'আট-আনা-সংজ্ঞরপ-প্রহ্থমালার পঞ্জমণ গ্রন্থ বারি তি

ন্বিন্যাতু-ন্বিগনন্ষ

শাাাটী্াট কী বাজ ৫7

[ দ্বিভীম্ সংস্করণ].

রব 5 রি রি ষ্ তত . ্« / ১. ফচ সি 1 ১: ১:

১৩,

টব

7 রি 125 /৮) এপি & পপ টং ১৫৫৪01।8€

পি পাচা গলপ

শ্রীকেশব চন্দ্র গুপ্ত

*৩২৪

মিঃ এন্‌ মেন 2০

বোধ হয়, চেষ্টা করিলে পুলিস-বিভাগে টি কার্ষ্য পাইতাম তিন বৎসর পুলিসে দারোগাগিরি করিয়া কিন্ত পুলিস-বিভাগের উপর তেমন একট! মমতা৷ জন্মায় নাই। সুতরাং সামান্য কারণে কর্মুছাত হইয়া! সে কর্ধা পুনঃপ্রাপ্তির জন্য বিশেষ ওৎনুক্য জন্মায় নাই। |

সময় কাহারও জন্য অপেক্ষা করে না_এ একটা মামুলি কথা। সময় অপেক্ষা করিলেও করিতে পারে, কিন্তু মানবদেহের জঠর নামক অঙ্গবিশেষটি সৃষ্টির প্রাকৃকাল হইতে অগ্তাবধি ধৈর্য্য নামক সদ্গুণের আধার বলিয়া কখনও প্রশংসিত হয় নাই। পোড়া পেটের জন্য একটা কি করিতে হইবে--এ প্রশ্নটা! দিন দিন গুরুতর আকার প্লারণ করিয়া আমার মানসপটে বিভীষিকার সৃষ্টি করিতেছিল। কেরাণী'গিরি সংগ্রহ করা। ন্মস্তা ব্বমা-বাণিজ্য করিতে গেলে মূলধনের প্রয়ো কালী পেশায় ইউনিভারসিটির চাপরাস নারপ. অসম্ভব সামগ্রী আবশ্তক। পশ্চিমে কার্য করিত। সেও.

বিবাহ-বি্ীব |

সিপাহী হইয়! -কৰ্বিকাতায় চলিয়া! আসিয়াছিল। উভয়ে বসিয়া পরামর্শ করিতেছিলাম,_কি উপায়ে পরের তোষামোদ না করিয়া জীবিক! নির্বাহ কর! যাইতে পারে। নরেশ বলিল-__ বাস্তবিক ভাই দেখছি “মরণ হ'লে পুনর্জন্ম হয়, কিন্ত চাকরি গেলে আর চাকরি হয় না। আমি বলিলাম--আর তাই, চাকরির পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করছি না বরং না খেয়ে মারা গিয়ে আবার পুনর্জন্মের চেষ্টা কর্ব। উভয়ে- খুব হাসিলাম। কসাইয়ের দৌকান, মড়ার খাটের ব্যবসা, বিলাতী মতে ধোবীখানা, মুরগীর চাষ, পরিতাক্ত টিনের কানেমস্তারা নিলামী মাল খরিদ বিক্রয় প্রভৃতি নানা প্রকার ব্যবসার বিষয় আলোচনা করিলাম, কিন্ত প্রত্যেকটাতেই একটা না একটা আপত্তি বিরাট আকার ধারণ করিয়া বমিল। নরেশ বলিল--আমি তো! বদ্যি। শেষে না হয় কোথাও পাড়াগায়ে গিয়ে নাড়ীটেপার ব্যবসা ধর্ক! আজকাল তো বগ্ির ঘরের মূর্ধ ছেলেরাই কবিরাজ হয়। আমি বলিলাম_-আর আমি একট! শিবমুন্তি স্থাপন ক'রে পৃজারি সেজে বসি, বামুনের ছেলের পক্ষে বৃত্তিটা মন্দ হবে না। এই শিবমূর্তি কলেজ ট্রাটের ধারে হইলে অধিক উপার্জন হইবে, না আূ্টালতের ধারে হইলে বেশী লাভের সন্তাবনি সে কথা লইয়া বাদানুবাদ চলিল। শেষে ঠিক হইল ধর্মের নামে প্রি করা অবিধের এবং পেটের দায়ে চিকিৎসক জাজিয়া রাও মহাপাগ। _খলিল-_না, সব কথা ঠিকনা। তুমি.তিন রছয

বিবাহ-বিপ্লুব

গুলিসে “কাজ ক'রে যে অভিজ্ঞতা লাভ করেছ তার সদ্যবহার করা উচিত। আমিও সওদাগরী আফিসে কাজ ক'রে কতকটা কাজ শিখেছি; সে শিক্ষারও সদ্বাবহার করা আবশ্তক। নরেশের কথায় আমার মনে একটা নৃতন চিন্তার উদয় হইল। বাস্তবিক আমার পুলিসের অভিজ্ঞতাটা কি কোনও প্রকারে অর্থকরী বৃত্তিতে পরিণত হইতে পারে না? আমাদের দেশে পুলিসের হস্তে যেরূপ বহুবিধ কাধ্যভার ন্যস্ত, তাহাতে তাহাদের দ্বার কোনও জটিল মামলার তদন্ত হওয়া অসম্ভব বিলাতে বে-দরকারী ডিটেক্টিভের বাবা! বেশ সাধারণের হিতকর অথচ অর্থকরী দেশে সে ব্যবসায় কেন ীঁফলতা লাভ করিবে নাঃ নরেশের সহিত অনেক বাদান্থবাদের পর সিদ্ধান্ত হইল যে, আমরা উভয়ে একটা বে-সরকারী গোয়েন্দার ব্যবসা খুলিব! আমার বাল্যসহচর নরেশচন্্রকে অংশীদার করিয়! লইবার বিশেষ এ্রকটা উদ্দেন্টা ছিল। ভাবিলাম যদি আমি স্বয়ং ডিটেকৃটিভ সাজিয়া বসি, তাহা! হইলে সকলেই আমাকে চিনিয়া ফেলিবে। বদি চোর জুয়্াচোর জালিয়াৎ প্রভৃতি আমাকে দেখিবামাত্র সাবধান তুই! যায়, তাহা হইলে পদে পদে আমাদের কর্মে বিফলমনোরথ ইন্জি্ছইবে। সরকারী পুলিস এই কারণেই অনেক সময় চতুর অপরাধীর সন্ধান করিতে পারে না পুলিস যেমন অপরাধীদিগের পর গোয়েন্দাগিরি করে, সন্দেহচিত্ত অপরাধিগণও তেমনি তাহা- দিগের চিরশক্র পুলিসের গতিবিধি লক্ষ্য করিয়া আপনাদের আত্মরক্ষার বিধান করে।

'বিবাই-বিপ্লৰ

আমি বলিলাম_-নরেশ, তুমি ডিটেকৃটিভ সাজিয়া শিখন্তী হ'য়ে বস্বে, আমি তোমার আড়াল থেকে বাণক্ষেপ ক'রে কাজ ফতে করব। নরেশ বলিল--আপত্তি নেই। আমি ডাক্তার- খানার জানালার ধারের মোট সাজান বোতল হয়ে বন্ব এখন। “গুভন্ত শীঘ্ম্ণ ভাবিয়া সাতদিনের মধ্যে কর্ণওয়ালিস স্ট্রাটে, একটি আফিদ খুলিয়া সাইন বোর্ড মারিলাম-_ 011, উ, 0,561.

4/9710272 7)/0//2)6,

সি

ভ্িতীম্ত্র পলিজ্ছেচে্‌ আত্ম-এশংসা

ভেক না হইলে ভিক্ষা মিলে না। একটা কোনও প্রকাৰ স্বাধীন বৃত্তি অবলম্বন করিতে গেলে কতকট! বাহিক আড়ম্বর অত্যাবস্তক ; তাহ! না হইলে, প্রথম প্রথম পসার জমান কঠিন। আুতরাং নেহাৎ সেই মামুলি একটা আমকাঠের স্ক্তপোষ, দুইটি মলিন জীর্ণদেহ তাকিয়া মঙ্গল করিয়া সরস না খুলিয়৷ একটু আধুনিক ধরণে টেবিল চেয়ার দিয়া গৃহ সজ্জিত করিয়া আফিম খুলিয়াছিলাম। সমস্ত আস্বাৰ সরঞ্জমগুলা পরিষ্ণার পরিচ্ছন্ন রাখিবারও ন্ুবন্দোবস্ত করিয়াছিলাম। অবস্ট এরূপ ভাবে গৃহসজ্জা করিতে প্রথমতঃ একটু মূলধন. আবস্তক

€৫ বিবাহ-বিপ্রব

হইয়াছিল, কিন্তু ফলে আমাদিগের কর্মস্থল বেশ প্রতিষ্ঠালাভ করিয়াছিল। আমরা যে বাটাতে আফিস খুলিয়াছিলাম, তাহার প্রধান দরজা ছিল কর্ণওয়ালিস স্াটের উপরে সেই দরজাটিতে প্রবেশ করিলেই মক্ধেল আমাদিগের আফিল ঘরে আসিতে পারিত। বাটার পশ্চাতে গলির. পথে একটি ক্ষুদ্র প্রবেশদ্বার ছিল। আমরা দ্বিতলের গৃশগুলিতে সেই পথে যাতায়াত করিতাম। নরেশ স্বয়ং ডিটেক্টিভ সাজিয়া বাহিরে আফিসঘরে আমাদিগের সাহায্যপ্রার্থী লোকের সহিত সাক্ষাৎ করিত এবং আমরা তাহার অন্তরালে থাকিয়া ভিতরের গুহ ইইতে কার্ধ্যাদি সম্পন্ন করিতাম। আমাদের প্রধান মন্ত্রণাগৃহ ছিল দ্বিতলের ঘরে; আমরা ছুইজন এবং আমাদিগের একটি সহকারী ডিটেকটিভ রাখালচন্দ্র বাতীত কেহ সে কক্ষে প্রবেশলাভ করিতে পারিত না রাখালের উপর পূর্ণ বিশ্বাস থাকিলে “্ষটুকর্ণৈঃ ভিষ্ঠাতে মন্ত্র, এই নীতি অন্দরণ করিয়া তাহাকে আমাদিগের সকল যুক্তি- মন্ত্রণার মধ্যে প্রবেশ করিবার সম্পূর্ণ অধিকার প্রদান করিতাম না।. আমাদিগকে কন্মে নিযুক্ত করিবার জন্য কোনও ব্ক্তি অল প্রথমে তাহাকে নরেশের সহিত সাক্ষাৎ করিতে হইত। নরেশের. বিশ্বাস জন্মাইতে পারিলে তবে প্রয়োজনমত আমি নরেশের মেই অফিস-গৃহে তাহার নিকট .পরিচিত হইভাম। এই রুদ্ধদ্বার গৃহে খন একজন মন্ধেল নরেশের সহিত মন্ত্রণা করিত, তখন অপর ভ্রকলকে বারান্দায় ছুইখানি বেঞ্চের উপর অপেক্ষা করিতে হইত। আমাদিগের এইরূপ নিয়ম প্রবর্তিত

বিবাহ-বিপ্লীৰ |

করিবার বিশেষ একটি কারণ ছিল। আমাদিগের দেশে উকিল বাবুর! প্রায়ই পাচ সাতটি মোকনদ্দমার ভিন্ন ভিন্ন লোক একক্র লইয়া একস্থানে বসিয়া পরামর্শ করেন। অনেক সময় বিপক্ষ পক্ষ কি পরামর্শ করিতেছে তাহ! জানিবার জন্য চতুর প্রতিযোগী মক্কেল সাজাইয়া নিজ পক্ষের লৌককে বিপক্ষের উকিলের নিকট পাঠাইয়! দেয় এবং তাহাদ্দিগের মোকদদমা সম্বন্ধে বিপক্ষ দুল কিরূপ যুক্তিমন্ত্রণা করিতেছে তাহ! কৌশলক্রমে অবগত হইয়া আপনা- দিগের কর্তবা পথ স্থির করিয়া লয়। এইজন্যই আমাদিগের অফিসের নিয়ম-অনুসারে এক কালে এক জনের অধিক মক্কেল মন্ত্রণাগৃহ্ে প্রধেশলাভ করিতে পারিত না। সমস্ত দিবসের কর্তব্য সাঁরিয়! এক দিন সন্ধ্যার সয় আমরা ছুই জনে অফিসগৃহে বসিয়া গল্প করিতেছিল্লাম ; বাহিরে মুষলধারে বৃষ্টি পড়িতেছিল; আমরা উভয়ে চা পান করিতেছিলাম | আষাঢ়ের জলধারার অত্যাচারে সদা-জনমানবপরিপুর্ণ, নিতযকোলাহলময় কলিকাতার রাজপথগুলি এক প্রকার জনহীন হইয়াছিল; কর্ণওয়াঁলিস স্ট্রীট জলময় ); কেবল মধ্যে মধ্যে এক এক খান! গাড়ী শব্দ করিতে করিতে আৰ মন্থরগতিতে সেই জলরাশি ভেদ করিয়া গমনাগমন করি স্থিত চায়ের পাত্রটি টেবিলের উপর রাখিয়া নরেশ সেন সী, সতীশ, তুমি ভাই. বেশ ব্যবসা খুলেছ। এই সামান্য ছয় ঘাসের মধ্যে আমাদের নামটা বেশ জাহির হয়েছে, এমন কি ট্রামগাড়ীত্তে পর্য্স্ত আমাদের কার্যকলাপ লোকের প্রস্থঙ্গের বিষয়ীতৃত হয়েছে আমি: কৌতুহলাক্রাস্ত হইয়া জিজ্ঞাসা করিলাম_-কি রকম?

| বিবাহ-বিপ্লীব

“সেদিন আমি সন্ধার পূর্বে শ্তামবাজারের ট্রামে অফিসের দিকে আদিতেছিলাম। ট্রামথানি কর্মস্থল হইতে গৃহপ্রত্যাগমন-প্রয়াসী ধাত্রীতে পূর্ণ। একজন ভদ্রলোকের কিছু টাকা চুরি গিয়াছিল, তিনি প্ি্জির দুঃখের কথা অপর একজন সহঘাত্রীকে বলিবামাত্র তিনি বলিলেন, আপনি কেন আপনার কেস্টি ডিটেকৃটিভ এন, মেনের হস্তে অর্পণ করুন না” ।*

নরেশের কথা শুনিয়া আমি একটু হাসিলাম। বলা বাহুল্য, একটু গর্বিত হইলাম। নরেশ আবার বলিতে লাগিল,_“অমনি আমাদের কথা ট্ামের লোকেদের মধ্যে প্রসঙ্গ হইয়! উঠিল ।-__ বলিলে তুমি বিশ্বাস করিবে না, যে সকল কেসের কথ! আমরা কখন শুনিই নাই সেই সকল অপরাধ তদন্ত করিবার যশ আমী- ধিগের ভাগ্যে পড়িল। আমি হাদিয়া তাহাকে বুঝাইলাম যে, ৰাজারে নাম হওয়া পেশাদার লোকের পক্ষে বাস্তবিকই হিতকর। আর ট্রামের গল্প প্রকারই হইয়া থাকে গল্প করিয়া অপরকে পরাজিত করিবার বাদনাটা আমাদিগের জাতীয় বৃত্তি বলিলে সত্যের অপলাপ করা হয় না। স্থতরাং আমাদিগের কৃতিত্ব- লাকে ছ.একট গল্ের সষ্টি করিয়া অপরকে বলিবে ইতি আর বিচিত্রতা কি? তবে নিন্দা বাঁ অপহশ না৷ রটাইয়া লোকে যে আমাদিগের ফার্ম সম্বন্ধে স্থখাাতি করিতে আরস্ত করিয়াছে, ইহা! বড়ই সুখের বিষয়। আমাদিগের ভবিষ্যৎ উন্নতির ইহাই একটি সোপান ।” |

নয়েশ বলিল,-সেই পার্শেল চুরির কেস্টি তোমার স্মরণ

বিবাহ্‌-বিপ্লব .

আছে ত? অবশ্ঠ তুমি যেরূপ বুদ্ধিমত্তা দক্ষতার সহিত সে তস্তটি সম্পন্ন করিয়াছিলে তাহা প্রশংসনীয় কিন্তু সে কেস্টায় তোমার দক্ষতার কথ! যদি ট্রামের আরোহীর নিকট গুনিতে তোমারও হাসি আদিত।*

বাহিরে প্রাবুটের নীরদমালা নিদাঘ-সৃষ্যতাঁপক্রি্ ধরণীর উপর সমভাবে বারিসিঞ্চন করিতেছিল। পথিপার্াস্থিত দুই একটি গ্যাস-দীপ অতি স্তরানভাবে কর্তবাপালন করিতেছিল। পাইপের ভিতর জল প্রবেশ করায় কতকগুলা একেবারে নিবিয়! গিয়াছিল। এরূপ দুর্যোগের দিনে কাজ-কর্ম্ের কোনও আশা ভরসা ছিল না; সুতরাং আমার অংশীদারের নিকট প্রশংদা শ্রবণ করিয়া আত্মাভিমান বাড়াইতেছিলাম। মুখে আলবোলার নল দিয়া টেবিলের উপর পা তুলিয়া দিয়! নরেশের গল্প গুনিতে লাগিলাম। তাহার মুখে পার্শেল চুরির কেসের উল্লেখ শুনিয়া একবার সে ব্যাপারের ঘটনাগুল1 মনে মনে স্মরণ করিয়! লইলাম। তাহাদিগের চিরস্তন প্রথা-অন্নুমারে ভাগল- পুরের ভোতারাম বুধমল নাঁমক ফারম একটি কাঠের বাক্সের, মধ্যে নগদ সাত সহজ টাকা পৃরিয়া রেলযোগে কলিবুর্াণ চালান দিয়াছিল। ব্যয় সংক্ষেপ করিবার জন্ঠ মাড়োমীর ব্যবসাদার সকল মূল্যবান পার্শেলের রেলের রঙিন ছুই পয়সার সাধাদ্ণ ডাকে কলিফাতার গদিতে পাঠাইয়া থাকে ভোতারাম ুঙবুদ্ধিচাঁলিত হইয়া ক্ষেত্রেও উত্তরূপ প্রণালী অবলগ্বন করিয়াছিল; কলিকাতার একটি প্রসিদ্ধ জুয়াচোর-পুলব পোষ্ট

বিবাহ-বিপ্লিক

পিয়নের সাহচধ্যে সেই রসিদ “হস্তগত করেন। তাঁহার সম্ধাবহার করিয়া তিনি ভোতারাম বুধমল-প্রেরিত সেই বাঝ্সটি হাওড়ার রেলওয়ে ষ্েসন হইতে খালাস করিয়া লইয়া আত্মসাৎ করেন। আমি দশাদনের মধ্যে চোর পাঁচ সইত্র টাকা ধরিয়া দিয়- ছিলাম। এই গল্পটি বাজারে কিরূপ আকার ধারণ করিয়া প্রচলিত হইতেছিল তাহা জানিবার জন্য প্রকটু আগ্রহান্বিস্ক হইয়া নরেশকে জিজ্ঞাস করিলাম,_-“এ গল্পটা ট্রামে কি* রকম ভাবে চলছিল?” | নরেশ বলিল--্রামে শুনিলাম ছুই সহজ গিনি পূর্ণ একটি বাক্স বড়বাজারের একদল প্রসিদ্ধ জুয়াচোর জাল রেল রসিদ দেখাইয়া খালাস করিয়া লইয়া যায়। রুহস্তের কেহ কিছু মীমাংস! করিতে পারে না, শেষে কেস্টা আমার হস্তে সমর্সিত হয়। আমি কেবল পায়ের দাগ ধরিয়া-মনে থাকে যেন ঘটনার একমাস পরে- চোরের আড্ডায় পৌছি। দেই দস্থাদল তখন প্রেমারা থেলায় উন্মত্ত, আর ভোতারাম বুধমলের সেই ধনপূর্ণ অপহৃত বাক্সটা গৃহে পড়িয়াছিল। আমি শার্দিল-বিক্রমে রোষ- 'য়িত নেত্রে ছুই হস্তে ছুইটি রিভল্তার ধারণ করিয়া বেগে সই গৃহমধ্যে প্রবেশ করিলাম”-_-নরেশের কথা শুনিয়া আমি হাসিয়া উঠিলাম। শ্মিতমুখে নরেশ বলিল--“আর হাসিও না, 'আমি লক্ষণের মত মেঘনাদের যক্তরগৃহে প্রবেশ করিলাম দন্থ্যগুলা ছোরা ছুরি লাঠি সোটা বাহির করিল। আমি পূর্ব হইতেই প্রস্তুত হইয়া গিয়াছিলাম। আমার আক্তার অপেক্ষায়

বিবাহ-বিপ্লীব ১৪

সশস্ত্র সরকারী পুলিস বাইরে অপেক্ষা করিতেছিল। আমি উপায়ান্তর ন৷ দেখিয়া আগার সাঞ্চেতিক বীশরী ধ্বনি করিলাম, তখন সদলবলে সরকারী পুলিস গৃহ মধ্যে প্রবেশ করিল। উভয়পক্ষে একটা বেশ গুরুতর রকমের মারপিট হইল, শেষে দুবৃত্তেরা ধৃত হইয়! শাস্তি ভোগ করিল।৮ আমরা উভয়ে খুব হাসিঞঠম। আঘি বলিলাম--“কি জান সাধারণ লোকের দোষ নাই এক শ্রেণীর দেশী বিলাতী ডিটেক্টিভ্‌ উপন্তাদ আছে যাহাতে লাঠী সোটা গুলি গোল! মারপিট প্রভৃতি যত কিছু অসম্ভব আজগুবি ব্যাপার সন্নিবেশিত থাকে সকল লেখকই পাঠকদের মন্তিষ্ক বিকৃত করিয়া দেয়। আমার বিশ্বাস, সেই সকল লেখক মামল1! তদস্ত-সংক্রান্ত কোন কথাই বোঝেন না এবং সাধারণ পাঠকবর্গ একটু স্থির হইয়া বিচার করিয়া দেখে না ষে, বাস্তব জগতে সে শ্রেণীর কার্ষ্য কয়টা সংঘটিত হইয়া থাকে। সুতরাং ট্রাম-গাড়ির যাত্রীদিগের মধ্যে মনোরঞ্জক ছুই একটি আজগুবি গল্প জন্মিবে তাহা আশ্চর্য্য নহে।” নরেশ বলিল২_. প্বাস্তবিক তোমার তদন্তের প্রথা বড় চমৎকার কার্যকারণের সম্বন্ধ ব্যবচ্ছেদ করিয়া প্রতি পদে হিনাব করিয়া! চলিলে ঝি সত্বরে এবং প্রকৃত সাফল্যের সহিত সত্যে পৌছন ঘায়। কিন্তু--”

ঠিক সেই সময় আমাদিগের ভৃত্য আসিয়া সংবাদ দিল যে,.. শুকটি ভদ্রলোক সত্বরই আমাদিগের সহিত সাক্ষাৎ প্রার্থন! করেন। অমিরা পূর্ষেই অশ্বপদ-বিক্ষিপ্ত জলের শব্দ পাইয়াছিলাম;

১১ , বিবাহ-বিপ্রষ

কিন্ত এরূপ দুর্যোধইগর দিনে সেই গাড়িখানি যে আমাদিগেরই কার্যাস্থলে যাত্রী লইয়া আসিবে, সে সন্দেহ আমাদিগের মনে মুহূর্তের জন্য উপস্থিত হয় নাই | আমাদিগের আদেশমত ভূত বাহিরে ভদ্রলোকটিকে ডাকিতে. গেলে নরেশ বলিল--“আর্‌ কেন? পে্কবুত্তি অবলম্বন কর, কক্ষান্তরে যাও।” আঙি রলিলাম,_-“এমন দিনে যে বাক্তি "সাক্ষাৎ করিতে আনিতে পারে তাহার প্রয়োজন যে নিতান্ত গুরুতর, সে বিষয়ে মতভেদ নাই। এরূপ লৌককে প্রথম হইতে নিীকচিন্তে বিশ্বাস করিতে পার! যায়। আমি স্বয়ং ইহার সহিত সাক্ষাৎ করিতে পারি”

ভতীম্্ পজিচ্ছেদ

বিচার-্শত্তি

আমার কথা শেষ হইবামাত্র ভদ্রলোকটি গৃহে প্রবেশ করিলেন। তাহার বয়স আন্দাজ পয়তাল্লিশ বৎসর হইবে, রং বেশ সুশ্রী এবং আকুতি দেখিলে বেশ সবলকায় র্িযাছিফু বলিয়া বোধ হয়। মুখ দেখিয়াই বুঝিতে পারিলাম, লোকটি বছুদর্শী এবং জগতের রঙ্গমঞ্চে নিজের অৃষ্ট-স্ন্ধে নানাগ্রকার পরিবর্তন অবলোকন করিয়াছে মিঃ সেন গভীরভাবে টুকট টানিতে টানিতে জিজ্ঞাসা করিল--আপনি কি চান? অতি কাতর অথচ বাগ্রভা্নে ভদ্রলৌকটি বলিলেন_-মশায়ের নাম কি |

বিবাহ-বিগ্লব . ১২

-মিঃ সেন? বড় বিপদে পড়েই আপনার সাধখয ভিক্ষা কর্তে এসেছি নরেশ বলিল--অবশ্ঠ সহজেই তাহা অনুমান করা যায়, তা না হলে আর এত দুর্যোগে মশায় আমার গৃহে পদার্পণ করবেন কেন? আমি তাহাদের প্রতি সম্পূর্ণ অমনোযোগী এইরূপ বাহিক ভাব দেখাইয়া একখানা সংবাদপত্র পাঠ করিতেছিলাম কিন্ত তাহাতেও সন্তুষ্ট না হইয়া ভদ্রলৌকটি আমার প্রতি অতি কোমল কটাক্ষপাত করিয়া নরেশচন্ত্রকে বলিলেন,_-“আমার ব্যাপারটা খুব গোঁপনীয়, যদি কেহ ঘুণাক্ষরে জান্তে পারে, তা হইলে বিশেষ ক্ষতি হবে 1”

আগন্ধকের উদ্দেগ্ত বুঝিতে পারিয়া নরেশচন্দ্র একটু হাসিয়া বলিল--“আপনি এর কাছে কোন কথা গোপন কর্বেন না, উনি আমার একজন অত্যন্ত বিশ্বস্ত কম্মনচারী। সম্ভবতঃ আপনার কাজ উনিই কর্বেন। আপনার বিশেষ উদ্দিপ্র হবার কারণ নেই।” ভদ্রুলোকটি সাগ্রহে বলিলেন-_“আচ্ছ! উনি যদি আপনার বিশ্বস্ত কর্মচারী হন তা হইলে গুর নিকট আমি কোনও কথ! গোপন কর্ব না কিন্তু আমার কাজটি অতান্ত গুরুতর। তার ফলাফলের উপর আমার সমস্ত মানসন্ত্রম নির্ভর কর্ছে। আ্ির কাজটি আপনি স্বয়ং হাতে না নিলে কোনও ফল হবে না।” নরেশ একটু হাসিয়া বলিল__পসেজন্য আপনি ব্যন্ত হচ্ছেন কেন? আমরা অবস্থা বুঝে বাবস্থা কর্ব।” ভদ্রলোকটি পূর্বরব€ উৎস্থৃক ভাবে কহিল্নে-“আমি আপনার প্রশংসা শুনে আপনার কাছে এসেছি আমি অর্থের মায়া করি না) াপনি যত অর্থ চাঁন

১৩ বিবাহ-বিপ্লব

আমি দিতে প্রতিশ্রুত হচ্চি, কিন্ত আমার কাজটি আপনার নিজের দ্বারা হওয়! চাই।” নরেশ তাহাকে আশ্বাস দিয়! বুঝাইয়৷ দিল যে, আমাদিগের কর্তবা-সন্বন্ধে তাহাকে কোনও রূপ চিন্তিত হইতে হইবে না, যাহার দ্বারা সে কার্যাটুকু সম্পাদিত হইলে তাহার অধিক ইষ্ট হইবে, আমরা তাহারই আয়োজন করিব। বুঝিলাম, ভদ্রলোকটি কথায় তেমন আশ্বস্ত হইলেন না। তিনি যে আমাকে একটা অপদার্থ বুঝিয়া আমার সাহায্য লইতে অস্বীকৃত হইলেন, তাহাতে আমি বিশেষ দুঃখিত হইলাম না। কিন্তু যাহাতে আমার উপর তাহার একটু বিশ্বাস জন্মে তাহার চেষ্টা করিলাম। প্রথমে তাহার সহিত আলাপ করিবার নিমিত্ত তাহাকে জিজ্ঞাসা করিলাম-_মহাশয়ের নাম?

“ভ্রীনুরেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়” আমি বলিলাম--মহাশয়ের জন্মস্থান বীকুড়া, নয়? .তিনি বলিলেন-স্থ্যা। আমি।-- বাঁকুড়ায় আজকান খুব অন্পই থাক হয়। সুরেন্দ্র ।-হ্্যা, দেশ এত রকম ছেড়েছি। আমি ।-_মহাশয়কে দেখছি খুব রোদে ঘুরতে হয়। অবশ্ত ইংরাজী পোষাক ব্যবহার করেন, আর স্ুর বেলায় রোদে ঘোরবার সময় নীল চসমা চোখে দেন। বঙ্গ নূর্যাকিরণ থেকে চোখকে শীতল রাখবার এট! বেশ উপায়। এবার সুরেন্দ্র বাঞ্ধু একটু বিন্মিত হইলেন। তাহার “জের গুরুতর বিষয়টি ক্ষণেকের জন্ত বিশস্বৃত হইয়া আমাকে /কাভূহলাক্রান্তভাবে জিজ্ঞানা করিলেন,_-মহাশয়ের নাম? আমাকে আপনি দেখিলেন কোথায়? আমি মহাশয়কে চিনি

বির্লাহ-বিপ্লব ১৪

বলিয়া-ল্ররণ হইতেছে না। আমি যেন তাহার কথাম্ব ভ্রক্ষেপ করিলাম না, এইবূপ ভাব প্রকাশ করিয়া পূর্ববৎৎ বলিতে লাগিলাম,_ মহাশয় সিগারেট পান করেন, পৃথিবীর অনেক দেখিয়াছেন। নরেশ হাসিয়া বলিল,_-দেখিলেন স্ুরেন্ত্রবাধু ! আমার কর্মচারীর কৃতিত্ব-সম্বন্ধে আপনি সন্দেহ করিতেছিলেন, কিন্তু ইনি আপনাকে একধার দেখিবামাত্র আপনার সম্বন্ধে এতগুলি কথা বলিয়া দিলেন।

স্ুরেন্্র বাবু বলিলেন-__-মহাশয় কি প্রকৃতই আমাকে জানেন না? আমি হাসিয়। বলিলাম--আমি আপনার সম্বন্ধে যে ছু" একটি কথা বলিয়াছি তাহার মধ্যে বিশেষ দক্ষতার পরিচায়ক কোনও কথাই নাই। আপনাকে একটু বিশেষ ভাবে ছুই এক মুহূর্ত লক্ষ্য করিলে সকল লোকেই প্ররূপ কথা৷ বলিতে পারে। অব্য মানুষের প্রকৃতি অধ্যয়ন করা আমাদের পেশ! বলিয়া আমর! যেরূপ ভাবে মনুষ্]ের স্বভাব প্রকৃতি পর্যবেক্ষণ করি, সেরূপ সাধারণ লোকে করে না। আর এইরূপে মানুষ অধায়ন করিলে তাহাদের সম্বন্ধে এইরূপ ছুই চারিটি কথা সকলেই বলিতে পারে। বিশ্মিত হুরেন্্রনাথ জিজ্ঞাসা করিলেন_আমার অরীরীন সম্বন্ধে ঠিক ধারণাটা আপনি কি প্রকারে করিলেন ৮৯ামি বলিলাম-_বিশাল বাঙ্গালা দেশের সকল অধিবাসীই বাঙ্গালা কথা: কহিয়! থাকে তাহা সত্য, কিন্ত প্রত্যেক জেলার উচ্চারণের, একট] বিশেষত্ব আছে। কতকগুলা বিশেষ শব্বব্যবহারেও একটি প্রাদেশিকতা। লক্ষিত হয়। আমি বাল্যাবধি প্রত্যেক

১৫ বিবাহ-বিপ্লুব

জেলার অধিবাসীর উচ্চারণের বিভিন্নতা অধ্যয়ন করিতাম। সেই বিষ্তার বলে আজ জোর করিয়া মহাশয়কে বলিলাম যে, মহাশয়ের জন্মস্থান বীকুড়া জেলায়। সুরেক্রবাবু আমার কৈফিয়তের পর বিষয়টা অত্যন্ত সাধারণ ভাবিয়া সেই শোকক্রি্ মুখে একটু হাসিয়া লইলেন। তাহার পর একবার আপদমস্তক আমাকে নিরীক্ষণ করিয়া লইলেন। নরেশ বলিল,__“অবশ্তঠ আপনার উচ্চারণে বাঁকুড়া জেলার টানট। অতি অল্প। সাধারণ লৌকের লক্ষ্য না করিবারই কথা? আর আপনার কথাবার্তীয় বাকুড়া অঞ্চলে চলিত শব্দের এত অভাব বলিয়াই আমার কর্মচারী সতীশ বাবু বলিয়াছেন যে, মহাশয়ের বু দিন হইতে জন্স্থান পরিত্যাগ কর! হইয়াছে ।” নরেশচন্দ্রের এইরূপ বিজ্ঞ কথায় আমি তাহার উপর অতাস্ত অস্ত হইলাম। সে যেআমার প্রণালীতে কার্য্য কারণের সম্বন্ধ ব্যবচ্ছেদ করিয়া সকল বিষয় বিচার করিতে আবরস্ত করিয়াছিল, তাহ! অতীব স্থখের বলিয়া বোধ হইল বিষয়ে নরেশের উন্নত্তির উপর আমাঁদের কারবারের ভবিষ্যৎ উন্নতি বিশেষরূপে নির্ভঞত করিতেছে তাহ! বলা বাহুল্য স্মৃষ্নদ্রবাবুকে . বুঝাইবাঁর জন্য বলিলাঁম,_-“আপনি যে রৌদ্র ঘুর্িয়া বেড়ান তাহার প্রমাণ আপনার গায়ের চামড়া আপনার ছ্ীত বা মুখের রং অপেক্ষা আপনার দেহের অন্য অবয়বের বর্ণ উজ্্ল। ইহা ইহাতেই বুঝা যাইতেছে যে, আপনার হাত মুখের যেরূপ বর্ণ আপনার শরীরের সাধারণ বর্ণ সেরূপ

বিবাহস্বপ্রীব ১৬

নহে আপনার দেহের যে সকল স্থল আবৃত থাকে, সে সকল স্থলে আপনার স্বাভাবিক বর্ণ দেখিতে পাওয়া / যাইতেছে স্থতরাং আপনার মুখ বা হাতের রং বিকৃত করিবার প্রধান কারণ রৌদ্রের তাপ। এই ছুই স্থল আবৃত থাকে না বলিয়া সুর্ধ্য কিরণ এই ছুই স্থল দগ্ধ করিতে পারে। আবার আপনার মুখে অপরাপর স্থল অপেক্ষা আপনার কপালের উপরের « অংশটি উজ্জ্বল বর্ণের। অর্থাৎ সাধারণতঃ লোকে হাট পরিলে যে অংশটি টুপিতে আবদ্ধ থাকে আপনার সেই অংশের বর্ণ হূর্য্যপন্ক নহে। ইহা হইতেই বুঝিতে পারা যায় যে, আপনি স্থাট ব্যবহার করেন। মহাশয় যখন পাগল নন, তখন হাটের সহিত নিশ্চয়ই পেণ্টলেন ব্যবহার করেন। তাই বলিয়াছিলাম, অহাশয় ইংরাজী পোষাক পরিয়! রৌদ্রে ঘুরিয়৷ বেড়ান”

আগন্তক আমাদিগের বিচারশক্তি দেখিয়া মনে মনে আমাদিগকে প্রশংসা করিতেছিলেন বুঝিতে পারিলাম। তিনি বলিলেন,--“আচ্ছা মশায়, এখনত বোধ হ'চ্চে সিদ্ধান্তগুলার 'বেশ ভিত্তি আছে? কিন্ত নীল চশমা চোখে দিই, কথাটা (কেমন করে বললেন ?”

আনি উত্তর করিলাম--"এ কথাট্টাও জ্যোতিষ .বিভর্ৃক্ষলে 'বলি নাই। সিদ্ধান্তেরও প্রকারের বেশ সরল তিত্তি আছে। ম্মাপনার নাকের উপর দাগ দেখিয়া ধরিতে পারা যায়, যে, '্আপনি চশমা ব্যবহার করেন। লোকের চোখের পীড়া নাধারণতঃ দুই প্রকারের হয়। অনেকে নিকটের পদার্থ দেখিতে পান্না,

১৭ বিবাহ-বিপ্পব

আর অনেকে দুরস্থ জিনিষ দেখিতে পায় না। মহাশয় চেয়ারে বসিবার পূর্ববে আমাদের ঘরে দূরের দেওয়ালের ছবিখানির তলায় কি লেখা আছে তাহা অন্যমনস্কভাবে পড়িয়া লইলেন তাহাতে আপনার দৃষ্টিহীনতার কিছু পরিচয় পাইলাম না। একবার অন্টমনস্কভাবে “বেঙ্গলি, কাগজখানা তুলিয়৷ তারিখটা দেখিয়া লইলেন, তাহাতেও কোনও প্রকার দ্রকুঞ্চন করিলেন না। পূর্বে বলিয়াছি, আপনি রৌদড্রে ঘুরেন, সুতরাং আপনার ' পক্ষে নীল চশম! ব্যবহার করাই স্বাভাবিক 1”

আমার কথা শুনিয়া নরেশ স্ুরেন্ত্রবাবু একটু হাঁসিলেন। আমার উপর সুরেক্র বাবুর একটু বিশ্বাস জন্মিল বলিয়া বোধ হইল। নরেশ বলিল,_৭আপনি পিগারেট পান করেন কথাটা প্রত্যেক স্কুলের ছেলেই বলিতে পারিবে কারণ আপনার বুদ্ধানষ্ঠ তর্জনীতে বেশ দাগ রহিয়াছে আর মহাশয় পৃথিবীর অনেক দেখিয়াছেন, কথা বলিবার বিদ্যাট! আপনাকে শিখাইয়। নিজেদের গ্মন্ন মারি, এটা বোধ হয় আপনার অতিপ্রেত নয় ।”

স্থরেন্্র বাবু আমাদের কথাবার্তায় একটু হাসিয়াই আবার পুর্বরুৎ গম্ভীর হইলেন। : তাহার হৃদয়ের অত্তস্তল হইতে সেই অগ্জাসি শোকের কারণটা মাথ! তুলিয়া আবার তীহাক্ষে পূর্বববৎ আকুল করিল। তিনি কাতরকঠে বলিলেন,--“অবশ্ঠ মহাশয়দের বা অত্যন্ত পারদ্রিতা আছে তাহা বুঝিয়াছি। আপনার! তু সামাকে এই গভ ভীর বিপদ হইতে রক্ষা করুন। আপনারা আমাকে রক্ষা করিতে না পারিলে দরিদ্র ব্রাঙ্গণের সর্বনাশ.হইবে।

বিবাহ-বিপ্লুব ১৮ ছতুথ পলিক্ছেদ্‌ বালিকা-হরণ

আমি তাহাকে যথাশক্তি সাত্বনা দিয়া তাহার মামলাটি সংক্ষেপে বিবৃত করিতে অন্গরোধ করিলাম। ইংরাজীতে প্রবাদ আছে যে, হৃদয় ভারাক্রান্ত হইলে মুখে বাক্য্ৃত্তি হয় না। কথাটা সত্য; কিন্তু ভারাক্রান্ত হৃদয়ের উৎস একবার মুখ হইতে নিঃম্যত হইতে আরন্ত করিলে তাহা বেগবতী নদীর মত সমস্ত ভাসাইয়া লইয়া যায়। আমাদিগের নৃতন মকেলটির শৌককাহিনীও সেইরূপ দুইঘণ্টা কাল ধরিয়া আমাদিগকে উৎপীড়িত করিল। নিপ্রয়োজন শাখা-পল্লপবাদি ছাঁটিয়া ফেলিলে তাহার আথ্যায়িকাটা এইরূপ দীড়ায়-_

কলিকাতার সন্নিকটবর্তী যশোহর সহরে স্থুরেন্্র বাবু ডিছ্ক্ট বোর্ডের ওতারসিয়ারের কাধ্য করিতেন সহরের বাহিরে একটি কষুত্র বাক্গালায় তিনি সপরিবারে বাস করিতেন তাহার পরিবারের মধ্যে তাহার স্ত্রী, একটি কন্তা একটিমাত্র পুত্র ব্যতীত অপর কেহ ছিল না। তীহার কন্তাটির বয়স আন্দাজ ত্রয়োদশ বঃসর এবং তাহার একমাত্র পুত্রটি দশম-বর্ধীয়। পূর্বে পশ্চ্ঘভীর়িতে নানাগ্থলে কর্ম করিয়! তিনি দেড় বসরাবধি এই কার্য নিযুক্ত হুইয়াছিলেন। ন্ুরে্্বাবুর কন্যার নাম মুরলা। শুনিলাম, কন্তাটি দেখিতে বড়ই সুগ্রী। কুলীন সুরেন্্রনাথের এই 'কযিত- কাঞ্চনবরগা তনয়ার রূপে আকৃষ্ট হইয়া শাহপুরের অমিধাঃ

১৯ বিবাহ-বিপ্লব

ণীতলপ্রসাদদ ঘোষাল তাহাকে খুত্রবধূ করিতে মনস্থ করেন। এরূপ সম্বন্ধ সৌভাগ্য জ্ঞান করিয়া বিজ্ঞ স্থরেন্্রনাথ পূর্ববাবধি প্রস্তাবে সম্মত ছিলেন, কিন্তু তাহার স্ত্রী আত্মীয়ের ঘোষালের গৃহে কন্া! সম্প্রদান করিতে একান্ত অনিচ্ছুক হন। "শীতলপ্রসাদও এই সর্ধস্থুলক্ষণ-বিশিষ্ট) কন্তাটিকে নিজ পুত্রবধূ করিবার জন্ত বিশেষ ব্গ্র হন। শেষে অর্থের লোভে স্থুরেন্রনাথের আত্মীয়ের ঘোষাল-গৃহে মুরলার বিবাহ দিতে সম্মত হইয়াছিলেন। যে দিন চিন্তাক্রি্ট হৃদয়ে আমাদিগের সাহায্য প্রার্থী হইয়া স্ুরেন্দ্রনাথ আমাদের আফিসে আসিয়া আমাঁদিগের সহিত পরিচিত হইলেন, ঠিক সেই দিন হইতে একমাস পরে মুরলার বিবাহের দিন স্থির হইয়াছিল। নববধূর উপযুক্ত অলঙ্কারাঁদি নিন্মীণ জন্ত তিনি চারি 'সহশ্র মুদ্রা অগ্রিম গ্রহণ করিয়াছিলেন। বিবাহের জন্য সকল আয়োজনই হইতেছিল, কিন্তু গত কল্য প্রভাতে সুরেন্্রনাথ দেখিলেন যে, তাহার কন্তাটি অপহৃত হইয়াছে তাহার বিশ্বাস

(কোনও দুষ্ট লোক তাহাকে নিগৃহীত করিবার জন্ত তাহার 'কন্ঠাটিকে লইয়! পলায়ন করিয়াছে

. ক্লুরেন্্র বাবুর গল্প শুনিয়া বুঝিলান যে, স্গেহমর্ী কৃন্তার শোক, শীর্তলঈজ্মাদের অর্থের শোক এবং সামাজিক অবমাননার ভয় প্রতি নানা ভাব একত্র হইয়া তাহাকে বিপন্ন করিয়াছে। স্তাঙার আবেগপূর্ণ কাতর কাহিনী শ্রবণ করিয়া আমাদেরও হৃদয় আর্্ব হইল। নরেশ তাহাকে জিজ্ঞাসা করিল,_-আচ্ছা বিষয়টি আপনি কি পুলিসের হস্তে সমর্পণ করেন নাই ?

বিবাহ-বিপ্লীব ২৬

স্ুরেন্ত্র বাবু বলিলেন, পুলিসে সংবাদ প্রদান করিলে, আমাকে একবারে পথে বসিতে হইবে। পুলিসে সংবাদ দিলে দেশশুদ্ধ সকলেই কথা জানিতে পারিবে। আমার আত্মীয়ন্বজন বন্ধুবান্ধব এবং আমার ভাবী বৈবাহিক শীতলগ্রাসাদ বাবু খবর জানিতে পারিলে আমার পক্ষে কিরূপ অশুভ হইবে, তাহা সহজে অনুমান করিতে পারিতেছেন

আমি বলিলাম,--ই1, শীতলপ্রসাদ জানিতে পারিলে ব্যাপারটা বড় গুরুতর হইয়া উঠিবে। ভবিষ্যতে যদি বাস্তবিকই কন্তাটার উদ্ধার হয়, তাহা হইলে শীতলপ্রসাদ বাবুর পুত্রের সহিত তাহার বিবাহ হওয়া একেবারে অসম্ভব হইবে আর আমাদের দেশের কু লোকে এরূপ একটা কুৎসা করিবার বিষয় পাইলে জুরেকন্্র বাবুর পক্ষে দেশে বাস কর! দায় হইয়া উঠিবে।

আমার কথায় তাহার হৃদয়ের ভাবের প্রতিধ্বনি পাইয়া, নুরেন্্র বাবু বলিলেন-_-সতীশ বাবু, আপনি ঠিক কথ! বলিয়াছেন "আই কারণেই আমি আমার কন্তার অপৃষ্ঠ হওয়ার কথা পর্য্যন্ত | কাহাকেও বলি নাই। আমার ইচ্ছা গোপনে কন্তা অনুসন্ধান করিয়া যে. কোনও প্রকারেই হউক, এই মাসের ভিতর তাঁড়াকে, উদ্ধার করিব। আর নির্দিষ্ট দিনে তাহাকে ঘোষাটুরের হস্তে -দিয়া সকল দিক্‌ বজায় রাখিব। আপাততঃ মুরলাঁর অনৃশ্ত হইবার কথা, এমন কি শীতলপ্রসাদ বাবুকেও বলিব না।

_সুরেন্্রনাথের বিবরণ শুনিয়া মনে বড় আতঙ্ক হইল। এই নূতন

বৃত্তি অবন্যন করিয়া পর্য্যস্ত অনেক রহস্তময় কাহিনী শুনিয়াছি।

২১ বিধাহ-বিপ্লীব

“অনেক প্রকারের দায়িস্ব বি লই আহার নিদ্রা, পরিত্যাগ পূর্বক পরিশ্রম করিক্বাছি: কিন্তু এরূপ জটিল গভীর" রহস্তময় অথচ এত বড় য়িতবপূর্ণ ব্যাপারে কখনও হস্তক্ষেপ করি নাই। রহস্ত উদ্ঘাটন। করিতে পারিলে চিরদিচনর কন্ঠ একটা ভদ্র ব্রাহ্মণ পরিবারের যথেষ্ট ইষ্ট সাধিত হইবে 'কিন্তু বদি এই ্রামান্য ত্রিশ দিনের মধ্যে বরহস্তের মীমাংসা করিতে না পারি, যদি সুরেন্দ্র বাবুর কার্ধ্যটি হস্তে লইয়া শেষে একমাস পরে তাহার নিকট ক্ষমা চাহিয়া বলিতে হয় যে, তাহার কোনও উপকার করিতে পারিলাম না, তাহা হইলে আর ক্ষোভের পরিসীমা থাকিবে না। প্রথমে শুনিরাই ব্যাপারটা বড় গুরুতর নমস্তা পূর্ণ বলিয়া বোধ হইল। এমন কোন একটা ভিত্তি পাইলাম না, যাহার উপর আমাদিগের থিওরি স্থাপন করি অপরাধী ধৃত হইতে ফতই বিলম্ব হইবে বিপদ ততই বুদ্ধি পাইবে আর একমাসের মধ্যে অপঙ্গৃত কন্তার সন্ধান করিতে না পাবিলে বিপদের চরম সীমায় উপনীত হইতে হইবে এই একমাসের পরেও কন্তাকে "জিয়া বাহির করিতে পারিলে সাফলোর অর্ধেক আনন্দ বিফল রঃ সাত পীচ ভাবিয় ছুই বন্ধুতে আড়ালে গিয়া পরামর্শ করিয়া স্থরেন্ত্র বাঁধুকে বলিলাম,__মহাশয় আপনার কেস্‌ যেক্প জটিল তাহাতে এত অল্প সময়ের মধ্যে কৃতকাধ্য হওয়া বড়ই কঠিন। আমাদিগের কথা শুনিয়া তিনি প্রায় কাদিয়া ফেলিলেন। নিরাশার ধর্্মস্পর্শী করুণস্বরে তিনি বলিলেন_-আপনারা আমাকে দাহাষ্য করিতে পরাজ্মুখ হইলে আমার একেবারে সর্বনাশ হইবে।

বিবাহ-বিপ্লুৰ ২২

কেস্টা আপনাদিগের হাতে লইতেই হইবে। যদি আমার' ভাগাদোষে আপনারা অকৃতকার্য হন, তাহা হইলেও আদি আপনাদিগের নিকট খণপাশে আবদ্ধ থাকিব।

তাহার এইরূপ কাতর অন্ুরোধেও আমরা একটু ইতস্ততঃ করিলাম শেষে নরেশ বলিল,--একবার কাজটা হাতে লইর! দেখিতে ক্ষতি কি? তবে ভদ্রলোককে বলিয়া দেওয়া যাউকর্ যে, আমাদিগের উপর তিনি যেন সম্পূর্ণ নির্ভর না করেন। আমরাও বিষয়ে তান্ত করিব। আর তিনি ইচ্ছা করিলে কার্ধ্যের জন্য সরকারী বা বে-সরকারী অপর গোয়েন্দাকেও নিযুক্ত, করিতে পারেন |

প্রস্তাব শ্রবণ করিয়া সুঝেন্্র বাবু কতক আশ্বন্ত হইলেন তিনি বলিলেন, বিষয়ে তিনি আমাদিগের ব্যতীত অপর কাহারও সাহাধা লইতে পারিবেন না আপাততঃ আমাদিগের বায়নির্বাহ জন্য তিনি দুইশত মুদ্রা প্রদান করিলেন; এবং কার্যে সাফল্য লাভ করিতে পারিলে তিনি এক সহত্র মুদ্রা উপহার দিবেন বলিয়া প্রতিশ্রত হইলেন।

একশত টাকার ছুইখানি নোট আমার টেবিলের উপরানাঙ্চি। ব্রাঙ্গগণ আমার ছুইটী হাত ধরিলেন। তিনি বলিলেন-্ঘমাপনার& ভদ্রলোক, আমার অবস্থাটি বেশ উপলব্ধি করিতে পারিয়াছেন ;, বিষয় আমি পুলিশের হস্তে দিতে পারিব না বা অপর কাহারও নিকট প্রকাশ করিতে পারিব না। তাহা না টা আপনাদিগকে এত অনুপোঁধ করিতাম না।

| বিবাহ-বিপ্লব

অগত্যা আমরা কন্তাচুরির মামল| হস্তে লইতে স্ীরূত হইলাম। |

প্রায় রাত্রি ১২টার সময় সুরেন্দ্র বাবু আমাদিগের গৃহ হইতে চলিয়া গেলেন। আমি নরেশকে বলিলাম,_আজকের সভা ভঙ্গ করিয়! চল, খাওয়া দাওয়া কর! যাক।

আমাদিগের আফিসের উপরেই আমাদিগের বাসা তখন বুষ্টি বন্ধ হইয়াছিল, কিন্তু রাজপথ জনমানবহীন। ভূত্যকে ডাকিয়া আফিম বন্ধ করিতে অনুমতি করিয়া চেয়ার ছাড়িয়। উঠিয়াছি, এমন সময় দরজায় কে আঘাত কবিল। ভৃত্য বাহিরে গিয়া সংবাদ আনিল, একজন মাড়োয়ারী ভদ্রলৌক সাক্ষাৎ করিতে.চাহেন। রী

আমি বিরক্ত হইয়া বলিলাম,_-এর চেয়ে পুলিশের কর্ম ছিল ভাল। এই বুষ্টি-বাদলের দিন রাত্রি ১১টার সময় আবার মক্কেল আসে কেন?

নরেশ বলিল,--ওহে মক্কেল লক্ষ্মী বস, বস, কি বলে শুনে যাও। কে বলতে পারে যে আবার হাজার টাকা পাওয়া যাবে না? - ক্ীমি বলিলাম-_না। সকল লোককে আমি পরিচয় দিতে চাহি না। তুমি স্বয়ং প্রথমে শুনে পরে আমাকে বোলো।

বিবাহ-বিপ্লীৰ ২৪ প্পহওস্ন পল্লিচ্ছেচ ছঠতন নম্ম

নৃতন মক্কেলদের দেখা দিলাম না৷ বটে, কিন্তু তাহাদিগকে দেখিতে ছাড়িলাম না। .কুলবধূ যেমন নিজে গবাক্গান্তরালে থাকিয়া আগন্তককে বেশ উত্তমরূপে দেখিয়া লয়, আমিও তেমনি দরজার ছিদ্র দিয়! মকেলঘ্বয়কে নিরীক্ষণ করিতেছিলাম। একজন মারবাড়ী, অপরটি বাঞঙ্জালী। উভয়েই মৃত্তিমান_-এক ভন্ম আর ছার। উভয়ের অক্গপ্রত্যঙ্গগুলা যোগ করিয়া, সমভাবে ভাগ করিয়া লইলে ছুষ্টি বেশ সুপুরুষ নির্মিত করিতে পারা যাইত বিধাতা সেরূপ কার্য্য কেন করেন নাই তাহা অন্তরধ্যামী মধুহথদন জানেন। বাঙ্গালীটি উচ্চে প্রায় ছয় ফুট। মারবাড়ীটি নাগর জুতা লইয়া পাঁচ ফুটেরও ছুই এক ইঞ্চি কম হইবে। মারবাড়ীটি খুব শ্বেতবর্ণ-ধবলকাঁয়, আর বাঙ্গালীটি কৃষ্ণবর্ণের বাঙ্গালীর নাদিকা খুব লম্বা, মারবাড়ীর নাসিকা সেই পরিমাণে ক্ষুদ্র উভয়েরই চল্লিশ বৎসর উত্তীর্ণ হইয়াছিল।

নরেশচন্ত্র বেশ গান্তীর্য্যের সহিত তাহাদিগকে বসিতে বলিয়া মারবাড়ীটির নাম জিজ্ঞাসা করিল। আগন্তক বাঙ্গালায় বর্গিল-- “আমার নাম আমের মল। আমি দয়েহাটার মেঘরাজ রি মল ফারমের অংশীদার”

নরেশ বাঙ্গালীটির দিকে চাহিল। সে বলিল--“আমার নাম ্রীস্ুবোধচন্ত্র ঘোষ আমি এদের কর্মচারী ।»

২৫ - বিবাহ-বিপ্লব

কানা ছেলের নাম পদ্মলোচন জানিয়া হাসি আদিল। সুবোধের নিজের তো! কথাই নাই, তাহার তিন পুরুষের মধ্যে কেহ সুবোধ ছিল কি না তাহা বলা কঠিন। এপ ছুর্বোধ কুটিল লোক আমি অতি অল্পই দেখিয়াছি সুবোধ ইচ্ছা করিলে নরহত্যা এমন কি পিতৃ-হত্যা করিয়া পরক্ষণেই চটাই দাস বাবাজীর আখরায় গিয়া হরিনামে* মাতোয়ারা হইয়া “তা ধিয়া তা ধিয়া” করিয়া নাচিতে পারে, বা গড়ের মাঠে গিয়! ধীরভাবে ক্রিকেট খেলিতে পারে তাহার মুখের ভাবের কিছু বিকৃতি হইবে না। তাহার পোষাক-পরিচ্ছদ দেখিয়া আদৌ বোধ হইল না যে, সে স্ুমের মলের কর্মচারী

নরেশ বলিল,--আপনাদের এত রাত্রে কি প্রয়োজন? অবপ্ত খুব জরুরি কাজ না থাকলে-__

তাহার কথায় বাধা দিয়া সুবোধ বলিল-_ আজ্ঞে হ্যা আমাদের বড় বিপদ। আমরা প্রায় ত্রিশ হাজার টাকার দায়ে পড়েছি

আমি খুব সাগ্রহে তাহাদের কথা গুনিলাম। নরেশও একটু কৌতুহলাক্রান্ত হইল। সুবোধ বলিল-_মেঘরাজ সুমের মলের রোকড়ের কারবার, বিবেচনা করুন হুপ্তি কেনা বেচা, টাঁকারঙ্ছলেন দেন, একরকম বিবেচনা করুন ব্যাস্কিং কারবার

. নরেশচন্দ্র স্থির হইয়া “বিবেচনা” করিল। নুবোধ বলিল,-- "আমাদের লাহোরের গদির মনিব বিবেচনা করুন হুঙ্কার মল। তিনি টেলিগ্রাফ করেছেন যে বিবেচনা করুন.

নরেশ বলিল,__-কই দেখি, তিনি কি টেলিগ্রাফ করেছেন।

বিবাহ-বিপ্লিব ২৬

সুবোধ তাহার পকেটগুলি একে একে তল্লাস করিল, টেলি- গ্রাফ পাইল না। শেষে সুমের মলকে তাহার পকেট দেখিতে বলিল। স্ুমের মল তাহার মেরজায়ের পকেট, কাপড়ের ট্যাক, এমন কি কাচার প্রান্ত অবধি দেখিল, টেলিগ্রাফ পাওয়া গেল ন1। কাগজ খু'জিবার সময় স্ুমের মল তাহার রক্তহথীন সাদা মুখখানা নানারপে বিকৃত করিল, ঘম ঘম ছারপোকার দংশনে মানুষ যেমন ছটফটু করে, সেই রকম ছটফট্‌ করিল, কিন্তু সুবোধচন্দ্রের মেই এক রকম মুখভাঁব।

সুবোধ বলিল,_যাকৃ। কাগজখানা বিবেচনা করুন বাড়িতে ফেলে এসেছি। সংবাদের মদ্দ৷ কথাটা হচ্চে এই যে পরশ রাত্রে আমাদের লাহোরের গদি থেকে প্রায় ত্রিশ হাজার টাকা চুরি গেছে।

টাকার শোকে মের মল শিরে করাঘাত করিল। ন্ুবোধের সেই এক ভাব। স্ুমের মল বলিল,--বাবু, উদ্ধার করুন। আপনাদের নাম শুনে এসেছি, উদ্ধার করুন।

দেখিলাম নরেশ একটু সঙ্কটাপন্ন হইল। আমিও একটু চিন্তিত হইলাঁম। অবশ্ত সে সময় আমাদের হস্তে সেরূপ কোনও জরুরি তদন্ত ছিল না। যদি ইহারা কিছু পূর্বে আসিত তাহা হইলে নিশ্চয়ই লাহোর যাত্রা করিতাম। কিন্তু গুরেন্্ বাবুর গুরুতর কার্যাটির ভার লইয়া আমর! স্ুমের মলের চুরির তদন্ত করিতে কিছুতেই প্রবৃত্ত হইতে পারি না। নয়েশও স্থির হইয়া এই সকল কথাগুল! ভাবিয়া! লইল। নুমের ষল আগ্রহে তাহার মুখের দিকে তাকাইয়৷ ছিল।

২৭ বিবাহ-বিপ্লব

তাহাকে স্থির থাকিতে দেখিয়া সুবোধ বলিল, -বিবেচন! করুন কালকের রাত্রের মেলে ছাঁড়লে, বিবেচনা করুন-- নরেশ বলিল,বিবেচনা সবই করছি, এখন আমার পক্ষে কলিকাতা ছাড়া অসম্ভব। যদি দুঘণ্টা আগে আঁস্তেন-- স্থমের মল বলিল--ন1 মহাশয়, কাজ আপনাকে নিশ্চয়ই কর্তে হ'বে। যদি অপর কাজ নিয়ে থাকেন তো ছেড়ে দিন। আমার টাকা উদ্ধার করতে পারলে নিশ্চয়ই পাচ হাজার টাক। বকৃশিস্‌ দিব। নরেশ বলিল,-_তা'ত বুঝলুম, কিন্তু একটু পূর্বে স্থবোধ বাধা দিয়া বলিল--এঁ লোকটি বেরিয়ে গেল, বিবেচন! করুন, তার কোনও মামলা বুঝি আপনি নিয়েছেন? তা তার টাকা বিবেচনা করুন ফেরত দিন। নরেশ একটু ইতস্ততঃ করিয়া বলিল-_না, হ্যা, গুর কিছু মামলা নেই স্থমের মল সুবোধের দিকে চাহিল। ন্থুবৌধ বলিল, ন! উনি বেরোবার সময় আমাদের বলছিলেন ষে ওর একটা গুরুতর মামলা আছে। | সনরেশ বলিল-হ্যা গুর জন্তাই যেতে পারবো না। স্থমের মল স্থবোধের মুখের দিকে চাহিল, শিরে করাঘাত করিল, হাতজোড় করিয়! বলিল--মশায় আমার কেন্টি নিন। স্ুবোধও হাতজোড় করিল।: তাহার লম্বা নাষিকার জন্ত তাহাকে চিত্রের গরুড় পক্ষীর মত দেখিতে হইল। নরেশ

বিবাহ- বিপ্লব ২৮

সম্মত হুইল না। তাহারা আবার পরদিন সন্ধার সময় আসিবে বলিয়৷ গেল

তাহারা চলিয়া গেলে আমি নরেশের প্রতি একটু অসন্তোষ প্রকাশ করিলাম। অসন্তষ্ট হইয়াছিলাম, তাহার বিচক্ষণতার অভাবে সুবোধ -লোকটার উপর কেমন একটা সন্দেহ হইতেছিল। আমার বোধ হইল, সে জানিতে আসিয়াছিল যে আমরা সুরেন্দ্র বাবুর কন্ঠাচুরির মামলার ভার লইয়াছি কি না! আমার মনে হইতেছিল যে, মে আপাততঃ নরেশকে কলিকাতার বাহিরে পাঠাইয়া বালিকা চুরি মামলা বন্ধ রাখিতে চাছে।

আমার কথা শুনিয়া নরেশ হাদসিল। সে বলিল,--তুঁমি একটু বেশী সাবধান। সর্বমত্ান্তং গহিতং |

উভয়ে তর্ক করিলাম। কিছু স্থির হইল না। নরেশ হাসিয়া বলিল--এস পাশ! চালি। যদি হাত খোলার দান পড়ে, বুঝবো তোমার জিত,_সুবোধ মেয়ে-চুরি ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট

হাসিয়! পাশ! চালিলাম | দান পড়িল--ছণতিন নয়

অ্রষ্ঠ পল্ষিচ্ছেল্্‌ মন্দেহ পরদিন প্রভাতে বশোহর যাইবার সময় ট্রেশে সুবোধকে দেখিয়া আমার হৃদয়ে সন্দেহট! বদ্ধমূল হইল। মনে হইল, 'পাশার দানটা কেবল দৈবাৎ পড়ে নাই। আমি তাহার গাড়ীতে

২৯ | বিবাহ-বিপ্রাব

গিয়া বসিলাম। তাহার সহিত কথ! কহিতে চেষ্টা] করিলাম কিন্তু সুবোধচন্ত্র লম্বা কথোপকথনে প্রবৃত্ত হইল না।

সাহেবেরা তিন মাস এক জাহাজে ভ্রমণ করিয়া পরস্পরের নাম অবধি জিজ্ঞাসা করে না। কিন্তু আমাদের মধো ট্রেণে আলাপ করিবার ম্পৃহাটা যেন একটু অতিরিক্ত লোকে ট্রেণে আধ-ঘণ্টা একত্র থাকিলেই পরস্পরের সহিত সথাস্কাপনে প্রবৃত্ত হয়। আমি সনাতন প্রথা অনুসারে একটি সিগারেট ধরাইয়া স্থবোধকে বলিলাম__ ইচ্ছা! করুন।

সুবোধ একটু হাসিয়া বলিল-_ আমি চুকুট থাই ন1।

আমি বাঁললাম,_-তা” বেশ করেন। নেশাটা যত কম করা! বায় ততই ভাল।

স্থবোধ কাগজ পড়িতেছিল। বলিল,_স্থ' !

আমি একটু স্থির থাকিয়! বলিলাম,_-কাগজগুল1 একঘেয়ে কি লেখে?

সুবোধ পূর্ব হাসিয়া! কাগজথানি আমার হস্তে দিল।

আমি এবার বিপদে পড়িলাম। কাগজখানি পড়িবার ভান করিয়া মুখের সম্মুথে ধরিতে হইল। আমি তাহাকে দেখিস্কুর অবসর হারাইলাম। সুবোধ আমাকে আপাদ-মস্তক নিরীক্ষণ করিল। আমি কাগজথান৷ তাহাকে প্রত্যর্পণ করিয়া বলিলাম,-_না কিছু নেই।

ন্ুবোঁধ আবার কাগজখানি লইয়া পড়িতে লাগিল।

আমি তাহাকে নানা রকম তর্কের মধো টানিতে চেষ্টা

বিবাহ-বিপ্রব ' ৩৪

করিলাম বারাসত ষ্টেশনে একটি দশম বর্ষীয়া বালিকার সিন্দুর-রঞ্জিত সিঁথি দেখিয়া বাল্যবিবাহ সম্বন্ধে বক্তৃতা আরস্ত করিলাম, গোবরডাঙ্গায় স্ফীতোদর নরনারী দেখিয়! ম্যালেরিয়ার বে-আদবী. সম্বন্ধে তীব্র মন্তব্য উদগার করিলাম, এমন কি বিপবা-বিবাহের কথারও ইঙ্গিত করিলাম, কিন্তু ফল একই হইল। যশোহরে উভয়েই নামিলাম সে গাড়োয়ানকে বলিল, _কিন্ু কেইয়ের গদি। আমি ষ্টেশনে একটু অপেক্ষা করিয়া নুরেন্্র বাবুর বাসার দিকে চলিলাম।

ভনগুক্ন সল্িচ্ছেদি

অরক্ঞাঘনে

যশোহর হইতে চাঁচড়া যাইবার পথে নির্জন স্থলে একথাঁনি সুদৃশ্য বাঙ্গালায় সুরেন্দ্র বাবু বাম করিতেন। বাঙ্গালার সম্মুথে প্রায় এক বিঘা! খালি জমির চারিপ্রান্তে দৌপাটি কেন! ফুলের গাছ, বাঙ্গালার চারিদিকে বড় বড় আম গাছ। কুটারটির পশ্চাতে একটু সরু রাস্তার ধারে একটি ডোবা ঞ্ডাবার পশ্চাতে বেশ নিবিড় . বৃক্ষতশ্রেণী | পরে শুনিয়াছিলাম, সেটা অবনী বাবু নামক একটি যুবক জমিদারের প্রমোদোগ্ান উদ্ভানের ভিতর একটি সুবৃহৎ পুক্ধরিণী আছে। | - - স্থরেন্্র বাবু কন্তাটির ফটোচিত্র দেখিলাম মুরল! খুব

৩১ 3 বিবাহ-বিপ্লুব

নুন্দরী। তাহার চিত্র দেখিলে যুবতী বলিয়া! ভ্রম হয়। সুরেন্দ্র বাবু বলিয়াছিলেন, মুরলার বয়স তের বৎসর মাত্র।

বাঙ্গালার মধ্যে হল ঘরটি বেশ সুসজ্জিত। তাহার এক দিকে দুইথানি ছোট ছোট কক্ষ। একথানিতে সুরেন্দ্র বাবু বসিয়া কাজ করিতেন, অপরখানি তাহার শয়নগৃহ। হল-ঘরের অপর দিকের কক্ষ দুইটি অন্দর-মহলের মধ্যে। তাহার পর প্রাচীর পরিবৃত একট! প্রাঙ্গণে রন্ধন-গৃহ প্রভৃতি ছিল। বাঙ্গালার সম্মুখে খালি জমির এক প্রান্তে একটি খোড়ো ঘরে স্ুরেন্্রবাবুর বাশের টম্টম্‌ টাট্ট, ঘোড়া থাকিত।

প্রতিদিন প্রভাতে উঠিয়৷ মুরলা অবনী বাবুর উদ্যান হইতে ফুল তুলিয়া আনিত। যে দিন মুরলা অদৃষ্ত হয়, সে দিন প্রভাতে উঠিয়া সুরেন্দ্র বাবু দেখিয়াছিলেন যে, হল-ঘরের বারান্দার দিকের দ্বার উন্ুস্ত। বারান্দায় কতকগুলা আরাম-কেদাঁরা থাকিত। একখানি আরাদ-কেদারার উপর তাহার ফুল তুলিবার সাঁজিটি পাওয়া গিয়াছিল। ইহা! ব্যতীত মুরলার অপর কোনও চিহ্ন ছিল না।

সংসারে সুরেন্দ্র বাবুর স্ত্রী, মুরলা একটিমাত্র দশম বর্ষীয় পুক্র | স্থ্ুত্রটির নাম রমেন্ত্র। রমেন্দ্রও অবনী বাবুর উদ্যানে ভ্রমণ করিত। অবনী বাবু তাহাকে ভ্রাতার মত ভালবাসিতেন।

আমি বলিলাম--অবনী বাবুর বয়ম কত?

স্ুরেন্্র বাবু বলিলেন--অবনী বাবু কুড়ি বাইশ বছরের হইবেন। বি, পাশ করা খুব ভাল ছেলে। |

ববিবাহ-বিপ্লীব ৩২

শুনিলাম, অবনী অবিবাহিত। খুব ঘোড়ার সথ। মাঝে মাঝে স্ুরেন্ত্র বাবুর বাটার পশ্চাত্তের ডোবায় বসিয়া মাছ খরেন। |

আমি একটু বিস্মিত হইলাম। অবনীর নিজের অত বড় পুক্করিণী থাকিতে তিনি যে কেন পরের ডোবায় বসিয়া মাছ ধরেন তাহ! বুঝিয়া! উঠিতে পারিলাম না। একটা জঘন্ত সন্দেহ একটু একটু মাথা তুলিয়! মনের ভাবগুলাকে অপবিত্র করিতেছিল। আমি জিজ্ঞাসা করিলাম,_-অবনী বাবু কোথায়?

সুরেন্্র বাবু বলিতে পারিলেন না__রমেন্ত্র বলিল-__তিনি বেনারসে গেছেন। |

“কবে?”

“তা বল্‌তে পারিনি পাঁচ দিন হ'বে।*

হিসাব করিয়! বুঝিলাম__মুরলা অদৃত্ত হইবার ছই একদিন পূর্বেই অবনী বেনারসে গিয়াছেন। _ আমি বলিলাম-_অবনীর ইয়ার-বন্ধু সব কি রকম?

এবার সুরেন্্র বাবু একটু বিরক্ত হইলেন। বিরক্ত হুইবার কথা। তিনি বলিলেন-_মশাই আমার মেয়ে”_-ছোট মেয়ে ভদ্রলোকের মেয়ে। আর অবনী শিক্ষিত লোক। অতন্তি মধুর প্রক্কৃতি। তার প্রাণে খ- ৯৮

আমি জিব কাটিয়া বলিলাম,_ন! তা না। | . তাহার পর মুরলার জিনিষপত্র অনুসন্ধান করিলাম ভাঙ্গা টিনের বাক্নে কতকগুল! বিজ্ঞাপনের ছবি, পুঁথির মালা একটা

৩৩ ' * বিবাহ-বিপ্রব

ভাঙ্গা কলমের সঙ্গে তিন থানা পত্র পাইলাম। স্ুরেন্ত্র বাবুর অসাক্ষাতে পত্রগুলা পকেটস্থ করিলাম। স্ুরেন্্র বাবু টেবিলের উপর একখানা বড় বিচিত্র রকমের লেখা কাগজ পাইলাম। প্লেখানিও নিঃশবে পকেটে পুরিলাম। স্ুরেন্ত্রবাবুর নিকট বিদায় লইয়া একাকী অবনী বাবুর বাঁটীতে গেলাম। তাহার ফটক, পথের অপর দিকে পে দিকে জনপ্রাণীর বসবাস নাই। অবনীবাবুর একটি বৃদ্ধ কর্মচারীর নিকট হইতে নানা কৌশলে অবধনীর হস্তাক্ষর সংগ্রহ করিতে চেষ্টা করিলাম; কিন্তু কুতকার্ধ্য হইলাম না। লোকট! জমিদারী সেরেস্তার পুরাতন কর্মচারী; তাহার নিকটে অবনীর কাণীর ঠিকানাও পাওয়া গেল না।

অগ্ন্ম পিজি পত্রাবলী

নরেশ বলিল--“একি হরফ বাবা! নিশ্চয় বরমিজ হবে 1” আমি বলিলাম-_?ধোদা জানেন। কাগজ থানা সুরেন্্র বাবুর টেবিলের উপর একখানা বইয়ের মধ্যে ছিল, নিয়ে এসেছি ।”

নরেঙা বলিল--?সুরেঙ্ বাবুকে বলনি ফেন ?”

সুরেন্ত্র বাবুর পূর্বরজীবন-সপ্ধন্ধে আমার একটু সন্দেহ হইরা- ছিল পত্রথানা পড়িয়া সে সন্দেহ একটু দৃঢ় হইয়াছিল। তাই স্তাহাকে পত্রদস্বন্ধে কিছু বলি নাই। পত্রের কোন্‌ দিক্‌ ফোজ।, তাহা নির্ণয় করিতে আমাদের পাঁচ মিনিট সময় গেল।

বিবাহ-বিপ্লীব ৩৪

শেষে একটা বোধগম্য অক্ষর দেখিয়া উল্টা সোজা ঠিক করিলাম। পত্রখানা এইরূপ

নরেশ বলিল--“এ পত্র নয়। বোধ হয় মুরলা, কি রমেন্তর ছবি একেছে।” আমি ঘাড় নাড়িলাম। সে বলিল,_-“আচ্ছ! বাঙ্গাল! চিঠিগুল1 পড় ।” আমি প্রথম পত্রথান৷ পড়িতে লাগিলাম।

“রাগ করিয়াছ? জ্ভিমান করিয়াছ? তাই সাক্ষাৎ পাই না। সাক্ষাৎ পাই না চোখে। মনের ভিতর হইতে সরিয়া যাইবে, মানস-নেত্রের অগোচরে লুকাইবে সে সাধ্য তোমার নাই। তুমি আমার উপর রাগ কর, আমাকে ত্বণ! কর, আমার জীবন- পথের ত্রিসীমায় আসিও না। আমি কিন্ত তোমাকে দেখিতে পাইব, তোমার মানস-বিমোহন রূপের জ্যোতিজ্ে মজিয়! থাকিব, অহরহঃ তোমার কুরঙ্গনয়ন আমার প্রাণে আনন্দের লহ" ছুটাইবে। সে সুখের বিরোধী হও, তখন তোমার স্মৃতি, মুছিয়া, ফেলিবার চেষ্টা করিব। তাহাতে যদি কীদিয়! মরিচ্ভে' হয় তো! কাদিয়া মরিব--কার্ণ সে বাঁপন! তোমার তোমার বাসনার

৩৫ বিবাহ-বিপ্লীৰ

বিরুদ্ধে কার্য্য করি এমন সাধ্য আমার নাই। তোমাকে ধ্যান করিয়া সুখ পাই সে স্থখে বঞ্চিত করিতে চাঁও, তোমার ধ্যান করিব না। সেই দিন হইতে আমার প্রকৃত দুঃখ আরস্ত হইবে। সেই দিন হইতে বুঝিব নরক-যন্ত্রণা কি ভীষণ! সেই দিন হইতে বুঝিব আগুনে ঝলসিয়া মরা কি কষ্ট! এখন বল চোখের আড়াল হইয়া তুমি আমায় ঠিক শাস্তি দিতে পার নাই। দেখিবার সুখ অপেক্ষা ক্ষেত্রে ভাবিবার সখ অধিক জাগরণে তোমার স্থগঠিত দেহ লতার স্পনন দেখা অপেক্ষণ, স্বপনে তোমার মত সুবর্ণলতিকার দর্শন পাওয়া অধিক প্রীতিকর। তোমার কণ্ঠের বীণার বঙ্কার শ্রবণ করা৷ অপেক্ষা প্রাণের মধো তোমার সুুললিত গীতিরব উপলব্ধি কর! অনেক বেশী আনন্দ- দ্ায়ক। তবে কেন চিঠি লিখি? কেন জান? জানিতে চাহি তুমি আমার হ্ৃদয় হইতে তোমার স্তৃতিটুকু মুছিয়া ফেলিতে বল কি না। প্রভাতে উঠিয়! গাছের কোটরে দেখিব। তোমার এই একটা কথার জন্য উৎকণ্ঠিত থাকিব। শুহাসিনী বঞ্চিত করিও না। একটা কথা লিখে! মাত্র একটা কথা”

পত্রে কোনও তারিখ ছিল না। কাহারও নাম ছিল না। কাহম্ হস্তাক্ষরে লিখিত তাহাও জানিতাম না। নরেশ কিন্তু সিদ্ধান্ত করিয়া লইয়াছিল যে পত্রথানা অবনী মুরলাকে লিখিয়া- ছিল . দে পত্রের আবেগ-পূর্ণ ভাষা শুনিয়া ম্মিতমুখে বলিল__ “ও: !গ্ছৌড়া একেবারে জেটিয়ে গেছে। তাই হিন্দুর ছেলের অল্প বয়সে বিবাহ দেওয়ার নিয়ম জারি হ'য়েছে।”

বিবাহ-বিপ্লাৰ | টি

আমি বলিলাম,--“তুমি কি ক'রে জান্লে যে কোন্‌ ছোঁড়া লিখেছে কার চিঠি তুমি আমি কি জানি ৯*

নরেশ হাসিয়া বলিল--তুমি আমি গাধা নই ঝলেই জানি। মুরলার বাপ যা করে করুক, আমি আজই তাকে বল্ব ষে অবনীমোহন বন্দ্যোপাধ্যায়, বি, এ, জমীদার মহাশয় একটা উপন্যাসের নারক সাজিয়া তাহার সুন্দরী শিশু সরলা বালিকাটিকে উধাও ক'রে নিয়ে গেছে। হাজার টাক! পকেটে ক'রে মেড়ো! মন্কেলের পাচু হাজারের চেষ্টায় লাহোর রওনা হ'ব।

আমি তাহাকে তিরস্কার করিলাম। যদিই অবনীর দ্বারা ব্যাপার ঘটিয়া৷ থাকে, মুরলাকে তো উদ্ধার করা কর্তবা। নরেশ বলিল--“বেশ, সে কথা ভিন্ন। আচ্ছা আর একথান। পত্র পড়।” আমি পড়িলাম-_

“পত্র পাইয়াছ বুঝিলাম, কিন্তু উত্তর দাও না কেন? তোমাকে চোখে না দেখিয়া ধাণন করিলে থাকি ভাল; একথা! লিখিয়াছিলাম বলিয়া? ঘোর মিথ্যা কথা, পাগলের প্রলাপ-' বচন। তোমায় না দেখিগ্না থাকি ভাল? শুনিয়া নিজেরই হাসি পায়। সাকার দেবীর পৃজ! ছাড়িয়া নিরাকার দেবীর নীরব মানমিক উপাসনায় আনন্দে থাকি? ভগ্ামির কথা শাগল হইয়াছি, ডুবিয়াছি--ডুবিবার সময় তুচ্ছ তৃণগুল যাহা সম্মুখে পাইতেছি প্রাণপণে ধরিতেছি। ধ্যান ধ্যানই ভাল; কিন্ত ধ্যানের কি ক্ষমতা আছে? আদল ছাড়িয়া ছাক়্া ধঙ্ছিগন কি প্রাণে শাস্তি আসে? চাদের আলো! ছাড়িয়া! চিত্রের শশীর দিকে

৩৭ | বিবাহ-বিপ্লৃব

আজীবন তাকাইলে কি প্রাণোন্মাদক ত্রপ্ধ রশ্মির পরিচয় পাঁওয়। যায়? সুলোচনে, কথা কহিব না, তোমার চোখের সামনে পড়িব না, তোমাকে মুখ দেখাইব না, কিন্তু তুমি একবার দেখা দিও। একটা! সামান্য ভিক্ষা দিতে কেন কুষ্ঠিত হইতেছ, একটা দগ্ধ প্রাণকে শীতল করিতে কেন বিমুখ হও? আমি এখনই তোমাকে বিবাহ করিবার প্রস্তাব পাঠাইতে পারি, কিনুঙ্সৈরপ বিবাহ তো দেশে সর্কত্র হইতেছে তাহারই ফলে তো গৃহে গুহে অশান্তি, ঘরে ধরে অনুখ। একবার বল আমায় দ্বণা কর না, একবার বল আমায় গ্লীতির চোখে দেখিতে পারিবে, তাহা হইলে তোমায় আমার করিব, ছু'জনায় জীবনের মত বাসা বাধিব, দুই দেহে এক প্রাণে আদর্শের দিকে ছুটিব। তোমার উত্তরের প্রতীক্ষায় রহিলাম ; কিন্তু মনে রাখিও প্রতীক্ষা__ভীষণ প্রতীক্ষা |”

নরেশ বলিল, “ছে'ক্রা বুঝেছে ভাল দেশে ঘরে ঘরে অশান্তি আছে-আর তা”র কারণটা হচ্চে স্বাধীন প্রণয়ের অভাব। বেশ কথা ।” আমি হাসিয়। বলিলাম,“এই থেকেই বোধ হচ্চে যে অবনীর দ্বারা কার্য হয়নি। লোকটার একটুক্খনীতিজ্ঞান আছে, পেটে বিগ্যে আছে, প্রাণে কবিতা ঘাছে।” নরেশ ব্যঙ্গ করিয়৷ বলিল,_-“আর প্রাণের ভেতর আগুন আছে, হাতে পয়সা আছে, অধীনে লোক আছে। ক্ষেত্রে অবনীর.সঙ্গে সুরেন্্র বাবুর কণ্ঠাচুরির ব্যাপারটা যোগ করিতে বড় বেশী কল্পনার দরকার হয় না।”

বিবাহ-বিপ্রীব . | ৩৮

আমি সে কথার ঠিক প্রত্যুত্তর দিতে পাঁরিলাম না। তৃতীয় পত্রখানি পড়িতে আরস্ত করিলাম

“এখন বুঝিলাম কেন সাক্ষাৎ পাই নাই। সব শুনিয়াছি, সব বুঝিয়াছি। গর্ব করিতাম যে, মানুষ নিজের নুথ-ছুঃখের বিধাতা এখন বুঝিলাম একজন কঠোর নির্মম বিধা্ আমার্ীর ভাগ্যের উপর আধিপত্য করেন। ভাগোর উপর আধিপত্য করেন করুন, কিন্তু আমার মনের স্বামী আমি। তু দু'দিন পরে অপরের হইবে তাহা জানি। পরস্ত্রীকে গোপনে ধ্যান করা মহাপাপ, সে কথা হিন্দুর ছেলে আশৈশব বুঝিতেছি। কিন্তু তাহ! সত্বেও তোমাকে ভালবাপিব, পরক্ত্রীর ধ্যান করিব, যত দিন বাচিয়া থাকিব মনের মধ্যে তোমাকে রত্ব-সিংহাসনে বসাইয়া ষোড়শোপচারে তোমায় পূজা দিব। তাহার পর নরক ভোগ করিতে হয় করিব-_ন্বর্গভোগ তো প্রথমে করিয়া লই।

“এ পাপের হস্ত হইতে এখন তুমি আমায় বাচাইতে পার। তোমার একটা কথায়, একটা ইঙ্গিতে ভগবানের স্থষ্ট জীব চিরদিনের জন্য বীচিয়! যায়। একবার বল, তুমি আমাকে শ্রীতির চক্ষে দেখিতে পারিবে, তখন দেখিবে আমি তোমাকে ধন্দপত্বীত্বে গ্রহণ করিতে পারি কি না। একটা কথা একটা ইঙ্গিত। তুমিও বিধাতার মত পাষাণ হইও না ।”

নরেশ বলিল,_-একট! ইঙ্গিতের ফলে বাছ! ধন তাকে. উধাও ক'রে নিয়ে গেছে। তবে একট! ভাল যে, ছোড়। মেয়েটাকে বিয়ে কর্বে। :

৩৯ বিবাহ-বিপ্লিব

আমি কিন্তৃঠিক বুঝিলাম না যে, পত্রগুলা অবনীর লিখিত এবং পত্রের সুন্দরী মুরলা।

শনবন্ন পল্লিচ্ছেছ প্রেমিক অবনী

অবনীর কাশীর ঠিকান! ভাগাক্রমে পাইয়াছিলাম বলিতে হইবে। কয়দিন তাহার বাটির আশে পাশে ঘুরিয়া ছিলাম এক দিন দেখিলাম, সেই ফটকের পার্খে মহাসমারোহে ভালুক নাচ হইতেছে। দুইটি ভল্লুক লইয়া নাচওয়ালার! নান! প্রকার তামাসা দেখাইতেছিল। ভন্লুক-বধূ অভিমান করিয়! বসিয়াছিল, তাহার স্বামী যুক্তহস্তে ভগবানকে ডাকিতেছিল।

অবনী বাবুর কন্মচারিবুন্দ দৃশ্তে মোছিত হুইয়! গিয়াছিল। ভালুকওয়ালারা সেই অবসরে পয়ন! চাহিতে আরম্ভ করিল। অনেকগুলি পয়স! পড়িল; কিন্তু তাহার! সন্তুষ্ট হইল না। অবনী বাবুর একটি যুবক