহস্তের মীমাংসা হবে বলিয়া! মনে হইতেছিল, আজ সহস! সেই ব্ক্তি যেন আমাদের সিদ্ধান্তগুলার অসারত্ত প্রতিপন্ন করিবার জন্য সশরীরে আমাদের দৃষ্টিপথে উদ্দিত হইল ! শুধু তাহাই নহে, এত বড় একটা ভীষণ অপরাধ করিয়া লোকে পৃথিবীর মধ্যে যেস্থলে যাইতে সর্বাপেক্ষ। ভয় পায়, যে সকল ব্যক্তির নিকট স্বতভাবতঃ মুখ দেখাইতে চাছে না, যুবক ঠিক সেই স্থলে সেই রূপ বাক্তির আতিথা গ্রহণ করিবার জন্য বেনারস হইতে কলিকাতা আসিয়া উপস্থিত হইল। অবনী এ ব্যাপারে নির্দোষ হইলে তো আমাদের তাস্ত আবার নৃতন করিয়া অপর দিক হইতে করিতে হইবে । আর প্রত দোষী হইলে তাহার ভগ্ডামীর মুখোন উন্মোচন করিয়! তাঁহার অপরাধ সপ্রমাণ করা ব৷ সুরেন্দ্র বাবুর কন্যা উদ্ধার, ক্‌বা আমাদের মত ডিটেকটিভের সাধ্যাতীত, সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ রহিল না। কতকগুলা! প্রশ্ন বড় রহস্যময় বলিয়া! বোধ হইতে লাগিল । তাহার মধ্যে সর্বাপেক্ষা! কঠিন প্রশ্ন-_-অবনী অকন্মাৎ কলিকাতায় আিল কেন? অবনীর কলিকাতায় আমিবার কথাটা তাহার নির্দোষিত! বা দোষিতার সমভাবে সাক্ষ্য প্রদান করে) প্রথমতঃ যদি মনে ক্র! যায় যে, অবনদী নির্দোষ, তাহা! হইলে-_কেবল মাত্র তাহার এই সময়ে কলিকাত আগ্রমনটাই তাহার চিনি বেশ শা প্রমাণ, বিবাহ-বিপ্রব . ৮৬ প্রতিবাসীর প্রতি সৌজন্য প্রকাশ করিবার ছলে ব্যর্থপ্রণর- বিদগ্ধ মনের আবেগে যৌবনস্থলভ পররাম্যার্টিক” ভাবের উত্তেজনায় সে স্বর়ং তাহার ভালবাসার পাস্্ী ,মুরলার অপর যুবকের সহিত বিবাহ শ্বচক্ষে নিরীক্ষণ করিবে, এবিষয়ে মোটেই অসমীচীনতা! বা অস্বাবাভিকত্া1 ছিল না। তাহার আকৃতি দেখিয়া আমি বেশ বুঝিতে প্রারিয়াছিলাম যে, যুবক তেজস্বী ও বলবান। অথচ সে যে একটা! প্রবল সংগ্রাম হৃদয়মধ্যে পোষণ করিতেছিল-_ তাহা তাহার মত নিরাশ প্রেমিকের পক্ষে অসাধারণ নহে । তাহাকে দোষী বলিয়া! লইলেও তাহার পক্ষে 'কম্মাৎ কলিকাতা-আঁগমনটাও মে মতের বিরোধী নহে। যাহাতে তাহার উপর ফোনও রূপ সন্দেহ না হয় সে চেষ্টা তো তাহার মত কৃতবিদ্ক ও চতুর বাক্তি করিবেই। আপনাকে সন্দেহমুক্ত করিতে হইলে কন্তাপহরণ বিষয়ে অজ্ঞতা প্রকাশ করা ব্যতীত আর বিশিষ্ট উপায় কি হইতে পারে? সাধারণতঃ লোকে বুঝিবে যে, যে ব্যক্তি এপ. একটা গুরুতর অপরাধে লিপ্ব, তাহার পক্ষে এমন সপ্রতিভভাবে সুদুর কাণীধাম হইতে এত দূর আসিতে পারা অসস্তভব। তাহার উপর যদি প্রকৃতই মুগ্নপা তাহার আয়ভাধীন থাকে, তাহা হইলে মুরলার কলিকাতায় বিবাহ হইবে একপ হেয়ালীপূর্ণ সমাচারটার অর্থ কি-তাহা জানিবার জন্য তাঁহার ব্যগ্রতা জন্মিবারই কথা। তাহার মুখের ভাবও তাহার দৌধিতার এক উত্তম নিদর্শন। সুতরাং এই নব সাত পাচ ভাবিতে ভাবিতে যখন সুরেন্দ্র বাধুর বাসার গলির মোড়ে পৌছিলাম, তখন সিদ্ধাত্ত করিলাষ যে, অমি; ৮৭ বিবাহ-বিপ্লব একটি বিরাট মূর্খ, আমার দ্বারা এ রহস্তের মীমাংস! প্রত্যাশা করা বৃথা । সুরেন্দ্র বাবুর বাড়ীর সন্ুথে আলিয়া গাড়ি হইতে অবতরণ করিলাম। তখন নহবতওয়ালারা সানাই বাণীতে গৌরীর ভান ধরিয়াছে। তাহার সহিত ঠেকা মন্দিরা চলিতেছে। সমন্তই যেন বিদ্রুপ বলিয়া মনে হইতে লাগিল। দেবদারুপাতা, নারিকেলের ডাল ও পতাকাদি-বিভূষিত নহবতের মঞ্চটি বেশ নুসজ্জিত। প্রবেশ-দবারে আসিটিলিন গ্যাসের আলোকের দ্বারা বড় বড় অক্ষরে লেখা "স্বাগতঃ।* গাড়োয়ানকে বিদায় করিয়া ভিতরে প্রবেশ করিলাম । প্রাঙ্গণে নামিবার মুখে বিলাতী মসলিনের কার্টেন যবনিক1। অঙ্গনটি ঝড় স্ুুচারুরূপে সঙ্জিত। আমাদের উদ্ধম ও অধ্যবসায়ের ফলে আজ এই সুদৃশ্ত অঙ্গনটি প্রকৃত বিবাহ আসর হইলে কি সুখের হইত! উঠানের উপর চন্ত্রাতপের নিয়ে নানাবর্ণের বড় বড় জাহাজী নিশান ঝুলিতেছিল। দশডালের একটি সুন্দর বেলোয়ারি স্ষটিক ঝাড় নেই প্রমোদশালার শোভ। সম্বদ্ধন করিতেছিল। চারিদিকে নান! বর্ণের বেললঠন ঝুলিতেছিল। উঠানের চারিদিকে গোটাকতক আসিটিলিন গ্যাম প্রদীপ প্রক্কৃত পক্ষে আদরটিকে আলোকিত করিতেছিল--মমবাতির দীপগুলা ফেবল শোভাসম্পাদন করিতেছিল মাত্র। উঠানের উপর সারি বাধিয়া *বেণ্টউডের শুন্ভ চেয়ার বরযাত্রীদিগের জন্য অপেক্ষা ,করিতেছিল। প্রাঙ্গণের এক প্রান্তে বরের বদিবার আসন প্রতিষ্ঠিত। কুসুম-সঙ্জিত সেই বিলাপ-নিংহাসন দেখিয়া আমার প্অংশীদারের উপর . বড় রাগ হইল। একখানি নান! সুন্বর বিবাহ-বিপ্লীব | : ৮৮ উপকরণ-বিভূষিত চতুর্দোলী বরের সিংহাসনরূপে ব্যবহৃত হইয়াছিল। বরের বসিবার প্রশস্ত চৌকীখানি ভেলভেট মণ্ডিত ও স্ুকোমল। সেই বর বসিবার আসন্টির চতুদ্দিকে বড় বড় গাছ চিনা মাটির উবে শোভা! পাইতেছিল। সে স্থলের শিল্পের ও স্বভাবের সংমিশ্রণটা বেশ নয়নরঞ্রনট হইয়াছিল । তাহার পর পার্খ- স্থিত একট গৃহের মধ্যে প্রবেশ করিলাম । সে গৃহটিও বেশ সু সঙ্জিত। ভূদির উপর বেশ ভাল জয়পুরী কার্পেট, গৃহপ্রাচীরে দেওয়ালগিরি_কার্পেটের উপর গোটাকতক হুকার বৈঠক বুঝিলাম বয়স্ক কর্তৃস্থানীয় বরযাত্রীদিগের জন্য এই গৃহটি সজ্জিত হইয়াছে । নহবৎ থামিল। পল্লীর ছুই একট! বালক চেয়ারের সারির ভিতর দিয়া সর্পের মত বক্রগতিতে ঘুরিয়া বেড়াইতেছিল। মাঝে মাঝে তাহাদের আনন্দ চীৎকার ব্যতীত এই স্ুসজ্জিত হলে সকলই নিস্তজূ, সকলই নিঝুম, -ঝটিকাঁর পূর্বে প্রকৃতি যেমন গম্ভীর মৃত্তি,ধারণ করে সেইরূপ গম্ভীর । ঘড়ি খুলিয়া দেখিলাম ৭টা ১৫ মিনিট হইয়াছে । আমি ইতস্ততঃ ঘুরিয়! বেড়াইতেছি এমন সময় কার্যকরী সভার সভ্য নরেশচন্ত্র আসিয়া উপস্থিত হইল। তাহার পোষাক দেখিয়া আমার হাঁসি আসিল । নগ্ন পদ, গাত্রে একটি গেঞ্জি এবং গলায় এক- খানা মোটা তোয়ালে। আমাকে অভার্থনা করিবার জন্ত সসম্তরমে জোড়হন্কে বলিল-_“ক্মানুন, আন্গুন,সতীশ বাবু। ওরে, তামাক দে 1” তাহার ভাব-গতিক দেখিয়া রাগও হুইল, হাসিও, পাইল। তাহাকে বলিলাম, “এ তোয়ালে গলান্ন জড়াইয়া মর্।” সে ৮৯ , বিবাহ-বিপ্রীক হাসিয়া বলিল--«আরে, ভাই, বোঝ না, বরযাত্রদের খাবার আয়োঁ- জনটা ক'রে রাখা উচিত। প্রথমে” তাদের খাইয়ে সন্ত ক'রে বিদায় কর্ব, তার পর ষে কটা লোক থাকে তাদের বোঝা যাবে । বিবাহ-রাত্রের আয়োজনের জন্য শীতলপ্রসাদ বাবু আবার পাচ শত টাকা দিয়েছেন ।” আমাদের কথাবার্তী চলিতেছে, এমন সময় সুরেন্দ্র বাবু আসিলেন। আমাকে সাগ্রহে জিজ্ঞাস! করিলেন-_দকিছু হয়েছে নাকি? আপনি যখন এত বিলম্বে এসেছেন তখন নিশ্চয়ই কিছু সুবিধা হয়েছে। আর তো ঘণ্টা দেড়েকের মামল11” আমি শ্লেষপূর্ণ স্বরে বলিলাম.--"এখনও আশ আছে নাকি 1” “আশ! শেষ অবধি ছাড়ব না। চরম সময় যা মনে আছে তা কর্ব।” আমরা তিনজনে তিনটে থেলো স্থকা লইয়া চেয়ারে বসিয়া তামাক টানিতে লাগিলাম। আমরা সেই অবস্থায় কথাবার্তা কহিতেছি, এমন সময় স্থরেন্ত্র বাবুর পুত্র রমেন্দ্র ছুটিয়া আসিয়! বলিল,_-বাবা! বাবা! অবনীবাবু এসেছেন। স্ুরেন্ত্র বাবু ও নরেশ বিন্মিত হইয়! আমার মুখের দিকে চাহিল। আমি একটু হাসিলাম। বালক রমেন্দ্রের মুখের দিকে তাকাইয়৷ দেখিলাম যে, সেও কম বিস্মিত হয় নাই। প্রথম বিশ্ময়টা কাটিয়া! গেলে সুরেন্্র বাবু স্বয়ং তাহাকে অভ্যর্থন। করিবার . জন্ত বাহিরে গেলেন। নরেশ বলিল,-_ব্যাপারট! কি? | আমি রলিলাম,__বাহাদুরী আছে। কিছু বুঝিবার সাধ্য নাই। বিবাহ-বিপ্রুব এ ৯৩ সুরেন্্র বাবু সৌজন্য প্রকাঁশ করিতে করিতে অগ্রে অগ্রে 'আসিতেছিলেন। পশ্চাতে অবণী, হেমন্ত ও রাখাল। আমার দিকে চাহিয়া অবনী বলিল,_-“সতীশ বাবু, কতক্ষণ ?* অবনীর নিকট আমি পরিচিত, ইহা দেখিয়া সুরেন্্রবাবু ও নরেশ বিন্মিত হইয়া আমার মুখের দিকে চাহিল। আমি শন্তীরভাবে বলিলাম,-_-“এই অন্ন ক্ষণ। তার পর, হেমস্ত ভায়া যে! তোমার দাদার খবর কি?” একূপ স্থলে আমার সহিত সাক্ষাৎ হএয়ায় হেমন্ত একটু অপ্রতিভ হইল । অবনী ব্যগ্রভাবে বলিল,__স্থরেন্্রবাবু, হেমস্ত ও রাখাল বাবু আমার অন্তরঙ্গ বন্ধু। নেহাত একেলা আদব ব'লে এদের সঙ্গে এনেছি । নিমন্ত্রণটা এইখানেই করুন। স্থরেন্ত্রবাবু ভদ্রতা প্রকাশ করিলেন, তাহাদের আগমনে তিনি আপনাকে ধন্য বিবেচনা করিলেন। আমি ও নরেশ তাহাদের বিনা নিমন্ত্রণে আগমন অবত্ত অনুমোদন করিলাম। উৎসাহ, পাইয়া হেমন্ত বলিল--আমি ওসব লৌকিকতার ধার ধারি না জানি ভদ্রলোক ভদ্রলোকের বাটাতে এলে কিছু অপরাধ করে না। অবনী বলিল--সুরেন্্রবাবু, সামান্ত উপহার এনেছি, একটা লোক পাঠিয়ে দিন না গাড়ি থেকে নিয়ে আম্ুক। উপহারগুলি দেখিক্কা সকলেই অবনীর কচির সুখ্যাতি করিলাম। উপহার অপর কিছুই নহে-_একখানি মুলাবান্‌ বেনারসী সাড়ি ও এক চুবড়ি গোলাপ ফুল। নরেশ আমাকে স্তিকে ডাকিয়া জিজ্ঞাসা করিল--তাইতে হে, ব্যাপারটা কি-.; ৯১ বিবাহ-বিপ্লুৰ বল দেখি? এমন ধীর ও বুদ্ধিমান চোর কখনও দেখি নি।” “আমার কিন্তু বোধ হচ্চে যে লোকটা নির্দোষ । দোষী ব্যক্তির ভাবগতিক চালচলন এতটা ধীর হ'তেই পারে না ।” “ও তাহ'লে তোমাকেও ঠকিয়েছে ?” প্না-অবনীর নির্দোষিতা সম্বন্ধে আমার বিশ্বাসট! ক্রমশঃ দৃঢ় হইতেছে । তোমার মনে নাই ষে লোকটা নব্যভাবে শিক্ষিত এবং প্রেমিক । নিজের হৃদয়ের ন্কোমল বামনা সাফল্য লাভ করিল না সুতরাং নিজের মৃত্তিময়ী আশা পরহস্তে চলিয়া যাইতেছে এ দৃশ্তটা স্বচক্ষে দেখা একটা বড় রোমান্টিক ভাব। ইহার নজীরু আছে অনেক বাঙ্গালা ও ইংরাজী নভেলে। আর হেমন্তকে ডাকিয়া আনিয়াছে নিজের গ্রণয়িনীর ফুল্প নলিনী সদৃশ মুখখানি দেখাইয়া! আপনার রুচির পরিচয় দিবার জন্য । না, আমার শেষ সন্দেহটুকু অপসারিত হইয়াছে, আমাদের তদন্ত এবার অন্য দিক দিয়া করিতে হইবে” ছেলে মহল বড় একটা গোলযোগ পড়িয়া গেলা সকলে ছুটিয়া বাহিরে গেল! দূর হইতে মিশ্রিত বাদ্চধবনি আসিয়া তাহাদিগকে এইরূপ উত্তেজিত করিয়াছিল। একটা মহা! কোলাহল উঠিল-_“বর আসিতেছে, বর আদিতেছে।” স্থুরেন্ত্র বাবুর প্রবেশ দ্বারের নহবৎ বাজিয়া উঠিল। অস্তঃপুরে পুরাঙ্গনাগণ শঙ্খ- নাদ কবিতে লাগিলেন। সকলের মহিত আমিও বাহিরে গেলাম। গলির ছুইদিকের গবাক্ষ গুলিতে কুলবধূরা বর দেখিতে আদিল। ক্রমে মিছিল সন্নিকটবর্তী হইল। ছুইদিকে আ্যাদিটিলিন গ্যাসের লাস্পের সারি, তাহার মধ্যে যভ জনমানব। প্রথমেই বিবাহ-বিপ্লীব . ৯২ একদল দেশীয় টুলি ঢোল ঢাক প্রভৃতি বাঁজাইয়া নাচিতে নাচিত্তে আসিতেছে । তাহাদ্িগের দলে যে ছোকরাটি কাসি বাজাইতেছিল তাহারই পারদর্শিত] সর্বাপেক্ষা অধিক বলিয়া! বোধ হইল) কারণ সেই কর্কশ শবের মধ্যে তাহার, যন্ত্ই সর্বাপেক্ষা অধিক কলরক করিতেছিল। তাহাদের পশ্চাতে একদল রসনচৌকী । তাহাদেরও বাছ্যে বিশেষ শ্রতি-মধুর শব্দ" কিছু পাইলাম না। তাহার পর একটা চতুষ্কোণ কাপড়ের যবনিকাঁর উপর হইতে ছুইটা বিচিত্র বেশ পরিহিত লক্ব' শ্মশ্রবিশিষ্ট মৃত্তিকার বাউল দৃষ্টিপথে পড়িল। তাহার! বালকবালিক! ও আমোদপ্রিয় নরনারীর হর্ষোৎপাদন করিবার জন্ত নান প্রকার অঙ্গ ভঙ্গী করিয়া নৃত্য করিতেছিল। তাহাদের সহিত তালে তালে ঢোল বাঁজিতেছিল। তাহার পশ্চাতে একখানা গে! শকটের উপর বাশ ও কাগজ নির্মিত একখানা জাহাজ । তাহার উপর ছুইটা! কুৎসিৎ বালক কদর্ধ্যাকার নাবিকের পোষাক পরিধান প্রিয়া নান! প্রকার মুখ ভঙ্গী করিতেছিল। তাহার পশ্চাতে এ্ররূপ একখানি গোযানের উপরস্থিত বাশের ও কাগজের মনতুরকণ্ঠী নৌকায় দাঁড়াইয়া একটা কুরূপা নিয়শ্রেণীর মুসলমান স্ত্রীলোক অতি কুৎ্সিংভাবে নাচিতেছিল। নৌকার পশ্চাতে ইংরাজী বাগ্ভ--তাহাও অতি কর্কশ। তাহার পর বাশ ও কাগজের একট! হিমালয় পর্বত--ছুইটা কুলি বহন করিয়া আনিতেছে। পাহাড়ের উপর মহাদেবের মৃণ্তি। একট! সাপ সেই হিমালয়ের উপর. উঠিতেছিল। সাপটার কলেবর হিমালয়ের সমান। মনে মনে ভাবিলাম_-আমাদের দেশের ইতরশ্রেণীর শিল্পীদিগের ক্কৃতিষই ৯৩ ' বিবাহ-বিপ্লব অসামান্ত । একদল মাদ্রীজী বাগ্যকারের পশ্চাতে জুড়ি ঘোড়ার গাড়ী ধীরে ধীরে 'অগ্রদর হইতেছিল। পাত্রটির বয়স আনাজ কুড়ি বছর হইবে; তাহার বর্ণ বেশ গৌর,-__মুখখানি অতি কোমল। কিন্তু শরীর তেমন বলিষ্ঠ ও সুগঠিত বলিয়া বোধ লইল না। সভায় বর বসিলে কোলাহলের মধ্যে আমি গিয়া গোপনে আবনীর পশ্চান্ভাগে বসিলাম। সে ও হেমন্ত কথোপকথনে নিধুক্ত ছিল) সুতরাং তাহাদের মধ্যে কেহই আমাকে লক্ষ্য করিল না। হেমন্ত বলিল--"বরটির কতদুর বিদ্যা?” অবনী একটু হাদিয়া বলিল__বার ছুই এণ্টাম্স ফেল হ/য়েছিল। তবে নাকি বাপের অনেক পয়সা আছে।” “ছোক্রাকে দেখলে ভাগ্বান্‌ বলে বোধ হয়।” পপে.বিষয়ে আর সন্দেহ আছে ?” তাহার পর সাধারণ প্রসঙ্গ চলিতে লাগিল। সেখানে বড় সুবিধা করিতে পারিব না ভাবিয়া রাখালকে কোন রকমে খুঁজিয়া বাহির করিলাম। রাখাল কোন কথাই বলিতে পারিল ন1। তাহারও বিশ্বাস_-অবনী নির্দোষ । রাত্রি ৯॥*টা বাজিল। লগ্ন উপস্থিত হুইল । স্থরেন্ত্রবাবু সভায় আসিয়া বরকে ধিবাহস্থলে লইয়া যাইবার জন্য শীতলপ্রসাদ বাবুর অক্কুমতি প্রার্থনা করিলেন। পাত্র ভিতরে দালানের উপর বসিল। বরপক্ষীত্ষ জনকয়েক ব্যক্তি ভিতরে গেল। আমিও গেলাম । আমার পশ্চাতে হেমস্ত ও অবনী বাটার অভ্যন্তরে প্রবেশ করিল। বিবাহের কাঁধ্য আরম্ভ হইল। উত্তেজনায় আমার হৃদয় জঁজোরে স্পন্দিত হইতেছির্প। প্রতি মুহুর্তেই মনে করিতেছিলাম বিবাহ-বিপ্লব ' ৯৪ --এইবার সর্বনাশের স্ুত্রপাত হইবে-আমোদ প্রমোদ বিন্বয়ে পরিণত হইবে । কন্তা আনিবার সময় হইল। আমার উত্তেজনার অবধি:বহিল না। সম্প্রদানের জন্য কন্তা আমিল। সেই বিবাহ বাসরের আলোকে দেখিলাম, কন্তা অপর কেহই নহে মুরলা। চোখ মুছিয়া দেখিলাম__মুরল! | নিকটে সরিয়া গিয়! দেখিলাম »-মুরলা । আমার স্বর্গীয় পিতামহ যদি আবার নরদেহ ধারণ করিয়া স্বর্গ হইতে নামিয়া আসিতেন তাহ! হইলেও আমার বিস্ময়ের মাত্রাটা এত অধিক হইত না । সেই ফটোগ্রাফের চিত্রটাকে একমাস কাল দিবানিশি ধ্যান করিয়াছি। সুতরাং জীবন্ত মুরলা যেন আমার কতদিনের পরিচিতা । ফটোগ্রাফের মুষ্তির সহিত এ মৃত্তির কোনও প্রভেদ ছিল না । দেখিবামাত্র চিনিলাম যে সর্ধন্থলক্ষণা কুম্মরূপ! সেই কিশোরীটি-_মুরলা। হেমন্ত চুপ্বি চুপি অবনীকে বলিল-বাঃ! বাঃ! বড় সুন্দর চেহারাটা তে! |» অবনী বলিল--“একমাসে কিন্ত একটু রোগা হয়ে গেছে ।” তাহার কণস্বর কাপিতেছিল। পিছন হইতে কে আমার স্বন্ধ স্পর্শ. করিল। ফিরিয়া দেখিলাম_ম্মিতমুখে নরেশ। সে. আমাকে' অনুসরণ করিতে ইঙ্গিত কক্রিল। আমি অন্মুগ্ধের মত তাহার পিছুপিছু চলিলাম। আজ 'সে বিজয়-গর্রিত, আমি নির্বোধ । জনাস্তিকে গিয়া হাসিয়া বন্ধু বলিল__”কান্েনখুলে ?* আমি বলিলাম-_“তুমি ভোজবাজী ভ্বান। কনে পেলে কোথা? ও. ঠিক সুরলা তো?” নরেশ হাদিয়া বলিল-:*কেন ফটো দেখ নি? এ রূপসীই-_মুরলা |». ক রথ রর ্ এ এ. ১৫. তি হণ ধু ৮ / ক ্ পাপা ক ১৩০ তি সি দিত 18107 বশ প্রথন্ন পা্িইস্টানু রর ২৫৪টি 1৬. | স্রামী নিগ্রহে ১৯-৫ এ সকল পুরাতন কথ|। বিবাহের পর জানিলাম। সামাদের ুরেন্ত্রবাবুর মোকদ্রমার সহিত এ সব কথার বিশেষ বন্ধ ছিল। তাই মনোযোগ দিয়া শুনিয়াছিলাম। অনেক বেশী ₹থা শুনিয়াছিলাম। আমি সংক্ষেপে সে কাহিনী বিকৃত করিব। দেশে ইংরাজী শিক্ষার বিস্তারের সহিত স্থিতিশীল হিন্দুজাতির আচার ব্যবহার চালচলন একেবারে পরিবন্তিত হয় নাই এ কথা! দাহারা থলিয়া বেড়ান--আমার বিশ্বাস তাহারা আমাদের মামাজিক অবস্থা বিশেষরূপে পর্যবেক্ষণ করেন নাই। পাশ্চাতোর সহিত সংস্পর্শে আসিয়া কেবল পোষাক পরিচ্ছদে কথাবার্তায়, আমাদের অবস্থাস্তর ঘটে নাই। অনেক স্থলে আমাদের ভাবের বেশ একটা পরিবর্তন ঘটিয়াছে, তাহাও প্রত্যক্ষ করিতে পারা যায়। প্লে সকল পরিবারে ইংরাজী শিক্ষা প্রবেশলাত করিয়াছে» সেই সকল পরিবাঁর-মধ্যে বহুবিবাহ একেবারে লোপ পাইয়াছে ! বুবিবাহ প্রধানতঃ কৌলীন্য প্রথা হইতে উৎপন্ন হইয়াছিল। কিন্তু বছবিবাহ' প্রথা বন্ধ হুইবার সঙ্গে সঙ্গে কৌলীন্ত প্রথারও ক্লে কুঠায়াঘাত হুইয়াছে। আবার কৌনিন্প্রথার আশীর্বাদ বিবাহ-বিপ্রৰ ৯৬ বঙ্গদেশে গৃহ-জামাতাঁর সংখ্যা যেরূপ অধিক ছিল, কৌ লীন্ত প্রথার অধঃপতনের সঙ্গে সঙ্গে গৃহৈ জাত, প্রতিপালন করিবার পদ্ধতিও ক্রমশঃ লয় প্রাপ্ত হইতে লাগিল। শিক্ষা বিস্তারের সহিত লোকের মনে আত্মমর্ধ্যাদা বন্ধিত হইয়াছে বলিয়া শ্বশুর গৃহে প্রতিপালিত হইতে এখন আর কেহ মহজে স্বীকৃত হয় না। এমন কি সামান্ত ইংরাজী শিক্ষ! পাইয়াও যাহারা শ্বশুর গৃহে বাস করে তাহারা নিতান্তই অস্তঃসারশূন্য ও হীন প্রকৃতির লোক-_এ ধারণাটা দেশের মধ্যে রাষ্ট্র হইয়া! পড়িয়াছে। ত্রিশ বৎসর পূর্বে ঠিক কতকট! প্ীরূপ ভাবের উত্তেজনায় জীবনধন মুখোপাধ্যায় ধনী শ্বশুর নীলমণি গাঙ্গুলির গৃহ পরিত্যাগ করে। সমগ্র বিষুপুরে তখন নীলমণি গাঙ্গুলির প্রতাপ অখণ্ড ছিল। দুর্বিনীত ত্রাঙ্গণ প্রজা অবাধ্য হইলে তাহার ব্রগ্গোত্তর অপহরণ করিয়া তাহ! বাধ্য ও চাটুকীর আত্মীয়কে দান করিতে, খানার উদ্ধত দারোগার নামে নাঁলিসের পর নালিস রুজু করিয়া, ভারতেশ্বরীর সর্বশক্তিমান পুলিসের উপর অবধি আপনার আধিপত্য বিস্তার করিতে, আশপাশের জমিদার, পত্নিদার প্রভৃতির সহিত সামান্ত কথায় কোমর বাঁধিয়া দেওয়ানী ফৌজদারী ছুই চারি নম্বর মামলা করিতে নীলমণির মত দক্ষতা“কাহারও ছিল না। এমন কি বিষুপুরের রাজারাও নীলমণিকে ছূর্জন ভাবিয়া দূরে পরিহীর করিতেন_-কখনও তাহার বৈরিতাচরণ করিতেন না। তাহার জামাতা জীবনধন বর্ধমানের ইংরাজি বিস্তালঞে ৯৭ ' বিবাহ-বিপ্লৰ শিক্ষালাড় করিয়াছিল, এপ্টেন্স পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হইয়াছিল। কেবল দারিদ্র পীড়িত হইয়| সে ধনী নীলমণি গুলির গৃহজামাতা হইয়াছিল। তাহার অপর কিছু কষ্ট ছিল না। কষ্ট ছিল মনের। একজন অত্যাচারী লোকের গলগ্রহ হইয়া থাকা, তাহার উৎপীড়নে স্থির থাকিয়৷ তাহার কার্যের অনুমোদন কর! জীবনধনের পক্ষে বড় কষ্টের কারণ হইয়! উঠিতেছিল। শ্বশ্তর গৃহে স্বচ্ছন্দে বাস করা অপেক্ষা স্বোপার্জন-লব্ধ অন্নে জীর্ণ কুটারে বাম করা প্রকৃতপক্ষে স্থখকর। জীবন দরিদ্র ও নিঃসহায় হুইলেও সময়ে সময়ে শ্বশুরের কার্যকলাঁপের সমালোচনা করিতে আরম্ভ করিল। বিবাহের অল্পদিন পরেই শ্বশুর ও জামাতার মনোমালিন্ত ঘটিল। বলা বাহুল্য শ্বশুরের সহিত অনৈক্য বশতঃ গৃহজামাতা- ই জীবনধনই হারি মানিলেন। এত বড় বিশাল পৃথিবীতে আপনার বলিতে জীবনধনের কেহও ছিল না। যে আত্মীয়দিগের গৃহে জীবন প্রতিপালিত হইয়াছিল এখন তাহারা আর তাহাকে পরিবার মধ্যে ফিরিয়া লইতে সম্মত হইল না। একেতো বাহিরের লোককে অন্নদান করা বিশেষ স্থখকর কার্ধ্য নহে; তাহার উপুর জীবনকে গৃছে লইয়া নীলমণির লহিত দ্বন্ করিবার ভরসা তাহাদের মোটেই ছিল না! এতদিন তাহারা জীবনকে অনদান করিয়া, যংকিঞ্চিৎ লেখাপড়া শিখাইয়! ধনী গৃহে তাহার বিবাহ দিয়াছিল। সামান্ মান্ষে আর কি করিতে পারে? [বণেষ এই কলিকালে। তাহারা ও একপ্রকার দায়মুক্তও বিবাহ-বিপ্লীব ৯৮ হইয়াছিল। নীলমণির সহিত- সম্বন্ধ স্থাপন করিয়া তাহারা আত্মপ্রসাদ লাভ করিয়াছিল। সুতরাং যখন জীবন ফিরিয়া আসিয়! তাহাদিগকে বলিল যে আত্মম্্যাদা রক্ষা! করিয়! শ্বশুর গৃহে বাস করা অকীগ্তিকর, জঘন্য ব্যাপার, তখন ত্্যন্ত বিশ্মিত ও বিরক্ত হইয়৷ তাহারা জীবনকে অনেক সুপরামর্শ দিয়াছিল। তাহার! সর্ব-সন্মতিক্রমে নিম্নলিখিত সিদ্ধান্তে উপনীত হইল। যাহাকে অল্লবয়সে পিতৃমাতৃহীন হইয়া! সংসারে বাস করিতে হয় তাহার পক্ষেতো। একটা বাহিরের আশ্রয় ভিন্ন জীবনধারণ করাই দুরূহ ব্যাপার। শ্বশুর এবং পিতায় প্রভেদ কি? শ্বশুরের কথায় কষ্ট হইয়া সে ঠিক বিনয় ও সৌজন্য প্রকাশ করে নাই। আর অমন শ্বশুর! যাহার দোর্দড প্রতাপে সমস্ত দেশট। বিকম্পিত, বাঘে গরুতে এক পাত্রে জলখায়। তাহার কথায় আবার রাগ, তাহার সহিত আবার মনীস্তর ! এসব একালের শিক্ষার দোষ। এখনই জীবনের পক্ষে তাহার শ্বশুরের নিকট ক্ষম! প্রার্থনা করা একান্ত কর্তব্য। এরূপ অবস্থায় যুবক জীবনধন কি করিতে পারে ? অনন্তোপায় হইয়া স্বগুরের চালচলন কথাবার্তার উপর মত্তন্ফুট করিতে পারিল নাঁ। আবার শ্বশুরগৃহে প্রত্যাবর্তন করিল। শ্বশুরও বিচক্ষণ ব্যক্তি) সংসারের কীট। মানবচরিজ্রের দৌর্কল্য অধ্যয়ন করা! তাহার একট! প্রধান কাধ্য। নীলু গাঙ্গুণি মনে মনে বুবিল যে জামাতার মেজাজ কড়া । : তাহার গর্বে পদ্দাধাত ১2 ৯৯ " বিবাহ-বিপ্লব আদব কায়দা অনুসারে তাহার প্রতি মৌখিক ভালবাসা দেখাইতে বিরত হইল না। আর এ বিদ্যায় তাহার শ্বশুরও বিশেষ দক্ষ ছিল। নীলমণি যে দিন কাহারও উপর মিথ্যা ডিক্রী লইয়! তাহাকে সপরিবারে পূর্বব পুরুষের বাস্ত ভিটা হইতে বেদখল করিয়া ভিখারী করিত, সেদিন প্রাত:কালে তাহার বাটা গিয়! কুশল জানিয়া আসিত, সম্মানযোগ্য ব্যক্তি হইলে তাহার আশীর্বাদ লইয়া আসিত এবং বয়ঃ-কনিষ্ঠ বাঁশুদ্র হইলে তাহাকে অম্লান বদনে আশীর্বাদ করিয়া আসিত। সুতরাং সে বাহিরে জীবন- ধনের উপর মৌখিক স্সেহ প্রদর্শন করিত এবং সুবিধা পাইলেই তাহার গর্বে আঘাত করিয়! তাহাকে ব্যথিত করিত। বুদ্ধিমান জীবনধন কিন্তু নীলমণির হৃদয়ের প্রকৃত ভাবটা বুঝিতে পারিয়াছিল। সে হৃদয়ঙ্গম করিল যে বেশী দিন তাহার আশ্রয়ে থাকিলে তাহাকেও আপনার মানসন্তরম জলাঁঞলি দিয়া অন্ুগ্রহজীবির মত থাকিতে হইবে আর আপনার আতমর্ধ্যাদা রাখিয়৷ চলিলে কোনদিন তাহাকে শ্বশুরের কোপ দৃষ্টিতে পড়িয়া বিপদগ্রস্থ হইতে হইবে। আপনার জ্যোষ্ঠা কন্তা। মনোরমাকে ভাল বাঁসিলেও, আপনার হৃদয়ের বিষ উদগীরণ করিবার সময় নীলমণি স্নেহ প্রভৃতি ছূর্ব রমশী-স্ুলভ বৃত্তির দ্বারা বুশ | ইইবে না, জীবনধন এ দিষ্ধান্তও করিয়াছিল। সে বড়ই মানসিক -কষ্টে এক বৎসর অতিবাহিত করিল। জীবনধন যেক্প বিদ্তাশিক্ষা করিয়াছিল তাহাতে কলিকাতা ত্) অপর সহরে গিয়া বাস করিলে কোনও প্রকারে শ্রাসাচ্ছাদন বিবাহ-বিপ্লীৰ ১৩৬ করিতে পারিত। তাহার পক্ষে আপনার পরিশ্রমলন্ধ শাঁকান যে স্বপুরগৃহের চর্বাচুষ্যলেহৃপেয় অপেক্ষা উপাদেয় হইবে, নিজের শক্তির উপর নির্ভর করিয়া ভরণপোষণের জন্য দিবানিশি পরিশ্রম করিয়াও যে সে ধনীর অনুগ্রহজীবি হইয়া সচ্ছন্দতাভোগ কর! অপেক্ষা অধিক আনন্দ পাইবে, তাহা ভাবিয়া সে সঙ্বল্প করিয়াছিল যে নিষ্ঠুর নীলমণির গৃহ পরিত্যাগ করিয়া একবার স্বাধীন ভাবে জীবিকানির্ববাহ করিবার চেষ্টা করিবে । কিন্তু তাহার এ সঙ্কল্লের প্রধান অন্তরায় ছিল মনোরমার স্নেহ--তাঁহার যুবতী ভা্যার অকৃত্রিম নিম্মল ভালবাসা । তাহার নিকট বিদেশ যাইবার কথা উত্থাপন করিলেই মনোরম! ম্বামীর হাত ধরিয়া কার্দিত, তাহার অবমান-সন্তপ্ত বক্ষস্থলের মধ্যে মুখ লুকাইয়! পবিত্র অশ্র-বিসর্জন করিত। তাহাতে জীবনধনের হৃদয়ের ক্ষতস্থল ধৌত হুইয়! মুছিয়া যাইত, সেও কীদিত, শেষে হাদিত, রঙ্গনীর অবশিষ্ট ভাগ প্রমোদে কাটিয়া যাইত। _নীলমণি যে পরিমাণে নির্দয় ও কঠোর ছিল, যুব্তী মনোরম! ঠিক দেই পরিমানে কোমল ও মধুর প্রকৃতির ছিল। ন্বভাবে এরূপ বৈপরীত্য অনেক দেখিতে পাওয়া যাঁয়। ইহা! জগদীশ্বরের স্থষ্টিমাহাত্ম। . - বীর ধীরে যেমন. মনোরমার জ্ঞানবৃদ্ধি হইতেছিল সে ক্রমশঃ নিষ্ঠুর পিতার ব্যবহার গুলার বিসদৃশত হদগন্গম করিতে .. সক্ষম হইতেছিল। ম্বামীর উপর পিতাকে অত্যাচার করিতে দেখিয়া যুবতী প্রাণের মধ্যে বড় ক্্রণা ভোগ করিত? যে দিন মা ১০১ " বিবাহ-বিপ্লব তাহার হ্বামী স্বাধীন হইতে দৃঢ়-সন্কল্প হইল সে দিন মনোরম অবাধে আপন জীবন প্রদীপকে পিতৃগৃহ পরিত্যাগ করিতে অন্গমতি দিল। শ্বশুর গৃহ ত্যাগ করিবার সময় জীবন ও মনোরমা কিরূপে পরস্পরের কথবেষ্টন করিয়া কীদিয়াছিল, মনোরমার স্নেহময়ী জননী স্বামীর ভয়ে প্রকাশ্তে ক্ছু না বলিতে পারিলেও গোপনে জামাতাকে কিরূপ আশীর্বাদের সহিত কিঞ্চিৎ সুবর্ণ মুদ্রা প্রদান করিয়াছিলেন, নিঃসহাঁয় গৃহজামাতার বিদেশে অর্থো- পাজ্জন করিতে যাইবার সাধ হইয়াছে দেখিয়া! পাপিষ্ঠ নীলমণি কিরূপ বিন্রপ করিয়াছিল এ সকল কথা আমি বিশেষরূপে বর্ণনা করিতে পারি না কারণ সে সময় আমি উপস্থিত ছিলাম না। সেআজ ত্রিশ বৎসরের কথা, তাহার পর বৎসরে মোটে আমি জন্মগ্রহণ করিয়াছিলাম। কিন্তু এ মকলই যে ঘটিয়াছিল তাহা আমি স্বয়ং জীবনধন বাবুর মুখে শুনিয়াছিলাম। তাহার বিদায়ের' সময় জীবনধন মনোরমার সহিত একট! মহা সর্ত করিয়া- ছিল। সে রোরুগ্যমানা স্ত্রীর চিবুক ধরিয়া বলিয়া আমিয়াছিল __*প্রিয়তমে, আমি যতশীঘ্র পারি আসিয়া তোমায় লইয়া যাইব । আমার*কষ্টের দিনে অপরিচিত সংসারে তুমি আমার জীবন সঙ্গিনী হইতে পারিবে কি?” তাহাতে মনোরম! বলিয়াছিল,--- “আমায় এখনি লইয়া চল, যেখানে তুমি থাকিবে সেই স্থানই আমার ্বর্গ।” কিন্তু অতট] ছুঃসাহস জীবন দেখাইতে পারে নাই। সে 'একাকী জীবনার্ণবে ভাসিয়া পড়িয়াছিল। | বিবাহ-বিপ্লীব ১০২ নিঃসহাঁয় অবস্থায় বন্ধুহীন জীবনধন কলিকাতায় আগমন করিয়া প্রথমে বিষম বিপদজালে জড়িত হইয়াছিল একথ| সহজেই অন্ুমেয়। নানা প্রকার বাধা বিদ্ব একে একে মাথা তুলিয়। তাহার গন্তবা পথের মধ্যে বিরাট আকার ধারণ করিতে লাঁগল। কিন্তু এ সকল বিপদে, এত কষ্টের মধ্যেও সে একট! স্বাধীনতার সপ্রীবনী প্রভাবে হৃদয়ে অপার আনন্দ ভোগ করিতে লাগিল। বৎসরের 'পরে তাহার ভাগ্য স্তুপ্রসন্ন হইল, একটি ভদ্রলোক তাহার উদ্যমে ও অধ্যবসায়ে সন্তষ্ঠট হইয়! তাহাকে এলাহাবাঁদে লইয়া গেলেন। তিনি বণিক। তাঁহারই কার্য এক বংসর কাঁল করিয়া একদিন জীবনধন অকল্মাৎ এলাহাবাদ হইতে বিষণুপুরে আসিয়া উপনীত হইল। বিষ্ণপুর ত্যাগ করিবার পর এ দুইবৎসর জীবনধন কাহাকেও পজ্জাদি দিত না। তাহার বিরহ-বিধুরা সাধবী স্ত্রী প্রবাসী স্বামীর সংবাদ পাইবার জন্ত কত আকাজ্ষ! করিত। জীবনধনের উপস্থিত অবস্থা লম্বন্ধে কেহ কোনও কর্থা জানিত না। নীলমণির স্ত্রী অধ্যে মধ্যে স্বামীকে জামাতার সংবাদ জইবার জন্য অন্গবোধ. কক্সিতেন, কিন্তু নীলমণি সে কথায় কর্ণপাঁত করিত না। তাহার. দৃঢ় বিশ্বাস ছিল, অচিরেই, বীতগর্ক হইয়া দৈন্য-পীড়িত জীবনধনকে আবার তাহার আশ্রয়ে প্রত্যাবর্তন করিতে হইবে। কিন্তু যখন এক বৎসর অতিক্রম করিল তখন. স্্ীর প্ররোচনায় সে এক বার জাঙাতার সন্ধান লইতে চেষ্টা করিল। বলা বান্যন্য তখন জীবন এলাহাবাদে চলিয়া: গিয়াছিল ১০৩ | | & বিবাহ-বিপ্লব স্ৃতরাঁং কেহ তাহার সংবাদ দিতে পারিল না । এ অপরাধটা জীবনেরই ইহা ভাবিষ্না 'নীলমণি জামাঁতাঁর উপর অধিকতর রাগাৰ্িত্ব হইল। ছুইবৎমর পরে জীবন দেশে ফিরিল, তখন নকলেই বিশ্মিত হইল, সকলেই তাহাঁকে সাদরে অভ্যর্থনা করিল) কিন্ত শ্বশুর নীলমণি আনন্দের লেশমাত্র না দেখাইয়া বরং মুখে বিরক্তির চিহ্ন দেখাইল। স্বদেশে পৌছিয়! জীবন প্রথমেই আপনার আত্মীয়দিগের সহিত সাক্ষাৎ করিল। যাহারা তাহাকে অন্নদানে প্রতিপালিত করিয়া- ছিল, জীবন ছুই বৎসরে যাহা কিছু অর্থ সংগ্রহ. করিয়াছিল, তাহাদিগকে প্রদান করিল। শ্শ্তরের সহিত কলহ করিয়া! বিষুপুর ত্যাগ করিবার জন্ত যাহীরা জীবনের উপর একটু কুপিত হইয়াছিল তাহারা সকলেই এখন ঝুঝিল যে জীবন আত্মমর্ধ্যাদ! অস্ষুপণ রাখিবার জন্ত নীলমণির নিকট হইতে বিদায় লইয়া উত্তম কার্ধ্যই করিয়াছিল | জীবনধন যে কয়দিন বিষুঃপুরে বাস করিল তাহার মধ্যে স্্রীর সহিত একটা! রফারফিত হইয়া গেল। যে প্রকারেই হউক সে স্ত্রীকে লইয়া তাহার ভবিষ্যৎ জীবনের সঙ্গিনী করিবে। এ বিষয়েজীবনধনের রিশেষ আগ্রহাতিশয্য না থাকিলেও স্নেহময়ী মনোরমার কাতরতায় তাহাকে এ দুরূহ সঙ্কল্পে সম্মত হইতে ““ইইয়াছিল। ছুই চারিদিন ইতস্ততঃ করিয়া এক দিন ধীরে ধীরে শ্বশুরের নিকট উপস্থিত হইয়া জীবন বলিল-_প্যদি তি করেন তো আমা স্ত্রীকে সঙ্গে লইয়া যাই ।” বিবাহ-বিপ্লুব ' ১০৪ জামাতার কথ! শুনিয়া নীলমণি একেবারে অগ্নিশর্মা হইয়া উঠিল। যে সকল অবমাননাকর কর্থা কহিয়া৷ তিনি জামাতাঁকে কীদাইলেন তাহা শুনিয়া! তাহার অবিবাহিতা কণ্া অনুপমার ক্ষত্র হৃদয়ও পিতার প্রতি ক্রোধে ভরিয়া গেল। সে ছুটিয়া মনোরমার নিকটে গিয়া বলিল--“দিদি জামাইবাবু তোকে বিদেশে নিয়ে খ্রেতে চেহেছেন।” মনোরম! হাসিয়া বলিল__ "কেন ।” গস্ভীরভাবে বালিকা বলিল--"্বা, দিদি! না সত্যি করে বল্‌-তোঁরও ইচ্ছা আছে ?” | মনোরম) কথাটা বুঝিতে পারিল না--বলিল__একেন ? বালিকা জোষ্ঠার নিকট ভগ্মীপতির অপমানের কথাট! বলিল। সে সময় অনুপমা! পিতার কাছে ধীড়াইয়া ছিল। সে জীবনধনের চক্ষু হইতে জল পড়িতে স্পষ্ট দেখিয়াছে। এ সংবাদে কি পতি- প্রাণা মনোরমার্‌ চক্ষু শুফ থাকিতে পারে ? যুবতী কাদিল-- দক্ষগৃহে শিবানী যেমন কাঁদিয়াছিলেন সেই রূপ কাদিল। বালিকা অনুপম! বলিল--“ছিঃ দিদি কীদছিদ্‌ কেন? তুই , আজই রাত্রে জামাই বাবুর সঙ্গে পালা। আমার বিয়ে হ'লে আমিও পালাতাম। এখানে আর থাকিস্‌ না।” মনোরম! তখন ছোট ভগ্সিটিকে বক্ষে টানিয়া লয়! মুখচুম্বন করিয়া *বলিল--- “বটে !” কিন্তু সেই কথাটা তাহার মস্তিষ্কে ঘুরিতে লাগিল। পিড্‌ _-তজি, মাতৃ-ভক্তি, গ্বদেশ_গ্রীতি, লোক-_লজ্জার তয় সমস্ত: পরিত্যাগ করিয়া মনোরম! শ্বাধীর সহিত পলাইল। ১৩৫ ” বিবাহ-বিপ্লৰ _ন্ভিতীম্র পন্ষিচেছেদ মুতন গুহে _ পথে নারী বিবজ্জিতা নিয়ম লঙ্ঘন করিয়া যুবক জীবনধন যুবতী ভঁর্য্যা সমভিব্যাহীরে কর্মস্থলে পৌছিতে বড় বিশেষ কষ্ট পায় নাই। নিজের সামান্ত অবস্থান্ুসারে মনোরমার স্থ- ্বচ্ছন্দের বিধান করিতে জীবনধন বড় নৃতন স্থুখ পাইয়াছিল। মনোরমার গ্রীতিপূর্ণ হৃদয়টি কিন্ত বিষাদে ভরিয়! রহিল। পিতার নিকট হইতে মনের আবেগে চলিয়া আসিবার সময় সে বুঝে নাই যে, তাহার ক্ষুদ্র হৃদয়ে নিষ্ঠুর পিতা অনেকটা স্থান অধিকার করিয়াছিল। তাহার মাতাকে দেখিতে না পাইলে তাহার পক্ষে গ্রাণ ধারণ করা এরূপ ছুরূহ হইবে তাহা সে পূর্বে ঠিক বুঝিতে পারে নাই। (ছোট ভন্মী অনুপমার জন্তও তাহার হৃদয় কাদিত। তাহার উপর সেই গ্রামের পথ, ঘাট, তরু, লত সকলই যেন কি মন্ত্রবলে তাহার হৃদয়কে পিত্রালয়ের দিকে টানিতে আরম্ভ করিল। রাত্রিতে যুবতী ন্বগৃহের স্বপ্ন দেখিত__ অনুর সেই অর্থহীন প্রগল্ভতা তাহার কর্ণকৃহরে ১ বঙ্গীত- ধ্বনির মত্ত বন্কৃত হইত । | কিন্ত স্বামীর মনে: কষ্ট হইবে বলিয়া মনোরমা এিসের "তরে জীবনধনকে একথা বলে 'নাই। বুদ্ধিমান জীবন খুবিম্নাছিল তাহার প্রেমে স্ত্রী কতটা স্বা্থত্যাগ করিয়াছে । শেষে ছুই বংসর পরে যখন তাহাদের প্রথম শিশু ভূমিষ্ঠ হইল, তখন, বিবাহ-বিপ্রীব ১০৬ মনোরমার মনটা এক প্রকার স্থির হইল। এখন তাহার জন্ত নৃতন পৃথিবী সৃষ্ট হইল। যদিও একটা অব্যক্ত বাসনা চিরদিন তাহাকে সেই গ্রামের দিকে টানিয়। লইয়া যাইত তবু সে বাসনার আর সেরূপ আকর্ষণী শক্তি ছিল না। ইহা প্রর্কৃতির নিয়ম। আমাদের নূতন নৃতন অবস্থার সহিত সামঞ্জস্ত করিয়! ইয়া চলিবার ক্ষমতা ভগবান দেন বলিয়া এখনও পৃথিবী জীবপূর্ণ। | চঞ্চলা কমলা! প্রথমে তিনি জীবনধনকে অনুগ্রহ করিয়াছিলেন। তখন জীবনধন যে কার্যে হস্তক্ষেপ করিত, তাহাতেই সাফল্য লাভ করিত। জীবনধন ব্যবসা-বাণিজ্য করিয়া কিছু অর্থ সংগ্রহ করিল, পশ্চিমের বাঙ্গালী ও হিনুস্থানী সমাজে প্রতিষ্ঠা লাভ করিল, পাঁচ জনের মধ্যে একজন বলিয়া পরিগণিত হইল। তাহার ধনে পুত্রে লক্ষ্মী লাভ হইল। মনো- ব্মা চারিটি সুকুমার প্রসব করিলেন। ছুঃখের পর স্খ__ কুহেলিকার পর অরুণ-কিরণ--বড় মিষ্ট, বড় সুখের। চারি পুত্রের পর এক কন্তা 1 জন্মিল। জীবনধন বড় শান্তিতে বড় তৃষ্থিতে প্রায় বিংশতি বংমর অতিবাহিত করিল। | চঞ্চল] কমল! ভ্রকুটি করিলেন, একটু অন্তমনস্কতার ভাব _একটু যেন অশান্তি প্রকাশ করিলেন। জীবনধনের জ্যেষ্ঠ পুত্রটি কাল-কবলিত হুইল। সাঞ্জান বাগানে বজ্জাঘাত হইল, বড় তক্ুটি, জিয়া, গেল। . জীবনধন বাল্যের কুছেলিকার ছার! দ্বখিল। হার পর আর একটি, তাহার পর আঁর একটি, ১০৭ , বিবাহ-প্লবিৰ শেষে চতুর্থটি। একে একে পিতামাতাকে হাসাইতে হাসাইতে তাহারা যেমন আসিয়াছিল, ঠিক তেমনি একটির পর একটি জনক-জননীকে কীদাইয়া ফিরিল! জীবনধন কত চেষ্টা করিল প্রথমটির মৃত্যুর পর ছুইজনে অবশিষ্ট কয়েকটিকে টানিয়া বুকের মধ্যে লুকাইয়া রাঁখিয়াছিল কিন্তু যম ভীষণ শক্র। বাকি রহিল অষ্টম বর্ধীয় বালিকা সরলা_বূপের আকর, জ্যোতক্নার রাণী, অমৃতভাষিণী স্থম্দরী সরলা । শ্নেহময়ী সরলার উপর পিতা- মাতার ষত স্নেহ, যত মমতা কেন্দ্রীভূত হইল। সৌতাগ্যমী বালিক। হাসিত, খেলিত, ছুটিত। শিশু-কণ্ঠে বৃদ্ধার মত কত বড় বড় কথা বলিত। পিতা মাতার মুখে যে সব কথা শুনিত, পুত্তলিকা-দম্পতির হইয়া নিজে সে সব কথা আবৃত্তি করিত। জীবনধন শুন্ত, মনোরম শুনিত। উভয়ে উভয়ের মুখপানে চাহিত,_-কি অপার আনন্দ! একটিতে এত সখ দান করে, বাকি গুলি থাকিলে আজ ধরণী স্বর্গ হইত। তাহারা বোধ হয় অন্কে পাপ করিয়াছিল, তাহাদের বোঁধ হয় ভগবান শাস্তি দিতে চাহেন; আরুও যদি শান্তি দেন! তাহারা সরলার মুখের দিকে চাছিত_-কি লাবণ্য! তাহারা শিহুরিয়া উঠিত। বালি- কাকে ক্রোড়ে টানিয়া লইত, মুখচুস্বন করিত। সে বুঝিত না। তাহাদের হাত ছাড়াইয়া পলাইয়! পুতুলের সংসারে গিয়! গহিণীপণা করিত। ০৪০: 4: কারন ৩৮ আরও পাঁচ বৎসরের সংগ্রাম--ভাক্গ! বুক লইয়৷ লড়াই । জীবনধন এখন আর দে রকম সাফল্য লাভ করে না। বাণি- বিবাহ-বিপ্লীব' | ১০৮ জ্যের লক্ষমীও চাঞ্চল্য দেখাইল। জীবনধনের আর সে উদ্যম, সে অধ্যবসায় ছিল না আর হাড় ভাঙ্গা পরিশ্রমে জীবন সখ পায় না। এখনও তাহার যথেষ্ট অর্থ ছিল। মাত্র একটা কন্তা। তাহাকে যথেষ্ট যৌতুক দান করিয়াও বক্রী সম্পত্তিতে তাহারা মনের সুথে থাকিতে পারিবে। কিন্তু কন্যার বিবাহ দিতে হইবে, এই ব্ররোদশ বর্ষের স্নেহের কেন্জুস্থল গৃহ ছাড়িয়া চলিয়া যাইবে । কিবিড়ম্বনা! কি নির্জনতার ছায়া! সংসার তখন কেমন লাগিবে কে জানে? যে সামাজিক রীতির বিরুদ্ধে সে যৌবনে বিদ্রোহ.কেতন উড়াইয়াছিল এখন সেই রীতি বড় মঙ্গলময় বলিয়া প্রতিভাত হইল। একটি শাস্ত শিষ্ট গৃহ-জামাতা মিলে না? তাহাদের পুত্র নাই | জামাতা মিলে না? জামাতা পুত্রের স্থানাধিকার করিবে, কন্ঠ গৃহে থাকিবে। শতীম্স পলিচ্ছছেচ্‌ আগন্তক বাগান বাটার বারান্দায় বসিয়া জীবন ও মনোরম! গল্প করিতেছিল। বালিকা একখানা আরাম-চৌকিতে বসিয়া পড়িতেছিল। বহুদিন তাহারা বাঙ্গালা দেশ ছাড়িয়াছে। সরা কলিকাতা, এই প্রথম দেখিল। করিকাতার নিকটবর্তী এই বাগান-বাটাতে তীহারা! বাস করিতেছিল। ' সহরে বড় গোলমাল) ১০৯ *বিবাহ-বিপ্লিব বাঙ্গালীর মেয়ের উপযুক্ত বর পশ্চিমে পাওয়া যায় না। বাঙ্গাল! দেশে না থাকিলে তাহারা সরলার জন্ত মনের মত পাত্র গ্রহ করিতে পারিবে না বলিয়া জীবনধন ও মনোরমা বাঙ্গাল! দেশে ফিরিয়াছিল। সরল! বুবিয়াছিল তাহার বিবা- হের প্রস্তাব হইতেছে। সে একটু গম্ভীর হইয়াছিল। বাপ মার উপর রাগ করিয়াছিল। অথচ প্রাণের মধ্যে কি যেন একটা নূত্ধন ভাব, একটা! নূতন আশ জাগিয়! উঠিত। বলিয়াছি, জীবনধন ও মনোরম গল্প করিতেছিল, বালিক! পড়িতেছিল। গাছপাল1 বর্ষার জলে ন্নান করিয়া বেশ সবুজ দেখাইতেছিল। হঠাৎ ছুইটা লোক বাগানের মধ্যে ঢুকিয়া একটা আমগাছের পার্খে দাড়াইল। বালিকার দিকে চাহিয়া তাহারা কি একটা পরামর্শ করিতেছিল। জীবনধনের নিকট ব্যাপারটা ভাল বলিয়া বোধ হইল নাঁ। সে ধীরে ধীরে উঠিয়! 'পিছনের দরন্ধা দিয়া তাহাদের পশ্চাতে একটা গাছের ঝৌপে ঈাড়াইল। লোক ছুইটি এত একাগ্রতার সহিত কথোপকথনে নিষুক্ত ছিল যে তাহারা মোটেই তাহাকে লক্ষ্য *করিল না। 'জীবনধন মন দিয়া তাহাঁদের কথোপকথন শুনিতে লাগিল। যুবকটি বলিল--“মহীঁশয় আমি আজ প্রায় এক মাস ধরে -ফুটোথানা দেখছি, এতটা কি আর তুল করব।” বস্ঃজ্যোষ্ট ব্যক্কি ব্লিব-_মশায় এন|। যুবক কোপ প্রকাশ করিয়া বলিল-_ কি বলেন মশায়! আপনার চোখ্‌ খারাপ হয়েছে,__নিশ্চয় “চোখ্‌ খারাপ “হয়েছে ।” এই চোখ্‌ মুছে দিলাম, দেখুন দেখি । বিবাহ-বিপ্লব" | ১১৩ যাত্রা-থিয়েটারের শ্রীকৃষ্ণ দিব্যচক্ষু দান করিবার সময় যেমন অভিনেতার চক্ষে হাত বুলাইয়া দৈয়, যুবকটি সেইরূপ প্রৌঢ়কে দিব্য-চক্ষু দান করিল। জীবনধন ঠিক করিতে পারিল না-- আগন্তকঘ্বয় পাগল না বদ্মায়েস। বোধ হয় পাগল । দিব্য-চক্ষু প্রাপ্ত হইয়া প্রৌঢ় ধলিল-_“ইা, মুরলার মতনই বটে।” প্যুবক বলিল-__স্ুরেন্্র বাবু বলেন.কি ! মুরলাকে চিন্তে পারলেন না !” স্ুরেন্্র বাবু বলিলেন,_-“হ্যা অনেকট। তার মতন বটে তবে একটু রোগা আর যেন ইঞ্চি খানেক তার চেয়ে বেঁটে” যুবক বলিল--«কি বিপদ! নিশ্চয় মাথা খারাপ হয়েগেছে । একমাস চোরের আড্ডায় থেকে মেয়েটা রোগ! হবে না? জীবনধন ভাবিল-ব্যাপার মন্দ না। সুরেন্দ্র বাবু বলিলেন,_পমঃ সেন। ঠিক হয়েছে) মুরলা বটে। তবে-_-* মিঃ সেন বলিল-_“তবে আবার কি? মাথা খারাপ হয়েছে, মাথা খারাপ হয়েছে। এমন বাপ তো দেখিনি। বাপ হয়ে নিজের মেয়ে চিন্তে পারেন না? ঘোর কলিকাঁল! ঘোর কলিকাল!” জীবনধনের সে বিষয়ে কোনও সনে রহিল না, তাহা না হইলে, তাহারই বাগানে দাড়াইয়! একটা জুয়াচোর বোধ হয় কিছু লাভ করিবার জন্ম অপর লোককে বুধাইতেছে ফে সরল! তাহার কন্যা । যুবক যাছাকে সুরেন্দ্র বাবু বলিতেছিল, তিনি বেশ আনন বোধ করিতে- ছিলেন; অথচ তীহার প্রাণে একট! ভয় হইতেছিল--যদদি গাহার ধারণা ভুল হয়, যদি বালিক1 বাস্তবিক অপরের কন্তা হয়। মিঃ সেনের কিন্তু কোন সনেহ ছিল না। সে পকেট হইতে এক খান/' ১১১ - বিবাহ-বিষ্লীৰ _ ফটোগ্রাফ বাহির করিল। জীবনধন দেখিল তাহা! সরলারই শী ফটোগ্রাফ । কি বিপদ, জুয়াচোরটা' কোন সময় তাহার কন্যার ছবি তুলিয়৷ লইয়৷ গিয়াছে। যুবক বলিল-_প্সুরেন্ত্র বাবু আর কি--কেন্লা মেরে দিয়েছি,_-আপনি এক কাজ করুন দেখি। আপনি, একটু এগিয়ে যান! মুরলাঁ আপনাকে দেখেই ছুটে আদবে এখন। আমি পুলিম্‌ থেকে লোক-জন ডাকৃচি।» জীবনধন দেখিল, এ প্রসহন ক্রমে বিয়োগান্ত নাটকে পরিণত হইবার উপক্রম হইতেছে । যতক্ষণ কেবল পাগল ছুইট! থাকে এক রূকম পরিত্রাণ আছে। কিন্তু পুলিসের গুভাগমন হইলে বাপার গুরুতর হইয়া উঠিবে। আর এ ব্যাপার অধিক দুর গড়াইতে দেওয়া হইবে না । তাহার! বাটার দিকে অগ্রসর হইল। জীবনধন তাহাদের অন্ুদরণ করিল। তাহার! বাঁটার দশ হাতের মধ্যে আমিলে মরলার - দৃষ্টি তাহাদের উপর পড়িল। মনোরমাও আগন্তকদ্বয়কে দেখিল। তাহার! উভয়ে দীড়াইয়া উঠিল। শার্দুল দেখিলে ভীতা কুরঙ্গিনী যেমন থমকিয়! দাড়ায় সেইরূপ দাড়াইল, তাহার পর উভয়েই পলাইয়া গেল। সুরেন্দ্র বাবু উভয়কেই দেখিল। তাহার আর সন্দেহ রহিল, না। সে নূরেশকে বলিল--“নরেশ বাবু। তুল হয়েচে।” _ নরেশ বলিল--“বল্লেই হ'ল ভুল হয়েছে? এই ফটোগ্রাফের সঙ্গে মিলিয়ে নিন্না। ওসব কথা শুন্ব না। আপনার মাথা খারাপ--” এবার স্থুরেন্্র বাবু বিরক্ত হইয়া বলিলেন--”সে কি কথা মশায়!" আমি বাপ্‌ হয়ে চিন্তে পারবো নাঃ” নরেশ বিবাহ-বিপ্লব ১৯২ বলিল--আপনি একবার ছেড়ে বিশবার ওর বাপ. হ'তে পারেন,__ ফটোগ্রাফ তো! আর ভূল করবে না। এই ধটোর নাক মুখ চোখ মায় চুলের মাপ অবধি বালিকার সকলই মিলিয়ে 'দেখুন,_একেবারে মিলে যাবে” সুরেন্দ্র বাবু বলিলেন-_-“আঃ' কি, বিপদেই পড়লুম 1” নরেশ বলিল-_-“ওসব বুঝিনি মশায় ! মেয়ের সন্ধান পেয়ে এখন আমাদের টাকা দেবার ভয়ে অমন কথ! বলছেন।” এবার মুরেন্দ্রবাবু রাগিয়া বলিলেন-_-“মশায় আপনার অশিষ্টতা মাপ করা যায় না।” মিঃ সেন বলিল-- “মশায় ভগবান তো আর কলে মানুষ গড়েন নাষে এক 'আকারের চেহার! ডজন ডজন বানিয়ে ফেলবেন» হতাশ ভাবে স্ুরেন্ত্র বলিল--“মশায় সে কথ! ভগবান বল্তে পারেন। আমি এই অবধি বল্তে পারি যে এ মেয়ে আমার নয়।” মিঃ দেন বিরক্ত হইয়া বলিল-“বাপে যদি না! নিজের মেয়ে চিন্তে পারে তবে আর কি কর্ব? আমি তো পুলিসে চল্লাম। তার পর তাদের সঙ্গে আপনি বোঝাপড়া করবেন 1৮ জীবনধন দেখিল আর নীরব থাঁকা অন্ুচিত। সে প্রস্থানোগ্ভত নরেশচন্ত্রকে বত মুষ্টিতে ধরিয়া বলিল-“এ সব কি রকম বদ্মায়েসি? হয!” উভয়ে অপ্রতিভ হইয়। তাঁহার দিকে দ্ডাহছিল। জীবনধন বলিল--“আন্ুন তার পর ব্যবস্থা করছি।” নরেশের গায়ে এক কড়া জোড় নাই। সে লুড়নুড় করিয়া জীবনধনের বন্দী হইয়া চলিল। মনে মনে ঠিক রা নু যে সে অবনীর বেতনভোগী গুণ । ১১৩ বিবাহ-বিপ্লর চতুর পল্িিচেছেদ্‌ উল্টা বুবলি বাম আমাদের অপর একটা মৌকদমার তদন্ত করিবার জন্ত নরেশ পথে ঘুরিতেছিল। হ্থারিসন রোডের মোড়ে একথানি ভাড়াটিয়া গাড়ীর জানালার সামান্ত ফাঁক দিয়া__মুরলার মত একটা বালিকাকে দেখিয়া মিঃ সেন একেবারে ক্ষিপ্তের মত নাচিয়! উঠিয়াছিল। কি শুভযোগ ! কি সৌতাগ্য ! আর তিলার্ধ সময় ন্ট করিতে আছে! নরেশ তাড়াতাড়ি একখানি ক্ষিপ্র গাড়ী লইয়। সেই গাড়ীর অন্থুরণ করিল। গাড়ীখানি আসিয়। শিয়ালদহ ষ্টেশনে পৌছিল। তাহার ভিতর হইতে খন জীবনধন বাঁবু ও বালিক! বাহির হইল, তথন বালিকাকে দেখিয়া সে নিশ্চয় সিদ্ধান্ত করিল যে সে মুরল! বাতীত অপর কেহই নহে। তখন মুরলার বিবাহের দশ দিন অবশিষ্ট ছিল।. এত বড় সৌভাগ্যটা ষে অকল্মাৎ লাভ হইবে তাহা আমাদের উভয়ের মধ্যে কেহ স্বপ্নেও ভাবি নাই। অপহৃত বালিকাটাকে লইয়া যে কেহ প্রকাশ্ততাবে কলিকাতার রাজপথে ঘুরিয়া বেড়াইবে একথাও সহজে কেহ অনুমান করি নাই। এত লাহদ অপরাধীর হয় না। তাই মুরূলাকে প্রথম দেখিয়াই নরেশের সন্দেহ হইয়াছিল। কিন্তু ফটোগ্রাফের চিত্রের সহিত তাহার জবিকল সাদৃশ্ত দেখিয়া তাঁহার মনে মনে নিশ্চয় ধারণা হইল যে, ঘেবালিকাকে আমরা এতদিন ধরিয়! অনুসন্ধান করিতেছিলাম এ.পেই বালিক। | নরেশও টিকিট কিনিয়া ট্রেণে উঠিল, তাহাদের বিধাহ-বিপ্লব . ১১৪ সহিত বেলঘরিয়া৷ ষ্টেসনে নামিয়া আবার তাহাদিগকে অনুসরণ করিল। তাহাদিগের বাটা লক্ষ্য করিল। ভাগ্যক্রমে সেই গ্রামে তাহার কয়েকটা পরিচিত ব্যক্তি ছিল। তাহার! সকলে বলিল বালিকা সে বাটীতে সম্প্রতি আসিয়াছে, ভদ্রলোকটি কাহারও সহিত মিশে না, কাহাকেও পরিচয় দেয় না । তাহাদেরও একটা সন্দেহ দূর হইল। ইহার মধ্যে যে একটা রহস্য আছে তাহা কে অস্বীকার করিবে? নরেশ একজনকে সেই বাড়ীটির উপর লক্ষ্য রাখিতে বলিয়া_-তখনই কলিকাতায় ফিরিয়৷ আসিল। সেন সুরেন্দ্রবাবু হতাশ হইয়া আমাদিগের .নিকট বিদায় লইতে আদিয়াছিলেন। আমারই সম্মুখে স্ুরেন্দ্রবাবুর সহিত তাহার সাক্ষাৎ হয়। সে কথা পূর্বে বলিয়াছি। বালিকাকে সনাক্ত করাইবার জন্ত তাড়াতাড়ি আমার সহিত পরামর্শ না করিয়া নবেশ এবং সুরেন্ত্রবাবু বেলঘরিয়ায় প্রস্থান করিলেন। আমাকে ঘুণাক্ষরে কেহ কোন কথা জানাইল না। আমাকে বিম্মিত করিবার জন্য নরেশ আমার সাহাধ্য গ্রহণ করে নাই। যাহা! হউক, সহসা জীবনধনের কথা শুনিয়া তাহারা উভয়ে স্তম্ভিত হইল। ঘরে বসাইয়া জীবনধন তাহার্দিগকে ক্ষমা চাঁহিতে' বলিলেন। তিনি সহজে ছাড়িবার পাত্র নন। আমার শিষ্য নরেশের কিন্তু তখনও সাহস ছিল, সে বলিল--“মশায়, ওসব চোখ, রাঙানির ভয় রাখিনি । সন্ধান পেয়েছি, এবার পুলিস আসছে।” : ' জীবনধন বলিল “পুলিস আসছে? শুনে সুখী হ'লেম। স্সামি শবয়ং পুলিস ডাকতে পাঠাচ্ছি। এ রঞ্ষম বে-আদবী ১১৫ বিবাহ-বিপ্লব উপেক্ষা করা যায় না,। পরের জমিতে এসে তার কন্তাকে গালি দেওয়ায় বোধ হয় এদেশে জেল হয়। আমাদের পশ্চিমের ভাই আইন। | | নুরেন্্রবাবু মধাস্থ হইয়া বলিলেন--না মশায়, মাপ কর্বেন। আমার একটি কন্তা হারিয়েছে । সেটি ঠিক আপনার কন্তার মত দেখতে । দুজনার চেহারায় এত সাদৃশ্ত আছে যে আমি পিতা! বলেই বুঝতে পার্ছি যে এ বালিক! আমার নয়। “আর এ ভদ্রলোকটি ?” "ইনি মিঃ এন্‌ সেন, প্রাইভেট ডিটেকটিভ। এর ওপর আমার কন্তা! খোৌজবার ভার আছে বলে ইনি আমাকে এ স্থলে এনেছেন। ওর কোন অপরাধ নেই ।” “ওঃ ইনি গোয়েন্দা! সে কথা অনেকটা বুঝেছিলাম বটে। ধন্ত মহাশয়ের জাত। আপনাদের দ্বারা সমাজের ইষ্ট যতদুর হোক আর না হোক লোককে জালাতন কর্তে আপনাদের জাতের যথেষ্ট ক্ষমতা আছে । দেখছি তো ভদ্রলোকের ছেলে। ভদ্রলোকের ব্যবসা গ্রহণ করতে পারেন নি?” বলা বাহুল্য নরেশ খুব ক্রুদ্ধ হইয়াছিল। কিন্তু ওরূপ স্থলে বিশেষ বলুবিক্রম দেখান যায় না। সে প্রকাস্ত্ে জীবনধনের সহিত কলহ করিল না। তাহার মনে তখনও সন্দেহ ছিল। .: সুরেন্ত্রবাবু বলিলেন-মশায়, ও কথা বলবেন না। ডিউটি অনেক সময় সমাজে বড় বড় পাপের প্রায়শ্চিত্ত হস্ত না। বিবাছ-বিপ্লিব ১১৬ জীবনধন বলিলেন-_ হ্যা, তা বুঝেছি । তা না হ'লে আর আমার কন্ত। এখনই পিতৃলাভ করছিল ! নুরেন্জ্রবাবু হীসিয়া বলিলেন-__ মশায়, এ বিষয়ে মিঃ সেনকে ক্ষমা করবেন। আপনার কন্তাটিকে দেখে বাস্তবিক ভ্রম হয়। আর যদি বে-আদবী মাপ করেন-_ জীবনধন বাবু হাসিয়া বলিলেন-_মনোগত অভিপ্রায়টা অধীনকে জানিয়ে ফেলুন। স্থরেন্ত্রবাবু বলিলেন--এ যে ব্র্ষীয়সীটি ছিলেন উনি বোধ হয় মহাশয়ের জীবনধন বলিলেন_-কি গাই বাছুর দুই দাবী করবাত্র মতলব নাকি ? সুরেন্দ্র বাবু বলিলেন--না, বলছিলাম কি ও'কে দেখলেও ভ্রম হয় যে অবশ্ঠ ক্ষমা কর্বেন, অর্থাৎ, মানে হচ্চে যে-_ জীবনধন বলিলেন-_বুঝেছি। এখন আমি না হয় যাই আপনারাই ঘর দোর দখল করুন । গগন পজিচ্ছেদি জীবনবাবু বলিলেন-_-অবশ্ত আপনি বিপন্ন, আপনার সন্দেহ হওয়া আশ্চর্য্য নয়। | _ স্বরেন্তরবাবু বলিলেন-_সবই তো বুঝছেন ।. ১১৭ ' বিবাহ-বিপ্লব জীবনধন বাবু হাঁসিলেন। তিনি নও ভাল ক'রে ভগ্ন করা ভাল। সরলা! | দরজার অন্তরাল হইতে সরলা আমাদিগের দিকে চাহিল অথচ পিতৃ-আহ্বানে দুইজন অপরিচিতের নিকট আমিতে লজ্জ! বোধ করিল। জীবনধন বাবু দেখিয়া একটু হাসিলেন। বালিকার গণ্ডস্থল আরক্তিম হইল। তান আবার আদর করিয়া ডাকিলেন--এস ম, লজ্জা কি? সরল! আসিয়া, একেবারে পিতার পার্খে গল! জড়াইয় দড়াইল। সুরেন্দ্র বাবু তাহাকে আপদ-মস্তক নিরীক্ষণ করিতে লাগিলেন। তাহাতে বালিকা বড় অশাস্তি ভোগ কৰিতে লাগিল। স্ুরেন্ত্র বাবু দীর্ঘনিশ্বাদ ফেলিলেন ; বলিলেন-_ মশায়, আপনার মেয়েটি ঠিক মুরলার মত। তবে মুরলা আর একটু মোটা আর ইঞ্চি খানেক উচু। সকলে হাসিল। সরলাও হাসিল। সুরেন্দ্র বাবু বলিলেন-_ এর হাসিটিও আমার মেয়ের মত। একটা বড় ভ্রম ভাঙ্গলো । জীবনধন বাঁবু বলিলেন-_ভাঙ্গলো ত তবু ভাল। _ স্থরেন্্র বাবু বলিলেন-_না', সে ভ্রম না । আমার মনে অহঙ্কার ছিল য়ে আমার কন্তাটি অদ্বিতীয় সুন্দরী আর-_ জীবনধনবাঁধু বলিলেন-_-দেটা উভয়তঃ। আমার. এখনও খাস যে আমার মেয়ের মত স্ব_ | সরলা পিতার মুখ চাঁপিয়! ধরিল। লজ্জায় তাহার মুখের লাবণ্য বহুগুণ বদ্ধিত হইল। সে পলাইল। জোরে দরজ! বন্ধ বিবাহ-বিপ্রাব ১১৮ করিয়া দিল। তাহার! তিন জন খুব হাসিল। তাহার পিতা ডাঁকিলেন কিন্তু বালিকা আর আসিল না। জীবনধন বাবু স্ুরেন্ত্র বাবুর পরিচয় জিজ্ঞাসা রি | স্থুরেন্্র বাবু সংক্ষেপে তাহার পরিচয় দিলেন, মুরলার অনৃস্ত হইবার কথা সংক্ষেপে বিবৃত করিলেন। জীবনধনবাবু নান! প্রকার কারণ জিজ্ঞাসা করিতে লাগিলেন । দেশে হাঘুরের দল আসিয়াছিল কিনা, অবনীর পুফরিণীতে কুমীর আছে ফিনা, জঙ্গলে বাঘ থাকে কিন!, সে রাত্রিতে ফেউ ডাকিতে গুন! গিয়াছিল কিনা ইত্যাদি অশেষ প্রকার প্রশ্থে জীবনধন বাবু 'আপনার বুদ্ধিমত্তা ও বিজ্ঞতার পরিচয় দিয়াছিলেন। শেষে তিনি জিজ্ঞাসা করিলেন__আপনার আত্মীয় শ্বজনের বাটাতে সন্ধান করেছিলেন । সুরেন্দ্র বাবু বলিলেন তেমন আত্মীয় স্বজন তাহার কেহ নাই। নিন্দার ভয়ে' তিনি এ কথা লইয়! বিশেষ আন্দোলন করিতে পারেন নাই। . “মেয়ের মাতুলালয়ে ?” ুরেন্্র বাবু বলিলেন__মামার বাড়ীর সঙ্গে মেয়ের কোনও সম্বন্ধ ছিল না। সে জন্মাবার পুর্বেই অমি শ্বশুরের সঙ্গে ঝগড়া করেছিলাম। সেই অবধি আমি খবণুরের কোন খোঁজ রাখি না। তিনিও রাখেন না। | জীবনধন বাবু বলিলেন--এটা বড় আশ্চর্ষোর বিষয় | সবরের বাধু হাসিয়া বলিরেন__তার সংসারে এ কথ! আশ্চর্ধ্য ১১৯ বিবাহ-বিপ্লাব নয়। তার জোষ্ঠা কন্যাকে নিয়েও তার বড় জামাই পালিয়ে- ছিলেন। আমি অনুমতি নিয়ে চলে এসেছিলাম। লোকটা জবরদস্ত | ৃ : শ্রেন্দ্রবাবু অন্যমনস্ক ভাঁবে বলিলেন--নীলমণি গাঙ্গুলি জীবনধন কীপিতে ছিল। সে হিস নি নীলমণি ? তুমি অনুর স্বামী । স্বরেন্্র বাবু বিশ্মিত হইলেন। তিনি বলিলেন-_মশায়? “আমি জীবনধন। নীলমণির বড় জামাই ।” পূর্বস্থতিতে 'জীবনধনের চোখে জল আঁসিল। সে উঠিয়া স্ুরেন্্র বাবুকে আলিঙ্গন করিল। বড় মধুর মিলন। নরেশ হতভম্ব হইল। কিন্তু সে মনে মতলব ঠাহরাইল। যদি নয় দিনের মধ্যে মুরলার উদ্ধার না হয় সরলার সহিত শীতল প্রসাদের পুত্রের বিবাহ হইবে। ন্ুুরেন্ত্র বাবুর সম্মান রক্ষা হইবে, সরলার বিবাহ হুইবে, আমাদের কতকট! সাফল্য লাভ হইবে। তাহার পর কি হইয়াছিল তাঁহা আমাদের গল্পের বিষয়-ভৃত নহে। প্রিয়তম] ভগ্মীর স্বামীকে দেখিয়া মনোরম কাদিয়াছিল, কাপিয়াছিল, তাহাকে অনেক কথা জিজ্ঞাসা করিয়াছিল। মিঃ 'এন সেন, ডিটেকটিভ বেশ এক থাল মিষ্টান্ন ভোজন করিয়াছিল । তখনই তাহারা ধশোহর যাত্র! করিয়াছিল। | বছদিন পরে দুই সহোদরার মিলনে কি শুভ উৎসব হইয়াছিল কিরূপে উভয়ে পরন্কারের কঠবেষ্টন করিয়াছিল, এবং হাদি-কানীর সংমিশ্রনে এক অপূর্ধ কৌতুকের অবতারণঃ বিৰাহ-বিপ্ীব ্ ১২৬ করিয়াছিল-সে সকল সংবাদ মিঃ এন্‌ সেন আমাকে সঠিক দিতে পারে নাই। তবে অনুপম! সরলার গোলাপ-অধরে গণিয়া সায়ত্রিশ বার চুম্বন করিয়াছিলেন তাহা নরেশ এক রকম হলপ করিয়া বলিতে পারে। মোটের উপর সুরেন্দ্র বাবু জীবনধনের নিকট নরেশের প্রস্তাবটি উপস্থাপিত করিয়াছিলেন। জীবনধন শুনিয়া বলিলেন--তাও কি হয় ভায়া % স্থরেন্্র বলিল,- দাদা! এ কথায় প্রতিবাদ করবেন না। আমাদের মুর্লাঁও যেমন সরলাও তেমন | তাহার পর একট! রফা-রফিয়ত হইয়া গিয়াছিল। বিবাহের পূর্ব্বে নরেশ ঘুণাক্ষরে আমাকে এ সকল কথার আভাস দেয় নাই। আমি যখন তাহাকে নিষ্ুর স্বার্থপর দায়িত্বশন্ত বিবেচনা করিয়া কুপিত হইয়াছিলাম' তখন সে এ সকল বিষয় বন্দোবস্ত করিতেছিল। বিবাহ বারে যাহাকে দেখিয়াছিলাম সে মুরল! নয় সরলাঁ। ছুইটি বালিকাই এক ছীচে গড়া, এক উপাদানে নির্মিত। অঅ পল্লিচ্ছেদি “ভুমি ঘে তিমিরে সুমি দে ভিমিরে প্রজাপতির নির্বন্ধানুসারে গুভকাধ্য ত সম্পাদিত হইয়া গেল। ভাগাং ফরতি সর্কাত্রমূ। স্ককল দিক বজায় রহিল। কিন্ত মুল! কোথা? বিবাঁহের পর আবার সে প্রশ্ন: উঠিল'। এবার ১২১ বিষাহ-বিপ্রব জীবনধন ও সুরেন্ত্র ইজনে আমাদেন্স আফিসে আসিয়া উপস্থিত, হইলেন। ছুইজনের সমান আগ্রহ । নরেশের নিকট তাহারা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করিলেন। নরেশ মুরলার যথেষ্ট অনুসন্ধান করিয়াছিল। অপরিচিত আঁজীয়দিগের মিলন ঘটাইয়াছিল, সরলার বিবাহ দিয়াছিল। আর সে তাহার উদ্যম ও অধ্যবসায়ে তাহাদিগকে চমতকৃত করিয়াছিল। কিন্ত আসল কথার কোনও, মীমাংসা! হইল নাঁ। মুরলা কোথা ? | তাহার! উভয়ে এক সঙ্গে জিজ্ঞাসা করিলেন-_মুরল1 কোথা ? ঠিক কথা! মুরলা কোথ! ? নরেশ বলিল _এঁটাইতে। শক্ত কথা।. মনে পড়ে সেই গান--“্তুমি যে তিমিরে তুমি সে তিমিরে,৮-- আমি বলিলাম--আর আমাদের দ্বারা যে সে তিমির কাট্‌বে তাও তো বোধ হয় না। স্বরেন্্রবাবু দীর্ঘ নিশ্বাস ফেঁলিয়! বলিলেন__কোন আশা নাই ৯ আমি বলিলাম--একেবারে আশ! নাই একথা বল্তে পারি নি। কিন্তু আপনার সাহাষ্য ভিন্ন ষে আপনার কন্তার-_ সবরেন্দ্রবাবু বিশ্মিত হইয়া বলিলেন-__প্সে কি কথা?” আমি আরার ধীন্েে দ্বীরে প্রত্যেক কথার উপর জোর দিয়া বলিলাম-- "আপনার সাহায্য ভিন্ন আপনার মেয়ে উদ্ধার হবার কোন উপায় নাই।” জীবনধন বাবু বলিলেন--“কথাটা ঠিক বুঝলাম না । ুর কন্তার উদ্ধারে উনি সহায়তা করবেন না এ কথা আপনাকে কে বল্লে ?” ' আমি বলিলাম-_দ্বাস্তবিক উনি আমাদের সহায়ত! 'বিবাহ-বিপ্লব ১২২ করেননি বা করবেন না। উনি যদি সমস্ত কথা যথাযথ বল্তেন তো আজ আপনার সঙ্গে তুর পরিটয়ও হ'ত না, আর. আপনার কন্যা মাথায় সিঁদুর দিয়ে--1” জীবনধন ও নরেশ হাসিলেন বটে কিন্তু সুরেন্দ্র বাবু ব্যথিতের স্বরে বলিলেন--“সতীশ বাবু, এট! কি রকম নিঠুর কথা হ'চ্চে-» আমি বলিলাম --“অপ্রিয় হতে পারে কিন্তু কথা সত্য। আপনি দয়া করে যদ্দি কথা গোপন-- 1” স্েন্রবাবু বাঁধা দিয়া বলিলেন-_«কোন্‌ কথা গোপন করেছি?” আমি বলিলাম--“চিঠির কথা । দেখুন দেখি।” পূর্বোক্ত চিঠি থানি তাহার সন্মুথে ফেলিলাম। | ১২৩ _ বিবাহ-বিষ্লীব পত্রের আকুতি দেখিয়া জীবনধন বাবু বিশ্মিত হইলেন। সুরেন্দ্র বাবু তাচ্ছিল্য করিয়া পত্রধানায় হস্তক্ষেপ করিলেন না। আমি টেবিলের ভিতর হইতে অবিনাশের চিঠিথান! বাহির করিয়া তাহার সম্মুধে ফেলিলাম। পত্রথানা তাহাকে এমন বিশ্মিত করিল যে,_-তৎক্ষণাৎ তাহার মৃত পিতামহকে দেখিলে স্ুরেন্্র বাবু অতটা বিশ্মিত হইতেন না । তীহার হাত পা কাপিতেছিল। তাহার শরীরের যত রক্ত ছুটিয় মুখে উঠিল। কিয়ৎক্ষণ তিনি কোনও কথ কহিতে পাঁরিলেন নাঁ। জীবনধন বাবু হারানিধি আত্মীয়ের ভাবান্তর দেখিয়া একটু বিশ্মিত হইলেন। তিনি চিঠিথান! হাতে লইয়! বলিলেন--“ভায়৷ কি বন্মীয়-না এর ভেতর আবার ছবি রয়েছে যে-মান্ুষ এট! কি একটা জানোয়ারের মত যেন কি একটা--”। স্ুরেন্ত্র বাবু বলিলেন_-“এ পত্র আপনি কোথা পেলেন?” আমি বলিলাম --রাস্তায়, ট্রাম গাড়িতে” সুরেন্দ্র বাবু বলিলেন-_-“্পরিহাস নয়? দ্রীম- গাড়িতে ?” আমি বলিলাম--হা!। অনেক দিন পেয়েছি। মহাশয়কে দেখাইনি আপনি বল্বেন না ঝলে।” তিনি বলিলেন-_-মশায়, এ পত্রখানা এত দিন. আমার হাতে পড়লে কন্তার উদ্ধার হত। এখন বুঝেছি কে আমার শক্রতা করেছে। অবস্ত মেপে সুধে আছে। কিন্তু উদ্ধারের আশা__৮”। আমি বুজিলাম--“মেঘরাজ বা! সুবোধ যে শক্রর কম্যাকে সুখে রাখনে সে সুশ্চিন্তা আমার মোটেই নেই ।” বিস্মিত হইয়া তিনি বলিলেন-.. *মেত্রাজ কে? স্ুবোধই বা কে?” “অবিনাশ চন্ত্র মি?” বিবাহ-বিপ্লব ১২৪ “সেই ৰা কে?” পএ পত্র কে কাকে লিখেছে ?” “এলাহাবাদ থেকে নিবারণচন্ত্র চট্টোপাধ্যায় নিখিলনাথ মিত্রকে লিখছে ।” ব্যাপারট! বুঝিলাম। অবিনাশ ও সুবোধ মিথ্যা নাম। আপনা- দিগের প্রকৃত পরিচয় গোপন করিবার জন্য তাহারা মিথ্যা নাম গ্রহণ করিয়াছিল। আমি প্রথমাবধিই তাহাদিগকে সন্দেহ করিয়াছিলাম। কিন্তু নরেশ ও সুরেন্্রবাবুর নির্ব,দ্ধিতার দোষে বিশেষ কিছু করিতে পারি নাই। আপনাকে আর তত বেশী অকর্মণ্য ভাবিতে পারিলাম না। আমি সুরেন্দ্র বাবুকে বলিলাম সতী হ'লে বেশ আপনার মেয়ে কোথা আছে তা* ত* এক রকম টের পেলেন। এখন আর আমাদের. কোন দরকাঁর নেই ॥» সুরের বাবু দীর্ঘ-নিশ্বাস ত্যাগ করিয়া কা উদ্দিভাষার মতে ঠাণ্ড। শ্বাস গ্রহণ করিয়! বলিলেন__-“মশায়, এ যে দল এদের সঙ্গে আমার সাধ্য নয় একেলা লড়াই করি। তারা যে কোথায় আছে তাই জানিনি।” অবিনাশ এখনও হারিসন রোডে থাকিত সে সন্ধান রাধিয়াছিলাম। তাহাকে বলিলাম যে আমাদিগের দ্বার! তাহার শত্রুদের সন্ধান পাইতে পারিবেন। তিনি তাহাতে সনষ্ট হইলেন না। আমি-বলিলাম--“মশীয় তা হ'লে এ পত্র খানায় কি লেখ! আছে তাই বলুন ।” : _ তিনি ইতস্তত করিলেন। আমি বড় বির হাম 1 জীবনধন বাবু তাহার ভাবগতিক দেখিয়া বলিলেন- আচ্ছা ভায়া, না হয় তে! চিঠি খানার ভাবার্থটাই এ'দেয় বুঝিয়ে মাও লা? জুরেআ্বাবু বলিলেন--“এতে ' লিখেছে মে জামি ১২৫ বিবাহ-বিপ্লৰ মোকদ্দামাটা আপনাদের হাতে দিয়েছি। আপনাদের উপর যেন চৌকী রাখা হয়। তবে মুরলাকে যেন যত্বে রাখা হয়। কিন্ত তাতেও যদি না হয়--*। সুরেন্ত্রবাবু আবার পিতামহের প্রেতমুদ্ি দর্শন করিলেন। আবার তীহার হস্তপদ কাপিতে লাঁগিল। বাল্যকালে পড়া মুখস্ত বলিতে বলিতে থামিলে যেমন একটু খেই ধরিয়া দিতে হয় আমি তেমনি উৎসাহ দিবার সুরে বলিলাম-__ “তাতেও যদি ন! হয়--* সুরেন্দ্র বাবু বলিলেন--“খুন করবে, মশায়, খুন করবে ।” আম বলিলাম--্ভয় পাবেন না। যে কুকুর বেশী ডাকে সে কুকুর কামড়ায় না।* সুরেন্দ্র বাবু বলিলেন -_মশায়, নিবারণ চাটুয্যে বড় ভয়ঙ্কর লোৌক। তার কাঁজে ও কথায় বড় বেশী তকাৎ থাকে না 1” “তা” হলে এত দিন তাদের হাতে আপনার কন্যা নিরাপদ আছে এ ধারণাটা কেমন করে করলেন 1?” “তা একরকম নিশ্চিত বলা যায়। তার একটা দুর্বলতা আছে-_ন্সেহ। সেমুরলাকে আমার চেয়ে অধিক স্নেহ করে।” নরেশ এতক্ষণ চুপ করিয়াছিল। সে অকন্মাৎ জিজ্ঞাসা করিল--“তাদের সঙ্গে কি অবনীর কোনও সংঅব আছে?» জীবনধন বলিলেন,--“কে অবনী ?” আমি বলিলাম-_“নরেশ, তুমি ইষ্ট পিডের মত কথা ব'লনা। অরনী যে এ ব্যাপারে একেবারে নির্দোষ তা? কি এখনও বোঝনি 1” সে লিল “আর ভাই। কার জন্ম কি আছে কে বলতে পারে।” নুরেন্ত্রবাবু বলিলেন__-“না মশায় জবনী বাবু এ দলের মধ্যে নাই। একটা গোপনীন্গ (ক্ধারণে এদের সঙ্গে আমার শক্রতা আছে ভাই আমাকে: বশীলৃ্ত বিবাহ-বিপ্লুব' | ১২৬ করবার জন্ত তাঁরা আমার মেয়েকে বন্দী করে রেখেছে ।” কি কারণে এত বড় শক্রতা তাহা তিনি বলিলেন না। নরেশ খুণগুণ করিয়। গ্রাহিল--“তুমি যে তিমিরে তুমি সে তিমিরে |” | প্তন্ম পিছে পু শে শন স্বরেন্ত্র বাবুর মৌকদামা এখন অনেকটা সরল হইয়া আসিয়া ছিল। বিবাহের হাঙ্গামাটার নিষ্পত্তি হইয়া গিয়াছিল। অবনী যে নির্দোষ তাহ! সপ্রমাণ হইয়াছিল। মুরল! ঠিক কোথায় আছে তাহ! এক প্রকার স্থির হইয়াছিল। এখন আমাদের কর্তব্যের গণ্তী সন্থীর্ণ হইয়া আসিতেছিল। কেবল মেঘরাঁজ বা সুবোধ বা অবিনাশ তিন মূর্তির এক মুর্তিকে . পাইলেই সিদ্ধিলাভ হইবে। কিন্তু দে শনি রাহু কেতুর কোনও সন্ধান পাওয়া একটা কঠিন ব্যাপার হইস্কা! উঠিয়াছিল। অবিনাশ মিত্র হারিসন রোড তা পলাইয়াছিল। -দয়েহাটায় মেঘরাজের কোন চিহ্ন ছিল না কলিকাত্র পথে পথে নানা কার্যে বহি তাহাদের মর্শন টু হুইল নাঁ। - হাতে তিন্‌ চারিটা তদস্ত ছিল। অনেক রর কলিকাতার নানা পল্লীর বিশেষ বিশেষ গন্ধ উপভোগ করিয়া! হ্থারিমন রোন্ডেন্ উপর আসিয়া পড়িবাম। আর একবার অবিনাশ মিত্রের বাঁটাভে অনুসন্ধান করিলাম কোন সংবাদ পাইলাম না । ৫বণিক্সাটোলার ১২৭ , বিবাহ-বিপ্লুব নিকট একটা ফীকা জমিরস্উ্পর একস্থলে কতকগুলা জীর্ণ পুস্তক বিক্রয় হইতেছিল। একটা লোক ভাঙ্গা কাচের বাসন, তালাহ্বীন চাবি, চাবিহীন তালা, মাথাভাঙ্গা ফুলদান, স্যাপথালিন, চিঠির কাগজ প্রভৃতি ছল পদার্থ বিক্রয় করিবার জন্ত বিপণী খুলিয়া বসিয়াছিল। তাহাদের পিছনে পীত লোহিত নানা বর্ণের পতাকা শোভিত এক বিচিত্র তাঁবুতে কতকগুলা লোক কৌতুক দেখাইতেছিল! তাম্ুর উপর এক খান! বড় কাপড়ে উজ্জল বর্ণে একটা ব্যান্র অস্কিত। তাহার লাঙ্গুলের নিকট একটা বালকের মুন্তি_বালকের হস্তে বেত্র, পরিধানে জাঙ্গিয়া । শার্দিলের মস্তকের উপর একটা দণ্ডারমান! স্ত্রীলোকের মৃত্তি। বস্ত্রের উপর লিখিত ছিল “নতুন জাপান মেজীক বা জ্রীবস্ত চিতাবাগের লড়াই |” তাঘুর সম্মুখে একট! বালক এক বৃহৎ আলখাল্লা পরিধান করিয়া, মুখে একটা গর্দভের মুখোস পরিয়া মস্তকে একটা কোনা টুপি দিয়া নানারূপ কদর্য্য অঙ্গভঙ্গি করিয়া নাচিতেছিল, আর তাহার সহিত একটা ঢোল, একটা রুক্ষম্বর ব্যাগ পাইপ, একট! বেস্ুরা এক রীঞ্জ হারমনিয়াম ও মন্দিরা বাজিতেছিল। ময়দানের উপর কতক ' গুলা অলস বাক্তি ও রঙ্গপ্রিয় বালক দীড়াইয়া সেই সঙ্গীত উপভোগ করিবার চেষ্টা করিতেছিল। একটা নিম্ন শ্রেণীর মুনল- মান আগামীর অনুসন্ধান করিবার জন্ত অনেক গুলির আড্ডা, ক্লাফিখানা, কোকেনের দোকান প্রসূতি স্বাস্থ্যকর স্থলে ঘুরিলাম, ভাবিলাম একবার*এই কৌতুক গৃহের ভিতরট| দেখিয়া যাই। একপ স্থলে অনেক রকমের লোকের সন্ধান পাওয়া! যার়--বিগেষ 'বিবাহ-বিপ্লব : ১২৮ ইতর শ্রেণীর চোর জুয়াচোরের। ভিড়ের মধ্যে মিশিয়া গেলাম । তখন গীত বা শেষ হইল, ভিতরের দর্শক-বুণ্দ বাহিরে আমিল। একজন দলপতি এক গাছি লক্‌ লকে বেত হাতে করিয়া আসিয়া বাহিরে ফ্াড়াইল। সকলেই নিস্তন্ব_তাহার বক্ততা গুনিবার অন্ত । সে সহাহ্য বদনে উচ্চৈম্বরে বলিল--“ইা৷ খা সাহেব ।” ভিতর হইতে শব আমিল-_ি সাহেব ?” “তোমার তাঁবুতে কি আছে?” “সোদর বনের বড় বাগ আছে।” ভিতর আলে "বাহার আলে ।৮ “তোমার বাগ কি করে।” “খেলা করে আর হাক্‌ মারে” “আচ্ছা ডাক শুনাও, ভাই” ভিতরের লৌকটা বোধ হয় একটা লাঠি দিয়া পিঞীরাবদ্ধ ব্যাপ্ত বা ব্যান্রূপী কোন একটা জীবকে খোঁচা দিল। অতি রুক্ষ ভাবে শীর্দুলট| “ঘৌঁক” করিয়া একটা শব করিল। তখন মহা! নমারোহে.লোকট! ডাকিতে লাগিল--“চলে আনুন মহাশয়, এক এক পয্নসা।” আমি অগত্যা ভিতরে গেলাম বাহিরে আবার পূর্ব্ববৎ গীত বাগ্ভ চলিতে. লাগিল। ভিতরে দেখিলাম একটা পিঞ্জরে অতি বুদ্ধ জরাজীর্ণ একট চিত! বাঘ। দুই পাঁচ মিনিট অপেক্ষা করিবার পর আব্বার গান খাদি বতুতা আরম্ভ হইল। আবার লোক | আমি তাহাদিগকে লক্ষ্য ক্করিতেছিলাম-। ; কি অদৃষ্ট, বেশ ভাল করিয়া দেখিলাম। ভ্রম : কসম্তব। দেখিলাম মেঘরাজ ও সুবোধ বাবু দে কৌতুক স্থলে প্রবেশ করিল ॥ অকন্মাৎ এপ স্থলে তাহাদেক উভয়কে সুখে দেখি ছেকিছ্বগ আশ্চর্্যা্বিত হইলাম তাহা বর্ণনা ক্র! অপেক্ষা ১২৯ | বিবাহ-বিপ্লব অনুমান করা সহজ । তাহার! ছুইজনে ঠিক আমার পার্থে আসিয়া দড়াইল। আমি যেন তাহাদিগকে লক্ষ্য করিতেছি না এইরূপ ভান করিলাম। খেলা আরম্ত হইল। ছুই চাঁরিট৷ ছোকরা আসিয়া খানিক লাফালাফি করিল। শেষে বাঘটাঁকে একটা খোঁচা মারিল। সেটা অতি কষ্টে উঠিয়া ঈাড়াইল। তখন একটা ছোকরা বাহির হইতে তাহার লাঙ্গল ধরিয়! টানিতে লাগিল, আর একটা ছোকরা পিগ্তরের উপরে উঠিয়া ঈাড়াইল। আমি অব্য চোখে খেল! দেখিতেছিলাম কিন্ক মন ছিল আমার পার্ববস্তী ব্যক্তি ছইজনের প্রতি । সুবোধ ও মেঘরাজ কি কথাবার্তা কহে তাহা শুনিবার জন্ বিশেষ উদ্গ্রীব ছিলাম । যখন উক্তরূপ ব্যাদ্রের ক্রীড়া চলিতেছিল তখন নুবোধ বলিল--_“বেটারা পাগল! নাকি? চল যাই।” মেঘরাজ বলিল-_-প্যাবে. কোথা ?” স্থবোধ বলিল--”একটা মতলব হয়েছে। তুমি এস দেখি» 'তাহারা ছুইজন বাহির হইল। বলা বাহুল্য আমিও বাহির হইলাম। আমার মত তাহাদেরও যেন বিশেষ অবসাদ আসিয়াছিল, তাহারা যে কি করিবে ঠিক করিয়া সিদ্ধান্ত করিতে *পারিল না। অতি ধীরে ধীরে চারিদিকে চাহিতে চাহিতে উভয়ে পশ্চিম মুখে চলিতে লাগিল । তখন অপরাহ্‌ পীচটা। হ্যারিসন রোডের উভয় পার্খে, একস্থলে নহে বুস্থলে, অনেক জীর্ণ পুস্তক, গৃহসজ্জার পুরাতন আসবাব প্রভৃতি বিক্রীত হইতেছিল। তাহার! মাঝে মাঝে দীড়াইয়! নানার ছুর্লভ পদার্থ পরীক্ষা করিতে লাগিল ৯ » আমিও একটু দুর হইতে তাহাদিগকে অনুসরণ করিতেছিলাম। বিবাঁহ-বিপ্লব | ১৩০ কর্ণওয়ালিস: সরা ও হারিসন রোডের সন্ধি স্থলে দীড়াইয়া তাহারা ছুইজনে কি পরামর্শ করিল। মেঘরাজ. সোজ! স্বারিসন রোড দিয়া, চলিতে আস্ত করিল আর ম্ুবোধ কর্ণওয়ালিস স্বীটে উত্তর দিকে 'চলিল। আমি উভয়-সন্কটে পড়িলাম। এস্থলে কাহার অনুসরণ করি ? মেঘরাজের না সুবোধ চন্দ্রের? একবার ভাবিলাম মেঘরাজের অনুসরণ করি কিন্তু তাহাতে ফল কি? স্ুবোধই নিবারণ, সেই দলের নেতা তাহার অনুসরণেই অধিক ফল। এইরূপ সাত পীঁচ ভাবিয়া আমি সুবোধের অনুসরণ করিতে লাগিলাম। স্ববোধ পথের মধ্যে একবার দ্বাড়াইল। অগত্যা আমাকেও দীড়াইতে হইল । স্থবোধ ফিরিল। আমি আর অত নীঘ্ব ফিরিতে পারিলাম না। আমাকে ছাড়িয়া চলিয়। যাইবার অবসর দিবার জন্ঠ আমি পার্খের একটা পানের দোকানে দীড়াইয়া সিগারেট কিনিতে আরম্ভ করিলাম। স্থবোধও সেই .দোকানে আসিম্কা আমার পার্থ ঈাড়াইল। তাহাকে ঠিক পার্থে আলিয়া ফ্াড়াইতে দেখিয়!“ একটু উত্তেজনা অনুভব করিতে লাগিলাম। সে কিন্তৃস্থির ধীর গম্ভীর, কোন উত্তেজনার ভাব তাহার মুখে লক্ষিত হইল না। তাহার অধর-কোণে যেন ঈষৎ বিদ্রুপের হাসির রেখা । আমরা উভ়েই একটু সঙ্কটে পড়িলাম। শঠে শঠে সাক্ষাৎ হইলে ওরপ সৃষ্কট উভয়ের ত্বাভাবিক। সে যে আমাকে সন্দেহ করিয়াছিল তাহা স্পষ্ট প্রতীয়মান হইতেছিল। উত্গ্্েই দোকানে বিলম্ব করিতে লাগিলাম। এক্ষেত্রে যে অগ্রে দোকান ছাড়িবে তাহারই পরাজন্ব।. ঞখষে চুরুট ধরাইয়া স্রবোধ বলির--. ১৩১ . বিবাহ-বিপ্লৰ “মহাশয় কি কলিকাতার লোক ?” আমি একটু অমায়িক ভাবে হাদিয়া বলিলাম--“আজ্ঞে হ্যা- আপাততঃ বটে” সুবোধ অতি লরল. ভাবে বলিল--“আচ্ছা, এখানে মিঃ সেন, প্রাইভেট ডিটেকটিভ ঝলে একটা বাড়িতে সাইন বোর্ড মারা ছিল। সেট! কোন দিকে বল্তে পারেন?” বলা বাহুল্য এ কথায় আমার বিস্ময় বহুগুণ বদ্ধিত হইল। একটু ইতস্তত করিয়া তাহাকে বলিলাম--"মিঃ সেন-হ্্যা দেখেছি বটে-মিঃ সেন হ্যা হয়েছে --কালীতলার একটু আগে ।” স্বোধ বলিল-_-“আপনিও .তো এ দ্বিকেই যাচ্চেন। যদি অনুগ্রহ ক'রে একটু দেখিয়ে দেন।” আমি বলিলাম-__“হা, যাব বটে। আচ্ছা চলুন” উভয়ে চলিতে লাঁগিলাম। এ কথা সে কথা কহিতে কহিতে তাহাকে জিজ্ঞাস! করিলাম--“মহাশয়ের নাম ?” স্থবোধ অল্নান বদনে বলিল--"শ্রীনিবারণচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ।৮ আমি তাহার গতিক কিছু বুঝিতে পারিলাম না। ঠিক আমাদের আফিসের সম্মুখে আসিবামাত্র আমার নির্বোধ দ্বারবানট! সেলাম করিয়া বলিল--“বাবু, আপনার অন্ত একজন লোক অপেক্ষা করছেন।* আমি এবারে বড়ই অপ্রস্তত হইলাম। পার্ে নিবারণের দিকে চাহিলাম, তাহার মুর্তি স্থির। সে আমায় বলিল _ “আপনি কাজটা সেরে নিন্‌না। আপনার সঙ্গে কথা আছে।” “ক্মমি বলিলাম--“আপনি ভুল বুঝেছেন। আমার নাঁম মিঃ সেন না। আমি একজন--* “অংশীদার ।” আমি বলিতে যাইতে ছিলাম মকেল, সে বলিল “অংশীদার ।, ভাবিলাম আর বিবাহ-বিপ্লুব . 4 ১৩২ আত্মগোপন করিবার চেষ্টা করিয়া কি হইবে? জানিয়াছে তো তবে কি চায় দেখি না। আমি বলিলাম-_-"ই11” তাহাকে আফিস গৃহে বসাইয়া শীঘ্র অপর কার্য্যটি সারিয়া লইলাম। শেষে নরেশচন্দ্রকে ডাকিয়া তিন জনে কথ! কহিতে বসিলাম। অঞ্ন্ন পক্িচ্ছেচ্‌ বোকা টিকটিক্তি “বুঝতেই তো পারছেন” “আজ্ঞে ছা, তা! বিলক্ষণ বুঝছি । মশায় একটি অদ্ভুদ চিজ |” “আজ্ঞে সে নিজগুণে যা বলেন। আমি গোড়! থেকেই বুঝতে পেরেছিলাম ষে স্ুরেন্দ্রবাবুর মামলা আপনাদের হাতে আছে-_-”» “আর মেঘরাজকে নিয়ে মশায়ের এ স্থলে শুভাগমনও হয়েছিল। মশায়ের দলের একজন হারিসন রোডে থাকতেন---* “হ্যা, সে সব গুনেছি। তবে মশায় যে সেনের অংশীদার তাঃ বুঝতে পারিনি । প্রথম যখন যশোরের ট্রেণে আপনাকে দেখি তখন একটু সন্দেহ হয়েছিল বটে কিন্ত এমন বৌক! পোক যে ভাল টিকটিকি হ'তে পারে সে সন্দেহ হয় নি। আজ পানের দৌকানে বুঝলাম_ে মশীয়ই সেই বোক।--* আমি তাহার কথার উত্তরে বলিলাম---“মশায় নিজ গুণে যা" বলেন। আপনার একটা কথার মাত্রা ছিল সেটা--”সে একটু হাসিয়। বলিল-_-*সেটা স্টাকামী,__স্বাভাবিক নয় |” | নরেশ বলিল--প্বাজে কথায় কালক্ষেপ করে" লাত কি? ১৩৩ . বিবাহ-বি্লব এখন কাজের কথা হক। দেখুন সুবোধবাবু অর্থাৎ নিবারণ বাবু-” নরেশের “অর্থাৎ শুনিয়া সকলে হাসিলাম। সে একটু অপ্রস্তত হইয়। বলিল--প্বলছিলাম কি আপনি একজন ভদ্র- লৌকের কন্তাচুরি করে লুকিয়ে রেখে দিয়েছেন। অপরাধট! গুরুতর |” “কন্াচুরি? বলেন কি? আমি?” যখন সমস্ত বিষয় রফা-রফিয়ত হইবার বন্দোবস্ত হইতেছে, তখন প্রকাশ্ত- ভাবে এ ব্যাপারের আলোচনা হওয়া কর্তব্য। এই কন্াটুরি- ব্যাপারে স্থুরেন্ত্র বাবু এবং তাহার পত্রী কতদূর বিপন্ন হইয়া- ছেন, শীতলপ্রসাদ বাবুর নিকট তাহাদের লাঞ্চিত হইবার আশঙ্কায় তাহারা কতদূর মানসিক যন্ত্রণা ভোগ করিয়াছেন, তাহ! নিবারণের নিকট অবিদিত ছিল না। সরলার বিবাহের পর সে আশঙ্কা! দূর হইয়াছিল। আমি বলিলাম_-“নিবারণ বাবু, মুরলার সঙ্গে তো আপনার কোন শক্রতা নেই। বরং আপনি তা'কে ভালবামেন। আপনার যা” কিছু বিবাদ তার বাপের সঙ্গে” নিবারণ ঘাড় নাড়িল, একবার তার লম্বা! গরুড়-নাপার অগ্রভাব ধরিয়া টান মারিল। আমি বলিলাম--“আপনি কেন মুরলাকে আটক ক'রে রেখেছিলেন, তা” এক রকম বুঝতে পারা যাচ্চে ।. মানের ভয়ে শীতল প্রসাদ্ের অর্থ-প্রত্যর্পণ কর্বার ভয়ে যদি রেন্ত্রবাবু রুফা রফিয়ত করে, আপনার শরণাপন্ন হয়?” নিবারণ যেকূপ ধীর ভাবে আমার বন্তৃতা গুনিতেছিল, বৃদ্ধ! ঠানদিদির দল অত মনোযোগ দিয়া শ্রীভাগবত শুনে না | বোধ হইভেছিল যেন দে আমার যুক্তির সমীচীনতা বুঝিতেছে। বিবাহ-বিপ্ীব . ১৩৪ এখনি অন্ুতাঁপাণ্বির উত্তাপ সহ করিতে না পারিয়া আমার নিকট ক্ষম! প্রার্থনা করিবে। তাহার মতামত জানিবার জন্ত একবার থামিলাম। অনেকটা! ফল ফলিয়াছে বলিয়া বোধ হইল। কারণ নিবারণ বলিল--“্হ্যা ঠিক । বলে যান।” আমি উৎদাহিত হইয়া বলিতে লাগিলাম--“এখন কিন্তু জগদীশ্বরের অনুগ্রহে ঘটনার শ্রোত বদলে গিয়েছে। যে পথে গিয়েছিলেন সে পথে সিদ্ধি নেই, সুতরাং এখন কন্তার মঙ্গলের জন্ত তাকে মুক্তিদান করুন। 'অবনীর সঙ্গে বিবাহ দিয়ে তাকে চিরস্ৃখিনী কর! ষেতে পারে। তার বাপের সঙ্গে অন্ত রকমে বোঁঝা পড়া করুন|” নিবারণ ধীরভীবে সমস্ত কথা শুনিয়া বলিল--“নথ' ! এখন বুঝতে পারছি কেন তার বাপ আমাদের সঙ্গে রফা করতে, অগ্রসর হয় নি। সুরেন্দ্রেরবিশ্বান ষে আমি তাঁর কন্যাকে স্নেহ করি। স্বার্থপিদ্ধির জন্যে তা”র কন্তা কেন,-নিজের কন্তাকে স্বহন্তে বলি দিতে পারি,_একথা সুরেন্দ্র তো জানে” আমি শিহরিয়! উঠিলীম। অবশ্ত তাহার মুখের ভাব বিকৃত হইল না |) তাহাকে একটু ভয় দেখাইবার জন্য বলিলাম--“জানেন আপনি কি শুরুতর অপরাধ করেছেন? বিষয়টা সরকারী পুলিশের হাতে দিলে--* একটু বিজ্রপের হাসি হাসিয়ানিবারণ বলিল-- “কিছুদিন নির্দোষ ব্যক্তির মিথ্যা অপযশ প্রচার করার অপরাধে মহাশয়কে গ্রীঘর বাস করতে হয়। আমার বিরুদ্ধে কি. প্রমাণ আমি বলিলাম__“আপনি আমার নিকট দোষ স্বীকার করছেন, _এই প্রমাণই' যথেই্ট।” : নিবারণ হাসিয়া বলিল--“আপনি ১৩৫ বিবাহ-বিপ্লীৰ তে৷ তুচ্ছ একটা! টিকটিকি। সমাজে, সকলের নিকট হেয়। দিন।-কাগজ কলম দিন। আমি অপরাধ লিখে দিচ্চি। আরও লিখে দে'ব যি আজ থেকে ত্রিশ দিনের মধ্যে আপনার মক্কেল আমাকে সন্তষ্ট না করে তা হলে সে তো ইহলীল! সন্বরণ করবেই, তার কন্তাটাকেও নিজের হাতে কাঁট্ব। আর মহাশয়ের! আমার সঙ্গে পয়সার লোভে এভটা শক্রতা করেন, আপনাদেরও বখশিশ্‌ দিতে তুলবনা । সন্ধ্যা হল এখন উঠি।” এত বড় শ্গর্দার কথা বলিল তবু নিবারণ চন্দ্রের মুখভাব পরিবর্তিত হইল না। সেয়ে উত্তোজত হইয়াছিল সে বিষয়ে কোন সন্দেহ ছিল না। তাহাকে উঠিতে দেখিয়া আমি বলিলাম-_“মহাঁশয়, মেটাবার জন্যে এসে বিবাদ করলে কি হবেঃ আপনি কি চান, সেটা আমাদের জানালে আমরা একট! নিষ্পত্তি করবার চেষ্টা করতে পারি।”৮ নিবারণ বলিল--“মেটাবার কথা আপনাদের সঙ্গে হতে পারে না।. স্ুরেন্দ্রকে চাই । আমি তিন দিন পরে ঠিক এই রকম সময় এখানে আসব। ইচ্ছ। করেন তো! স্থরেন্ত্রকে আনিয়ে রাখতে পারেন” আমার সহিত করমর্দন করিয়া আমার চুরুটের কেশ হইতে একটা চুরুট লইয়া অতি অমায়িক ভাবে একটু হাসিয়া ম্বারণ বিদায় গ্রহণ করিল। লোকটা চলিয়া গেলে, নরেশ বলিল--“বাবা! ও লোকের সঙ্গেও লাগে? কেমন এমিজে এসে পরিচয় দিয়ে, আপনার দোষ ত্বীকার ক'রে অথচ রোৌঁকের উপর চলে গেল? ও আমাদের চেয়ে ঢের বেশ চালাক । “একটা কিছু নতুন মতলব ঠাওরেছে।” : আমি বিবাহ-বিপ্লবৰ | ১৩৬ বলিলাম--“নিঃসন্দেহ। এখন কাকেও ওর সঙ্গে পাঠিয়ে দাও, ওর ঠিকানাটা জেনে আন্ুক 1” নরেশ তাড়াতাড়ি উঠিয়া নিবারণের ঠিকানা জানিবার জন্য লোকের বন্দোবস্ত করিতে গেল। নিবারণ চলিয়া যাইবার কিছুক্ষণ পরে সুরেন্ত্রবাবু আসিলেন। তাহাকে নিবারণ সম্বন্ধে সমস্ত কথা বলিলাম বলা বাহুল্য আমার কথা গুনিয়া ভদ্রলোক বড় ভীত হইলেন। তিনি বলিলেন__ “জীবনদাদাকে পেয়ে কেবল যে সরলার বিবাহ দিয়ে মান বাচাতে পারলাম তা নয়। নেহাত একল! মাঠের মধ্যে থাকি, তবু একটা সঙ্গী পেয়েছি । আপনারা জানেন না, নিবারণ বড় ভয়ঙ্কর লোক। ওর কথাও যা” কাজও তা” । আমার প্রাণ ব্ধ না ক'রে ছাড়বে না । আৃষ্টে অপঘাত মৃত্যু নিশ্চয় আছে। দিন, সরকারী পুলিশ দিয়ে হতভাগাকে গ্রেপ্তার করিয়ে দিন। আমি বলিলাম-_-“অবশ্ঠ আপনাকে বারবার জিজ্ঞাসা করাটা ভাল না। যদি স্পষ্ট ক'রে খুলে বল্তেন যে ও আপনার নিকট কি চায়, আর আপনাদের পূর্ব সন্বন্ধটাই বা কি,_-তাহ'লে বোধ হয় কতকটা উপকার করতে পারি” সুরেন্ত্রবাবু ইতন্ততঃ করিতে লাগিলেন। আর এক সময় সকল কথা খুলিয়া বলিতে প্রতিশ্রুত হইলেন। তিন্লি: উঠিতে যাইতেছেন এমন সমস নরেশ-প্রেরিত দূত ফিরি; আদিল। নকলে সাগ্রহে তাহার মুখের দিকে চাহিল। 'আমি জিজ্ঞাসা করিলাম--কি প্রিয়নার,. কি খবর?” প্রিয়নাথ মুখ ভার করিয়া বলিল- “মশায়, এমন কাজেও পাঠায় 1. লোকটা তে! এ গলি দে গলি চল্তে লাগল, ১৩৭ | বিবাহ-বিপ্লব আমিও নাছোড়বন্দা পিছনে পিছনে ঘুরলাম | শেষে জোড়ার্সীকোর একট! গলির মধ্যে গিয়ে অনৃশ্ত হ/য়ে গেল।” নরেশ বিশ্মিত হইয়া বলিল-_“্বল কি? তুমি নেহাত অপদার্থ। একট! লোক কলকাতার সহরে তোমার চোখের সামনে দিয়ে সরে গেল। কোথায় ঢুকলো দেখতে পেলে না ?” প্রিয়নাথ বলিল--দ্দীড়ান মশায়, এখনও শেষ হয়নি। লোকটা কোথায় গেল আঙ্গীর মত পাঁচজন থাকলে ধরতে পার্ত না। যেমনই সরে গেল, আমি একটু এদ্দিক ওদিক দেখছি হঠাৎ হাসতে হাসতে পিছন থেকে লোকটা এসে আমার কাণ ধরে বল্লে,_ এই রকম করে মনিবের কাজ কর? আমি চোখের সামনে সরে গেলাম, বুঝতে পারলে ন। ? আমি ত নেহাত ছোট ছেলেটি নই,__ পুরো ছ'ফুট লম্বা ।” সুরেন্দ্রবাবুর মুখ গম্ভীর হইল। আমরা দু'জনে হাসিলাম। প্রিয়নাথ বলিল-__“মশায় শেষে লোকটা বল্লে--"যাও আর পাহাপা দ্রিতে হবে না। এই চিঠি থান! সতীশবাবুকে দিও ।” আমি প্রিক্বনাথের হাত থেকে চিঠি থানা লইলাম। কাঁলিতে লেখা। নিবারণ বড় সৌধীন লোক। সর্বদা সঙ্গে একট! ফাউনটেন্‌ পেন্‌ রাথে। পত্রে লেখা ছিল-_ "সতীশ বাবু, আমার সঙ্গে লোক পাস্িয়েছেন ভাল হুইল, আমায় আর লৌক পাঠাইতে হইল না । আমি পরণু সন্ধ্যার সময় যাইতে পারিব না। বুধবারে নিশ্চয় যাইব। আপনার লোকটা! বড় রোকা। বোক টিকটিকির উপযুক্ত বৌক। সাগরেদ। . পিছনে চাহিতেছি,ন। দে্িয়া সে ভাবিল আমি তাহাকে লক্ষ্য করিতেছি বিবাহ-বিপ্রবা ১৩৮ া। আমার হাতে একখানা আয়না ছিল, সে যেমনি এক একটা গ্যাম পোষ্টের নীচে আসিতেছিল আমি অমনি দর্পণ তাহার গতি বিধি দেখিয়া লইতেছিলাম। আপনারা ডিটেক- টিভ, এ প্রণালীটা কাজে লাগিবে বলিয়া লিখিলাম। নমস্কার জানিবেন-স্থবোধ।” পত্র পাঠ শেষ হইলে সুরেন্ত্রনাথ বলিল-_ “নিবারণের ও গৌঁয়ারতুমি চিরকালই আছে। কি ভয়ঙ্কর লোক দেখলেন।” নরেশ বলিল--“যা হক আগ বুধবারে আসতে ভুলবেন না। এ রকম লোকের সঙ্গে শক্রতা করার চেয়ে বন্ধুত্ব করায় লাভ আছে |» | মা ক চ সবন্ম সজিচ্ছেছ্‌ নিরেট বোক। বৈশাখ জ্যৈষ্ঠ মাসের উত্তাপ সহা করা যাইলেও ভাদ্রমাসের গরম সহা হয় না। আমাদের আফিসে তড়িত পাখা.ছিল না । কেবল আফিসগৃহে একথানা টানা পাথা ছিল। তখনও কলি- কাতার অলি গলি ঘুরিয়া দামিনী এত বেশী নরসেবা কন্ধিতে আরম্ত করে নাই। আফিস ঘরে বসিয়া সুরেন্র ও নিবারণ তাহাদের বিবাদ মিটাইতে ছিল। তাহাদের গোপনীয় মন্তায় আমাদিগের উপস্থিতি মন্বন্ধে তাহার! উভয়েই আপত্তি করিয়াছিল? তাহাদিগকে আফিম গৃহ ছাড়িয়া দিয়া আমরা উপরে গল্প করিতে ছিলাম। কোথাও্ঁ- একটু হাওয়া ছিল না? . তালবৃস্ত কিছুই ১৩৯ বিবাহ-বিপ্লব করিতে পারে নাই। গরমে প্রাণ বাহির হইবার উপক্রম হইতে- ছিল। নরেশ বলিল--“বাবা! এদের ব্যাপারটাতে। কিছু বুঝি না।” আমি বলিলাম-_“যৌবনে সকলে জোট রেধে একটা জাল জুয়াচুরি করেছিল, বোধ হয় এখন বখরা নিয়ে গোল বেধেছে” নরেশ বলিল--পন।, ঠিক তা+ নয়, এর ভেতরে একটা স্ত্রীলোক আছে ।” “্ছুর পাগল। যখন দেখছ দলের ভেতর একটা মাড়োয়ারী আছে, আরও ছু তিনজন লোক, তখন টাকা- কড়ির বিবাদ ভিন্ন অন্য কোন বিবাদ হ'তে পারে না। স্মরেন্্ বাবুর একটু অর্থের উপর লোভ আছে, এটাতে! দেখেছ । কাজেই সুরেন্ত্র বাবু ওদের যৌথ অর্থ হ'তে কিছু মেরে এসে ওভারসিয়র হয়ে বসেছেন। ওরা তা'র সংবাদ পেয়ে”-ঠিক এই সময় নীচের ঘরে গুড়ম করিয়া একটা পিস্তলের শব্ধ হইল। আমরা শিহরিয়া উঠিলাম। নিমেষ মধ্যে নীচে নামিয়াই দেখি গম্ভীরভাবে নিবারণ তাহার বাইসিকেল লইয়া পথে বাহির হইয়া তাহার উপর উঠিল। নরেশকে ঘরের ভিতর সুরেন্দ্র বাবুকে দেখিতে বলিয়া আমিও তাড়াতাড়ি একখান! বাইসিকেল লইয়া! তাহার পিছু পিছু ছুটিলাম। নিবারণ প্রায় আমার সম্মুখে কুড়ি হাত দুরে ছিল। আমি যত বেগ বাড়াইতে লাগিলাম দেও তত বেগে ছুটিতে লাগিল।. তখন প্রায় রাত্রি দশটা বাজিয়াছিল। রাস্তা অপেক্ষাকৃত নির্জন ছিল। 'দিবারগ হেরিসন রোডের ভিতর ঢুকিক়া পূর্বমুখে ছুটিল, আমি ছুই ভিন সেফেও তাহাকে দেখিতে পাইলাম না । আমি যখন মোড় ফিরলাম দেখিলাম দে একটু বেশী অগ্রসর হইয়াছে? বিষাহ-বিপ্লব, ১৪ আমার প্রায় ত্রিশ হাত অগ্রে ছুটিতেছে। আমি একটু দ্রুত যাইবার চেষ্টা করিলাম। একে ভীষণ মানসিক উত্তেজনা, তাহার উপর দারণ গ্রীষ্মে পা আর চলিতেছিল না। তবুও আমি যথাসাধ্য চেষ্টা করিয়া প্রায় তাহার বিশ হাতের মধ্যে আসিয়া পড়িলাম। প্রথম প্রথম ছুটিবার সময় নিবারণ এক একবার পিছনে চাহিতেছিল এখন আর পিছনে ন1 চাহিয়া সটান চলিতে লাগিল। বুঝিলাম সেও ক্লান্ত হইয়াছে বলিয়া আর পিছনে চাহিতেছে না। হেরিসন রোড পোষ্ট আফিসের পার্খ দিয়া সীতা- রাম ঘোষের স্রীটে পড়িয়া! উত্তর মুখে দৌড়িতে লাগিলাম। পথের মধ্যে কেবল একটা পানের দোকাঁনে একবার মাত্র একজন পাহারাওয়ালা দেখিতে পাইয়াছিলাম। কিন্তু মে মাথার লাল পাগড়ি নামাইয়া জুত্তা খুলিয়া “গুকা” টিপিতে ছিল। চীৎকার করি নাই। কারণ দ্রুত বাইসিকেল ধরিবার শক্তি বা প্রবৃত্তি তাহার হইবে না। আমহাষ্ট গ্ীটের উপর আগিয়া নিবারণ বাইসিকেলের একটু গতি কমাইল। আমারও ক্লান্তিতে গতিরোধ হইয়। আসিতেছিল। কিন্তু তাহাকে আস্তে যাইতে দেখিয়া আমি একবার প্রাণপণ চেষ্টায় গতিট! বাড়াইলাম। বেগ বদ্ধিত করিতে লাগিলাম | .ব্ধন 'ভাহার নিকট হইতে পাঁচ হাতের মধ্যে আসিয়! পড়িয়াছি তখন: সে সুকিয় স্াটের মোড়ের কাছে। আমি ইাফাইতে হাফাইতে চীৎকার করিয়া বলিলাম--“আর কেন ?. থাম থাম।” হঠাৎ বাইসিকেল থামিল, আরোহী নামিল। জানিতাম তাহার হুন্তে একটা রিতলবার ব! পিস্তল আছে কাজেই ১৪১ | বিবাহ-বিপ্লব তাহার কু-অভিসদ্ধি সন্দেহ করিয়া নিমেষ মধ্যে আমি গাঁড়ি হইতে নামিয়! গাড়ীখান! ছাড়িয়া দিয়া ছুটিয়া তাহাকে জড়াইয়া ধরিলাম। ছুইজনেই তাহার বাইনিকেলের উপর পড়িয়া গেলাম। তাহাকে বলিলাম--পনরঘাতক ! পিশাচ ! চোর ! এবার তোমায় ধরেছি, আর যাবে কোথা?” আমার বন্দী একটা ঝাপটা মারিয়! মুখ ফিরাইয়া বলিল-_“পাঁগল নাকি? 'কি বল্চেন?” তাহার মুখের দিকে চাহিয়া আমি আবার শিহরিয়া উঠিলাম। এসে লদ্ঘনাসা কৃষ্ণবর্ণ নিবারণের মুখ নহে। লোকটা কি যাক নাকি? উত্তেজনায় আমার সর্বশরীর কাপিতেছিল। ফ্রেঞ্চ ফ্যামানের দাঁড়ি, পাকান গুদ্ফযুক্ত একটি যুবকের মুখ! কি বিড়ম্বনা! কি রহস্ত! ওঃ! লোকটা মায়াবী নাকি? কি ঘাহুবলে একেবারে সমস্ত মুখটা পরিবন্তিত করিয়া ফেলিল তা বুঝিতে. পারিলাম না। সমস্ত চেহারা পরিবর্তিত করিয়াছে, নল্চে ও খোল উভয়ই বদল করিয়াছে। একবার তাহার দাঁড়ি গৌঁফ ধরিয়া টানিলাম। যদি মে গুলা কৃত্রিম হয়তো থসিয়া পড়িবে। কিন্তু তাহা হইল না। এবার লোকটা বিরক্ত হইয়া বলিল--“মশীয়, আমি*আপনাকে ক্ষমা করব না। পাগলই হন আর যেই হন্‌, পুলিশে দিব। পুলিশ! পুলিশ!” আমি ধীরে বরে তাহাকে ছাড়িয়া! উঠিলাম। লোকটিও উঠিল। গায়ের খুলা ঝাড়িয়া রুমালে মুখ মুছিয়া বাইসিকেলট। তুলিয়া লোকটা আমার মুখের দিকে কটাক্ষপাত করিয়া বলিল-_-“নাম দিন। আমি এ খ্যাপারটা সহজে ছাড়তে পারিব না”. আঁমি বিবাহ-বিপ্লীব, | ১৪২ চে লোকটাকে আপাদ-মস্তক নিরীক্ষণ করিয়! দেখিলাম একটা ভূল করিয়াছি। যুবকটি শিক্ষিত ও ভদ্রবংশীক্প বলিয়া বোধ হইল। তাহার নিকট ক্ষমা চাহিয়া বলিলাম--পমহাশয়, একট! লোক খুন ক'রে আমার সামনে বাইসিকেল নিষ্জে পালিয়ে যাচ্ছিল ।” আমি তাকে অন্ুনরণ করছিলাম । অন্ধকারে কোন্‌ গলির মধ্যে পালিয়েছে বুঝতে পারলাম না1।” নরহত্যা হইয়াছে শুনিয়! যুবকটি বিগত-ক্রোধ হইল। বিল্ময়ে আমাকে বলিল--“আঁমি যথন শ্ঠামাচরণ দের ট্রীট থেকে বেরুই তখন আমাকে শিয়ালদহের মুখে ফিরতে দেখে একটা লোক বাইসিকেল থেকে নেমে বাম দিকের গলিতে ছায়ায় দাড়াল। আমি যখন হারিসন রোডে পড়ি, তখন আপনাকে দেখতে পাইনি। বোধ হয় আমাকে আগে ছুটতে দেখে আপনি আমাকে সেই লোক ভেবে আমার অনুসরণ করবেন সেই অন্ুমানে সে গাড়ি থেকে নেমে গলিতে দীড়াল। আমরা অগ্রসর হলে বোধ হ্য়_-অন্ত কোনও পথ দিয়ে পালিয়েছে । নিবারণের প্রত্যুৎপন্নমতিতে আমি বিশ্মিত হইলাম। একটা নরহত্যা করিয়া অবিচপিত ভাবে কলিকাতার প্রকাশ্ত রাজপথ দিয়! বাহির-হইয়া পলাইতে পলাইতে অনুধাবক যখন ভুল করিতে পারে, সেই অবসর বুঝিয়া একটু অপেক্ষা করা, তাহার পল্ন আবার পলাইয়া যাওয়া, খুনের লাইনে বড় একটা সুঙ্্ম কারুকার্ধ্য সন্দেহ নাই। ভন্রলোকটি বলিলেন... “আপনি বদি ইচ্ছা করেন তা হলে সে-ষে, স্থল দীড়িয়েছিল দেখাইয়া! দিতে পারি।৮ আমি অগত্যা তাহাতে হ্বীক্কত হইরাম। ১৪৩ ৃ্‌ _ বিবাহ-বিপ্লব নিজের অসারত্ব স্মরণ করিয়! মনে মনে আপনাকে ধিক্কার দিলাম । ভদ্রলোকটির নবাবদি ওস্তাগর লেনে কি একটা আবপ্তক ছিল। তাহা মারিয়া লইয়৷ তিনি আমার সহিত আবার চলিলেন। হথারিসন রোডের মোড়ে আদিয়! তিনি আমাকে সেই স্থানটি দেখাইয়া দিলেন। বান্তরিক, নিবারণের অভিসন্ধি কার্যে পরিণত করিবার পক্ষে সেইটি আদর্শ স্থল। “গলির মুখেই একখানি বড় অট্টালিকা এবং হ্থারিসন রোডের উপর একটা মেহগ্সিনি গাছ সেই স্থানটাকে আরও অন্ধকারময় করিয়া রাখিয়াছিল। সেখানে নিবারণ দীড়াইয়াছিল দাগ প্রভৃতি দেখিয়৷ তাহাঁও নির্ণয় করিতে পারা গেল। ধুলার উপর একথও সাদা কাগজ পড়িয়া থাকিতে দেখিয়! তাহা তুলিয়া লইলাম। গ্যাসের আলোকে পাঠ করিয়া দেখিলাম তাহাতে লেখা আছে--"দতীশ বাবু, তুমি অতি মূর্থ একটা লোক চোথের উপর দিয়! পলাইল ধরিতে পারলে না? নমস্কার জেনো।” তদ্রলৌকটি বলিল-_৭ওঃ, এতো বড় তযঙ্কর লোক দেখছি।” “সে বিষয়ে আর মন্দেহ আছে?” তীহার, নামটি লইয়া বাদায় ফিরিলাম। মনে ভাবিলাম, আমি শুধু বোকা নই। নিরেট বোকা। ছৃপ্ণক্ন পল্িক্জেছ্‌ ওম্মরেন্ট | তাড়াতাড়ি গৃহে ফিরিলাম। মনে শাস্তির লেশ মাত্র ছিল না। সুরেন্ত্র বাবু জীবিত ছিলেন কি না তাহাও বুঝিতে পারি নাই। সুবোধের উপর সরলভাবে বিশ্বাস স্থাপন করিয়া কি কুকর্মমই করিয়াছিলাম। হয়ত আমারই নির্বদ্বিতার জন্য অকালে তাহাকে-- ভীষণ চিত্ত! শিহুরিয়া উঠিলাম। দ্রুতপদবিক্ষেপে গৃহে ফিরিলাম। আফিস গৃহ তখনও স্থানে স্থানে নররক্তে রঞ্জিত ছিল। বিষম মানসিক উত্তেজনা ! কম্পিতকণ্ঠে ভূৃত্যকে জিজ্ঞানা করিলাম--“বাবুরা কোথায়?” ভৃত্য বলিল--“ইাসপাতালে |” আমি অতি ভীতভাবে জিজ্ঞাসা করিলাম-_“বাবু বেঁচে-_মানে বেশী চোট--অর্থাৎ ঠিক বেঁচে আছেন তো?” তাহার কথা হইতে বুঝিলাম স্থরেন্্র বাবুর স্কন্ধের নিকট আঘাত লাগিয়াছিল। তিনি প্রথমতঃ ভয়ে সংজ্ঞাহীন হইয়াছিলেন। শেষে কথাবার্তা কহিয়াছিলেন। স্বয়ং নরেশের কাধ ধরিয়া গাড়িতে উঠিতে এ নরেশ ও তাহার সহিত হাসপাতালে গিয়াছিল। সংবাদে অনেকটা আশ্বস্ত হইলাম। তবু মনের চাঞ্চল্য একেবারে উস হইল না। ভীষণ কায়িক ও মানসিক পরিশ্রমে দেহ ও মন অবসর হইয়৷ গড়িগ়াছিল। হাসপাতালে আর সে সময় লাম না। নুরেন্্র বাবু সংক্রান্ত কল কথা মন হইতে যতই ১৪৫ * বিৰাহ-বিপ্লব তাড়াইতে চেষ্টা করিলাম, ততই নানারপ আকার ধারণ করিয়! নানা রকম মুখোস পরিধান করিয়া, আমাকে বিভীধিক1 দেখাই- বার জন্য, একে একে কেবল তাহারই কথা মনের মধ্যে উকি মারিতে আরম্ভ করিয়া দিল। আমি ছুই গ্লাস বরফ জল পান করিয়া সবে মাত্র চুরুটটি ধরাইয়াছি এমন সময় সংবাদ আমিল ষে পুলিস ইন্সপেক্টর সমভিব্যাহারে নরেশ চন্দ্র প্রত্যাবর্তন করিয়াছে। কাজেই আরাম-কেদীরা ছাড়িয়া আবার নীচের আফিম ঘরে গেলাম | আমাকে দেখিয়াই সেন সাগ্রহে জিজ্ঞাস! করিল--“কি হে সতীশ, আসামী কোথায়?” আমি বিরক্ত হইয়া বলিলাম--“আসামী আর কোথা? যথাস্থানে আছে।” ইন্স্পেক্র আমাদিগের বন্ধু। সে হাসিয়া বলিল--“রাগ কর কেন? ধর্তে পারনি বুঝি ?” “আমি এবার হাসিয়া সপ্রতিভভাবে বলিলাম-- “আর ভাই, সে কথা বল কেন? ধর্তে না পারা এক, আর নিরেট বোকা সাব্যস্থ হওয়া এক ভিন্ন কথা । সে কথা পরে শোনাচ্ছি। এখন রোগীর অবস্থা বল দেখি ।” নরেশ বলিল--“রোগীর কোন ভয় নাই। নিবারণের গুলি সুরেন্দ্রবাবুর কাধের হাড় স্পর্শ করে * গেছে মাত্র। এ দেখ না পিছনের দেওয়ালে গিয়ে গুলিট! লেগেছে ।” ইনৃস্পেক্টর আমাদিগের সহিত কথা কহিতে কহিতে . খুলির টুকরাঁগুলি সযত্ত্ে তুলিল। নরেশ বলিল-__“নুরেন্ত্র বাবু খুব আদৃষ্টের জোরে আজ বেঁচে গেছেন।” আমি বলিলাম--“কাজটা! আমাদের পক্ষে যতদুর ছেলেমান্ষি হ'বার তা” হয়েছে। আমরা ' জান্ভাম যে আরেন্্রবাবুর সে ভীষণ শত্র। তবু তার তল্লাসী ৬ বিবাহ-ঘিগ্রীব, ূ ১৪৬ ৃ না নিয়ে তাকে সুরেন্্র বাবুর সঙ্গে দেখ! কর্তে দিয়েছিলাম ।” তাহার! উভয়েই স্বীকার করিল থে, কার্য্যটা বুদ্ধিমানের মত হয় নাই। তাহার পর আমি মে দিন স্থুবোধকে ধরিতে গিয়া কিরূপ অপদস্থ হইয়াছিলাম সে কাহিনী তাহাদিগের নিকট আগ্োপাস্ত বিবৃত করিলাম। শেষে ইন্স্পেক্টরের দ্বারা কোর্ট হইতে সুবোধ ওরফে নিবারণের নামে ওয়ারেণ্ট বাহির করিয়া! লইবার বন্দোবস্ত হইল। তাহার হন্তে অনেক কাজ বলিয়া ওয়ারেণ্ট জারি করিবার ক্ষমত! আমাদের হস্তে থাকিবে, ওয়ারেপ্ট আমরা পাইব। বল! বাহুল্য, স্থরেন্ত্রবাবুর কন্তা-চুরির কথাটা গোপন রাখিবার জন্ত আমি তাহাই চাহিতেছিলাম। একটা বিষক্কে সুবিধা হইল। এতদিন প্রমাণাভাবে আমরা স্থবৌধকে ধরিতে পারি নাই। এখন তাহার নূতন অপরাধের জন্ত তাহাকে ধরিয়া হাজতে বন্ধ করিয়া! রাখিতে পারিলে অচিরেই মুরলাঁকে উদ্ধার করিতে পারিব, মনে মনে এইরূপ আশার সঞ্চার হইল) এন্কাদশ্ণ পলি রর জ্াজেল্স ক্ডিভর সু নিবারণ ও তাহার দলের লোকের অনুসন্ধান করিবার জন্ক কয়েক দিন ধরিয়া যথেষ্ট পরিশ্রম করিধাম। কেবল আমা ছুইজনে নহে, আমাদের অধীনস্থ সকল ডিটেকটিভ কবিকাতার পথে ঘাটে অলিতে গলিতে কয়েক দিন ধরিয়া ভাহার অমুসন্ধাদ ১৪৭ ' বিবাহ-বিপ্লঘ করিল; কিন্তু তাহাদের কাহারও কোনও সন্ধান পাওয়া গেল না। আমাদের এক রকম ধারণ! হইয়াছিল যে, তাহারা কলিকাতা ছাড়িয়া পলাইয়াছে। পুলিসেরও ছুই একজন লোক আমাদিগকে সাহায্য করিতেছিল। কিন্তু হুর্ভাগ্যবশতঃ ছূর্কত্তদের কোনও ংবাদ পাওয়া গেল না। তবে তাহারা কলিকাতায় থাকিলে নিশ্চয় তাহাদের সন্ধান পাইব, এ ধারণা আমার হৃদয়ে বদ্ধমূল হইয়াছিল। একদিন নরেশ বলিল-_-"দেখ, ভাই, তাদের কল্কাতাঁর বাহিরে যে আড্ডা আছে সুরেন্দ্রবাবু তা জানেন। তুমি যশোরে গিয়ে তার কাছ থেকে জেনে এস।” নরেশের কথ বেশ যুক্তিযুক্ত বলিয়। মনে হইল । আমি বলিলাম,-“তা” আজই আমি যশোর যাব এখন। কিন্ত তিনি যদি তাদের রহস্তট! সম্পূর্ণ- রূপে আমাদের না বলেন, তাহলে আমরা এ তাস্ত ছেড়ে দেব,” স্থরেন্্রবাবু এক রকম আরোগ্যলাভ করিয়াছিলেন। কিন্তু ভয়ে তাহার মুখ একেবারে বিবর্থ হইয়া! গিয়াছিল। তাহার স্কন্ধে তখনও ব্যাণ্ডেজ বাঁধা ছিল। আমাকে দেখিয়া! স্ররেন্দ্রবাবু বড় প্রীত হইলেন। কোনও কথ! বলিবার পূর্বেই তিনি বলিলেন-. “সতীশবাবু, এসেছেন ভালই হ'য়েছে। হতভাগা এখনও নিরন্ত হয়নি। কাল একটু হাওয়া খাবার জন্টে মাঠের দিকে গিয়েছিলাম হঠাৎ পিছন থেকে নিবারণ এসে--৮ ন্ুরেক্্রবাবুর কঠম্বর কাঁপিতেছিল। তিনি নীরব হুইলেন॥ জুনুর নামে থোক1 যেস়ন শিহরিকা উঠে. তিনি তেমনি শিহরিয়। উঠিলেন। আমি হাসিয়া! লাহষ দেখাইয়া, বলিলা-_-“কি স্পর্ধা। তাঁর পর?” “তার রি বিবাহ-বিপ্ুব' | ১৪৮ নেই পুরাণে! কথাটা”__ আমি বাধা দিয়া বলিলাম--পসে পুরাণে! কথাটা কি?” স্ুরেন্ত্রবাবু বলিলেন-“আর একদিন বলব। সে কিছু না। কেবল জুলুম কর্তে চায়।” আমি বলিলাম__ “আচ্ছা থাক্‌। তার পর?” “তার পর আমি একটু আমতা! আমতা করছি এমন সময় জীবন দাদা এসে “খুন” “খুন” ক'রে চীৎকার কর্ুলেন। নিবারণ হেসে ধীরে ধীরে চলে গেল - আমরা সাহস ক'রে তাকে ধর্তে পারলাম না” আমি একটু চিন্তিত হইলাম। তাহাকে নিবারণ-সন্বন্ধে অনেক কথা জিজ্ঞাসা করিলাম। বেশ বুঝিলাম, তিনি নিবারণের উপস্থিত জীবন- সম্বন্ধে কোনও কথা জানেন না। আমি ভগ্রমনোরথ হইয়! ষ্টেশন- অভিমুখে গমন করিলাম । ষ্েশনের নিকট পনুছিয়া দেখিলাম প্লাটফরমে নিবারণ পায়চারি করিতেছে । তাহাকে দেখিয়া কিরূপ উত্তেজিত হইলাম, তাহ বর্ণনা করা অপেক্ষা অনুমান করা! সহজ। 'দুর্ভাগ্যক্রমে সঙ্গে ওয়ারেন্টখানা ছিল না। যশোহর ষ্টেশনে কোন পুলিশের লোক দেখিলাম না। এস্থলে কি কর! কর্তব্য তাহ! ভাবিয়া বড় বিচলিত হইলাম। একটা সোরগোল করিলে যে বাঙ্গালী যাত্রীরা বিন! ওয়ারেণ্টে তাহাকে ধরিবে সে ছুর্ভাবনা ছিল না। নিবারণ যেরূপ ধূর্ত, তাহাতে সে হয় তো আমাকেই খুনী আসামী বলিয় ধরাইয়া দিবে। অলক্ষ্যে তাহাকে অন্ুমরণ করিয়! তাহার সহিত কলিকাতা অবধি গিয়া শিয়ালদহে পুলিশ ডাকিয়! তাহাকে ধরাইয়া দিব এই দিদ্ধান্ত করিলাম । সৌভাগ্যক্রমে এমন ছুল্লভ রত্বের দর্শন পাইয়াছিলাম। কোনও ১৪৯ 'বিবাহ-বিপ্লব প্রকারে তাহার সঙ্গ ছাড়িব না, যেমন করিয়া! পারি তাহাকে গ্রেপ্তার করিব মনে মনে এইরূপ দৃঢ় সঙ্কল্প করিলাম। আমাকে দেখিতে পাইলে নিবারণ ঠিক পলাইবে তাহা বুঝিয়াছিলাম। আত্মগোপন করিয়া! তাহার অন্ুনরণ করিতে মনস্থ করিলাম । নিবারণ আমাকে আদৌ দেখিতে পায় নাই। সে ধীরে ধীরে একথানি দ্বিতীয় শ্রেণীর গাতীতে গিয়! বসিল। আমি কতকগুলা লোকের ভিড়ের মধ্যে মিশিয়া তাহার পার্খের একথানা তৃতীয় শ্রেণীর প্রকোষ্ঠে বসিলাম। জানাল! দিয়া তাহার গাড়ির উপর পূর্ণ দৃষ্টি রাখিলাম। প্রথম ঘণ্টা বাজিল। তখনও সে কিছু বুঝিতে পারে নাই। দ্বিতীয় ঘণ্টা বাজিল দেখিলাম, মে বেশ ধীরভাবে খবরের কাগজ পড়িতেছে। তৃতীয় ঘণ্টা বাজিল তখনও নিবারণ কিছু সন্দেহ করে নাই। গার্ড বাঁশি বাজাইয়া সবুজ নিশান উড়াইল! কি শুভ মুহুর্ত । এ রকম সুখ খুব কম অনুভব করিয়াছি। প্রাণের ভিতর মুহূর্তের জন্য অনির্বচনীয় আনন্দ অনুভব করিলাম। ট্রেণ ছাড়িল, জয় জগদীশ্বর ! পুলক অনুভব করিলাম। এবার বাছাধনকে--একি! সহসা নিবারণ উঠিল। তাহার গাড়ির দরজা খুলিল । আমি বিস্মিত হইলাম। আমার হৃৎপিণ্ড সজোরে স্পন্দিত হইতে লাগিল। ধীরে ধীরে দরজা খুলিয়া সে প্ল্যাটফ্ে নামিরা পড়িল। আমিও কালবিলম্ব না করিয়া গতিশীল ট্রেণ লইতে প্লাটফর্মে নামিয়! পড়িলাম। নিবারণ একগ'ল হাসিয়া সম্মুখে যে গাড়ি পাইল হাতল ধরিয়! তাহার উপর উঠিয়া পড়িল। আমিও যেমান সন্ুখের' গাড়িতে উঠিতে গেলাম পিছন হইতে একটা বিবাহ-বিপ্লব ১৫৩ লোক আমার হাত ধরিয়া টানিয়! বলিল--“কি করেন মশায়? মারা পড়বেন যে, অমন গৌয়ারতুমি কর্বেন না” আমি বিরক্ত হইয়া বলিলাম__“কে হে বাপু? ছাড়! ছাড়! খুনের আপামী পালায়!” লোকটা বলিল--“ট্রেণ ছুটছে দেখছ না। শেষে কি গৌয়ারতুমি ক'রে পৈত্রিক প্রাণটা! হারাবে?” আমি তাহাকে ঝাপটা মারিয়া একবার উঠিতে গেলাম । লোকটা আবার আমার হাত ধরিল। এই কয় সেকেণ্ডের গোলমালে গাড়িখান৷ আমাদের ছাড়াইয়৷ চলিয়া! গেল । আমি একবার সতৃষ্ণ নয়নে গমনশীল ট্রেণের দিকে চাহিলাম। গাড়ির একটি প্রকোষ্ঠের ভিতর হইতে মুখ বাহির করিয়া সহান্তবদনে নিবারণ আমাকে প্রণাম করিল। হাত নাড়িল। অপমানে, স্ব্ণায়, ক্ষোভে আমার সর্বশরীর জলিতেছিল। যে লোকটা আমায় ধরিয়াছিল একবার তাহার দিকে চাহিলাম। কি সর্বনাশ! উত্তমরূপে লক্ষ্য করিয়া বুঝিতে পারিলাম, সে লোকটা অবিনাশ ওরফে নিখিল মিত্র। সে আমায় চিনিয়াছিল তাহা নিঃসন্দেহ। তাহা না হইলে, সে আমাকে ধরিয়া রাখিবে কেন? আমি যে তাহাকে চিনি নাই তাহাকে .সে কথা উত্তমরূপে বুঝাইবার জন্য বলিলাম-_প্মহাশয় তো বেশ ভদ্রলোক ! দেখুন দেখি একটা খুনে লোক পালিয়ে গেল।” বিস্ময়ের ভান করিয়া অবিনাশ বলিল_”বলেন কি? মশায় কি পুরিসের লোক নাকি? বাধা দিয়ে তো অন্যায় কতেছি। লৌকটাকে দেখে কিন্তু খুনে বলে বোধ হয় না।” আমি জানিতাম, অবিনাশ সকল কথা জানে। তাহার নিকট একটু ১৫১ ' বিবাহ-বিপ্লব গর্ব করিয়া তাহার প্রাণে ভীতি-সঞ্চার করিবার উদ্দেশ্তে আমি বলিলাম--“আর পালাবেই বা কোথায়? আমার কাছে লোকটার মাথার টিকি বাঁধা, সমন্তই জানি। আজকের মত রেহাই পেলে এই অবধি। হয় ত কল্কাতায় গিয়ে রাত্রিতেই ওকে গ্রেপ্তার কত্পব |” লোকটা বলিল--“আচ্ছা, সত্যই কি খুন ক'রেছে? কলিকালে লোক চেনা শক্ত । কি' বলেন, ইনস্পেক্টর বাবু?” তাহার উপর হইতে সন্দেহ অপসারিত করিবার জন্ত সে আমাকে লইয়া রঙ্গ করিতেছিল। আমি আর প্রকাশ করিলাম না যে আমি তাহাকে নিবারণের দলভুক্ত বলিয়া জানি। আপনাকে ধিক্কার দিতে দিতে ধীরে ধীরে সুরেন্দ্রবাবুর বাঙ্গালার দিকে অগ্রসর হইলাম। কলিকাতায় ফিরিবার জন্য রাত্রিতে যশোহর ছাড়িলাম। সমস্ত রাত্রি একবার চোখের পাত বুজি নাই। অবিনাশ ওরফে নিখিল মিত্র সেই ট্রেণে উঠিয়াছিল। কাজেই তাহার উপর একটু লক্ষ্য রাখিয়াছিলান। তাহার.গতিক দেখির! বুঝিয়াছিলাম যে, আমি যে তাহাকে চিনিতাম সে কথা সে বুঝিতে পারে নাই। মে মোটে একবারমাত্র আমাকে তাহার বাদায় দেখিয়াছিল। ভোরের সময় ট্রেণ কলিকাতায় পহুছিল। অবিনাশ ,একথানা গাড়িতে উঠিয়া গাড়োয়ানকে কি বলিল। গাঁড়োয়ান গাড়ি হাকাইল। আমিও একখান! গাড়ি চড়িতে .'ঘাইতেছি এমন সময় আমার সহকারী প্রিয়নাথকে দেখিলাম, সে বলিল--প্বাবু, বড় খবর আছে।” আমি তাহাকে বলিলাম-- “নরেশ জাসে 1” সে বলিল--হ্যা ঘাবু। আপনি শীদ্্ বাসায় বিবাহ-বিপ্লব ' ১৫২ যান।” আমি বলিলাম-_“আচ্ষা, সময় নষ্ট না ক'রে এ গাড়িখানার অনুসরণ কর। দেখ দেখি কোথা যায়? এ লম্বা লোকটির ঠিকানা--বুঝেছ?” আমার শরীর অবসন্ন হইয়া আদিতেছিল। অবিনাশ যে গাড়িতে চড়িয়াছিল আমি সেই গাড়ির নম্বর লইয়া বাসায় ফিরিলাম। বাপায় ফিরিবামাত্র নরেশ বলিল-_“ওহে, তোমার আনামী কাল রাত্রে বোম্বাই মেলে কাশী গেছে” প্বল কি? তা! হলে সন্ধার সময় যশোরের ট্রেণ থেকে নেমেই আবার পালিয়েছে । যা'হক একট! ভাল হ'ল, লোকটা আর স্থুরেন্ত্রবাবুকে জালাতে পার্বে না।” নরেশ বলিল--“কি করেছি শোন। প্রিয্নাথ হাওড়ার ষ্টেশনে সেই আফিমের কেশটার জন্য ঘুরছিল। হঠাত নিবারণকে দেখতে পায়। ভাগ্য-ক্রমে প্রিয়নাথ দে সময় লুঙ্গি পরে দাড়ি মুখে দিয়ে মুনলমান সেজে বেড়াচ্ছিল। সে নিবারণকে কাশীর সেকেও্ড ক্লাসের টিকিট কিন্তে দেখে । তখনই টিকিট ঘর থেকে সে তার টিকিটের নম্বরটা সংগ্রহ করে। গাড়ি ছাড়লে সে এসে আমাদের খবর দেয়। আমি ইন্স্পেক্টরের সঙ্গে সাক্ষাৎ ক'রে মোগলসরাই ষ্টেশনে টেলিগ্রাম ক'রে দিয়েছি। যে লোকটার হাতে সেই নম্বরের টিকিট পাবে তাকে ধরবে ।” কথাটা তেমন ভাল বিবেচনা! করিলাম না । সে যেরূপ সতর্ক তাহাতে তাহার পক্ষে একট নূতন রকম চাডুরী করা অসম্ভব নম্ম। তবে এক্ষেত্রে সে জানিত ন! ষে, কেহ তাহাকে লক্ষ্য করিতেছে। প্রিয়নাথকে মুদলমান পোষাকে চিনিতে পারা তাহার পক্ষে সম্ভবপর নহে। ১৫৩ ' বিবাহ-বিপ্লক নরেশের কথাবার্তায় বুঝিলাম নিবারণ প্রিয়নাথের উপর সন্দেহ করে নাই। আমি নিজের হুর্ঘটনার কথা নরেশকে আগ্োপাস্ত বলিলাম । সে উচ্চ হাম্ত করিয়া বলিল--“তুমি বাস্তবিক বোক1।” আমি তাহা স্বীকার করিলাম। সে বলিল-_-“দেখ, আইন-পড়ে লোকে কাপুরুষ হয়। একটা মূর্খ জমাঁদার কি পাহারাওয়াল৷ হলে সঙ্গে ওয়ারেন্ট ছিল না বলে দে অমন আসামীকে ছাড়ত না। তুমি স্তায়ের তর্ক করতে গিয়ে” আমি বলিলাম__“ঠিক বলেছ যা হ'ক, এখন বোধ হয় লোকটা জালের ভেতর পড়েচে। তবে সে যে রকম চতুর এখনও বিশ্নাস নেই।” ভ্বাদপ্ণে পজ্িচ্ছ্েদে আবার কফ্ষাকি “কিহে প্রিয়নাথ, কি হ'ল?” ঘন ঘন নিঃশ্বাস ফেলিতে ফেলিতে প্রিয়নাথ বলিল__“মশায়, বড় ঠকিয়েছে 1” “ঠকিয়েছে কিহে? দিনের বেলা ঠকালে কি রকম?” “মশায় আপনি তো আমাকে গাড়িতে চড়িয়ে দিলেন। আমি লোকটার অনুসরণ কর্লাম। তার থোল! গাড়ি, কাজেই দরজা দিয়ে মুখ বাড়িয়ে দেখতে আরস্ত কর্লাম। গাড়িখানা সাকুলার রোডের উপর দিয়ে বৌবাজারের পথে গেল। দেখান থেকে চুণাগলির মধ্যে ঘুরে চিনেপাড়া, পিটার্স লেন, ক্ল্যাকবারণ লেন, টিরেটিবাজারের ভেতর দিয়ে আবার চিৎপুর রোড়ে পড়ল। আমার গাড়োয়ানট। বিবাহ-বিপ্লুব ১৫৪ মাঝে একবার বল্লে, কি মহাঁশয় এত ঘুরাচ্চেন কেন? আমি ভাদকে বখশিসের আশা দিয়ে ছুটোলাম। ভার পর চিৎপুর রোডের উপর দিয়ে গাড়িখানা সটান ময়দানের দিকে ছুটুলো। শেষে ধর্মতলার মোড়ে ঠিকাগাড়ির লাইনে গিয়ে দাড়াল। আমি একটু বিন্মিত হলাম, গাড়ি দাড় করিয়ে ধীরে ধীরে গাড়ীর ভেতর দেখতে গেলাম । দেখলাম গাড়ি শূন্ত । গাড়োয়ানটা হাসছে» নরেশ বলিল--“এ জনুরির দল। কি ক'রে খবর পেলে ষে প্রির়নাথ আমাদের লোক ?* “তাই ত আশ্চর্য্য হ'চচি। বোধ হয় সতর্কভাবে ষেতে যেতে একথান! গাড়ি অন্ভুদরণ করচে দেখে সন্দেহ হয়েছে ।” প্রিয়নাথ বলিল--“মশাই, তার পর শুনুন। গাড়োয়ানটা হেসে বল্লে-_-“কি বাবু, বাঁজি হারলেন ?' আমি বিরঞ্ত হয়ে বল্লাম__“কিসের বাজি? সে বল্লে_-কেন বাবু? আমার গাঁড়ির বাবু আমাকে সব বলেছেন। খোলা গাড়ির & সুবিধা, লোকে ক্যোচমানের সঙ্গে কথা কহিতে পায়। বৌবাঁজারের মোড় পার হয়ে বাবু বল্লেন_-কোচ্যমান পিছনের গাড়ির বাবুর সঙ্গে বাজি হয়েছে যে যদি তা”র চোখে ধুল! দিয়ে পালাতে পারি তাহলে দশ টাক] পাব। তুমি কেবল গলির ভিতর দিয়ে চল। আর আমি নেমে গেলে গাড়ি থামিঘো না। "ঘুরতে ঘুরতে সটান ধর্মতলার মোড়ে গিয়ে দাড়াবে । গাড়োয়ান হলেও তে! আমাদের প্রাণে সথ্‌ আছে, বাবু। সকালবেলা এমন একটা মজার খেলা পাওয়া গেল। বাবুকে বল্লাম আমার বখুশিস। “এই 'নাও তিন টাকা। কিন্ত ফূত্তি 'ক'রে কাজ ১৫৫ : বিবাহ-বিশ্লব কর। তার পর চিনেপাড়ার এঁ গলি গুলার মধ্যে বাবু ষ্বে কখন নেমে গেলেন আমি নিজেই কিছু বুঝতে পার্লাম না।” আমি বলিলাম_-“ছঁ। দলটা চালাক বটে।” প্রিয়নাথ বলিল-চালাক বলে চালাক! আমায় একেবারে বোকা বানিয়ে দিলে» আমি গম্ভীরভাবে একটা চুরুট ধরাইয়! টানিতে লাগিলাম। নরেশ চুপ করিয়! বসিয়া ভাবিতে লাগিল। প্রিয়নাথ কার্ধ্যান্তরে গমন করিল। এ কয়দিনের কার্যের উত্তেজনায় সমস্ত কেশটা একবার ভাবিতেও পারি নাই। আজ একবার বসিয়া সমস্ত ঘটনাগুল! পূর্বাপর ভাবিয়া লইলাম। ভাবিয়া দেখিলাম, এ দলের একটা লোকের গেরেগারের উপর সমস্ত সাফল্য নির্ভর করিতেছে। আমাদিগের প্রধান উদ্দেশ্ঠ__ বালিকাটিকে উদ্ধার করা । নিবারণ ব্যতীত অপর কেহ ধৃত হইলেও সে কার্ধ্য উদ্ধার. হইবে নাঁ। অপর কাহারও বিরুদ্ধে আমাদের কোনও মোকর্দমা ছিল না। তাহাদের ধরিতে পারিলেও যে বিশেষ কিছু ফল হইবে তাহা বলিয়া বোধ হইল না। তবে একটাকে অনুসরণ করিয়া একবার যদি তাহাদের আড্ডার সন্ধান পাইতে পারি তাহা হইলে দিদ্ধিলাভের বিশেষ সম্ভাবনা । 4কন্ত এ দলের প্রত্যেকেই যেরূপ সতর্কতার সহিত আত্মরক্ষা করিতেছিল তাহাতে যে পে বিষষে সফলকাম হইতে পারিৰ, ': প্রাণে এনূপ আশা আদৌ ছিল না। নরেশ চুরুট মুখে করিয়! বোধ হয় সেই বিষয়ই চিন্তা করিতেছিল। সে ভ্রকুধ্তি করিয়া বলিল-_“আচ্ছা, ধর যেন নিবারণকে ধর্লে। তাহলেই বা কি বিবাহ-বিপ্লৰ ১৫৩ হবে? সে একটা অপরাধ করেছে। তাঁর দরুণ সাজা পাবে। তার উপর আবার কেন কন্ঠা চুরির কথাটা! প্রকাশ ক'রে শাস্তির মাত্রা বুদ্ধি করবে? সে চুপ ক'রে থাকৃবে। আমাদের কন্তা-চুরির রহস্াটা সেই পূর্বের মত জটিলই থেকে যাবে।” বলা বাঁছুল্য এ বিষয়টিও আমার মনে উঠিয়াছিল, তজ্জ্যই আমার পূর্বাপর চেষ্টা ছিল যাহাতে লোকটাকে সরকারী পুলিশের দ্বারা না! ধরিয় স্বয়ং ধরিতে পারি। একবার বন্দী হইয়া আমার আয়ত্তাধীন হুইলে তাহার পক্ষে আমার সহিত একটা সন্ধি স্থাপন কর! অসম্ভব নহে। কন্তা পাইলে গুলি মারার জন্য নিবারণকে শান্তি দিতে স্ুরেন্ত্রবাবু ততটা আগ্রহাতিশয্য দেখাইবেন না । মুরলার পরিবর্তে সে যদি তাহার স্বাধীনত| ফিরাইয়া পায়, যদি সে একবার বুঝিতে পারে যে কন্ঠ! প্রত্যর্পণ না করিলে তাহাকে হত্যা করিবার চেষ্টার জন্ত স্থরেক্্বাবু প্রাণপণে মামলা চালাইবেন, শেষে জুরির বিচারে হয়ত তাহাকে আন্দামানে বাস করিতে হইবে, তাহা হইলে সে মুরলাকেই প্রত্যর্পণ করিবে, স্বাধীনতা হারাইবে না। নরেশ আমার যুক্তিটা সমীচীন বলিয়া বোধ করিল। সে বলিল--ঠ্যা, এট! মন্দ পরামর্শ নয়। কিন্তু তা” হ'লেও তার! নুরেন্বাবুর সঙ্গে বিবাদ করতে ছাড়বে না ।” আমি বলিলাম -_. “সে পরের কথা। আপাততঃ তো! মেয়েটা পেলে লোকগুলার উপর চাপ দিতে পারি। কিন্ত এদের যে কোন রকমে হাতে পাৰ এমন তো! বোধ হয় না ।৮ অরম্রোদ্প্ে পলজিচ্ছেি জ্গলের মাচ্ছ সন্ধ্যার সময় আমরা বসিয়া বাদানুবাদ করিতেছি এমন সময় হরেন্ত্রবাবু আমিয়৷ উপস্থিত হইলেন। পূর্বদিন নিবারণের নিকট কিরূপ ভাবে প্রবঞ্চিত হইয়াছিলাম'তাহা তাহাকে বলিয়াছিলাম । তাহার পর নিখিলের খবর পাইয়াছি, সম্ভবতঃ তাহারও সন্ধান করিতে পারিব, এ সংবাদও তাহাকে দিয়াছিলাম। কাজেই তিনি গৃহে স্থির হইয়! থাকিতে পারেন নাই। সংবাদের জন্ত কলিকাতায় আসিয়াছিলেন। আমাদের জাল হইতে কিরূপ ভাবে আসামীরা পলাইম়া গিয়াছে তাহ! শুনিয়! ভদ্রলোক হতাশ হইয়া পড়িলেন। তিনি বলিলেন-_“মশায়, একটা বিষয় সিদ্ধান্ত করেছি।» আমি বিশ্বিত হইয়া বলিলাম--“কি বিষয়?” তিনি বলিলেন--“তাদের প্রস্তাবে স্বীকৃত হব। তা” হলে ত জীবনটা থাকবে আর কন্ঠাটাকেও ফিরিয়ে পাব।৮ আমি বলিলাম--“তাদের প্রস্তাবে হ্বীকৃত. হতে গেলে আপনাকে কিরূপ ক্ষতি স্বীকার করতে হুবে তাতে! বলতে পারি না।” তিনি বলিলেন-_"ক্ষতি স্বীকার ! যদি তাদের অত্যাচারের হাত থেকে রক্ষা পেতে পারি, যদি আমার উপস্থিত'ধন রেখে যেতে পারি তা হলে আমার পর ছু তিন পুরুষ পরিশ্রম না করে সুখে কাটাতে পারবে। আর যর্দি তাদের প্রস্তাবে সম্মত হই, তা! হলে আমাকে একপ্রকার র্বস্থাস্ত হতে হবে। দর্ধদা গ্রাথ-ভয়ে জীবনের অবশিষ্টাংশ অতিবাহিত করার বিবাহ-বিপ্লৰ . ১৫৮ চেয়ে দরিদ্র হয়ে মনের শাস্তিতে বাস কর! শতগুণে ভাল” মুখে এত বড় কথাটা বলিলেন বটে, কিন্ত তাহার প্রাণের ভিতর লোভে ও প্রাণ-ভয়ে একটা ভীষণ সংগ্রাম চলিতেছিল তাহার মুখে এ কথা লিখিত ছিল। ন্ুরেন্্রবাবুর সহিত নিবারণের দলের যে অর্থ লইয়া বিবাদ চলিতেছিল মে ধারণা আমার বহুদিন হইয়াছিল । যাহা হউক আজ মনের আবেগে আমাদের বিশ্বাস করিয়। স্ুরেন্তর- বাবু যে এতটা কথাও বলিলেন-__তাহাতে আশ্বস্ত হইলাম । একটা কথা বুঝিতে পারিলাম। বুঝিলাম সুরেন্দ্র বাবুর মত নিবারণও 'অর্থ-লোভী। যদি কখনও ভবিষ্যতে তাহার সন্ধান পাই নিবারণকে অর্থের লোভ দেখাইলে কাধ্যসিদ্ধি হইবে । এই অর্থের বিবাদটার মূলে একটা রুহস্ত ছিল তাহা নিঃসন্দেহ। ধীরে ধীরে সে রহস্তের মধ্যে প্রবেশ করিবার চেষ্টা করিতেছিলাম, এমন সময় আমাদের ভৃত্য আসিয়। একথণ্ড পত্র দিল। দেখিলাম পত্রথান! থানার ইন্স্পেক্টরের নিকট হইতে আসিয়াছে তাহাতে, লেখা ছিল-_ পপ্রয় সতীশ 1” *মোগলসরাই রেলপুলিশের নিকট হইতে তার আসিয়াছে । তোমার আসামী ধরা পড়িয়াছে। শীদ্ত প্রস্তত হও। আজই রাত্রে তোমাকে আমার সহিত মোগলসরাই যাত্রী করিতে হইবে 1” পত্রথানা পাঠ করিয়া বড় আনন্দ হইল। চিজ তো এক রকম নৃত্য করিয়া! উঠিলেন1 তিনি বলিলেন-_+“মশায়, যত ১৫৯ | . বিবাহ-বিপ্লীব টাকা খরচ হয় আমি দিব। হতভাগা যেন কোনও প্রকারে নিষ্কৃতি নাপায়। আমি টেলিগ্রাফ খানা পড়িলাম। তাহাতে লিখিত ছিল--44১0159050 06016901916 00778 51191) 1060 8080107.৮ অর্থাৎ “ধৃত হইয়াছে, অপরাধ অস্বীকার করিতেছে, সনাক্ত করিবার জন্ সত্বর আন্মুন।” টেলিগ্রাফটা পাঠ করিয়া আমি একেবারে হতাশ হইলাম”। * ভাবিলাম নিবারণ কখনই ধর! পড়ে নাই। আবার একট! কি খেল! খেলিয়াছে। নরেশ ও স্থুরেন্্র বাবু আমার এ যুক্তি অনুমোদন করিল না। তাহারা বলিল-__“ধরা পড়লে সব আসামীই অস্বীকার করে। এবার বাছাধন জালে পড়েছেন।” একবার ভাবিলাম হইতে পারে। ভগবান পাপীর শীন্তিবিধান করিয়াছেন। আমাদের প্রিয়নাথকে মে কখনই চিনিতে পারে নাই। এ ক্ষেত্রে তাহার পক্ষে জালে পড়া মোটেই অসম্ভব নহে। যাহাই হউক যখন বারো ঘণ্টার মধ্যেই এ বিষয়ে সত্য কথ! জানিতে পাঁরা যাইবে, তখন আর এ, বৃথা মাথা ঘামাইয়। কি ফল? চতুদ্দস্প পল্লিল্ছেদ বন্ধন-ঘোপ আসামীটির মুখে গোঁফ দাড়ি ছিল না। নিবারণের সহিভ তাহার সাদৃশ্ত এই অবধি। ইহা ব্যতীত ছইজন লোকের মধ্যে আকুতি ও. প্রক্কতির ঘতট! পার্থক্য থাকিতে পায়ে মোগলসরাই বিবাহ-বিপ্লীব , ১৬০ ষ্টেশনের বন্দী ও নিবারণের মধ্যে তাহা ছিল। নিবারণ লম্বা, এ ভদ্রলোক খর্ধাকৃতি। নিবারণ কৃষ্ণবর্ণ, ইনি গৌরবর্ণ। ই'হার দিব্য নধর চেহারা, মুখে সৌম্যভাব। বন্দী হইয়া ইনি প্রথমে চাঞ্চল্য দেখাইয়াছিলেন। কিন্তু রেলওয়ে পুলিশ তাহাকে অতি যত্নে ইন্ন্পেক্টরের গৃহে রাখিয়াছিল এবং তাহার প্রতি ভদ্রোচিত ব্যবহার করিয়াছিল বলিয়া আমাদের আগমনে তাহাকে বিচলিত হইতে দেখিলাম না। একটা ভ্রম হইয়াছে বুঝিয়া আমরাও যেমন হাঁসিতেছিলাঁম তিনিও তেমনই হাসিতেছিলেন। অনুসন্ধানে ,জানিলাম, ভদ্রলোক কলিকাতার কোনও প্রসিদ্ধ বিদ্যালয়ের প্রধান পণ্ডিত। ছুটি লইয়া বারাণসী যাত্রা করিয়াছিলেন । আমি নিবারণের আকৃতি বর্ণনা করিয়া তাহাকে জিজ্ঞাসা করিলাম সেরূপ কোনও লোক তাহার সহযাত্রী ছিলেন কি না? তিনি বলিলেন-_“হ্্যা, ছিলেন।” আমি বলিলাম--“আচ্ছা, টিকিট কিনে আপনি টিকিটখানা কোথায় রেখেছিলেন ?” ভদ্রলোক খুব হাসিলেন। হাসিয়া বলিলেন--“পপ্ডিত হলেই লোকে একটু মুর্খ হয়। বজ্র আটন হলেই ফক্কা গেরোর ব্যবস্থা ।” আমি বলিলাম__“তবুও টিকিটখানা কোথা রেখেছিলেন, শুনি।” তিনি বলিলেন__"আমার চামড়ার মনিব্যাগে রেখে মনিব্যাগটা একটা ছোট কাপড়ে জড়িয়ে রেখে দিয়েছিলাম 1” আমি জিজ্ঞাসা করিলাম-_“আপনাদের কোথায় কোথায় টিকিট চেক হয়েছিল মনে আছে?” তিনি বলিলেন-_“রাত্রে ছুই এক স্থানে টিকিট চেক হয়েছিল, অত লক্ষ্য করিনি।৮ রেলওয়ে ০০ বিবাহ-বিপ্লব পুলিসের ইন্ম্পেক্টর আমাদের সহিত তদন্তে যোগ দিতেছিল। সে বলিল-_“বর্দমানে প্রথম টিকিট চেক হয়।” আমি বলিলাম __ “আচ্ছা, টিকিটখানা টিকিট কলেক্টরের হাতে আপনি নিজে দেন্, না কোন লোকের মারফত দেন।” পণ্ডিত মহাশয় একটু চিন্তা করিয়া বলিলেন--“এখন যাই আপনারা কথাট! জিজ্ঞীস৷ করলেন আমার মনে হচ্ছে প্রথম বারটা আমি বাঙ্কের উপর শুয়েছিলাম। আমাকে সেই গোঁফ দীড়ি কামানো লোকটি উঠিয়ে বল্লেন, মশায়, আপনার টিকিট দেখতে চাইছে। আমি শুয়ে ১৬৯ . শুয়ে তার হাতে টিকিটথান। দিলাম । পরীক্ষার পর মে আমাকে টিকিটখানি ফেরত দিলে । কোনও রকমে ভ্রম হবার ভয়ে আমি একবার টিকিটখানা পড়ে দেখলাম, ঠিক বেনারফের টিকিট । আমি টিকিটথানা আবার কোমরে জড়িয়ে শুলাম” আমার সঙ্গী _কলিকাতার ইন্স্পেক্টর হাসিয়! বলিল_-“এই অবসরেই বদ্‌লে . নিয়েছ।”» রেলওয়ে ইন্স্পেক্টর হাপিয়৷ বলিল _*স্থ্যা, এ অবসরেই ক বদলেছে।” আমি বলিলাম_“কি রকম ভয়ঙ্কর লোক দেখলেন |% উহার দুইজনে ভ্রকুঞ্চন করিল। আমি পণ্ডিত মহাশর়কে আবার জিজ্ঞাসা করিলাম, টিকিট দেখাইবার পূর্বের তিনি কোথায় যাইবেন তাহা সে লোকটি জানিত কিন!। পণ্ডিত মহাশয় বলিলেন__“মহাশয় বুঝতেই তো৷ পারচেন আমরা সাই বাঙ্গালী আরোহী ছিলাম সুতরাং বালি পার হবার . পূর্বেই কে কি দিয়ে ভাত খেয়ে ট্রেণে উঠেছে সে সম্বন্ধে কথা বার্তী হয়ে গেছে। কাশীর যাত্রী কেবল তিনি ও বিধাহ-বিপ্লব ১৬২ আমি ছিলাম ঝলে দু'জনের আলাপটা একটু বেশী মাত্রায় হ/য়েছিল।” আ।--তিনি কোথা নামলেন বলতে পারেন? প।--তা বলতে পারি নে। গয়া ষ্টেশন থেকে গাড়ি ছাড়লে আমার ঘুম ভেঙ্গে যায় । অপর দুজন আরোহী নেমে গিয়েছিল। তাদের মধ্যে একজন হাজারিবাগ যাবেন জানতাম। ইনি ষে কোথায় নেমে গেছেন তা বলতে পারি নে। রেল-ই ।-_-আর দে কথা বলাও শক্ত হবে। তার কাছে কাশীর টিকিট আছে কিনা দেতে! আর মাঝের ষ্টেশনে টিকিট দেবে না। আর লোকটা টিকিট না বদ্লালেও পারত। সেই টিকিট দেখিয়েও মাঝের ষ্টেশনে নেমে পালাতে পারতো আমি বলিলাম, না মশায়। সে ঠিক জানত না আমরা কোথায় টেলিগ্রাফ কর্ব! কাজেই টিকিট ব্দলানো তার পক্ষে একান্ত আবশ্তক ছিল এবং যথা-সম্ভব প্রথম ষ্টেশনেই কাজটা সেরে নিয়েছিল। ইন্সপেক্টর ছইজন আমার যুক্তির সমীচীনতা বুঝিল। বল! বাছুলা, সে পঞ্ডিতটিকে তখনই মোচলকা৷ লইয়া ছাড়িয়া দেওয়া হইল। তীহার নিকট আমরা ক্ষমা প্রার্থনা কারলাম। | তিনি যাইবার সময় বলিলেন_-“মশীয় এক রকম হ'ল তাল। 'আমার কুস্ত রাশি। এ সময় একটা বন্ধনযোৌগ ছিল কেটে গেল। পাপের বোঝা নিয়ে কেহ বিশ্বেশ্বরের দেখা পায় না । আ্রামার যে টুকু পাপ ছিল প্রায়শ্চিত্ত হয়ে গেল। আর 'বনযোরোহও ফ্জাডাট! কেটে গেল।” | র ১৬৩ | _. বিবাহ-বিপ্রৰ আমর! অত্যন্ত লঙ্জিত হইয়! ব্রাহ্মণকে বিদায় দিলাম তাহার পর আমাদিগের পক্ষে কি কর! কর্তব্য সে ব্যয় একটা! পরামর্শ চলিতে লাগিল। সকলে সিদ্ধান্ত করিলাম যে, একবার গয়ায় অনুসন্ধান কর! উচিত। কলিকাতার ইনম্পে্টর বুলিল”_ "হ্যা গয়া সহরটাও আমি দেখিনি। একবার কোম্পানীর খরচায় বেড়িয়ে যেতে ক্ষতি কি?” পঞ্দল্পে পন্িচ্ছে গুহাবিবাদ্‌ রেলওয়ে ইনস্পেক্টরের নিকট হইতে গয়ার পুলিশের উপর পত্র লইয়া আমরা গয়ায় পৌছিলাম। সেখানে ছুই তিন দিন সমস্ত সহরময় ভ্রমণ করিয়াও কোনও সন্ধান পাইলাম না। কাজেই ইন্সপেক্টর কলিকাতায় চলিয়। গেল। আমি অপর একটা! কাজের সন্ধান পাইয়া সে স্থলে আরও ছুই চারি দিন থাকিতে ইচ্ছা করিলার্ম। গয়ায় পৌছিবার প্রায় সাতদিন পরে সন্ধ্যার সময় রামশীলা পাহাড়ের নিকট বেড়াইতেছিলাম। হঠাৎ বোধ হইল কে যেন আমার অনুসরণ করিতেছে। গয়ায় বদমায়েসের অভাব নাই। লোকগুলাকে দেখিবার জন্য পাহাড়ের নীচে যেখানে পিঁড়ি আরন্ত হইয়াছে, আস্তে আস্তে ঘুরিয়া গিয়া সেই স্থলে দীঁড়াইলাম | ধীরে ধীরে দুইটা লোক আসিয়! সিঁড়ির উপর বমিল। তাহাদের বিবাহ-বিপ্লব' ১৬৪ মুখ দেখিতে পাইলাম না । কথাবার্তা শুনিয়া বুঝিলাম, তাহারা বাঙ্গালী। একজন জিজ্ঞাসা করিল--দকোথ! গেল?” দ্বিতীয় ব্যক্তি বলিল--“এইথানে যে বেড়াচ্ছিল।” প্রথম ব্যক্তি বলিল-_ “আচ্ছা আমি জানি ও কোথা থাকে । নাহয় কাল বাপায় যাব এখন । কিন্তু এ অপমানের প্রতিশোধ চাই ।” দ্বিতীয় ব্যক্তি বলল--“নিশ্চয়। নিবারণ কি এটা ভুললেন যে আমি না থাকলে সে এতদিন ধরা পড়তো । সে দিন যশোরে তো ধরা পড়েছিল। আমি কেবল হাত ধরে টেনে বোকা গোয়েন্দাকে গাড়িতে উঠতে দিলাম না” প্রথম ব্যক্তি বলিল --আর অমন মেয়েটাকে বন্ধ করে রেখে একেবারে শুকিয়ে ফেলেছে” আমি তো এ রকম কথাবার্তার কিছু অর্থ বুঝিতে পারিলাম না। তাহারা আপনাদের মধ্যে আমাকে বোকা গোয়েন্দা বলিয়া ডাকিত। হাঅদৃষ্ট ! লোকগুলা আমায়, আবার নুতন করিয়া নির্বোধ প্রমাণ করিবার জন্য বন্দোবস্ত করিতেছিল, কি বাস্তবিক তাহাদের সহিত নিবারণের কলহ হইয়াছিল, মে কথা বুঝিতে পারিলাম না । অন্ততঃ এরুটা থবর পাওয়া গেল, দলের কতকগুলা লোক এ স্থলে আছে। আমি অপর দিক দিয়! বাহির হইয়া ঘুরিতে ঘুরিতে তাহাদের সম্মুখে আসিয়া পড়িলাম। কোজাগরী পুণিমা রজলী। গোয়েন্দা হইলেও টাদের আলোতে মুগ্ধ হইলাম। ইন্দু-কিরণে দেখিলাম পাপ-মলিন দুইজন দুর্বৃত্তের মধ্যে একজন অপরিচিত ও অপর ব্যক্তি অবিনাশ ওরফে নিখিল । আমাকে দেখিয়াই তাহারা উঠিল। আরম সঙ্গে ১৬? ' বিবাহ-বিপ্লব সঙ্গে রিভলভার লইয়া ঘুরিতাম। হাঁতের যন্ত্রট তাহাদিগের প্রতি দেখাইয়া বলিলাম--"দেখ বাবু চালাকি নয়!” গম্তীরভাবে নিখিল বলিল--“ন! মশায় লড়ায়ের ইচ্ছা! নেই। আর লড়াই করলে আপনি আমাদের সঙ্গে পারেন না। তা বারম্বার সপ্রমাণ করে দিয়েছি এখন একট! পরামর্শ আছে। যদি আমাদের বিশ্বাস করেন তো একটা উপকার করতে পারি।” আমি বলিলাম_-”তোমাঁদের বিশ্বাস করব এত মূর্খ তো নহি।» নিখিল বলিল__প্চলুন পুলিসের ইন্স্পেক্টরের সঙ্গে গিয়ে কথাবার্তী কয়ে আসি। যা কিছু কথা তার সম্মুখে হবে 1” বাস্তবিক মনে আশার সঞ্চার হইল। অদৃষ্টগুণে বিভীষণ জুটিয়াছিল। বাঙ্গালীর সমাজের ইহা সনাতন ধর্ম । গৃহ বিবাদ। হাঃ! হাঃ! রাজা নিবারণচন্ত্র এবার কোথা যাবে? স্বোড়স্ণ সন্সিচ্ছেছ্‌ অবশেষে এক্ষেত্রে কি করা কর্তব্য? অকপট বিশ্বাস না গোয়েন্দা- সুলভ সন্দেহ? সন্দেহ করিয়া ছাড়িয়া দিলে লাভ কি? বিশ্বাস করিয়| কথাবার্তী কহিলে বিপর্দেরই বা সম্ভাবনা কোথা ? তাহার! আমার সহিত পুলিশ ষ্টেশনে গিয়া সকল কথা বিবৃত করিতে ্বীকৃত হইল । মিথ্যা হইলে এরূপ বাবহারে তাহাদের কি ইষ্ট হইতে পারে ভাহ! বুঝিতে পারিলাম না। কিন্তু পুলিশ কর্মচারীর বিধাহ-বিপ্লব ১৬৬ সমক্ষে তাহাদের সহিত কথাবার্তা আমার নিজের ইষ্ট সিদ্ধি-সম্স্থ অন্তরায় হইতে পারে। ন্থরেন্ত্র বাবুর কন্ঠা-চুরির বিষয়টা! গোপন রাখা লোকতঃ ধন্মতঃ আমাদের প্রধান কর্তব্য । .আমাকে একটু ইতস্ততঃ করিতে দেখিয়! নিখিল বলিল--সতীশ বাবু তাতেও যদি বিশ্বাস না হয় তো বলুন আপনার বাসায় যাই। উত্তম কথা! ইহাতে আমার আপত্তি করিবার কিছু ছিল না। আবার একবার তাহাদিগকে আপাদ-মস্তক নিরীক্ষণ করিলাম । বাহিক আকৃতি দেখিয়া তাহাদের মনোভাব কিছু বুঝিতে পারিলাম নাঁ। আমি বলিলাম__“বেশ কথা, আমার বাস! বেশ নির্জন, সেই খানেই চলুন কথাবার্তা হবে|” নিখিল বলিল-_-“মনোযোগ দিয়ে আমাদের কৃথা শুনতে হবে । মুরলা সাতদিন আগে কোথ! ছিঃ সে সংবাদ জানি। কিন্তু নিবারণকে ধরবার সময় আমরা সামনে যাব না। আপনাকেও পরামর্শ দিচ্চি যে আপনিও--৮ আমি বাধা দিয়া বলিলাম--“কেন ?% নিখিল বলিল_-“কেন? পে এখন মরিয়! হ'য়েছে। সরকারী পুলিশের হাত দিয়েই তাকে, গেরেপ্তার করিয়ে দেবেন।” আমি একটু হাসিলাম। * বলিলাম, _-“আমাকে যতট। বোকা ঠাওরান আমরা তত বেশী বোক। নই। আপনারা তো ঠিকানাট। দিন তারপর যা” হয় হ'বে।” নিখিল বলিল-_“কিন্ত একটা সই চাই। আগে আপনাকে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হতে হবে, তার পর আমরা সব কথা বল্ব। যে সব কথা বল্র,, তা?তে আমাদেরও অনের গুণের কথা, বুঝতে তো পারচেন ?” নিখিল হাদিল। আমি বলিলাম--“তা জানি সবাই একদলের, ১৬৭ বিবাহ-বিপ্লিব মায় সুরেনবাবু অবধি।” নিখিল বলিল--“বোঝেন ত। বল্ছিলাম কি, আমাদের কাহিনী শুন্তে শুন্তেই হয়তো আপনার লোভ হবে। আপনি পুলিশ ডাকিয়ে পাঠিয়ে আমাদের সোপর্দ করে দেবেন।” আমি বলিলান--“কেন আপনারা তো নিজেরাই থানায় যেতে প্রস্তুত হয়েছিলেন ।” নিখিল বলিল-_-“পুলিশে গেলে কি আর এত বেশী কথ! বলত্ম্‌।” মুরারপুরে আমি বাম করিতেছিলাম। একটি গলির ভিতর বাপা। বেশ নির্জন স্থান। আমি ন! দেখাইয়া দিলে নিবারণের দল আমার সন্ধান পাইত না। তিনজনে গল্প করিতে করিতে বাসায় আমিলাম। বেহারী ভৃত্য দরজী খুলিয়া দ্িল। আমি তাহাদিগকে ঘরে বসাইয়া' দরজা বন্ধ করিয়া দিলাম। 'প্রাণটা একবার কীপিয়! উঠিল! মনকে প্রবৌধ দিয়া বলিলাম--“ভয় কি? সঙ্গে তো একটা মারাত্মক যন্ত্র আছে।” উভয় পক্ষই ক্ষণকাল স্থির থাকিলাম। নিখিল বলিল,--“ত হ'লে প্রতিশ্রুত হলেন? কথ! দিলেন ?” আমি অভয়দান করিলাম। তাহার পর নিবারণকে ধরাইয়া দিলে আমি তাহাদিগকে কি পারির্োষিক দিব তাহা স্থির হইল। মুরলার উদ্ধারের জন্য অবশ্ত বিভিন্ন পারিতোধিক। নিখিল বলিল-_-“তবে প্রথমে নিবারণকে ধরিয়ে দিই। এই নিন।” যাছুকরের মত নিখিল হাত নাড়িল। দরজা খুলিয়া! ঘরে নিবারণ প্রবেশ করিল । মুখে এক মুখ হাসি। হাতে একটা রিভলভার। আমি চমকিত হইলাম। উঠিয়া দীড়াইলাম। রিভলভার তুলিলাম।” ৪ুদ্শ্শে সল্িচ্ছেছ্‌ বন্দী নিবারণ বলিল--“থাঁক্‌ থাক । কথায় বলে বাঙ্গালীর হাতে অস্ত্র স্থির হ'ন। আমি ভয়ে, বিশ্ময়ে, ক্ষোভে জলিতেছিলাম। €সেই দিন যে আমার জীবনের শেষ দিন, তাহা! বুঝিতে বড় বিলম্ব হইল নাঁ। কিচাতুরী! কি কুটবুদ্ধি! কি কুক্ষণে তাহাদিগকে বিশ্বান করিয়াছিলাম ? হায়! হায়! পরের জন্ত কেন এ তীষণ দস্থাদলের সহিত শক্রতাচরণ করিলাম । কিন্ত মৃত্যুর পূর্বে অন্ততঃ পৃথিবীর একটা ভার দূর করিয়া যাওয়া উচিত। কম্পিত- হস্তে রিভলভার তুলিলাম। নিবারণের দল হাসিয়া উঠিল। তাহার! বলিল,_-ণঠক্‌ ঠক্‌ ক'রে হাত কীপচে যে। ওতে কি লক্ষাঠিক হয়। আগে একটু ঠাণ্ডা হ'ন তার পর সমরসাধ মেটাব।” আমি নির্ধীক হইয়া বমিলাম। ভূমিতে বন্দুক ফেলিয়৷ ছুই হাতে মুখ লুকাইলাম ৷ হাসিবার কথা কিছু নাই। আমার অবস্থায় পড়িলে শ্বয়ং নেপোলিয়ান-বিশ্ববিজয়ী ,আলেক- জান্নারও কীদিত।__ইা৷ কীদিয়াছিলাম! নিবারণ সাত্বনী। দিয় বলিল-__“ছিঃ! খোকা কেঁদ না। সত্যিই'কি আর তোমায় মার্ব?” আমি তাহার মুখের দিকে চাহিলাম। দে বলিল__ প্না না তোমার সঙ্গে আমাদের শত্রুতা নেই। বলতো কেন: আমাদের পিছনে ঘুরে বেড়াচ্চি?” আমি একটু প্রক্কতিস্থ হইয়া -বলিলাম__প্ধর্থের জন্যে, সথবিচারের জন্তে-* নিবারণ হাদিয়া ১৬৯ বিবাহ-বিপ্লুব বলিল --প্বাঁজে কথা! পেটের জন্তে। সকলে হাসিল। আমি তাহাদিগের বন্দী। কাজেই মৌনাবলম্বন করিলাম। নিবারণ বলিল-_“্না, না হাসির কথা নয়। যদি বাস্তবিক আপনি ধর্দ্ের জন্ত এই কাজে প্রবৃত্ত হয়ে থাকেন তা হলে কি আপনার আমাদের সঙ্গে থাকা উচিত নয়? সবই তো জানেন।” আমি এ কথার কোনও প্রত্যুত্তর দিতে পারিলাম না। তাহার মুখ দেখিয়া বোধ হইল সে প্রাণের ভিতর হইতে কথা কহিতেছে। আমি তাহার কথার উত্তর না দিয়া বলিলাম,__"আমাকে নিজের বাসায় এ রকমে বন্দী করবার কি উদ্দেশ্ত ?” নিখিল বলিল--- প্সতা কথা শুনবেন?” আমি বলিলাম ।--হ11» নিবারণ বলিল-_খুন করিবার জন্য ।৮ আমি শিহরিয়া উঠিলাঁম। নিবারণ পকেট হইতে একটা হাইপোডারমিক সিরিঞ্জ ও এক শিশি ওষধ বাহির করিল। নিখিল একখান ছুরি বাহির করিল? তয়ে আমার সর্ধ শরীর কীপিতেছিল। মুহূর্তের মধ্যে সমস্ত »জীবনের ইতিহাসটা একবার স্মরণ করিয়া! লইলাম। বাল্যকালে মাতার ক]সুন্দীর হাড়ি হইতে কাসুন্দী, পাখীর বাস! হইতে ডিস্ব প্রভৃর্তি যত রকম পদার্থ চুরি করিয়াছিলাম, যত মিথ্যা কর্থ কহিয়াছিলাম, যত পাপ করিয়াছিলাম সমস্ত স্মরণ করিলাম," যমপুরীর বিভীষিকা, যমদূতের তপ্ত কটাহ, তণ্ু মুষল মনের মধ্যে তাথিয়া তাখিয়। করিয়া নৃত্য করিতে লাগিল। নিবারণ কোন কথা বলিল না। তাহার চক্ষু হইতে অগ্রিন্ফুলিঙ্গ বাহির হইতেছিল-_-আমার কাতর দৃষ্টিতে তাহার পাঘাণ প্রাণ মোটেই বিবাহ-বিপ্রব ১৭৩ গলিল না। নিখিল বলিল--“এই তিন রকম মৃত্তার পথ আছে। এই বিষ এই পিচ্কিরি দিয়ে রক্তের মধো মিশিয়ে দিলে” আর আমি চোখে কিছু দেখিতে পাইলাম না। অজ্ঞান হুইয়৷ মেই স্থানে লুটাইয়া! পড়িলাম। অগ্ঠাদস্ণ সল্িচ্ছেচ প্রাণ ভিক্ষা? ৃচ্্ণভঙ্গের পর নিবারণ বলিল--তোমায় মারব না। আজ থেকে দাত দিনের মধ্যে সুরেন্ত্রকে একবার বাছতে বলব সে কি মৃত্যু চাক়। যেরূপ মোলায়েম ভাবে লোকে পুন্র কন্ঠার বিবাহের প্রস্তীব করে, নিবারণ সেইরূপ ভাঁবে এ প্রস্তাব করিল। আবার তাহার কুৎদিত মুখ স্বাভাবিক ধীর ভাব ধারণ করিল। তাহার! সদলবলে উঠিল। হঠাৎ নিবারণ ফিরিয়া বলিল_“তোমাকে দয়া করলাম তোমার মনের অবস্থা দেখে। কিন্ত স্থুরেন্তরকেঞ্ আমি সাহস পাইয়া বলিলাম--এ কলহের কি একটা নিষ্পত্তি হয় না। আমাদের দ্বারা কি উভয় পক্ষের একটা বন্দোবস্ত অর্থাৎ মিট্মাট্‌ _ বুঝছেন ত।” কঠম্বর কাপিতেছিল। নিবারণ বসিল। নিখিল ও অপর ব্যক্তিও বদিল। গ্রাণটা আবার শিহরিল। নিবারণ একটু চিন্তা করিয়! বলিল--“হ'তে পারে। আর কতদ্ধিন এ ১৭১ | বিবাহ-বিগলী ভাবে কাটাব1” আমি বলিলাম-গ্যা। সকল পক্ষের শান্তি!” নিবারণ বলিল-_“দেখুন, কেবল এক মুহূর্তের জন্ত আত্মসংযম হারাইয়াছিলাম বলিয়| এত লুকোটুরি এত চুটাুটি। যদি মে দিন পা করিয়া স্থরেন্্রকে গুলি না মারি তাহা হইলে আপনারা আমার কিছু করিতে পারিতেন না। আপনাদের চক্ষের উপর বসিয়া যাহা ইচ্ছা আন্ঞা করিতাম__আমার গ্রাপ্য গণ্ডা গাইতাম।” আমি সে কথার প্রতিবাদ করিলাম না। সে বলিল-_“মেয়েটাকে হাত করলাম। রেনু নিশ্চয় বশে আম্ত। না হয় শেষে খুন করতাম 1» আমি বলিলাম--“এখন কি হ'লে সকল দির বজায় থাকে ?” নিবারণ বলিল--“সুরেন্্র তার মেয়ে নিক আর আমাদের প্রাপ্া_” আমি বলিলাম_'গ্রাপাটা কি?” নিবারণ বলিল--“আবার চালাক? কেবল দয়া করে আজ গ্রাণ দিয়েছি। কিন্তু আবার যদি বিরক্ত কর তাহ'লে_ আমি বলিলাম--“বান্তবিক কিছু জানি না” নিবারণ তাহার জীবনের ইতিহাস বলিল। আমি দেরূপ আবেগময়ী ভাষায় বলিতে পারিব না। . সংক্ষেপে বলিতেছি। উন্ননিৎস্প পন্বিচেষ্ষল্‌ নিবারণের ইাতিহাক্দ নিবারণ সুরেন্দের বাল্যবন্ধু! বাঁল্যাবধি দুইজনে অন্তরঙ্গ বন্ধু। তাহাদের অকপট সৌহার্দ্য, বিমল ভ্রাতৃভাব এক মুখে নহে, শতমুখে প্রশংসিত হইত । বয়োবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে তাহাদের ঘনিষ্ঠতা বাড়িতে লাগিল। উভয়ের এক আশা, আজীবন পরস্পর পরম্পরকে ভ্রাতৃভাবে বাঁধিয়া রাখিবে, ভ্রাতায় ভ্রাতায় যেমন যৌথ পরিবারে বাস করে, ইহারা তেমনি একসঙ্গে থাকিবে । ইহাদের জীবনের এই অভিলাষ, এই আকিঞ্চন। যৌবনের দ্বারে উপনীত হইয়া তাহাদের অশৈশব প্রণয় মধুর সৌহস্তে পরিণত হইল। সামান্ত অর্থ লইয়া বাঙ্গালাঁদেশ পরিত্যাগ করিয়া! তাহারা পশ্চিমে অর্থোপার্জন করিতে ছুটিল। ছুই বন্ধুর পারিবারিক জীবন তাহাদের এ সাধু সঙ্কর্পে সহায়তা করিয়াছিল। ন্থুরেন্ত্রের সহিত তাহার আত্মীয়-স্বজনের তেমন সম্প্রীতি ছিল" না। আর নিবারণচন্ত্র অসমসাহসিক, ডানপীটে ছেলে) ১,কাহারও কর্তৃত্বাধীন থাকিয়া! জীবনধারণ করিবে, সে শিক্ষা সে প্রবৃত্তি তাহার আদৌ ছিল না। তাহাদিগের প্রথমোদ্মূ কতকটা সাফল্যলাভ করিয়াছিল। কিন্তু অর্থাগমের সহিত তাহাদিগের অর্থপিপাসা উত্তরোত্তর বর্ধিত হইতে লাগিল। এদেশে ব্যবসায় বাণিজ্য করিতে গেলে সামান্ত একটু কথার হের্ফের্‌ করিতে হয়, মনকে একটু আঁখি ঠারিতে হয়, বিবেকের সাহত একট! বন্দোবস্ত , ১৭৩ ূ _. বিবাহ-বিপ্লব করিতে হয়। ইহারা অবন্ত এ সকল কার্ধ্য করিত। তৰে ছগ্মলের সহিত তাহাদিগের পরিচয় হইবার পূর্বে তাহার! অপাধুতা আশ্রয় করে নাই। আমরা যাহাকে মেঘরাজ বলিয়া জানিতাম তাহারই নাম ছগ্মল্‌। ধূমকেতুর ন্যায় ইহাদিগের জীবনাকাশে ছগ্মল উদ্দিত হহল) ছুই বন্ধুর স্থলে এখন তিন বন্ধু জুটিল; তিনবন্ধুরই হৃদয়ে এক প্রবল বাসনা) কিসে অর্থ মঞ্চয় করিবে, কিরূপে প্রভৃত ধনের অধিস্বামী হইয়া সুখে কালাতিপাত করিবে। কিন্তু ছগ্মলের সহিত ইহাদগের পরিচয় হইবার পরেই চঞ্চলী কমলা ইহাঁদগের নিকট হহতে কিছুদিনের জন্য বিদায় লইলেন। কানপুর ছাড়িয়া বন্ধুত্রয় জব্বলপুরে আনিয়া একটা কারবার খুলিয়া 1দল। নামে ছগ্মল্‌ কারবারের মালিক হইল বটে কিন্তু ইহার লাভ লোকৃননে তিনজনের সমান . ংশ রহিল। এবার তাহারা ধন উপাজ্জন করিল বটে, কিন্ত তাহাদের অধঃপতন পূর্ণমাত্রায় আরন্ত হইল। বুদ্ধিট ছগ্মলের। কি উপায়ে তাহারা এবার অর্থোপার্জন করিল বলিতেছি। তাহার! কাপড়ে?দোকান খুলিল। প্রথমে মহাজনদিগের নিকট হইতে ছুইদিনের সর্তে কাপড় লইত, ছুই দিন গত হইতে না হইতেই মহাজনের ্ধণ পরিশোধ করিয়া দিত। একমাসের মধ্যে ছগৃমলের ব্যবসার বেশ প্রতিষ্ঠা জন্মিল। মহাজনদিগের নিকট তাহাদের সুনাম ঘোধিত হইল। এখন তাহারা পনের দিনের ধারে মাল পাইতে আরম্ত করিল। মহাজনের নিকট হইতে মাল আনিয়া দেই মাল কম দামে বেচিয়! ছগ্মল্‌ টাকা তুলিতে বিবাহ-বিপ্রব | ১৭৪ লাগিল এবং মহাজনের খণ পরিশোধ করিল। এক মহাজনের মাল বেচিয়৷ অপর মহাজনের খণ পরিশোধ, একের টুপি অন্যের মাথায় দিয়া ব্যবসায় জটিল করিয়া তুলিল। শেষে রোক্‌ ৩০,০০০ টাক! বাজার মারিয়া তাহার৷ জববলপুর ত্যাগ করিয়া ধানবাদের নিকট কয়লার থনি ক্রয় করিল। এখানে আসিয়া স্ুরেন্ত্র ও নিবারণ আবার একবার সৎপথে থাকিয়া অর্থোপার্জন করিতে বদ্ধ-পরিকর হইল | ভগবানও তাহাদিগকে দয়া করিলেন। সে সময় সুরেন্র ও নিবারণ উভয়ে স্ত্রী লহয় একবাসায় থাকিত। ছগ্মল্‌ বিভিন্ন এক বাসায় থাকিত। সুরেন্দ্র সেই স্ময় শ্বশুরের সহিত কলহ করিয়া স্ত্রীকে সঙ্গে লইয়া যায়। এই স্থলেই মুরলার জন্ম হয়। নিবারণের মস্তানাদি জন্মিল না, কিন্তু তাহাতে তাহার প্রাণে কোনরূপ অশান্তি ছিল না। কেন থাকিবে? সুন্দরী মুরলা সুরেন্ত্রের যেমন স্নেহের সামগ্রী তাহারও তেমনি স্নেহের সামগ্রী হইয়া উদ্ভিল। উভয়ে মিলিয়া মুরলার ধনীগৃহে বিবাহ দিবে, মুরলার ভবিষ্যৎ স্বামীর হস্তে তাহাদের ব্যবায়ের ভার দিয়া তাহারা নিশ্চিন্ত হইবে, এইরূপ কত নিরর্থক সুখ-কল্পনায় তাহারা তখন কালাতিপাত কফিরিত, ভাবিত অসছুপায়ে যে অর্থ উপার্জন করিয়া নৃতন কারবার আরম্ভ করিয়াছে, সে টাকা তাহার! পরে দরিদ্রকে দান করিয়া পাপের প্রায়শ্চিত্ত করিবে। ইহারা ছুইজনে যে মনের সুখে, ছইতিন বখসর- অতিবাহিত করিল, সে সখ অর্থলোলুপ ছগৃমলের ছিল-না। বোধ হর, কুবেরের ধন পাইলেও তাহার অসীল্ল ১৭৫ * বিবাহ-বিপ্লাক আকাক্ষার নিবৃত্তি হইত না। অপরকে প্রবঞ্চিত করিয়া অর্থোপার্জন করিতে না পারিলে যেন তাহার তৃপ্তি হইত না! নিখিলচন্ত্র তাহাদের কয়লার খনিতে চাকুরি করিত। নিখিলের সহিত ছগ্মলের বন্ধুত্ব দিন দিন বাড়িতে লাগিল। সেই বৎসর দুর্ভাগ্যক্রমে নিবারণের পত্বীবিয়োগ হইল। যে উদ্দীপন! প্রাণে লইয়া সে কার্ধা করিতেছিল, তাহা ভূমিসাৎ হইল । ছগৃমল্‌ ও নিখিলের সহিত নিবারণ মিশিল। সুরেন্দ্র একাকী কেমন করিয়া তাহাদের ষড়যন্ত্রের বাহিরে থাকিবে। সেও তাহাদের সহিত একমত হইল । এবার প্রবঞ্চন! ছাড়িয়া তাহারা দন্যুতা করিতে কৃতসন্কল্প। কোলিয়ারির সন্নিকটে, এক বিধবার স্নিকট প্রায় ছুই লক্ষ টাকা! ছিল। অর্থপিশাচ চারিজন সিদ্ধান্ত রিল, তাহার ভরণপোষণের জন্য সামান্ত অর্থ ফেলিয়া রাখিয়। বাকী দম্পত্তি হস্তগত করিতে পাপ নাই । তাহার! বিধবার সম্পত্তি লুষ্ঠন করিল। এখন তাহারা চারি লক্ষ টাকার মালিক। কে আসর পরিশ্রম করিতে চায়? বিশেষ নিবারণের পৃথিবীতে মোটেই কোন মমক্কার বসত ছিল না। তাহার! প্রায় সমস্ত অর্থ স্রেন্দ্রে নিকট "গচ্ছিত রাখিল। সুরেন্দ্র সেই যৌথ সম্পত্তি লইয়া দেশে চলিয়! গেল। ইহারা তিনজন পশ্চিমের নানা স্থানে ঘুরিল। সুরেন্দ্র অর্থ পাঠাইয়া দিত) ইহারা আপনাপন বামনা ও প্রবৃত্তি নুসারে স্থখ উপভোগ করিতে লাগিল। ছগ্মলের _ক্রোরপতি হইবার বাসনা! মিটিল না) সে জুয়া খেলিতে আরম্ত করিল, আর 'কার্ধ্যাভাবে নিবারণও তাহার সহিত যোগ দিল। বিবাহ-বিপ্লব | ১৭৬. এবার তাহারা কিঞিৎ অধিক মাত্রায় অর্থের অপব্যয় করিতে লাগিল। তাহাদের ভাগারী স্বরেনত্রনাথ তাহাদের দাতক্রীড়ার জন্য অর্থ মরবরাহ করিতে চাহিল না। পরম্পরের মধ্যে একটা কলহের স্থট্টি হইল। নে আজ দেড় বংসরের কথা। নুরেন্ত্রনাথ দেশ ছাড়িয়া কোথায় পলাইল, নিবারণের দলের কেহই তাহার দন্ধান পাইল না। তখন তাহাদের মধো একটা মহা হলস্ল পড়িয়া গেল। তাহাদের সঞ্চিত অর্থের অংশ আদায় করিতে তাহারা বদ্ধপরিকর হইল। সংসারে নিবারণের কোনও বন্ধন ছিল না। মে বালাম্বহৎ সুরেন্ত্রের ব্যবহারে জলিয়া উঠিল) প্রতিহিংসার জন্ত মে দেশবিদেশে ঘুরিতে লাগিল। পূর্বেই বলিয়াছি, নিবারণের বুদ্ধি খুব প্রথর। সে সিদ্ধান্ত করিল, যখন নুরেন্ত্রের বিবাহোপযোগ্য কন্তা আছে, তখন তাহাকে নিশ্চয় বাঙ্গাল! দেশে থাকিতে হইবে। তাই সেবাঙ্গালাদেশে অনুসন্ধানে যাইল। শেষে মে যশোহরে সুরেন্দ্র সাক্ষাৎ গাইয়াছিল। তাহার সহিত চাক্ষুষ সাক্ষাতে একট! বিষম কাও বাধিতে পারে বলিয়া গে ন্ুরেন্্রকে এক পত্র লিখিল। পত্রের ভাষাও তাহার স্মরণ ছিল। বিৎশ পক্সিচ্ছেদ্‌ াফল্য বলা বাহুল্য আমি মন্তরমুগ্ধের মত নিবারণের ইতিহাস শ্রবণ করিতেছিলাম। ঠিক যেন উপন্তাসের কথা। এরূপ কাহিনী যে বাস্তবজগতের তাহা যেন বিশ্বাস হইল না। অথচ যেরূপ আবেগময়ী ভাষায় নিবারণ তাহার জীবনের আখ্যাঘ্িক বর্ণনা করিল, তাহাতে সন্দেহ করিবার কিছুছিল না। আমার অবস্থা প্রায় নবীন বিচারপতির মত হইয়াছিল। যখন প্রথমে ফরিয়াদীর উকীল বক্তৃতা করেন তখন- নবীন বিচারপতি ভাবেন ইহার কথার প্রত্যেক বর্ণটি সত্য, আসামীটা শয়তানের অবতার। আবার আসামী পক্ষের বক্তৃতার সময় আসামীর জন্য তাহার প্রাণ কীদিয়া উঠে, মনে হয়, পৃথিবীতে লোকে নিরপরাধ ব্যক্তির এমন নির্যযাতনও করিতে পারে? পূর্ধে নুরেন্দ্রবাবুর পক্ষ লইয়া শ্সবারণ ও তাহার সঙ্গীদের প্রতি ঘ্বণার উদ্রেক হইয়াছিল, কিনে তাহাদের পাপের শান্তি দিতে পারি সে কথা পুনঃ পুনঃ ভাবিতেছিলাম, প্রতি পদে পদে বিপদের মুখে ছুটিতেছিলাম & এখন কিন্তু তাহাদের সহিত সহানুভূতি করিতে প্রবৃত্তি হইতেছিল। মনে হইতেছিল, এ দলের মধ্যে প্রধান অপরাধী স্ুরেন্্রনাথ। ইহারা তাহার বিশ্বাসঘাতকতার জন্ত তাহার নির্য্যাতন করিতেছিল, আপনাদের পাপার্জিত অর্থের অংশ পাইবার জন্ত তাহার কন্! অপহরণ করিয়াছিল, তাহার প্রাণনাশের প্রয়াস করিয়াছিল। বিবাহ-বিপ্রব ' ১৭৮ পত্রের কথা শুনিয়া! আমি বলিলাম--“আচ্ছা আপনি যে চিঠি লিখেছিলেন-_-সে কি ভাষায়?” নিবারণ বলিল-_-"আপনি চিঠি- খানি হস্তগত করেছেন বুঝি ?* আমি বণিলাম-_“হা1” সে বলিল --"সে এক সাঙ্কেতিক বর্ণমালা । আমরা নিজেদের মধ্যে সেই অক্ষর ব্যবহার করতাম। চিঠির ভাষা অবধি আমার স্মরণ আছে। পত্রে লিখেছিলাম__“কতদিন লুকিয়ে থাকবে । খবর পেয়েছি! যদি না রফা কর প্রাণে মারব, ৭ নং দয়েহাটায় খবর পাবে।” আমি তাড়াতাড়ি জামার কফে কথাগুলি লিখির়! লইলাম। নিবারণ বুঝিল। একটু হাসিয়া! বলিল,_“হ্যা সেই কথাই ভাল। আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ । ও বর্ণমালা! কাকে ও শেখাতে পারবো না। কথাগুলা নিয়ে আসলের সঙ্গে মিলিয়ে দেখলে আপনার মত বুদ্ধিমান লোক নিশ্চয় আমাদের বর্ণমালাট। বুঝে ফেলবেন ।” পত্র পাইয়া স্ুরেন্্র কি করিল জানতে চাহিলাম। নিবারণ দৃঢ়ম্বরে বলিল,_“স্ুরেন্ত্র নিজের চিতা সাজাইল। দে যে শয়তানের অবতার, তাহার পুর্ণপরিচয় দিল। লিখিল,_ আমর অনেক অর্থ অপব্যয় করিয়াছি, আমাদের শ্ত্রীপুত্র নাই। আমরা এসামান্ত ভরণপোষণের জন্য তিনজনে পাঁচ হাজার করিয়া পনের হাজার টাকা পাইতে পারি। চারিলক্ষের তিন ভাগ পনের হাজার ! কি ভীষণ শন্ততান ! কি ন্াক্নিষ্ঠা! নবাবের আমল হইলে তাহার ডালকুত্তার ব্যবস্থা হইত ।” আমি কোন কথ বলিলাম না। নিবারণ বলিল--“্যদি শুধু এই অবধি বলিয়া স্থির হইত] তাহ! হইলেও কি করিতাম বলিতে পারি না। রাবণ রাজার মত ১৭৯ ' বিবাহ-বিপ্লৰ তাহার অতি দর্প হইয়াছিল। সে টাকার গরমে গুম্রাইয়া মরিতেছিল। সে লিখিয়াছিল, ষদ্দি অধিক আস্ফালন করি, তথে ইংরাজের আইন আমাদিগের উষ্ণ শোঁণিত: শ্ীর্তল' করিবে ! ইংরাজের আইন! ইংরাজের আইন আমলে আসিলে আজ আমাদের সহিত তাহাকে আন্দামানে বাস করিতে হইত | ইংরাজের আইন 1” বুঝিলাম ক্রোধে নিবারণের অন্তর্দাহ হইতে- ছিল। কিন্তু তাহার মুখের ভাব স্থির, গম্ভীর! আমি কথাটা উপ্টাইবার জন্ বলিলাম_-"আচ্ছা তা হ'লে স্থুরেক্ীবাবু প্রকাস্ত ভাবে বাস করছিলেন কি করে?” নিবারণ বলিল-_ কে প্রকাশ্ঠভাবে বাস করিতেছিল ! কুকুরের সে সাহস ছিল? সে জানিত আমর! চিরকাল পশ্চিমে বাস করি, আমাদের পক্ষে যশোরের মত সহর খুঁজিয়া বাহির করা অসম্ভব হইবে। প্রকাশ্ঠ- ভাবে থাকিলে লোকের সন্দেহ কম হয়।* আমাদিগের বাঙ্গালা দেশে একটু লুকাইবার চেষ্টা করিলে অমনি কথা জন্মায়, পাচজনে ক্ষানাকানি করিতে আরম্ত করে। সেবেশ দাহোবর ভান করে সহরের মঞ্ধ্য অথচ লোকালয়ের বাহিরে বান করিতেছিল ।* যুক্তিটা' আমার নিকট সমীচীন বলিয়া বোধ হইল। আমি দেখিয়াছিলাম, যেসকল অপরাধী কলিকাতার সহরে ভিড়ের মধ্যে মিশিয়া থাকে তাহাদের খুঁজিয়া বাহির করা বড় কঠিন। তাহার প্র নিবারণ মুরলার কথা বলিল। সে বলিল-_-“দুই চারিদিন তাহার বাঙ্গালার ধারে রিয়া দেখিলাম মুরল! প্রতাহ প্রভাতে অবনীর বাগানে ফুল তুলিতে যায়। কয়েক দিন দেখিলাম অবনীও বিবাহ-বিপ্লাব " ১৮৩ তাহার সনিত একটু আলাপ পরিচয় করিবার জন্য বাস্ত হয়। শুনিলাম ধনীগুহে তাহার বিবাহ হইবে। তাহাকে আটক করিয়া স্থুরেন্দ্রের নিকট হইতে প্রাপ্য অর্থ পাইবার জন্য একদিন তাহাকে চুরি করিলাম । আমাদের দ্বার! যে এ কার্যা হইয়াছিল, আপনার মত বুদ্ধিমান লোক বোধ হয় প্রথমাবধি তাহ! বুঝিয়াছিলেন।” তাহার কথায় একটু শ্লেষ ছিল। আমার উপস্থিত প্রাণভয় ছিল 'নাঁ। তাই একটু সাহস করিয়া বলিলাম,_“যে দিন সুরেন্দ্র বাবু আমাকে প্রথম নিষুক্ত করেন সে দিন দলবল সমভিব্যাহারে আপনি আমাদিগকে কলিকাতা হইতে তাড়াইবার চেষ্টা” নিবারণ বাধা দিয়া বলিল-_“যাক্‌ আর বৃথা বাক্য ব্যয় ক'রে লাভ নেই, এখন আমাদের কথাটা! শুন্ুন। আমরা বেশী কিছু চাহি না। তিন জনের তিন লক্ষের স্থলে এক লক্ষ টাকাঁ। তার মেয়ে ছেড়ে দেব, তাকে অভয় দার্ন্গকর্ব, কোন প্রকারে তাকে বিরক্ত কর্ব না । 'আর আপনাকে বলছি, আমি নিজে হয়ত পরে এ টাকা মুরলাকে দিয়ে আবার সুরেনের সংসারে বান কর্ব। আমার আর পৃথিবীতে কে আছে? কিন্তু সুরেন্দ্রের পরাজয় চাহি। তাকে এখন লক্ষ টাক! দিতে হবে, আর আমাদের কাছে মাফ চাইতে হ'বে।” আমি বলিলাম--“আর যদি সে সম্মত না হয়।” নিবারণের মুখের ভাব বিকৃত হইল না। নেগস্ভীর ভাবে, বলিল “তাহলে আপনাকে পরামর্শ দিচ্ছি তার কাজে হাত দেবেন না, কারণ আজ হতে পনেরো দিনের মধো যদি সম্মত না হয়, তা হলে, তাকে, তার.স্ত্রী ও কন্যাকে নিজ হস্তে বিনাশ কর্ব'। আর যদি ১৮১ " বিবাহ-বিপ্লুব আপনি তাদের দলে থাকেন-” আমি শিহরিয়া উঠিলাম। নিবারণ কথা শেষ করিল না। নিখিল বলিল-_“ছু'থানা কাপড় দিতে পারেন?” আমি বলিলাঁম_-“কাপন্ড কেন?” নিবারণ বলিল--“আপনাকে বাধব বলে। রাগ করবেন না। মানুষের মন না মতি। এখন আপন সব শুনলেন। এখনই হয়ত আমাদের পিছনে চীৎকার করে একটু দৌড়াদৌড়ি কর্বেন। হয়ত পুলিশ ডাকবেন” আমি অগত্যা তাহাদের কথার গ্রতিবাদ করিতে পারিলাম না । তাহারা কেবল আমার হাত পা' বাঁধিয়া সন্থষ্ট হইল না। আমার মুখের মধো কতকটা কাপড় প্রবেশ করাইয়৷ দিল যাহাতে আমি চীৎকার করিতে না পারি। নিবারণ ক্ষম! প্রার্থনা করিয়৷ বলিল_-“আপনার ভূতাটি আমাদের অনেক টাক থেয়েছে, সে আধ ঘণ্ট। পরে আপনাকে খুলে দেবে । তা হলে মনে করে রাখবেন আজ থেকে পনেরো! দিন সময়। আপনি চিন্তিত হবেন না। স্বয়ং আপনাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করব। কিন্তু কবে আর €কাথায় সাক্ষাৎ হবে, তা বলব ন1।” তাহারা তিন জনে আমাকে নমস্কার করিল। নিবারণ দরজ! খুলিয়া যেমন বাহির হইল, অমনি জন কয়েক লোক তাহাকে চাপিয়া ধরিল। গোলমালে অপর ছুই জন পলাযুন করিল। দেখিলাম আগন্তকদিগের দলপতি নরেশচন্্র। তাহার উত্তেজিত অথচ বিজয়-গর্বিত মুখখানি দেখিয়া বড় আনন্দ হইল। একবিংশ পল্িচ্ছেছ 'শেষ বড় আননের দিন। পরম শক্ত নিবারণ বন্দী! কলিকাতায় নিজেদের ঘরে বমিয়া আবার ছুই বন্ধুতে বহুদিন পরে নিশ্চিন্ত মনে চা পান করিতেছিলাঁম। নরেশ বলিল--“দেখলে বাবা, এ কেশে বাঁহাদুরী কার, তোমার না আমার? স্থুরেন্্র বাবুর মান রক্ষা কর্লাম, নিবারণকে বন্দী কর্লাম, শুধু তাই নয় ওদের বর্ণমালাটাও মেরে নিয়েছি।” আমি বিশ্মিত হইয়। বলিলাম, “বল কি! কিকরে করলে?” নরেশ হাদিয়া বলিল--“্যদি দরাস্তর করে! তো বল্ৰ মন্ত্রবলে, আর যদি এক কথায় জান্তে চাও তো! বলি--ঘুমের ঘোরে” “ঘুমের ঘোরে!” নরেশ বলিল--ঠা ভাই, ঘুমের ঘোরে, জানত ঘুমের ঝৌকে সব জিনিদ একটু লব হয়ে ফায়। আমি সেদিন চেয়ারে ব'লে ঢুলছিলাম। চিঠিথানা হাতে ছিল, অঙ্গর গুলা যেন লা হাতে লাগলো'। ফাঁক আছে দেখলাম__যেন ফাঁকগুলা| জুড়ে গেল। ঠিক মাথার মধ্যে এনে: গেল বর্ণমালাটা কি?” আমি ঠিক বুঝিতে পারিলাম না। দের বলিল--“লেখাগুল! বাঙ্গালা, প্রত্যেক অক্ষরের কতকটা ক'রে কথ! ছেড়ে দিয়েছে বলে অমন বিশ্রী। বর্ণমালার স্টি হয়েছে!” ১৮৩ বিবাহ-বিপ্লুক আমি বলিলাম_-"নতা নাকি? বল কি?” রমেশ বলিল-- “এই দেখনা, এই প্রথম চিঠি খান! নাও। এতে লেখা আছে--কতদিন লুকিয়ে থাকবে? খবর পেয়েছি। যদি না রফা কর, প্রাণে মার্বো, ৭নং দয়েহাটায় খবর পাবে।” ঠিক নিবারণ এঁ কথা গুলাই বলিয়াছিল। সে বলিল, “এই দেখ প্রথম অক্ষরটাতে কেবল একটা দড়ি বাদ দিয়েছে ।» আমি চিঠিখানা হাতে লইয়া তাহার কথার যাথার্থা অনুভব করিলাম ঠিক্‌কথা। প্রত্যেক অক্ষরের এক একটা লাইন ভাঙ্গিয়া তাহারা এই অদ্ভুত বর্ণমালার সৃষ্টি করিয়াছিল। কিন্ত মাঝে মাঝে এক একট! বিচিত্র মনুষ্যমৃত্তি, এক একটা! গ্যাস পোষ্ট ইহাদেরই বা! অর্থ কি? নরেশ বলিল,_ এ গুলা নিরর্থক। কেবল ধাধীর জন্য ।”» আমি বলিলাম--“আচ্ছ! দ্বিতীয় পত্র খান! বাহির কর দেখি।” নরেশ দ্বিতীর পত্র খানি বাহির ? 58:77 শা 16 সিসি তে পি ক পু পৃ র 7 $ /1/8 ডি /+4 ১ / ৭/1%///8, / ৭4 ১/,/17 47 /7//15 ১) রঃ 7 4 ট রি ৮ 0, & হি 1. “২ ৯.৯ *// 2 পট 1৮1 ৫ 27 4 4 1 পু ৮৮: টা হা 1) 81. . রি রে // ঞ 14 /০4 ৮1.) ৮7 রি ০৭৩ ্ ০২1 ৬০/৩ 74 হাটি 4০০৯০১%৫ লা শী ৬ ক না হ এম ০ 00 পট তত ২০০০০ 44:24 ০৯৮০৬ পা পাশা সি শি ২০০১ 4০1 সী বান আমি একটু মনোযোগের সহিত লক্ষ্য করিয়া পড়িলাম, তাহাতে লিখিত ছিল --“নিথিল, কার্য যেন খুব সাবধানে কর! হয়। স্ুরেন তার কেশটা সেন ডিটেকটিভের হাতে দিয়েছে। আমাদের গতি যেন তাহারা না লক্ষ্য করে। গোয়েন্দাদের চৌকী দিও। মুরলা যেন সুখে থাকে । যদি না শুনে তবে খুন খুন থুন_ নিবারণ |” বড় বিশ্মিত হইলাম। এ পত্র. থান! খাথমে পড়িতে পারিলে আর অবনীর সহিত ঘুরিয়া বৃথা ময় নষ্ট করিতে হইত না। পত্রথানা প্রথমেই ব্রেন বাবুকে দেখুইলে কতক সুফল ফলিত। কিন্ত-ভাগ্যং ফলতি সর্কত্রমূ। নরেশ. বন্ি-_ ১৮৫ » বিবাহ-বিপ্রব “তোমাকে উদ্ধার করেছি ভাগ্য বলে। সেই কেশটার সংবাদ দেবার জহ্যে ছুটে গয়ায় গেলাম। যখন তোমার গলির কাছে গেলাম দেখলাম তুমি দুজন লোকের সঙ্গে বাড়ীতে গেলে । ঠিক ভোমাদের পিছনেই নিবারণ ঢুকল । আমি কালবিলম্ব না করে একেবারে থানা থেকে লোকজন এনে তবে নিবারণকে ধরলাম আর ছুমিনিট বিলম্ব হ'লেই বাস্‌।”* আমরা গল্প করিতে করিতে স্থরেন্ত্র বাবুর বাসায় গেলাম । স্থরেন্ত্র বাবু কলিকাতায় আসিয়া- [ছলেন। 'আনাকে দেখিয়া স্ুুরেন্ত্র বাবু আনন্দে বিভোর হইলেন । তাহার প্রধান শত্র এখন পিঞ্রাবদ্ধ। আমি আর তাহাকে এখন নিবারণের সকল কথা বলিলাম না । নরেশচন্দ্র আমাকে ডাকিয়! আপর একটি কক্ষে লইয়া গেল। সর্বনাশ! ছুইটা গ্রায় এক রকমের কিশোরী আসিয়া আমাকে প্রণাম করিল। একটি সরলা,ক্সপরটি নিশ্চয় _মুরলা। আমি বিশ্ময়ে অশ্ফুটস্বরে বলিলাম --প্মুরলা !” মুরলা হাসিল । বলিল-_ “এবার সতা মুরলা ।” আমি বলিলাম_-“পেলে কোথা ?* পে বলিল- “হঠাৎ এক দিন স্বা্িকত্্লার কাছে ছগৃমলের সাক্ষাৎ পাই। তাকে অন্ুমরণ করে*বাগমারির একটা বাগানের দ্বার অবধি এলাম। সর্বদাই ভিতর থেকে বাগানের দরজা বন্ধ থাকিতে দেখে পুলিশ নিয়ে বাগানে ফ্রবেশ করি। বালিকাকে বেশ সুখে রেখেছিল।” মা হানিয়া বলিল_-“হা খুব সুখে রেখেছিল।” আমি ী-_-"কাকেও ধরেছ ?” নরেশ কালিল-_-“কাকেও ধরা হয় নি কটা বুড়া দাসী ছিল। তাকে ছেড়ে দিয়েছি।” বাহিরে সি বিবাহ-বিপ্লব গিয়া দেশি. প্রয়নাথ__চিন্তিত মুখে আমি বলিলাম ও প্রিয়নাথ?” সেশ্ক ভ""-“কাল রাত্রে নিবারণ হাজতের ভী্গা আত্মহত্যা করেছে” আমরা বিস্মিত হইলাগ। কিন্তু ক বাঝু বসিয়া পড়িলেন। তাহার চোখে ছুই ফৌটা জল দেখা ৰ আমি বলিলাম__“ঘাক এ ব্যাপারের এই খানেই যবনিক1 পড়ল রঃ নরেশ বলিল--“্দাড়াও এখন€ বাকী আছে, আগামী সোমবা অবনী ও মুরলার বিবাহ ।” আটআনা সংস্করণ গ্রন্থমালা__ £রাপ প্রভৃতি মহাদেশে “ছয়-পেনি-সংস্করণ”- শিস ংস্করণ” প্র নানাবিধ সুলভ অথচ হ্বন্দর সংস্করণ প্রক।। .ন-কিস্ত মে সকল পুৰ,-খশিত অপেক্ষাকৃত অধিক মূল্যের পুস্তকাবলীর অন্যতম সংস্করণ মাত্র। : এদেশে _পাঠকসংখ্য। বাড়িয়াছে, আৰু বাঙ্গালাদেশের লোক-__ভাল (জনিদের কদর বুঝিতে শিখিয়াছে ; সেই বিশ্বাসের বশবর্তী হইয়াই, আমরা "গাল! দেশের লব্বপ্রতিষ্ঠ কীত্তিকুশল ও ককারবর্গ-রচিত সারবান্‌, সুখপাঠা, এখচ অপৃব্বপ্রকা(শত পুস্তৃকগুলি এইরূ” সংস্করণে প্রকাশিত কারিতে প্রব.. হইয়াছিলাম। আমাদের এ চেষ্টা যে সফল হইয়াছে, “অভাগী' ও 'পল্লী- মা.” এই কয়েক মানের মধ্যে তৃতীয় সংস্করণ এবং 'বড়বাড়ী, | 'অরন্ষণীয়।" 1ল" প্রভৃতির দ্বিতীয় সংস্করণ ছাপিবার প্রয়োজন হওয়াই তাহার প্রমাণ। ' আশ। লইয়া এ কাধ্যে ব্রতী হইয়াছিলাম, ভগবত্প্রসাদে ও সহদয় ”1- গেঁর অনুগ্রহে আমাদের সে আশা অনেকাংশে ফলবতী হইয়াছে । ... ফলেন হি পুধর্নবতাং বিধত্তে |” শ্রম সার্থক হইলে হৃদয়ে নৃতন আশা 'ও ৩27 জ্ষার উদয় হয়। আমরাও অনেক কাঁধ্যের কল্পনা করিতেছি। এই লির্িঞের উত্তরোত্তর উন্নতির মহিত একে একে সেই সঙ্কল্পগুলি কাধ্যে পরিণত করিতে চেষ্টা করিব। " *বাঙ্গালাদেশে-__শুধু বাঙ্জীলা' কেন_ সমগ্র ভারতবর্ষে এরূপ সুলভ হুন্দর সংস্করণের আমরাই সর্ব প্রথম প্রবর্তক। আমর! অনুরোধ করিতেছি, প্রবাসী বাঙ্গাল মাত্রেই আট-জানা সংস্করণ গরস্থাবলীর নির্দিষ্ট গ্রাহকশ্রেণীভু্ত হই এই 'মরিজের স্থায়িত্ব সম্পাদন ও আন্মাদের উৎসাহবর্দন করুন| ক্কাহাকে অধম মুল্য-দিতে হইবে না, নম রেজে্টারী করিয়। রাখিলেই | যখন যেখানি প্রকাশিত হইবে, দেইখানি পি ডাকে প্রেরণ করিব। টার সহানুভূতির উপর নির্ভর করি ্টীমরা এই বহুব্যয়সাধ্য পি করিয়াছি) 'গ্াহক্কের সংখ্য | ধিদিষ্ থাকিলে আমাদিগকে তীর তীঃ সংস্করণ ছাপাইয়া অধিক, ব্যরতার বহন করিতে হইবে. ন!। এই প্রস্থন্নালাল্প প্রন্কাম্পিত গরন্ছান্ধলী ১। অক্াগী (ওয় সংস্করণ )--শ্রীজলধর সেন। ২। খধম্মপাল (২য় সংক্করণ )_ শ্রীরাখালদাদ বন্দযোপাধ্যার। ৬। পল্ীসমাজ্ৰ (৩য় সংস্করণ )__ গ্রীশরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় । ৪1 কাশ্ঞনমালা (২য় সংস্করণ )-শ্রীহরপ্রসাদ শান্ত | | বিবাহাবলব (২য় সংস্করণ)__শ্রীকেশবচন্দ্র গুপ্ত এমএ, বি-এলগু। ৬। ছুব্ধাদল (২য় সংস্করণ )-_ শ্রী শীক্রমোহন সেন গ৭। ৭। বড় বাড়ী (২য় সংস্করণ )- শ্জলধর সেন। ৮। অরক্ষনীস্সা (২য় সংস্করণ )_-গ্রীশরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় । ২ মঘুখ- শ্রীরাখালদান বন্দে]াপাধ্যায় এম, এ। »০। ফ্নত্য ও মিথ্যা শ্রবিপিনচন্দ্র পাল | ১১। ক্রাপের বালাই _শ্রীহরিসাধন মুখোপাধ্যায় । ১২। লোণার পদ্ম - শ্রীনরোজরঞ্জনবন্দ্যোপাধ্যায় এম, এ। ১৩। লাইকা- শ্রীমতী হেমনলিশী দেবী। ১$। আলেম্মা শ্রীমতী নিরপম। দেবী। ১০ । বেগম সমন গ্রবজেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়। ১৬1 নকল পাঞ্জাবী- শ্রীউপেন্্রনাথ দত্ত । ১৭। বিন্রদল- শ্রীষ শীন্্রমৌহন সেন গপ্ত। ১৮। হাল্দার বাড়ী- ঘীমুনীন্্র প্রসাদ সর্ববাধিকারী । ১৯। ধুপর্ক- শ্রীহেমেন্্রকুমার রায়। ২০। লীলা সপ্মী_ শ্রীমনো মোক রায় বিএলী আখের হৃর-শ্ীকালী প্রদন্্ দাঁদগপ্ত তক দেবী ।॥